পরিচ্ছেদ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া
আল্লাহর কাছে দোয়া না করার সর্বশেষ অবস্থা আল্লাহর কাছে দোয়া না করে অন্যের কাছে দোয়া করা। বিশেষ বিপদে বা বড় বড় সমস্যায় আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া। বাকি ছোটখাট বা সাধারণ বিপদ আপদ, সমস্যা, হাজত, প্রয়োজন ইত্যাদির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা। এটি ভয়ঙ্কর শিরক।আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে প্রার্থনাই শিরকের মূলকুরআন কারীমের আলোকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, যুগে যুগে অধিকাংশ কাফির মুশরিক আল্লাহর উপর ঈমান থাকা সত্ত্বেও, আল্লাহকে একমাত্র স্রষ্টা, রিযিকদাতা, পালনকর্তা ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে বিশ্বাস করার পরেও এই দোয়ার কারণেই মুশরিক হয়ে গিয়েছে।কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা সন্দেহাতীতভাবে জানতে পারি, মক্কার মুশরিকগণ বিশ্বাস করতো যে - আল্লাহই এ বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, প্রতিপালক, সর্বময় ক্ষমতার মালিক, তার উপরে কারো ক্ষমতা নেই, তিনিই একমাত্র রিযিক দাতা, জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তারা একবাক্যে স্বীকার করতো। কুরআন করীমের বিভিন্ন স্থানে একথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। [ইউনূস: ৩১; মুমিনূন: ৮৪-৮৯; আনকাবূত: ৬১-৬৩; লুকমানঃ ২৫; যুমার: ৩৮; যুখরুফ ৯, ৮৭, ইত্যাদি] অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করতো যে,- ‘লা খালিকা ইল্লাল্লাহ’ , লা রাব্বা ইল্লাল্লাহ , লা রাযিকা ইল্লাল্লাহ , লা মালিকা ইল্লল্লাহ' ইত্যাদি। কিন্তু তারা এ বিশ্বাস সত্ত্বেও আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য নবী, ফিরিশতা, প্রতিমা, পাথর, গাছ ইত্যাদির ইবাদত বা পূজা করত। অর্থাৎ, তারা লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ মানত না। [সূরা সাফফাত: ৫-৩৬; সূরা সাদ: ৪-৫]শিরকের উৎপত্তি আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসের কারণে নয়। শিরকের উৎপত্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মানুষ, ফিরিশতা, গাছ, পাথর বা প্রাকৃতিক শক্তিকে অলৌকিক বা অপার্থিব কল্যাণ ও অকল্যাণের ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাদের ইবাদত বা পূজা করা। বিশেষত তাদের কাছে সাহায্য, কল্যাণ, আশ্রয় ও বিপদমুক্তি প্রার্থনা করা। হাদীসের আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রিয়, নেককার ওলী, বুজুর্গ, নবী বা ফিরিশতাগণের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি, অতিভক্তি ও তাদেরকে মঙ্গল বা অমঙ্গল করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করার কারণে মানব সমাজে শিরক প্রবেশ করেছে ও প্রতিপালিত হয়েছে। এখানে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। হাদীস থেকে শুধুমাত্র মুসলিম সমাজে শিরক প্রবেশের দু’টি কহিনী আলোচনা করছি।প্রথম ঘটনা: প্রথম মানব সমাজ ছিল তাওহীদবাদী মুমিন মুসলিম। আদম (আ)-এর পরে কয়েক শতাব্দী এভাবেই মানুষ তাওহীদ ও ঈমানের উপর ছিল। এরপর আওলিয়া কেরামের ক্ষেত্রে অতিভক্তির কারণে ক্রমান্বয়ে সমাজে শিরকের শুরু হয়। সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে, তাফসীরে তাবারী ও অন্যান্য তাফসীরের গ্রন্থে এ বিষয়ক অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ সকল বর্ণনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ: আদম সন্তানদের মধ্যে ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসর - এ পাঁচ ব্যক্তি খুব নেককার বুজুর্গ মানুষ ছিলেন। তাঁদের অনেক অনুসারী, ভক্ত ও মুরীদ ছিলেন, যারা তাদের বেলায়াতের বিষয়ে খুবই উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। তাদের মৃত্যুর পরে তাদের বিষয়ে অতিভক্তিকারী কোনো কোনো মুতাকীদ বলেন: আমরা যদি এঁদের ছবি বানিয়ে রেখে দিই তাহলে তা আমাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করতে উৎসাহিত করবে। এরপর যখন এরাও মারা গেল তখন ইবলিস পরবর্তী যুগের মানুষদেরকে ওয়াসওয়াসা দিতে লাগল, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ তো এদের শুধু শুধু ছবি করে রাখেননি। তারা তো তাদের ইবাদত করত এবং তাদের ডাকার ফলেই তো তারা বৃষ্টি পেত। তখন সে যুগের মানুষেরা এঁদের পূজা করা শুরু করল। [সহীহ বুখারী ৪/১৮৭৩, তাফসীরে তাবারী ২৯/৯৮-৯৯]দ্বিতীয় ঘটনা: তাওহীদের অন্যতম সিপাহসালার ছিলেন ইবরাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আ) তঁদেরই বংশধর আরব জাতি। তারাও তাওহীদের উপর ছিল। তাদের মধ্যে শিরকের প্রচলন সম্পর্কে ইবনু ইসহাক তার “সীরাতুন্নবী” গ্রন্থে বিভিন্ন সাহাবী ও তাবেয়ীর সূত্রে লিখেছেন: এরা বলেন যে, ইসমাঈলের বংশে আরবদের মধ্যে শিরক প্রচলনের কারণ ছিল, এরা কাবাঘরের খুবই ভক্তি করত। তারা কাবাঘর ছেড়ে যেতে চাইতেন না। যখন তাদের বাধ্য হয়ে কাবাঘর ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হতো, তখন তারা সাথে করে কাবাঘরের তাযীমের জন্য কাবাঘরের কিছু পাথর নিয়ে যেতেন। তারা যেখানেই যেতেন সেখানে এই পাথরগুলো রেখে তার তাওয়াফ করতেন ও সম্মান করতেন। পরবর্তী যুগে ক্রমান্বয়ে এ সকল পাথর ইবাদত করার প্রচলন হয়ে যায়। পরে মানুষেরা খেয়াল খুশি মতো বিজ্ঞি পাথর পূজা করতে শুরু করে। এছাড়া আরবদের নেতা আমর ইবনু মুহাঈ তার কোনো কাজে সিরিয়ায় গমন করেন। সেখানের মানুষেরা মূর্তি পূজা করত। তিনি তাদের বলেন: এসকল মূর্তি তোমরা কেন পূজা কর? তারা বলে: আমরা এদের পূজা করি। এদের কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করি। তখন এরা আমাদের বৃষ্টি দান করে। বিপদে আমরা এদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তখন এরা আমাদের সাহায্য করে। তখন তিনি তাদের থেকে কয়েকটি মূর্তি এনে মক্কায় স্থাপন করেন এবং মক্কাবাসীকে এদের তাযীম করতে নির্দেশ দেন।” [ইবনু হিশাম, আস-সীরাহ আন-নাবাৰীয়্যাহ ১৯৪-৯৫]ফিরিশতা ও নবী-ওলীদের নিকট প্রার্থনার দলিল আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদতের ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল দুটি:প্রথম যুক্তিঃ এরা সবাই আল্লাহর প্রিয়, আল্লাহর নবী বা ফিরিশতা অথবা আল্লাহর পুত্রকন্যা। এদের ইবাদত করলে আল্লাহ নিশ্চয় খুশি হবেন এবং এভাবে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারব। আল্লাহ বলেন:وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰঅর্থঃ “আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য আউলিয়া (অভিভাবক বা বন্ধু) গ্রহণ করেছে তারা বলে: আমরা তো এদের শুধু এজন্যই ইবাদাত করি যেন এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছে দেবে।” [সূরা যুমার: ২-৩]দ্বিতীয় যুক্তি: আল্লাহই একমাত্র প্রভু , প্রতিপালক এবং সকল ক্ষমতার মালিক। তবে কিছু মানুষ ও ফিরিশতা আছেন যারা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়, তাদের সুপারিশ আল্লাহ গ্রহণ করেন। এ সকল ফিরিশতা ও মানুষের ইবাদাত করলে, এরা খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে মানুষের বিপদ কাটিয়ে দেন, প্রয়োজন পূরণ করেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللَّهِ ۚ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿١٨﴾অর্থঃ “তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করে তারা তাদের কোনো ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী শাফায়াতকারী। আপনি বলুন: তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছু জানাচ্ছ যা তিনি জানেন না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যে ? সুবহানাল্লাহ! তিনি সুমহান, সুপবিত্র এবং তোমাদের শিরক থেকে তিনি উর্ধে।” [সূরা ইউনুস: ১৮]মুশরিকগণ যদিও মনে করত যে, একমাত্র আল্লাহই সকল ক্ষমতার অধিকারী এবং এসকল উপাস্য আল্লাহর নিকট থেকেই সুপারিশ করে এনে দেন, তবুও তাদের ধারণা ছিল আল্লাহর সাথে এদের যে সম্পর্ক তাতে এদের সুপারিশ আল্লাহ ফেলতে পারবেন না। এভাবে এদের মধ্যে মানুষের মঙ্গল বা অমঙ্গল করার এক ধরনের ক্ষমতা আছে বলেই তারা মনে করত। অর্থাৎ তারা মনে করতো যে, মূল ক্ষমতা আল্লাহরই। তবে এদেরকে তিনি (আল্লাহ) কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন। এজন্য কুরআন করীমে বিভিন্ন স্থানে ইহুদি, নাসারা ও কাফিরদের শিরকের প্রতিবাদে আল্লাহ বারবার উল্লেখ করেছেন যে, “এরা আল্লাহকে ছাড়াও যে সকল নবী, ফিরিশতা, ওলী বা প্রতিমার ইবাদত বা পূজা করে তারা কোনো মঙ্গল বা অমঙ্গলের ক্ষমতা রাখে না।” [দেখুন: মায়েদা: ৭৬; আনআম: ৭১; ইউনূস ১৮, ৪৯; রাদ: ১৬; তাহা: ৮৯; আম্বিয়া: ৬৬; হাজ ১২; ফুরকান: ৩, ৫৫; শু'আরা: ৭৩]তাহলে শিরকের ভিত্তি ছিল আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো নবী, ফিরিশতা, ওলী বা কোনো প্রাকৃতিক শক্তিকে অপার্থিব ও অলৌকিক মঙ্গল ও অমঙ্গলের ক্ষমতার অধিকারী মনে করে বা তাদের সাথে আল্লাহর সরাসরি বিশেষ সম্পর্ক ও সুপারিশের বিশেষ অধিকার আছে মনে করে এদের কাছে প্রার্থনা করা। দোয়া বা প্রার্থনাই মূলত সকল শিরকের মূল। উৎসর্গ, কুরবানি (sacrifice), নয়র, মানত, ফুল, সাজদা, গড়াগড়ি ইত্যাদি সবই মূলত দোয়ার জন্যই। যেন পূজিত ব্যক্তি বা বস্তু এ সকল ভেট বা উৎসর্গে খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি প্রার্থনা পূরণ করেন বা হাজত মিটিয়ে দেন সে জন্যই বাকি সকল প্রকারের ইবাদত ও কর্ম। অপরদিকে এদের কাছে প্রার্থনা মূলত জাগতিক। ফসল, রোগব্যাধি, বিপদাপদ, সন্তান, বিবাহ, ইত্যাদি জাগতিক প্রয়োজন মিটিয়ে দেওয়ার জন্যই এদের কাছে প্রার্থনা করা হয়। জান্নাত বা স্বর্গ লাভ, ক্ষমা, স্রষ্টার ভালোবাসা, আখেরাতের উন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে এদের কাছে চাওয়া হয় না।এজন্য আমরা কুরআন করীমের বিবরণ থেকে দেখতে পাই যে, মুশরিকরা ফিরিশতা, নবী, প্রতিমা ইত্যাদির ইবাদত করত মূলত দোয়ার মাধ্যমে। সাধারণভাবে মুশরিকদের শিরকই ছিল যে, তারা আল্লাহকেও ডাকত বা আল্লাহর কাছে দোয়া চাইত, আবার আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য নবী, ফিরিশতা, বুজুর্গ, পাথর, প্রতিমা ইত্যাদির কাছেও দোয়া চাইত। এজন্য কুরআন করীমে এদের শিরককে অধিকাংশ স্থানে দোয়া' নামে অভিহিত করা হয়েছে। প্রায় ৭০ এরও অধিক স্থানে মুশরিকদের শিরককে ‘দোয়া বলে অভিহিত করা হয়েছে।সাধারণ হাজত বনাম বড় হাজতমুশরিকদের এসকল দোয়া-প্রার্থনা সবই ছিল মূলত পার্থিব ও জাগতিক সমস্যাদি কেন্দ্রিক। রোগ, ব্যধি, বৃষ্টিপাত, সন্তান, বাণিজ্যে উন্নতি, বরকত, বিপদমুক্তি, রিযিক বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়েই মুশরিকগণ এসকল উপাস্যের কাছে প্রার্থনা করত, যেন তারা আল্লাহর নিকট থেকে তাদের হাজত পূর্ণ করে দেয়। আখেরাতের মুক্তি, জান্নাত, কামালাত ইত্যাদির জন্য এদের কাছে কেউ যেত না। মূলত অধিকাংশ মুশরিক আখেরাতে অবিশ্বাস করতো।জাগতিক এ সকল প্রার্থনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মুশরিকের সাধারণ নিয়ম ছিল, ছোটখাট বিপদ আপদ প্রয়োজনে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য উপাস্যদের কাছে চাওয়া। আর খুব কঠিন বিপদে আল্লাহর কাছে চাওয়া। সম্ভবত তারা ভাবতো, ছোটখাট বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনকে বিরক্ত করার কী দরকার। এজন্য তো আল্লাহর প্রিয় ফিরিশতা, নবী, আল্লাহর মেয়ে, স্ত্রী ইত্যাদি রয়েছে। একান্ত যে সকল কঠিন বিপদে এরা কূল পান না, সেখানে মহাপ্রভু সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহকে ডাকা যেতে পারে।কুরআন কারীমে এ বিষয়ে অনেক স্থানে বলা হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে যে, মুশরিকগণ যখন কঠিন বিপদে পড়ে, নদীতে বা সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে, বা আল্লাহর আযাব বা প্রাকৃতিক গজব এসে উপস্থিত হয় তখন মনেপ্রাণে আল্লাহর নিকট বিপদমুক্তির জন্য প্রার্থনা করে। অথচ সাধারণ হাজত প্রয়োজনে তারা তাদের অন্যান্য উপাস্যদের নিকট প্রার্থনা করে। [ আনআম: ৬৩; আরাফ: ১৮৯; ইউনূস: ১২, ২২; ইসরা: ৬৭; আনকাবূত: ৬৫; কম: ৩৩; লুকমান: ২৩; সূরা যুমার: ৮; ইত্যাদি]কুরআনের বিবরণ থেকে বুঝা যায় যে, অধিকাংশ মুশরিকই এভাবে চলত। সূরা হজ্বের একটি বর্ণনা থেকে দেখা যায় যে, কিছু মানুষ সাধারণভাবে আল্লাহর ইবাদত করত। কিন্তু আল্লাহর প্রতি তাদের আস্থা ও ঈমানের দৃঢ়তা খুবই কম। এজন্য কঠিন বিপদে পড়লে তারা ঈমান হারিয়ে ফেলত এবং শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ত। তখন আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যর কাছে চাওয়া শুরু করত। [সূরা হাজ্ব: ১১-১৩]উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো নবী, ওলী, ফিরিশতা বা কারো কাছে প্রার্থনা করা শিরকের মূল। এবং একারণেই অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর উপর ঈমান থাকা সত্ত্বেও শিরকে লিপ্ত হয়। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন:وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ ﴿١٠٦﴾অর্থঃ “অধিকাংশ মানুষই শিরকে রত অবস্থায় আল্লাহর উপর ঈমান আনে।” [সূরা ইউসূফ: ১০৬]এ আয়াতের তাফসীরে ইবনু আব্বাস (রা), মুজাহিদ, আতা, ইকরিমাহ, আমির, ইবনু সিরীন, হাসান বসরী, কাতাদাহ, ইবনু যাইদ প্রমুখ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী, মুফাসসির বলেছেন যে, মুশরিকরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, মৃত্যুদাতা, প্রতিপালক এবং রাব্দুল আলামীন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে তার সাথে শিরক করে। [বুখারী (১০০-কিতাবুত তাওহীদ, ৪০-বাব.. (ফালা তাজআলু লিল্লাহি আনদাদা) ৬/২৭৩৩; (ভা ২/১১২১), ৫/৪১১, তাফসীরে তাবারী ১৩/৭৬৭৯, তাফসীরে কুরতুবী ৯/২৭২-২৭৩, ফাতহুল বারী ১৩/৪৯৪]