পরিচ্ছেদ: মানুষের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব
বান্দা তার রবের মুখাপেক্ষীসকল মানুষ নিজেদের দ্বীন-দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের কল্যাণ-সাধন ও অনিষ্টপ্রতিরোধের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআলা বলেন-يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَآءُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِىُّ الْحَمِيدُঅর্থঃ “লোকসকল! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।” (সূরা আল-ফাতির ৩৫:১৫)আবু যার (রাঃ) এর হাদীসে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। নবি (ﷺ) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন,বান্দারা আমার! আমি জুলুম করাকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছি, আর এটিকে তোমাদের নিজেদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি, সুতরাং তোমরা নিজেদের মধ্যে জুলুম করো না!বান্দারা আমার! তোমাদের সকলেই পথহারা, আমি যাকে পথ দেখাই সে বাদে, সুতরাং তোমরা আমার কাছে পথের দিশা চাও, আমি তোমাদের পথ দেখাব!বান্দারা আমার! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত, আমি যাকে খাবার খাওয়াই সে বাদে, সুতরাং তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদের খাবার দেবো!বান্দারা আমার! তোমরা প্রত্যেকে পোশাকহীন, আমি যাকে পোশাক পরাই সে বাদে, সুতরাং তোমরা আমার কাছে পোশাক চাও, আমি তোমাদের পোশাক দেবো!বান্দারা আমার! তোমরা দিনরাত ভুল করো, আর আমি সকল গোনাহ মাফ করে দিই, সুতরাং আমার কাছে মাফ চাও, আমি তোমাদের মাফ করে দেবো।বান্দারা আমার! তোমরা আমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না,উপকার ও করতে পারবে না।বান্দারা আমার! তোমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়াবান ব্যক্তির অন্তরের মতো হয়ে যায়, তাতে আমার রাজত্ব একটুও বাড়বে না।বান্দারা আমার! তোমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক গোনাহগার ব্যক্তির অন্তরের মতো হয়ে যায়, তাতে আমার রাজত একটুও কমবে না।বান্দারা আমার! যদি তোমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই এবং তোমাদের মানব ও জিন সকলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায়, আর আমি প্রত্যেককে তার চাওয়া-জিনিস দিয়ে দিই, তা হলে আমার কাছে যা আছে তাতে কোনও কমতি হবে না, সাগরে কোনও সুই ঢুকালে যেটুকু কমতি হয় সেটুকু বাদে।বান্দারা আমার! আমি তোমাদের আমলগুলো সংরক্ষণ করে রাখছি, এরপর তোমাদেরকে এর হিসেবে পুরোপুরি বুঝিয়ে দেবো; তখন যে-ব্যক্তি কল্যাণ খুজে পাবে, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে; আর যে অন্যকিছু পাবে, সে যেন কেবল নিজেকেই দোষারোপ করে।” [মুসলিম, ২৫৭৭]এ থেকে বোঝা গেল, সকল মানুষ নিজেদের দ্বীন-দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের কল্যাণ-সাধন ও অনিষ্ট-প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী; এসবের কোনও কিছুর উপর বান্দার কোনও ক্ষমতা নেই। যে-ব্যক্তি আল্লাহর কাছে হিদায়াত ও রিযক চাইবে না, দুনিয়ায় সে এ দুটি জিনিস থেকে বঞ্চিত থাকবে; আর যে-ব্যক্তি নিজের গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে না, তার গোনাহ তাকে পরকালে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। [ইবনু রজব, জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম, ২/৩৭]বান্দা তার রবের কাছে যা চাইবেবান্দা তার দ্বীন-দুনিয়ার সকল প্রয়োজন তার রবের কাছে চাইবে, কারণ সব কিছুর ভাণ্ডার আল্লাহ তাআলার হাতে। আল্লাহ তাআলা বলেন।وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ ﴿٢١﴾অর্থঃ “এমন কোনও জিনিস নেই, যার ভাণ্ডার আমার কাছে নেই এবং আমি যে জিনিসই অবতীর্ণ করি একটি নির্ধারিত পরিমাণেই করে থাকি৷” (সূরা আল-হিজর ১৫:২১)আল্লাহ যা দেন, তা কেউ আটকে রাখতে পারে না; আবার তিনি যা রুখে দেন, তা কেউ দিতে পারে না, যেমনটি নবি (ﷺ) প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরিয়ে বলতেন-لَا إِلٰهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، اَللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِماَ أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِماَ مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذاَ الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّউচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল ‘হামদু, ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর, আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা-আ‘অ্ত্বাইতা, ওয়ালা- মু‘অ্ত্বিয়া লিমা- মানা‘অ্তা, ওয়ালা- ইয়ান্ফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দুঅর্থঃ আল্লাহ্ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তারই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ্! তুমি যা দাও, তা কেউ রুখতে পারে না; তুমি যা রুখে দাও, তা কেউ দিতে পারে না; তোমার বিপরীতে ধনীর প্রাচুর্য তার কোনও কাজে লাগে না। [বুখারি, ৮৪৪]