০১

দোয়ার অর্থ

০২

আল্লাহর যিকরের সাধারণ ফযীলত

০৩

দোয়া ক্ববুলের সময় ও স্থান

০৪

দোয়া করার আদব বা বৈশিষ্ট্য

০৫

যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায়

০৬

দোয়ার প্রকারভেদ

০৭

যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

০৮

দোয়া করার নিয়মকানুন

০৯

যাদের দোয়া কবুল হয়

১০

দোয়ার মহত্ত্ব

১১

দোয়া কবুলের শর্ত ও যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

১২

দোয়া কবুলের শর্তাবলি

১৩

যিকর বা আল্লাহর স্মরণের মর্মকথা

১৪

তাওয়াক্কা করে দোয়া পরিত্যাগ

১৫

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া

১৬

মুসলিম সমাজের দোয়া কেন্দ্রিক শিরক

১৭

কুরআন আলোচনা ও গবেষণার ফযীলত

১৮

যিকর বিষয়ক কয়েকটি বিধান

১৯

তাওহীদের প্রতি ঈমান

২০

রিসালাতের প্রতি ঈমান

২১

আল্লাহর ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

২২

ভালবাসার মাপকাঠি রাসুলের (ﷺ) অনুসরণ

২৩

আল্লাহর জন্য ভালবাসা-ই ঈমান

২৪

ঈমানী ভালোবাসার অন্তরায়

২৫

অতিরিক্ত কিছু নফল সালাত

২৬

মানুষের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব

২৭

আল্লাহর কাছে যা চাওয়া বেশি গুরুত্বপূ

২৮

রুকিয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা

২৯

নবি (ﷺ)-এর উদ্দেশে দরুদ পড়ার মহত্ত্ব

৩০

ইস্তিগফারের মূলনীতি

৩১

তাওবা-ইস্তিগফারের ফযীলত ও নির্দেশনা

৩২

দোয়া বা প্রার্থনা জ্ঞাপক যিকর

৩৩

দোয়ার কতিপয় মাসনুন নিয়ম ও আদব

৩৪

শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়া

৩৫

কুরআনী যিকরের বিশেষ ফযীলত

৩৬

কুরআন তিলাওয়াতের আদব ও নিয়ম

৩৭

আত্মশুদ্ধিমূলক মানসিক ও দৈহিক কর্ম

৩৮

হতাশা বর্জন ও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা

৩৯

কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি

৪০

নির্লোভ

৪১

নফল সিয়াম ও নফল দান

৪২

কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ ও রাতের যিকর

পরিচ্ছেদ: তাওহীদের প্রতি ঈমান

ঈমানের প্রথম অংশ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সাক্ষ্য প্রদান করা। ইলাহ’ শব্দের অর্থ উপাস্য, পূজ্য, ইবাদত-কৃত বা মাবুদ। আরবী ভাষায় সকল পূজিত ব্যক্তি, বস্তু বা দ্রব্যকেই “ইলাহ' বলা হয়। এজন্য সূর্যের আরেক নাম ‘ইলাহাহ’ (الإلاهة) বা দেবী’; কারণ কোনো কোনো সম্প্রদায় সূর্যের উপাসনা করত।আরবীতে ‘ইলাহাহ’ ও ‘ইবাদাহ' শব্দদুটি সমার্থক। ইবাদত’ অর্থ (غاية التذلل) চূড়ান্ত ভয়-ভক্তি। শব্দটি ‘আবদ’ বা ‘দাস’ থেকে গৃহীত। দাসত্ব বলতে উবুদিয়্যাত' ও ইবাদত’ দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়। উবুদিয়্যাত (slavery) অর্থ লৌকিক বা জাগতিক দাসত্ব। আর ইবাদত' (worship, veneration) অর্থ অলৌকিক, অজাগতিক বা অপার্থিব দাসত্ব। সকল যুগে সকল দেশের মানুষই জীবন, মৃত্যু ইত্যাদি অতিপরিচিত শব্দের মত ইবাদত’, উপাসনা, worship, veneration ইত্যাদি শব্দের অর্থ স্বাভাবিকভাবেই বুঝে। মানুষ অন্য মানুষের দাসত্ব করতে পারে, তবে সে অন্য যে কোনো মানুষ বা সত্তার ইবাদত বা উপাসনা করে না। শুধু যার মধ্যে অলৌকিক বা অপার্থিব ক্ষমতা আছে, ইচ্ছা করলেই মঙ্গল করার বা অমঙ্গল করার বা তা রোধ করার অলৌকিক শক্তি বা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তারই ইবাদত করে।এভাবে আমরা দেখছি যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বাক্যটির অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই। অর্থাৎ ইবাদত, উপাসনা, আরাধনা, চূড়ান্ত ভক্তি পাওয়ার যোগ্য উপাস্য বা মাবুদ একমাত্র তিনিই। এজন্য এ বিশ্বাসের নাম তাওহীদ বা একত্রে বিশ্বাস।এখানে উল্লেখ্য যে, কুরআন-হাদীসের আলোকে তাওহীদের ন্যূনতম দুটি পর্যায় রয়েছে: ১. জ্ঞান পর্যায়ের তাওহীদ ও ২. কর্ম পর্যায়ের তাওহীদ।প্রথম প্রকারের তাওহীদকে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বা প্রতিপালনের একত্ব বলা হয়। এ পর্যায়ে মহান আল্লাহর কর্ম ও গুণাবলিতে তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহই এ মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, প্রতিপালক, পরিচালক, সংহারক, রিযিকদাতা, পালনকর্তা, বিধানদাতা...ইত্যাদি। এ সকল কর্মে তাঁর কোনো শরীক বা সমকক্ষ নেই।দ্বিতীয় প্রকারের তাওহীদকে তাওহীদুল ইবাদাত বা ইবাদাতের তাওহীদ বলা হয়। এ পর্যায়ে বান্দার কর্মে আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা হয়। অর্থাৎ বান্দার সকল প্রকার ইবাদাত: সাজদা, প্রার্থনা, জবাই, উৎসর্গ, মানত, তাওয়াক্কুল, ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য বলে বিশ্বাস করা।তাওহীদের এ দুটি পর্যায় একে অপরের সম্পূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির উপর ঈমান এনে মুসলিম হওয়া যায় না। তবে ইসলামী বিশ্বাসে বা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)-তে মূলত দ্বিতীয় পর্যায় বা “তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্”র সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। কারণ কুরআন ও হাদীসের বর্ণনানুসারে মক্কার কাফিরগণ এবং সকল যুগের কাফির-মুশরিকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ বা প্রথম পর্যায়ের তাওহীদ বিশ্বাস করত। তারা একবাক্যে স্বীকার করত যে, আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, তিনিই সর্বশক্তিমান এবং সকল কিছুর একমাত্র মালিক তিনিই। [সূরা ইউনুস: ৩১; সূরা মুমিনুন: ৮৪-৮৯; সুরা আনকাবুতঃ ৬১-৬৩, সূরা লুকমান ২৫, সূরা যুখরুফঃ ১]এ বিশ্বাস নিয়ে তারা মহান আল্লাহর ইবাদাত করত। তাঁকে সাজদা করত, তার নামে মানত করত, তাঁর কাছে প্রার্থনা করত, সাহায্য চাইত, তাঁকে খুশি করতে হজ্জ, উমরা কুরবানী ইত্যাদি আমল করত। তবে তারা এর পাশাপাশি অন্যান্য দেবদেবী, নবী, ফিরিশতা, ওলী, পাথর, গাছগাছালি ইত্যাদির পূজা উপাসনা করত।আল্লাহ ছাড়া কোনো রাব্বুল আলামীন নেই, সর্বশক্তিমান নেই ইত্যাদি বিশ্বাস করলেও আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত বা চূড়ান্ত ভক্তি করা যাবে না- এ কথাটি তারা মানতো না। তাদের দাবি ছিল, কিছু মানুষ, জ্বীন ও ফিরিশতা আছেন যারা মহান আল্লাহর খুবই প্রিয়। তাদের ডাকলে বা তাদের ভক্তি করলে আল্লাহ খুশি হন ও তাঁর নৈকট্য, ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এছাড়া তারা বিশ্বাস করত যে, এ সকল প্রিয় সৃষ্টির সুপারিশ আল্লাহ শুনেন। কাজেই এদের কাছে প্রার্থনা করলে এরা আল্লাহর নিকট থেকে সুপারিশ করে ভক্তের মনোবাঞ্চনা পূর্ণ করে দেন। এজন্য তারা এ সকল ফিরিশতা, জ্বীন, মানুষ, নবী, ওলী বা কল্পিত ব্যক্তিত্বের মূর্তি, সমাধি, স্মৃতিবিজড়িত বা নামজড়িত স্থান বা দ্রব্যকে সম্মান করত এবং সেখানে তাদের উদ্দেশ্যে সাজদা, মানত, কুরবানী ইত্যাদি করত। [সূরা যুমার ২-৩; ৩৮; সূরা ইউনুস ১৮]একারণে ইসলামে ইবাদতের তাওহীদের উপর মূল গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মূলত এর মাধ্যমেই ঈমান ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়।তাওহীদের বিশ্বাসের ৬টি দিক রয়েছে, যেগুলোকে আরকানুল ঈমান বলা হয়। ১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ২. আল্লাহর ফিরিশতাগণে বিশ্বাস, ৩. আল্লাহর গ্রন্থসমূহে বিশ্বাস, ৪. আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলগণে বিশ্বাস, ৫. আখেরাতের বিশ্বাস, ৬. আল্লাহর জ্ঞান ও নির্ধারণ বা তাকদীরে বিশ্বাস।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা