পরিচ্ছেদ: তাওবা-ইস্তিগফারের ফযীলত ও নির্দেশনা
কুরআন কারীমে মুমিনগণকে বারবার তাওবা ও ইসতিগফার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাওবা ও ইসতিগফারের জন্য ক্ষমা, পুরস্কার ও মর্যাদা ছাড়াও জাগতিক উন্নতি ও বরকতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন হাদীসে ইসতিগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, ইসতিগফার আল্লাহর অন্যতম যিকর। যিকরের সাধারণ ফযীলত ইস্তিগফারকারী লাভ করবেন। এ ছাড়াও ইস্তিগফারের অতিরিক্ত মর্যাদা ও সাওয়াব রয়েছে। এ বিষয়ক কিছু হাদীস এখানে উল্লেখ করছি:১. আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “আল্লাহর কসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” [বুখারী (৮৩-কিতাবুদ দাওয়াত, ৩-বাব ইসতিগফারিন নাবিয়্যি) ৫/২৩২৪]২. আগার আল-মুযানী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “হে মানুষেরা তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। নিশ্চয় আমি একদিনের মধ্যে ১০০ বার আল্লাহর নিকট তাওবা করি বা ইস্তিগফার করি।” [মুসলিম (৪৮-কিতাবুয যিকর, ১২-বাব ইসতিহবুল ইসতিগফার ৪/২০৭৫ (ভারতীয় ২/৩৪৬)]৩. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বান্দা আল্লাহর নিকট তাওবা করলে (পাপ থেকে ফিরে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করলে আল্লাহ সীমাহীন খুশি হন। তার খুশির তুলনা, এক ব্যক্তি জনমানবশূন্য মরুভূমিতে থেমেছে। তার সাথে তার বাহন, যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সে একটু বিশ্রাম করতে যেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখে যে, তার বাহন হারিয়ে গিয়েছে। মরুভূমির প্রচণ্ড রোদ্র ও পিপাসায় সে ক্লান্ত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে নিয়ে একসময় অবসাদে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে সে দেখতে পায় যে তার উট তার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সে এতই খুশি হয় যে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে: “হে আল্লাহ, আপনি আমার দাস, আমি আপনার প্রভু। আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল করে ফেলে। উট ফিরে আসাতে এ ব্যক্তি যত আনন্দিত হয়েছে কোনো পাপী বান্দা পাপ থেকে ফিরে আসলে বা তাওবা করলে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। [বুখারী (৮৩-কিতাবুদ দাওয়াত, ৪-বাবুত তাওবা) ৫/২৩২৪ (ভারতীয়: ৯৩৩); মুসলিম (৪৯-কিতাব তাওবা, ১. বাবুল হাদি আলাত তাওবাহ) ৪/২১০৪ (ভারতীয়: ২/৫৪)]সুবহা-নাল্লাহ! কত ভালবাসেন আল্লাহ তাঁর পাপী বান্দাকে!! এ সুযোগ শুধু পাপীদের জন্যই। আমাদের কি আগ্রহ হয় না যে মহান প্রভুকে এভাবে আনন্দিত করব!৪. আনাস (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন: হে আদম সন্তান, তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে ও আমার করুণার আশা করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তুমি যাই কর না কেন, কোনো কিছুই পরোয়া করব না। হে আদম সন্তান, যদি তোমার পাপ আসমান স্পর্শ করে এরপরও তুমি ইস্তিগফার কর বা ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করব, কোনো পরোয়া করব না। হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পূর্ণ পাপ নিয়ে আমার কাছে হাজির হও, কিন্তু শিরক থেকে মুক্ত থাক, তাহলে আমি পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা তোমাকে প্রদান করব। [১৩৭ হাদীসটি হাসান। তিরমিযী (৪৯-কিতাবুদ দাওয়াত, ৯৯-বাব ফী ফাযলিত তাওবাতি...) ৫/৫১২ (ভারতীয় ২১৯৪), আত-তারগীৰ ২/৪৬৪]৫. আবদ ইবনু বুসর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: “সেই সৌভাগ্যবান যে তার আমলনামায় অনেক ইস্তিগফার পেয়েছে।” [হাদীসটি সহীহ। ইবন মাজাহ (৩৩-কিতাবুল আদব, ৫৭-ৰাবুল ইসতিগফার ২/১২৫৪, নং ৩৮১৮ (ভারতীয় ২২৭১), আত-তারগীব ২/৪৬৫]