পরিচ্ছেদ: কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি
শুকর অর্থ কৃতজ্ঞতা, রিদ্বা অর্থ সন্তুষ্টি এবং কানাআত অর্থ স্বল্পে তুষ্টি। এ তিনটি কর্মে মুমিনের মনকে অনুশীলন করতে হবে। এগুলি দুনিয়া ও আখিরাতের অনন্ত নিয়ামতের উৎস। আল্লাহ বলেন:لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ﴿٧﴾অর্থঃ “যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তবে আমি আরো বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্তি বড় কঠিন।” [সূরা ইবরাহীম, ৭ আয়াত]আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অগণিত নেয়ামত রয়েছে। আবার অনেক কষ্টও রয়েছে। মানুষের একটি বড় দুর্বলতা আনন্দের কথা তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া ও কষ্ট বেদনার কথা বারংবার স্মরণ করা। এ দুর্বলতা কাটাতে হবে। জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই ইতিবাচক হতে হবে। আমরা কখনোই কষ্ট ও অসুবিধাগুলোকে বড় করে দেখব না। কষ্টের কথা বারংবার মনে করে জাবর কাটব না। বরং আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত, শান্তি, সুখ বারংবার স্মরণ করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব। এ ইতিবাচক ও কৃতজ্ঞতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ। এ দৃষ্টিভঙ্গি যে কোনো মানুষের জীবনকে শান্তি ও পরিতৃপ্তিতে ভরে দেয়।কষ্টের অনুভূতিকে ক্রমান্বয়ে কৃতজ্ঞতার অনুভূতিতে রূপান্তরিত করতে হবে। আল্লাহর অগনিত নিয়ামতের মধ্যে কিছু কষ্টের কারণে যদি গোনাহ ক্ষমা হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তাহলে অসুবিধা কী? প্রতিটি মানুষের জীবনেই বিপদাপদ আছে। কাজেই আমার জীবনে তো কিছু অসুবিধা থাকবেই। বিপদ ও সমস্যা তো আরো কঠিন হতে পারত। অনেকের জীবনেই তো আমার চেয়েও অধিক কষ্ট আছে। কাজেই আমার হতাশ হওয়ার কিছু নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,“সম্পদে, শক্তিতে বা রিকে তোমাদের চেয়ে উত্তম কারো দিকে যখন তোমাদের কারো দৃষ্টি পড়বে, তখন যেন সে তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় যারা আছে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে।” [বুখারী (৮৪-কিতাবুর রিকাক, ৩০-বাব লিইয়ানযুর ইলা মান হুয়া আসফাল) ৮/৪৭৬, নং ১৫৫, (ভা ২৯৬০); মুসলিম (৫৩-কিতাবুয যুহদ) ৪/২২৭৫, নং ২৯৬৩, (ভা ২৪০৭)]অতি সামান্য নেয়ামতেরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। সামান্যতম আনন্দ, তৃপ্তি, ভাললাগা, চারপাশের কারো সামান্যতম সুন্দর আচরণ সব কিছুর জন্য হৃদয়ভরে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। আল্লাহর সকল নিয়ামতই বড়। ছোট্ট নেয়ামতকে বড় করে অনুভব করলে আল্লাহ আরো বড় নেয়ামত প্রদান করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাঃ বলেন:যে ব্যক্তি অল্পের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে বেশিরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। [আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/২৭৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/২১৭। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।]জীবনের সকল আনন্দ, সুখ, লাভ, পুরস্কার ইত্যাদি সকল নিয়ামতের কথা প্রসঙ্গ ও সুযোগ পেলে অন্যদেরকে বলতে হবে। আমরা সাধারণত সুখের বা আনন্দের কথার চেয়ে দুঃখের কথা বলতে বেশি আগ্রহী। আমাদেরকে এর বিপরীত বলার অভ্যাস আয়ত্ত করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:“আল্লাহর নিয়ামতের কথা বলা কৃতজ্ঞতা এবং তা না বলা অকৃতজ্ঞতা।” [আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/২৭৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/২১৭। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।]আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার দাবি, বান্দার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। যদি কেউ আমাদের সামান্যতম সহযোগিতা করেন তবে আমাদের দায়িত্ব, তার প্রতি পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সম্ভব হলে তাকে প্রতিদান দেওয়া। না হলে তার জন্য দোয়া করা এবং তার উপকারের কথা অকপটে সকলের কাছে স্বীকার করা ও বলা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।” হাদীসটি সহীহ। [তিরমিযী (২৮-কিতাবুল বির, ৩৫-ৰাৰ মা জাআ ফিশ শুকরি..) ৪/২৯৯, নং ১৯৫৪ (ভারতীয় ১/১৭)]অন্য হাদীসে তিনি বলেন: “যদি তোমাদের কাউকে কেউ কোনোভাবে উপকার করে তবে তোমরা তার প্রতিদান দিবে। যদি তোমরা প্রতিদান দিতে না পার তবে তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবে যাতে অনুভব করতে পার যে, তোমরা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পেরেছ।” [আবু দাউদ (৯-কিতাবুয যাকাত, ৩৯-বাৰ আতিয়্যাতি মান সাআলা বিল্লাহি) ২১৩১ (ভারতীয় ১/২৩) নাসায়ী, আস-সুনান ৫৮৭ (ভা ১/২৭৬); আলবানী, সহীহুত তারগীব ১০৩১। হাদীসটি সহীহ।]