পরিচ্ছেদ: মুসলিম সমাজের দোয়া কেন্দ্রিক শিরক
দোয়ার আলোচনার মধ্যে উপরের দোয়া কেন্দ্রিক শিরক’-এর আলোচনার উদ্দেশ্য এ শিরক থেকে আত্মরক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাকা। আমরা অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করি যে, বিভিন্ন মুসলিম সমাজে পূর্বতন ধর্মের প্রভাবে, ইসলামের মূলনীতি ও বিশ্বাস সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে, বিপদে আপদে মূর্ত কাউকে আঁকড়ে ধরে মনের আকুতি জানানোর মানবীয় দুর্বলতার কারণে, আল্লাহর প্রতি আস্থার অভাবে ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে দোয়া কেন্দ্রিক শিরক ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।আমাদের সমাজেও অগণিত মুসলিম বিপদে আপদ, রোগব্যাধি, ফসল, সন্তান, বিবাহ ইত্যাদি জাগতিক সমস্যাদির জন্য দেশের অগণিত মাযারে গিয়ে মাযারে শায়িত ব্যক্তিদের নিকট প্রার্থনা করেন। তাদের নিকট সমস্যা মেটানোর আব্দার করেন। তারা যেন খুশি হয়ে সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করেন এই আশায় প্রার্থনার পূর্বে নযর, মানত, উৎসর্গ, টাকা-পয়সা, সাজদা, ক্রন্দন ইত্যাদি পেশ করা হয়। এ কঠিন শিরক থেকে আত্মরক্ষা করা মুমিনের অন্যতম কাজ। শিরক থেকে মুক্ত হতে না পারলে বাকি সকল কর্মই ব্যর্থ। অনন্ত ধ্বংস থেকে মুক্তির কোনো উপায় থাকবে না।এখানে লক্ষণীয় যে কাফির মুশরিক ও পৌত্তলিক সমাজের মতো আমাদের দেশের মানুষেরাও সাধারণত কোনো পারলৌকিক বা আধ্যাত্মিক উন্নতি বা মর্যাদার জন্য এ সকল কবর, মাযার বা দরবারে যান না। আপনার সমাজের আনাচে কানাচে ছড়ানো অগণিত মাযারে গিয়ে দেখবেন সকলেই পার্থিব বিপদ আপদ, সন্তান, রোগব্যধি, মামলা ইত্যাদি জাগতিক সমস্যার দ্রুত নিস্পত্তি ও হাজত পূরণের জন্য এ সকল স্থানে নযর, মানত ইত্যাদি নিয়ে হাজিরা দেন। দু'চার জন মানুষ যারা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য যিয়ারত করেন, তাঁরা নযর, মানত ইত্যাদির ধার ধারেন না। নীরবে যিয়ারত করে চলে যান।অগণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। কোথাও কখনো ঘুণাক্ষরেও বলেননি যে, কোনো প্রকার বিপদে অথবা ছোটখাট প্রয়োজনে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে তোমরা প্রার্থনা করবে, অথবা কারো কবরে গিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবে। উপরন্তু কঠিনভাবে বারবার নিষেধ করেছেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাইতে। বিশেষ করে কবর-কেন্দ্রিক ইবাদত থেকে অত্যন্ত কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। কবরকে কেন্দ্র করেই যে শিরক প্রসার লাভ করে, - তা বিশেষভাবে জানিয়েছেন। এ ধরনের মানুষদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।সমাজে অনেক কথা প্রচলিত আছে। অমুক ব্যক্তি বিপদে পড়ে অমুক বুজুর্গকে ডেকেছিল, তিনি তাকে উদ্ধার করে দিয়েছেন। অমুক ব্যক্তি অমুকের মাযারে গিয়ে দোয়া করে বিপদ কেটে গিয়েছে। এগুলোতে কান দেবেন না। হিন্দু, খ্রিষ্টান ও সকল মুশরিক সমাজেই এ ধরনের কথা প্রচলিত।ভাবতে বড় অবাক লাগে, এ সকল লোকমুখের কথা অনেক মুসলমান কত সহজে বিশ্বাস করেন! অথচ কুরআন ও হাদীসের কথায় তাদের আস্থা আসেনা। আল্লাহ ও তাঁর মহান রাসূল (ﷺ) অগণিত ঘটনায় বলেছেন যে, অমুক, অমুক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বিপদ মুক্ত হয়েছে। ইউনূস (আ) মাছের পেটে কঠিনতম বিপদে আল্লাহকে ডেকে বিপদ মুক্ত হলেন। এ কথায় আস্থা রেখে এরা আল্লাহকে ডাকতে চান না। অস্থির হয়ে শিরকের মধ্যে নিপতিত হন।প্রিয় পাঠক, কুরআন ও হাদীসের বিবরণে আস্থা রাখুন। শুধুমাত্র আল্লাহকেই ডাকুন। তাঁর রহমত থেকে আস্থা হারাবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে শিরকের ভয়াবহ অন্ধকার থেকে রক্ষা করুন।