০১

দোয়ার অর্থ

০২

আল্লাহর যিকরের সাধারণ ফযীলত

০৩

দোয়া ক্ববুলের সময় ও স্থান

০৪

দোয়া করার আদব বা বৈশিষ্ট্য

০৫

যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায়

০৬

দোয়ার প্রকারভেদ

০৭

যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

০৮

দোয়া করার নিয়মকানুন

০৯

যাদের দোয়া কবুল হয়

১০

দোয়ার মহত্ত্ব

১১

দোয়া কবুলের শর্ত ও যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

১২

দোয়া কবুলের শর্তাবলি

১৩

যিকর বা আল্লাহর স্মরণের মর্মকথা

১৪

তাওয়াক্কা করে দোয়া পরিত্যাগ

১৫

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া

১৬

মুসলিম সমাজের দোয়া কেন্দ্রিক শিরক

১৭

কুরআন আলোচনা ও গবেষণার ফযীলত

১৮

যিকর বিষয়ক কয়েকটি বিধান

১৯

তাওহীদের প্রতি ঈমান

২০

রিসালাতের প্রতি ঈমান

২১

আল্লাহর ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

২২

ভালবাসার মাপকাঠি রাসুলের (ﷺ) অনুসরণ

২৩

আল্লাহর জন্য ভালবাসা-ই ঈমান

২৪

ঈমানী ভালোবাসার অন্তরায়

২৫

অতিরিক্ত কিছু নফল সালাত

২৬

মানুষের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব

২৭

আল্লাহর কাছে যা চাওয়া বেশি গুরুত্বপূ

২৮

রুকিয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা

২৯

নবি (ﷺ)-এর উদ্দেশে দরুদ পড়ার মহত্ত্ব

৩০

ইস্তিগফারের মূলনীতি

৩১

তাওবা-ইস্তিগফারের ফযীলত ও নির্দেশনা

৩২

দোয়া বা প্রার্থনা জ্ঞাপক যিকর

৩৩

দোয়ার কতিপয় মাসনুন নিয়ম ও আদব

৩৪

শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়া

৩৫

কুরআনী যিকরের বিশেষ ফযীলত

৩৬

কুরআন তিলাওয়াতের আদব ও নিয়ম

৩৭

আত্মশুদ্ধিমূলক মানসিক ও দৈহিক কর্ম

৩৮

হতাশা বর্জন ও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা

৩৯

কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি

৪০

নির্লোভ

৪১

নফল সিয়াম ও নফল দান

৪২

কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ ও রাতের যিকর

পরিচ্ছেদ: আল্লাহর কাছে যা চাওয়া বেশি গুরুত্বপূ

হিদায়াত বা পথ-নির্দেশনাআল্লাহ তাআলা বলেন—مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا ﴿١٧﴾অর্থঃ “যাকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখান, সে-ই সঠিক পথ পায়; আর যাকে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন, তার জন্য তুমি কোনও পৃষ্ঠপোষক ও পথপ্রদর্শক পাবে না।” (সূরা আল-কাহফ ১৮:১৭)হিদায়াত বা পথ-নির্দেশনা দু’ ধরনেরসংক্ষিপ্ত ও বিস্তৃত। সংক্ষিপ্ত হিদায়াত হলো ঈমান ও ইসলাম গ্রহণের হিদায়াত; এ হিদায়াত প্রত্যেক মুমিনের মধ্যে পাওয়া যায়। বিস্তৃত হিদায়াত হলো বান্দাকে ঈমান ও ইসলামের শাখা-প্রশাখাগুলোর বিস্তারিত জ্ঞানের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া এবং সেসব কর্ম-সম্পাদনে সাহায্য করা; প্রত্যেক মুমিন দিনরাত সব সময় এ ধরনের হিদায়াতের মুখাপেক্ষী; তাই আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাদের সালাতের প্রত্যেক রাকআতে এ আয়াত পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন-إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٥﴾উচ্চারণঃ ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-নঅর্থঃ আমরা কেবল তোমার গোলামি করি, আর তোমার কাছেই সাহায্য চাই।” [সূরা আল ফাতিহা ১:৫]নবি (ﷺ) রাতের বেলা উঠে সালাতের শুরুতে যে দোয়া পড়তেন, তার এক জায়গায় আছে-اِهْدِنِيْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍউচ্চারণঃ ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্কি‌ বিইযনিকা ইন্নাকা তাহ্‌দী মান তাশা-উ ইলা- সিরা-তিম মুস্তাকীমঅর্থঃ যে সত্য নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তোমার ইচ্ছায় আমাকে তার সঠিক পথ দেখিয়ে দাও। তুমি যাকে চাও, তাকে সঠিক পথের দিশা দিয়ে থাকো।” [মুসলিম, ৭৭০]আল্লাহর রাসূল (ﷺ) রাতের বেলা সালাতের শুরুতে যে দোয়া পড়তেন, তার একাংশে রয়েছে-وَاهْدِنِيْ لِأَحْسَنِ الأَخْلَاقِ لَا يَهْدِيْ لِأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَউচ্চারণঃ ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি, লা ইয়াহ্‌দী লিআহ্‌সানিহা- ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়্যিআহা- লা ইয়াসরিফু আন্নী সায়্যিআহা- ইল্লা আনতাঅর্থঃ আমাকে সবচেয়ে সুন্দর শিষ্টাচারের দিশা দাও! তুমি ছাড়া কেউ সুন্দর শিষ্টাচারের দিশা দিতে পারে না। আমার কাছ থেকে মন্দ আচরণ দূর করে দাও! তুমি ছাড়া আর কেউ মন্দ আচরণ দূর করতে পারে না। [মুসলিম, ৭৭১]নবি (ﷺ) আলি ইবনু আবী তালিব (রাঃ) কে আল্লাহর কাছে (এভাবে) হিদায়াত ও দৃঢ়তা চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন—اَللّٰهُمَّا إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْهُدٰى وَالسَّدَادَউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস’আলুকাল হুদা ওয়াস্‌-সাদা-দঅর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই— পথ-নির্দেশনা ও দৃঢ়তা। [মুসলিম, ২৭২৫]হাসান ইবনু আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়েছেন; আমি সেগুলো বিতরের কুনূতে পাঠ করি:اللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহ্ দিনী ফীমান হাদাইতা, ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা, ওয়া বা-রিক লী ফীমা- আ’ত্বাইতা, ওয়া ক্বিনী শার্‌রা মা- ক্বাদ্বাইতা, ফাইন্নাকা তাক্বদ্বী, ওয়ালা- ইউক্বদ্বা ‘আলাইকা, ইন্নাহু লা- ইয়াযিল্লু মান ওয়া-লাইতা, ওয়ালা- ইয়া’ইয্‌যু মান ‘আ-দাইতা, তাবা-রাক্‌তা রাব্বানা- ওয়া তা'আ-লাইতাঅর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি যাদের হিদায়াত দিয়েছ, তাদের সঙ্গে আমাকেও দাও; যাদের নিরাপত্তা দিয়েছ, তাদের সঙ্গে আমাকেও দাও; যাদের তত্ত্বাবধান করেছ, তাদের সঙ্গে আমারও তত্ত্বাবধান করো; আমাকে যা-কিছু দিয়েছ, তাতে বরকত দাও তোমার সিদ্ধান্তের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো; তুমিই ফায়সালাকারী, তোমার বিরুদ্ধে কোনও ফায়সালা করা যায় না; তোমার বন্ধুরা অপমানিত হয় না; তোমার শত্রুরা সম্মানিত হয় না; আমাদের রব! তুমি বরকতময় ও সমুন্নত।” [আবু দাউদ, ১৪২৫, ১৪২৬, সহীহ]গোনাহ মাফআল্লাহর কাছে গোনাহের জন্য মাফ চাওয়া উচিত, কারণ বান্দা তার রবের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি চাইতে পারে তা হলো তার গোনাহের জন্য ক্ষমা অথবা এর অনিবার্য পরিণতি, যেমন জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ। [ইবনু রজব, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২/৪০১, ৪০৪] গোনাহের ব্যাপারে বান্দা তার রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার মুখাপেক্ষী, কারণ সে দিন-রাত ভুল করে আর আল্লাহই পারেন সকল গোনাহ ক্ষমা করতে।নবি (ﷺ)-এর এক সাহাবি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “লোকসকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও, কারণ আমি প্রতিদিন এক শ বার আল্লাহর দিকে ফিরে আসি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাই।” [আহমাদ, ৪/২৬০, সহীহ]আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা গণনা করে দেখতাম, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক বৈঠকে একশ বার বলছেন-رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُউচ্চারণঃ রাব্বিগ্‌ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীমঅর্থঃ হে আমার রব! আমাকে মাফ করে দাও! আমার তাওবা কবুল করো! নিশ্চয়ই তুমি তাওবা-কবুলকারী ও পরম দয়ালু। [সহীহ। আবু দাউদ, ১৫১৬]নবি (ﷺ) এর আযাদকৃত গোলাম যাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবি (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন, “যে-ব্যক্তি বলবে-أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الْعَظِيمَ الَّذِيْ لَا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِউচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা-হাল 'আযীমাল্‌ লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা-হুআল ‘হাইউল ক্বাইউমু ওয়া আতূবু ইলাইহিঅর্থঃ আমি মহান আল্লাহ্‌র ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, আর আমি তাঁরই নিকট তাওবা করছি।তাকে মাফ করে দেওয়া হবে, জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকলেও।” [তিরমিযি, ৩৫৭৭, হাসান]জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে রেহাইআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি সালাতে কী দোয়া করো?” লোকটি বলে, “আমি তাশাহহুদ পাঠ করে বলি-اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নারঅর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাই; আর জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।আমি তো আর আপনার মতো সুন্দর করে দোয়া পড়তে পারি না, মুআযের মতোও না! তখন নবি (ﷺ) বলেন, “আমাদের দোয়াও এর কাছাকাছি অর্থ বহন করে!” [ইবনু মাজাহ, ৯১০, সহীহ]আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে-ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলে—হে আল্লাহ, তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও; আর যে-ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে সুরক্ষা চায়, তখন জাহান্নাম বলে—হে আল্লাহ, তুমি তাকে জাহান্নাম থেকে সুরক্ষা দাও।” [তিরমিযি, ২৫৭২, সহীহ]রবীআ ইবনু কা'ব আসলামি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে রাত্রি যাপন করতাম। তাঁর জন্য ওযুর পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে দিতাম। একবার নবি (ﷺ) আমাকে বলেন, “তুমি কিছু চাও!” আমি বলি, “আমি জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে চাই।” নবি (ﷺ) বলেন, “এ ছাড়া আর কিছু?” আমি বলি, “কেবল এটিই।” নবি (ﷺ) বলেন, “তা হলে বেশি বেশি (সলাতে) সাজদা করার মাধ্যমে তোমার ব্যাপারে (সুপারিশ করার জন্য) আমাকে সাহায্য করো।” [মুসলিম, ৪৮৯]এটি রবীআ (রাঃ) এর পরিপূর্ণ বুদ্ধিমত্তা ও সর্বোচ্চ মানের জিনিস পাওয়ার ব্যাপারে তার অদম্য আগ্রহের পরিচয় বহন করে। আর (এ মর্যাদা পাওয়ার জন্য) নবি (ﷺ) তাকে বেশি বেশি সাজদা করার পরামর্শ দিয়েছেন।সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবি (ﷺ) কে বলেন, “আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা করলে আল্লাহ আমাকে এর বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” অথবা তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কোনটি?” নবি (ﷺ) বলেন, “তুমি বেশি করে আল্লাহকে সাজদা করো; কারণ আল্লাহর উদ্দেশে তোমার করা প্রতিটি সাজদার বিনিময়ে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা এক স্তর উন্নত করে দেবেন এবং তোমার (আমলনামা) থেকে একটি গোনাহ মুছে দেবেন।” [মুসলিম, ৪৮৮]দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা ও কল্যাণআব্বাস ইবনু আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি আল্লাহর কাছে চাইব।” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর কাছে কল্যাণ চান।” কিছুদিন পর আমি এসে বলি, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি আল্লাহর কাছে চাইব।” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর রাসূলের চাচা আব্বাস! আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চান।” [তিরমিযি, ৩৫১৪, সহীহ]আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) মিম্বারের উপর (বসে) বলেন, “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা চাও, কারণ ইয়াকীনের পর কোনও ব্যক্তিকে সুস্থতার চেয়ে উত্তম কিছু দেওয়া হয়নি।” [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, ৭২৪, সহীহ]দ্বীনের উপর অবিচলতা ও সকল কাজে উত্তম পরিণতিআবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন, “আদম (আঃ)-সন্তানদের সকল কলব (অন্তর) আল্লাহর দু' আঙুলের মাঝখানে একটিমাত্র কলবের মতো হয়ে আছে; তিনি যখন চান তখনই তা ঘুরিয়ে দেন।” এরপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন-اَللّٰهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلٰى طَاعَتِكَউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা মুস্বাররিফাল ক্কুলূবি স্বররিফ ক্কুলূবানা- ‘আলা ত্ব-‘আতিকঅর্থঃ হে আল্লাহ, অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরগুলো তোমার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দাও। [মুসলিম, ২৬৫৪]উম্মু সালামা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘নবি (ﷺ) তার কাছে অবস্থান করার সময় কোন দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন?' তিনি বলেন, তিনি যে দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন তা হলো-يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰى دِيْنِكَউচ্চারণঃ ইয়া- মুকাল্লিবাল ক্কুলূবি সাব্‌বিত ক্কাল্‌বী ‘আলা- দীনিক্‌অর্থঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখো।আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনি এ দোয়াটি অধিক পরিমাণে পড়েন কেন?” নবি (ﷺ) বলেন, “উম্মু সালামা (রাঃ) এমন কোনও আদম (আঃ)-সন্তান নেই, যার কলব। আল্লাহর দু আঙুলের মাঝখানে নেই; তিনি যাকে চান সোজা রাখেন, আর যাকে চান। বাঁকা করে দেন।” [তিরমিযি, ৩৫২২, হাসান]বুসর ইবনু আরতাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে এভাবে দোয়া পড়তে শুনেছি-اَللّٰهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِيْ الأُمُوْرِ كُلِّهَا وَأَجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْآَخِرَةِউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা আহ্‌সিন 'আ-ক্বিবাতানা- ফিল- উমুরি কুল্লিহা ওয়া আজিরনা মিন খিযইদ্ব দুনইয়া ওয়া আযা-বিল আখিরাহঅর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের সকল কাজে উত্তম পরিণতি দাও! আর আমাদের সুরক্ষা দাও। দুনিয়া ও আখিরাতের অপমান থেকে! [বুখারি, আত-তারীখুল কাবীর, ১/৩০; ২/১২৩, হাসান]নিয়ামাত বা অনুগ্রহের স্থায়িত্বআল্লাহর কাছে নিয়ামাতের স্থায়িত্ব চাওয়াআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলতেন-اَللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي، وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي، وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي، وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, আস্বলি’হ লী দীনিয়াল লাযী হুওয়া 'ইস্ব্‌মাতু আমরী। ওয়া আস্বলি’হ লী দুন্‌ইয়া- ইয়াল‌ লাতী ফীহা- মা’আ-শী। ওয়া আস্বলি’হ লী আ-খিরাতি‘ল‌‌ লাতী ফিহা- মাআ'-দ্বি ওয়াজ-আলিল 'হায়া-তা ঝিয়া-‘দাতান লী ফি কুল্লি খাইরিন ওয়াজ-আলিল মাওতা র-হাতান লী মিন কুল্লি শার্‌রীনঅর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমাকে সঠিকভাবে দ্বীন পালনের সুযোগ দাও, যা হলো আমার যাবতীয় বিষয়ের রক্ষাকবচ। আমাকে দুনিয়ায় সঠিকভাবে চলার সুযোগ দাও, যেখানে আছে আমার জীবনোপকরণ। পরকালের জন্য আমাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করো, যেখানে রয়েছে আমার শেষ ঠিকানা (আমার) জীবনকে বানিয়ে দাও সকল কল্যাণ লাভের পাত্র; আর মৃত্যুকে বানিয়ে দাও সকল অনিষ্ট থেকে প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। [মুসলিম, ২৭২০]আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর একটি দোয়া ছিল এ রকম-اللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيْعِ سَخَطِكَউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন যাওয়া-লি নি'অ্‌মাতিক, ওয়া তা'হাওউলি ‘আ-ফিয়াতিক, ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিক ওয়া জামীয়ি সাখাতিকঅর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে (এসব বিষয়ে) আশ্রয় চাই তোমার অনুগ্রহ দূরে সরে যাওয়া, তোমার ক্ষমার মোড় ঘুরে যাওয়া, তোমার আচমকা শাস্তি ও তোমার সব ধরনের ক্রোধ। [মুসলিম, ২৭৩৯]বিভীষিকা, দুর্দশা, মন্দ পরিণতি ও শত্রুর উল্লাস থেকে আশ্রয়আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) মন্দ পরিণাম, দুর্দশা, শত্রুর উল্লাস ও মুসিবতের বিভীষিকা থেকে (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় চাইতেন। [বুখারি, ৬৩৪৭]এ হলো উচ্চ মানের কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের কিছু নমুনা, যেসব বিষয়ে বান্দার গাফিল থাকা উচিত নয়; আর বান্দার দায়িত্ব হলো নিজের, নিজের সন্তানসন্ততি ও সকল মুসলিমের কল্যাণের জন্য দোয়া করার ব্যাপারে গাফিল না থাকা।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা