০১

দোয়ার অর্থ

০২

আল্লাহর যিকরের সাধারণ ফযীলত

০৩

দোয়া ক্ববুলের সময় ও স্থান

০৪

দোয়া করার আদব বা বৈশিষ্ট্য

০৫

যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায়

০৬

দোয়ার প্রকারভেদ

০৭

যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

০৮

দোয়া করার নিয়মকানুন

০৯

যাদের দোয়া কবুল হয়

১০

দোয়ার মহত্ত্ব

১১

দোয়া কবুলের শর্ত ও যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

১২

দোয়া কবুলের শর্তাবলি

১৩

যিকর বা আল্লাহর স্মরণের মর্মকথা

১৪

তাওয়াক্কা করে দোয়া পরিত্যাগ

১৫

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া

১৬

মুসলিম সমাজের দোয়া কেন্দ্রিক শিরক

১৭

কুরআন আলোচনা ও গবেষণার ফযীলত

১৮

যিকর বিষয়ক কয়েকটি বিধান

১৯

তাওহীদের প্রতি ঈমান

২০

রিসালাতের প্রতি ঈমান

২১

আল্লাহর ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

২২

ভালবাসার মাপকাঠি রাসুলের (ﷺ) অনুসরণ

২৩

আল্লাহর জন্য ভালবাসা-ই ঈমান

২৪

ঈমানী ভালোবাসার অন্তরায়

২৫

অতিরিক্ত কিছু নফল সালাত

২৬

মানুষের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব

২৭

আল্লাহর কাছে যা চাওয়া বেশি গুরুত্বপূ

২৮

রুকিয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা

২৯

নবি (ﷺ)-এর উদ্দেশে দরুদ পড়ার মহত্ত্ব

৩০

ইস্তিগফারের মূলনীতি

৩১

তাওবা-ইস্তিগফারের ফযীলত ও নির্দেশনা

৩২

দোয়া বা প্রার্থনা জ্ঞাপক যিকর

৩৩

দোয়ার কতিপয় মাসনুন নিয়ম ও আদব

৩৪

শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়া

৩৫

কুরআনী যিকরের বিশেষ ফযীলত

৩৬

কুরআন তিলাওয়াতের আদব ও নিয়ম

৩৭

আত্মশুদ্ধিমূলক মানসিক ও দৈহিক কর্ম

৩৮

হতাশা বর্জন ও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা

৩৯

কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি

৪০

নির্লোভ

৪১

নফল সিয়াম ও নফল দান

৪২

কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ ও রাতের যিকর

পরিচ্ছেদ: যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায়

১. বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য‘আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ)-এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। একদা নবী করীম (ﷺ) খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার-পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক দোয়া করলেন। সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিলনা। (রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খণ্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছিল। আমাদের ওখানে সেদিন বৃষ্টি হ’ল। তারপর ক্রমাগত পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত বৃষ্টি হ’তে থাকল।অতঃপর পরবর্তী জুম‘আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়’। এ সময়ে তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল’। (ছহীহ বুখারী, হা/৯৩৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৭; মিশকাত, হা/৫৯০২)ক. আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জুম‘আর দিন জনৈক বেদুঈন আরবী রাসুল (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলি মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রাসূল (ﷺ) দোয়ার জন্য দু’হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রাসূল (ﷺ)-এর সাথে হাত উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে রেব হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। এমনকি পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হ’তে থাকল। তখন একটি লোক রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল’। (ছহীহ বুখারী, হা/১০১৩; আবূ দাঊদ, হা/১১৬৯)খ. আনাস (রাঃ) বলেন, কোন এক জুম‘আয় কোন এক ব্যক্তি দারুল কোযার দিক হ’তে মসজিদে প্রবেশ করল, এমতাবস্থায় রাসূল (ﷺ) খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ)! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করুন, আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করবেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করত প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন!’। (ছহীহ বুখারী, হা/১০১৪;খণ্ড, ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৭)গ. আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে হস্তদ্বয়ের পিঠ আকাশের দিকে করে পানি চাইতে দেখেছি। (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৬; মিশকাত হা/১৪৯৯ ‘ইস্তিসকা’ অনুচ্ছেদ)ঘ. আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বৃষ্টি প্রার্থনা ব্যতীত অন্য কোথাও হাত তুলতেন না। আর হাত এত পরিমাণ উঠাতেন যে, তার বগলের শুভ্র অংশ দেখা যেত। (ছহীহ বুখারী, হা/১০৩১; মিশকাত, হা/১৪৯৮) প্রকাশ থাকে যে, হাত তুলে দোয়া করার অনেক হাদীছ আছে, তবে পানি চাওয়ার জন্য যেভাবে হাত তোলা হয় সেভাবে নয়।২. বৃষ্টি বন্ধের জন্যআনাস (রাঃ) বলেন, পরবর্তী জুম‘আয় ঐ দরজা দিয়েই জনৈক ব্যক্তি প্রবেশ করল, রাসূল (ﷺ)-এর দাঁড়িয়ে খুৎবা দান রত অবস্থায়। অতঃপর লোকটি রাসূল (ﷺ)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ)! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দোয়া করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবেন। রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রাসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের নিকট থেকে বৃষ্টি সরিয়ে নিন, আমাদের পাশ্ববর্তী এলাকায় দিন, আমাদের উপর না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে, উপত্যকায় এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। (ছহীহ বুখারী, হা/১০১৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৭)৩. চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যগ্রহণ লেগেছে। আমি তীরগুলি নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্যগ্রহণে রাসূল (ﷺ)-এর অবস্থান লক্ষ্য করব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌঁছলাম। তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি আল্লাহু আকবার, আল-হামদুলিল্লাহ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাক‘আত স্বলাত আদায় করলেন’। (ছহীহ মুসলিম, হা/৯১৩)৪. উম্মতের জন্য রাসূল (ﷺ)-এর দোয়া ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনে আছ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন, আমার উম্মত, আমার উম্মত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তার নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে কাঁদার কারণ বললেন, যা আল্লাহ তা‘আলা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জিবরীলকে বললেন, যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার কোন অকল্যাণ করব না’। (ছহীহ মুসলিম, হা/২০২; মিশকাত, হা/৫৫৭৭)৫. কবর যিয়ারতের সময় ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, কোন এক রাতে রাসূল (ﷺ) বের হ’লেন, আমি বারিরা (রাঃ)-কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি ‘বাক্বিউল গারক্বাদে’ গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ)! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়েছিলাম কবর বাসীর জন্য দোয়া করতে। (ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৭, হাদীছ ছহীহ)৬. কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দোয়াআউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবু আমের স্বীয় ভাতিজা আবু মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রাসূল (ﷺ)-কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর হাত তুলে প্রার্থনা করলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! উবাইদ ও আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও। (রাবী বলেন) এসময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে স্থান করে দিও’। (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৮৩)৭. হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) নিকটবর্তী জামারায় সাতটি করে পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর তিনি অগ্রসর হয়ে নরম ভূমিতে নামতেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দোয়া করতেন। শেষে বলতেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে এভাবেই করতে দেখেছি’। (ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫২)৮. যুদ্ধক্ষেত্রেওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাযার। আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত তের জন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করতে লাগলেন। এ সময়ে তিনি বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ। হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা‘আতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে এই যমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবেনা’। এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ হ’তে চাদরখানা পড়ে গেল। আবু বকর (রাঃ) তখন চাদর খানা কাঁধে তুলে দিয়ে রাসূল (ﷺ)-কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট, নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন’। (মুসলিম, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১৮)৯. কোন গোত্রের জন্য দোয়া করাআবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা আবু তুফাইল রাসূল (ﷺ)-এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! দাঊস গোত্র অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দো’আ করুন। তখন রাসূল (ﷺ) ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫২৪; ছাহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১১, সনদ ছহীহ)১০. বায়তুল্লাহ দেখেআবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং ছাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন। অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর প্রতি লক্ষ্য করলেন এবং দু’হাত উত্তোলন পূর্বক আল্লাহকে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। (আবূ দাঊদ, হা/১৮৭১, সনদ ছহীহ)১১. কুনূতে নাযেলার সময়আবু ওসামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) কুনূতে নাযেলায় হাত তুলে দোয়া করেছিলেন। (ইমাম বুখারী, রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন, সনদ ছহীহ)১২. কোন ব্যক্তির অপছন্দনীয় কর্মের কারণে হাত তুলে দোয়াসালেমের পিতা বলেন, নবী করীম (ﷺ) খালেদ ইবনু ওয়ালীদকে বনী জাযীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালেদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল, ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’। কিন্তু খালেদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন। আর বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পন করতে থাকলেন। একদিন খালেদ আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করবনা এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে হাযির হ’লাম। তাঁর কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন নবী করীম (ﷺ) স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত। এ কথা তিনি দু’বার বললেন’। (বুখারী, ২য়খণ্ড, পৃঃ ৬২২)১৩. ছাদাক্বা আদায়কারীর ভূল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দোয়াআবু হুমায়েদ সায়েদী (রাঃ) বলেন, একবার নবী করীম (ﷺ) ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক ‘আসাদ’ গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন সে যাকাত নিয়ে মদীনায় ফিরে এসে বলল, এই অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এই অংশ আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নবী করীম (ﷺ) ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের কোন একটির জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, ইহা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর ইহা আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদিয়া দিয়ে যায়। আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি এর কোন কিছু গ্রহণ করবে, সে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির হবে। যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে। যদি গরু হয়, তবে ‘হাম্বা হাম্বা’ করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয়, তবে ‘ম্যাঁ ম্যাঁ’ করবে। অতঃপর রাসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উঠালেন, যাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’। (ছহীহ বুখারী, হা/৬৬৩৬)১৪. মুসাফির বিপদের সম্মুখীন হয়ে হাত তুলে দোয়াআবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) বৈধ খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এক ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, যে দূর-দূরান্ত সফর করে চলেছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধুলাবালি। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে ‘হে প্রভু’ ‘হে প্রভু’ বলে ডাকে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোষাক হারাম এবং তার আহারের ব্যবস্থা করা হয় হারাম দ্বারা, তার দোয়া কি কবুল হ’তে পারে?’। (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫ ; তিরমিযী, হা/২৯৮৯; মিশকাত, হা/২৭৬০)১৫. স্ত্রী পুত্রের জন্য হাত তুলে দোয়া করাইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় স্ত্রী ও পুত্রকে রেখে ফিরে আসেন এবং গিরিপথের বাঁকে এসে পৌঁছেন, যেখান থেকে স্ত্রী ও পুত্রকে দেখা যাচ্ছিল না, তখন তিনি কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং দু’হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পবিত্র ঘরের নিকটে এমন এক ময়দানে আমার স্ত্রী ও পুত্রকে রেখে যাচ্ছি, যা শস্যের অনুপযোগী এবং জনশূন্য মরুভূমি। হে প্রভু! এ উদ্দেশ্যে যে, তারা স্বলাত কায়েম করবে। অতএব তুমি লোকদের মনকে এ দিকে আকৃষ্ট করে দাও এবং প্রচুর ফল-ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও। তারা যেন তোমার শুকরিয়া আদায় করতে পারে’। (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৬৪)১৬. মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেওয়ার প্রতিকারে হাত তুলে দোয়াহযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-কে হাত তুলে দোয়া করতে দেখেন। তিনি দোয়ায় বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদান কর না’ (আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১০, সনদ ছহীহ)

সেটিংস

বর্তমান ভাষা