পরিচ্ছেদ: যাদের দোয়া কবুল হয়
এক মুসলিমের অনুপস্থিতিতে আরেক মুসলিমের দোয়াউম্মুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি সাফওয়ান (রাঃ) কে বলেন, “আপনি কি এ বছর হজ্জে যাবেন?” তিনি বলেন, “হ্যাঁ!” উম্মুদ দারদা (রাঃ) বলেন, “তা হলে আল্লাহর কাছে আমাদের কল্যাণের জন্য দোয়া করুন; কারণ নবি (ﷺ) বলতেন, ‘এক মুসলিমের অনুপস্থিতিতে তার আরেক মুসলিম ভাই দোয়া করলে, ওই দোয়া কবুল হয়; তার মাথার পাশে একজন ফেরেশতা থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের কল্যাণের জন্য দোয়া করে, তখনই তার জন্য নিযুক্ত ফেরেশতা বলে ওঠে—তোমাকেও অনুরূপ দেওয়া হোক!' [মুসলিম, ২৭৩৩]আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “এক মুসলিমের অনুপস্থিতিতে তার আরেক মুসলিম ভাই দোয়া করলে, ফেরেশতা বলে ওঠে—তোমাকেও অনুরূপ দেওয়া হোক!” [মুসলিম, ২৭৩২]মজলুমের দোয়াইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) মুআয (রাঃ)-কে ইয়ামান প্রেরণ করেন। তখন তিনি তাকে বলেন, “মজলুমের ফরিয়াদ থেকে সতর্ক থেকো; কারণ মজলুমের ফরিয়াদ ও আল্লাহর মধ্যে কোনও পর্দা থাকে না।” [বুখারি, ১৩৯৫]মজলুমের দোয়া কবুল হওয়ার একটি উদাহরণ হলো—আবু সা'দা'র সঙ্গে সাদ (রাঃ) এর ঘটনা। সাদ (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সা'দা বলেন, “তোমরা যেহেতু আমাদের কাছ থেকে শপথ নিয়েছ, তাই বলছি: সাদ (রাঃ) সেনাবাহিনীর সঙ্গে যেতেন না, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনে সমতা বজায় রাখতেন না এবং বিচার করার সময় ইনসাফ করতেন। সাদ (রাঃ) বলেন, “শুনে রাখো! শপথ আল্লাহর, আমি (তার জন্য) তিনটি দোয়া করছিহে আল্লাহ! তোমার এ বান্দা যদি মিথুক হয়ে থাকে এবং মানুষের সামনে নিজেকে জাহির করার জন্য এ কথা বলে থাকে, তা হলে তুমি তাকে দীর্ঘ হায়াত দাও, তার দারিদ্র্যকে দীর্ঘায়িত করো এবং তাকে নানা পরীক্ষার মুখোমুখি করো!” পরবর্তী সময়ে সা'দাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলত, “আমি হলাম নানা পরীক্ষায় জর্জরিত এক বড়ো। সাদের (বদ) দোয়া আমার উপর লেগেছে।”আবদুল মালিক বলেন, “পরবর্তীকালে আমি তাকে দেখেছি—বার্ধক্যের দরুন তার ঐগুলো চোখের উপর নেমে এসেছে, আর সে রাস্তায় ছোটো ছোটো মেয়েদেরকে বিরক্ত করত। [বুখারি, ৭৫৫]মারওয়ান ইবনুল হাকামের দরবারে সাঈদ ইবনু যাইদ (রাঃ) -এর বিরুদ্ধে আরওয়া বিনতু উয়াইস একটি নালিশ দায়ের করে। (ওই নালিশে) সে দাবি করে, সাঈদ তার জমি জবরদখল করেছেন। তখন সাঈদ বলেন, “আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর কথা শোনার পরও আমি তোমার জমির কোনও অংশ জবরদখল করব? মারওয়ান বলেন, “আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর কাছ থেকে আপনি কী শুনেছেন?” তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে-ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে দখল করবে, (কিয়ামতের দিন) সাত পৃথিবী সমতুল্য ভূমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সাঈদ বলেন, “হে আল্লাহ! এ মহিলা যদি মিথ্যা কথা বলে থাকে, তা হলে তুমি তাকে অন্ধ করে দিয়ো আর তার ঘরের মধ্যেই তাকে কবর দিয়ো![বর্ণনাকারী] বলেন, পরবর্তী সময়ে আমি তাকে দেখি—সে অন্ধ হয়ে গিয়েছে, বিভিন্ন দেয়াল হাতড়ে বেড়াচ্ছে আর বলছে, সাঈদ ইবনু যাইদের (বদ)দোয়া আমার উপর লেগেছে। একদিন সে তার ঘরের ভেতরের একটি কুয়োর পাশ দিয়ে হাটার সময় তাতে পড়ে যায়, আর সেটিই হয়ে যায় তার কবর। [বুখারি, ২৪৫২]আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “মজলুমের দোয়া কবুল হয়; সে গোনাহগার হলে, তার গোনাহ তার নিজের ক্ষতি ডেকে আনবে।” কোনও এক কবি বলেছেন:পারতপক্ষে জুলুম কোরো না,কারণ জুলুমের পরিণতি হলো আফসোস; তুমি ঘুমাও, অথচ মজলুম সজাগ;সে নালিশ করে, আর আল্লাহ তো সদাজাগ্রত। [আহমাদ, ২/৩৬৭, হাসান]সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার বদদোয়া মুসাফিরের দোয়াআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তিনটি দোয়া কবুল হয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই: মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।” আহমাদ ও তিরমিযি'র বর্ণনায় আছে, “সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার বদদোয়া।” তাদের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত, কারণ তাদের দোয়া কবুল হয়। [বুখারি, ৭৫৫]রোযাদারের দোয়াআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ইফতারের আগ পর্যন্ত রোযাদার, ন্যায়পরায়ণ শাসক ও মজলুমের দোয়া; আল্লাহ (তাদের) দোয়াকে মেঘমালার উপরে উঠিয়ে এর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেন। এরপর আল্লাহ বলেন, “আমার শক্তিমত্তার কসম! একটু পরে হলেও, আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।“ [তিরমিযি, ৩৫৯৮, হাসান]ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়ান্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়াআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, ইফতারের সময় রোযাদার, ও মজলুমের দোয়া; আল্লাহ (তাদের) দোয়াকে মেঘমালার উপরে উঠিয়ে এর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেন। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আমার শক্তিমত্তার কসম! একটু পরে হলেও, আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।“ [তিরমিযি, ২৫২৬, সহীহ]আবদুল্লাহ ইবনু আমর বলেন, “আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “ইফতারের সময় সাওম পালনকারীর জন্য এমন একটি দোয়ার সুযোগ থাকে, যা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।” [ইবনু মাজাহ, ১৭৫৩; নূসীরি এটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন]আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকরকারী, মজলুম ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া।” [বাযযার, ৪/৩৯/৩১৪০, হাসান]যে-ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট দোয়া পড়েউবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে এ বাক্যগুলো বলে—لَا إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ. اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ، وَلَا إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ، وَاللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللّٰهِউচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল ‘হামদ, ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর, আল-‘হামদু লিল্লাহি, ওয়া সুব’হা-নাল্লা-হি', ওয়া লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া ‘আল্লা-হু আকবার', ওয়া লা- ‘হাওলা ওয়া লা- ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হঅর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনও অংশীদার নেই, রাজত্ব তাঁর, প্রশংসাও তাঁর, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ পবিত্র, আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, মহান আল্লাহ ছাড়া কারও কোনও শক্তি-সামর্থ্য নেই।এরপর বলে, “হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও!” অথবা অন্য কোনও দোয়া করে, তার দোয়া কবুল হয়। তারপর ওযু করে সালাত আদায় করলে, তার সালাত কবুল হয়। [বুখারি, ১১৫৪]নিরুপায় ব্যক্তির দোয়াআল্লাহ তা'আলা বলেন—أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَঅর্থঃ “কে তিনি, যিনি নিরুপায় ব্যক্তির ডাক শুনেন, যখন সে তাকে ডাকে কাতর ভাবে এবং কে তার দুঃখ দূর করেন?” [সূরা আন-নামল ২৭:৬২]দোয়া কবুল হওয়ার জন্য যেসব শক্তিশালী কার্যকারণ আছে, তার মধ্যে একটি হলো নিরুপায় অবস্থার মুখোমুখি হয়ে দোয়া করা। এর প্রমাণ হলো তিন ব্যক্তি সংক্রান্ত। ওই হাদীস, যেখানে তারা রাতের বেলা বাধ্য হয়ে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে পাহাড় থেকে একটি শিলাখণ্ড এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তখন তারা একে অপরকে বলেন, “তোমরা সেসব আমল খুঁজে বের করো, যেগুলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের। জন্য করেছিলে, এরপর সেগুলোর ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে চাও, তা হলে আশা করা যায়, তিনি তোমাদেরকে এখান থেকে মুক্তি দেবেন। এরপর তারা নিজেদের নেক আমলগুলোর ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিলাখণ্ডটি সরে গেলে তারা সেখান থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন।মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “কোনও মুসলিম যদি ওযু করে আল্লাহর যিকর করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর রাতে উঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনও কল্যাণ চায়, আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই দেবেন।” [আবু দাউদ, ৫০৪২, সহীহ।]ইউনুস (আঃ)-এর দোয়া-وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿٨٧﴾ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ ﴿٨٨﴾অর্থঃ “আর মাছওয়ালাকেও আমি অনুগ্রহ-ভাজন করেছিলাম। স্মরণ করো, যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করব না। শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে ওঠল: তুমি ছাড়া আর কোনও পরাক্রমশালী সত্তা নেই পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি। তখন আমি তার দোয়া কবুল হলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।” (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৭-৮৮)সাদ হবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন “মাছের পেটের ভেতর থাকাবস্থায় ইউনুস (আঃ) দোয়া করেছিলেন— لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَউচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা সুব‘হা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যা-লিমীনঅর্থঃ তুমি ছাড়া কোনও সার্বভৌম সত্তা নেই! তুমি পবিত্র! আমি তো জালিমদের একজন!কোন মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে (আল্লাহকে) ডেকেছে, আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।” [তিরমিযি, ৩৫০৫, ইসনাদটি সহীহ]যে-ব্যক্তি মুসিবতে-পড়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়েউম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, “কোনও বান্দা যদি বিপদ-মুসিবতের মুখোমুখি হয়ে বলে-إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعْوْنَ اَللّٰهُمَّ أْجُزْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَجْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَاউচ্চারণঃ ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউন। আল্লা-হুম্মাঅ্ জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খাইরাম মিনহা-অর্থঃ আমরা আল্লাহর জন্য, আর আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমার মুসিবতে তুমি আমাকে আশ্রয় দাও! এবং তা থেকে উত্তম কিছু আমাকে দাও! আমরা আল্লাহর জন্য, আর আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমার মুসিবতে তুমি আমাকে আশ্রয় দাও! এবং তা থেকে উত্তম কিছু আমাকে দাও! আল্লাহ অবশ্যই এর বদলে তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন।” আবু সালামা'র মৃত্যুর পর, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী আমি এ দোয়া পাঠ করি, এরপর আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার চেয়ে উত্তম অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে দিয়েছেন। [মুসলিম, ৯১৮]যে-ব্যক্তি ইসমে আযম-এর ওসীলা দিয়ে দোয়া করেবুরাইদা ইবনুল হুসাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবি (ﷺ) এক ব্যক্তিকে এ কথা বলে দোয়া করতে শুনেন-اَللّٰهُمَّا إِنَّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّيْ أِشْهَدُ أَنَّكَ أنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَهَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলূকা বিআন্নি আশ-হাদু আন্নাকা আনতাল্লা-হু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল আ‘হাদুস সামাদুল লাযী লাম ইয়ালিদ, ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুন লাহু কুফুআন আহাদঅর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, একমাত্র তুমিই আল্লাহ্, তুমি ছাড়া সত্য কোনও মা’বুদ নেই, একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারও থেকে জন্ম নেননি এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই।তখন নবি (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহকে তাঁর মহান নাম নিয়ে ডেকেছে, যে নাম নিয়ে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দেন।” [নাসাঈ, ১৩০০, সহীহ]আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে বসে আছি। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছে। সে রুকু, সাজদা ও তাশাহহুদের পর দোয়া করে। ওই দোয়ায় সে বলে— اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُউচ্চারণঃআল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস-আলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতাল-মান্না-নু, বাদী'উস সামাওয়া-তি ওয়াল আরদি, ইয়া- যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম, ইয়া- হাইউ ইয়া- ক্বয়্যুউম অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই। প্রশংসা কেবল তোমারই; তুমি ছাড়া কোনও হক্ব ইলাহ নেই, তুমি মহান দাতা এবং আকাশসমূহের ও পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী হে মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী! হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী!তখন নবি (ﷺ) তাঁর সাহাবিদের বলেন, “তোমরা কি জানেনা, সে কী দোয়া করেছে?” তারা বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ভালো জানেন।” নবি (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহকে তাঁর মহান নাম নিয়ে ডেকেছে, যে নাম নিয়ে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দেন।” [বোখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, ৭০৫, সহীহ]পিতা-মাতার জন্য নেক সন্তানের দোয়াসাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রাঃ) বলতেন, ‘সন্তানের দোয়ার ফলে মানুষকে তার (মত্যর) পর অনেক ঊর্ধ্বে তোলা হবে। এ কথা বলার সময় তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে দেখিয়েছেন। [মালিক, ৯৩৮ (১/১৯০), সহীহ]আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “আল্লাহ জান্নাতে নেক বান্দাদের অনেক উন্নত মর্যাদা দান করবেন; তাতে সে বলে ওঠবে—রব আমার! এত মর্যাদা কোত্থেকে এলো?! আল্লাহ বলবেন, (এটি হলে) তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমাপ্রার্থনার ফল৷” [ইবনু মাজাহ, ৩৬৬০, সহীহ]আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি বাদে: চলমান সদাকাহ (দান) অথবা উপকারা জ্ঞান অথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।” [মুসলিম, ১৬৩১]এর আরেকটি উদাহরণ হলো: নবি (ﷺ) সর্বোত্তম তাবিয়ি (উয়াইস কারানি) সম্পর্কে বলেছিলেন—সে যদি আল্লাহর নামে কোনও কিছুর কসম করে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম পুরা করবেন। এর কারণ হলো, তিনি তার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করতেন।নবি (ﷺ) উমার (রাঃ) বলেছিলেন, “ইয়ামানের বাড়তি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুরাদ ও কারান গোত্র থেকে উয়াইস (কারানি) তোমাদের কাছে আসবে। সে কুষ্ঠরোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠবে, তবে এক দিরহাম পরিমাণ জায়গায় এর দাগ থেকে যাবে। তার (কেবল) মা থাকবে, আর সে হবে তার মায়ের সঙ্গে সদাচরণকারী। সে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে কিছু বললে, আল্লাহ তা অবশ্যই পুরো করবেন। তাকে দিয়ে তোমার জন্য ইসতিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করানোর সুযোগ পেলে, তুমি তা কোরো।” [মুসলিম, ২৫৪২]হাজ্জ আদায়কারীর দোয়াউমরা আদায়কারীর দোয়াআল্লাহর রাস্তায় লড়াইকারীর দোয়াইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর রাস্তায় লড়াইকারী, হাজ্জ আদায়কারী ও উমরা পালনকারী—তারা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি; তিনি তাদের ডেকেছেন আর তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন; (সুতরাং) তারা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তিনি তাদের দেবেন।” [ইবনু মাজাহ, ২৮৯৩, হাসান]আল্লাহর প্রিয় ও সন্তোষভাজন ব্যক্তির দোয়াআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “আল্লাহ তা'আলা বলেন, যে-ব্যক্তি আমার কোনও বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি; বান্দা যেসব কাজের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হয়, সেসবের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো ফরজ দায়িত্ব পালন; বান্দা নফল আমলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালোবাসি; আমি তাকে ভালোবাসলে আমি তার শ্রবণশক্তি হয়ে যাই যা দিয়ে সে শুনে, তার দৃষ্টিশক্তি হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে, তার পা হয়ে যাই যা। দিয়ে সে চলে; সে আমার কাছে চাইলে আমি তাকে দিই, আমার কাছে আশ্রয় চাইলে আমি তাকে আশ্রয় দিই; মুমিনের মৃত্যু ঘটানোর কাজটিতেই আমি সবচেয়ে বেশি ইতস্তত বোধ করি, (কারণ) সে মৃত্যু অপছন্দ করে, আর তার অপছন্দের জিনিস আমার কাছেও অপছন্দনীয়।” [বুখারি, ৬৫০২] আল্লাহর এই নৈকট্যশীল প্রিয় বান্দা আল্লাহর কাছে যার রয়েছে একটি সম্মানজনক অবস্থান—আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে দেন, তাঁর কাছে কোনও ব্যাপারে আশ্রয় চাইলে তিনি তাকে আশ্রয় দেন এবং তাঁকে ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ তা'আলার কাছে তার সম্মানজনক অবস্থানের দরুন, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হয়। পূর্ববর্তী অনেক নেক বান্দা দোয়া কবুলের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/২৩৩–২৩৯]বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় আছে, রুবাইয়ি' বিনতুন নাদর এক মেয়ের সামনের পাটির একটি দাঁত ভেঙে ফেলেছিলেন। তার বংশের লোকজন ওই মেয়ের বংশের লোকদেরকে দিয়ত বা বিনিময়মূল্য দিতে চাইলে, তারা তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়; তাদের কাছে ক্ষমা চাইলে, তারা ক্ষমা করতেও নারাজি প্রকাশ করে। ফলে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাদের মধ্যে কিসাস বা সমান-শাস্তির রায় প্রদান করেন।তখন আনাস ইবনুন নাদর (রাঃ) বলে ওঠেন, “রুবাইয়ি'র দাঁত ভাঙা হবে? শপথ সে সত্তার, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন! তার দাঁত ভাঙা হবে না!” এরপর (আহত মেয়েটির) লোকজন খুশিমনে দিয়ত বা বিনিময়মূল্য গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর কোনও কোনও বান্দা আছে এমন, সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে কিছু বলে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম পুরা করেন।” নবি (ﷺ) বলেছেন, “কিছু লোক আছে এমন, যার চুল উশকোখুশকো, কারও দুয়ারে গেলে দারওয়ান তাকে তাড়িয়ে দেবে, (কিন্তু) সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে কিছু বলে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম পুরা করবেন।” [মুসলিম, ২৬২২]জিহাদের ময়দানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কঠিন রূপ ধারণ করলে, তারা বলতেন—”বারা! [তিনি হলেন বারা ইবনু মালিক (রাঃ), আনাস (রাঃ) ইবনু মালিক (রাঃ)] আপনার রবের নামে শপথ করুন!” তখন তিনি বলতেন, “রব আমার! আমি তোমার নামে শপথ করছি। তুমি আমাদেরকে শত্রুদের উপর বিজয় দাও!” তাতে শত্রুবাহিনী পরাজিত হতো। তুসতুর যুদ্ধের দিন তিনি বলেন, “রব আমার! আমি তোমার নামে শপথ করছি। তুমি আমাদেরকে শত্রুদের উপর বিজয় দাও এবং আমাকে প্রথম শহীদে পরিণত করো!” এরপর শত্রুবাহিনী পরাজিত হয় আর বারা শহীদ হন। [হাকিম, ৩/২৯২]ইবনু রজব (রহ) তার জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম গ্রন্থে অনেক উদাহরণ উল্লেখ করেছেন, যেখানে আল্লাহ তা'আলা তাঁর অসংখ্য মুমিন বান্দার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। [জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম, ৩৪৮–৩৫৬।] (তেমনিভাবে) শাইখুল ইসলাম তার আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়া ইর রহমান ওয়া আউলিয়া ইশ শাইতান গ্রন্থে [পৃ. ৩০৬–৩২০।] এবং আবু বকর (রাঃ) ইবনু আবিদ দুনইয়া তার কিতাবু মুজাবিদ দা'ওয়াহ্ গ্রন্থে [১৩০টি দোয়া-কবুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে (পৃ. ১৭-১৮)] অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করেছেন।অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার মহত্ত্বআবদুর রহমান ইবনু আবী লাইলা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলি (রাঃ)-এর অসুস্থতার সময় আবূ মূসা (রাঃ) তাকে দেখতে আসেন। তখন আলি (রাঃ) তাকে। জিজ্ঞাসা করেন, “কী জন্য এসেছেন: আত্মতৃপ্তির জন্য, নাকি রোগী-দেখার উদ্দেশে?” তিনি বলেন, “না; বরং রোগী দেখতে এসেছি।” এর পরিপ্রেক্ষিতে আলি (রাঃ) তাকে। বলেন, “যদি রোগী দেখার উদ্দেশে এসে থাকেন, তা হলে শুনুন—আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যখন কোনও ব্যক্তি তার অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, তখন সেখানে গিয়ে) বসার আগ পর্যন্ত সে জান্নাতের ফলবাগানের মধ্যে বিচরণ করতে থাকে। যখন সে বসে, তখন (আল্লাহর) রহমত তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সকালবেলা রোগী দেখতে গেলে, সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে; আর সন্ধ্যাবেলা রোগী দেখতে গেলে, সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।' [আহমাদ, ১/৮১, সহীহ, মাওকূফ]সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে-ব্যক্তি কোনও রোগীকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলবাগানে বিচরণ করতে থাকে।” [মুসলিম, ২৫৬৮]