পরিচ্ছেদ: ঈমানী ভালোবাসার অন্তরায়
এভাবে আমরা দেখছি যে, আল্লাহর জন্য ভালবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও আল্লাহর বেলায়াত অর্জনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। তবে এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ভুলে লিপ্ত হই:১. আল্লাহর জন্য ভালবাসার ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ছাড়া অন্য কাউকে মানদণ্ড ধরা, ২. নিজের বা অন্য কারো ইজতিহাদী মতকে কুরআন-সুন্নাহর সুনিশ্চিত নির্দেশনার উপরে স্থান দেওয়া, ৩. নিজের প্রবৃত্তিকে তৃপ্ত করতে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে ছোট পাপকে বড়, বড় পাপকে ছোট, ঘোট নেক আমলকে বড় বা বড় আমলকে ছোট বানানো এবং ৪. কাফির বিষয়ক আয়াত ও হাদীসকে মুমিনগণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ অগণিত ধর্মীয় দল-উপদলে বিভক্ত। আমরা প্রত্যেকে নিজের দল, মত, মুরব্বী, বুজুর্গ, আকাবির, ইমাম, আমীর বা শাইখকে “আল্লাহর জন্য ভালবাসার মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেছি। মূলত আমরা এখন আর আল্লাহর জন্য ভালবাসি না; বরং প্রত্যেকে নিজ মত বা বুজুর্গের জন্য ভালবাসেন। প্রত্যেকে নিজের দলের মুমিনকে “আল্লাহর জন্য ভালবাসেন বা দীনী ভাই বলে গণ্য করেন। অর্থাৎ তিনি নিজের দলকেই “দীন” বলে বিশ্বাস করছেন। প্রত্যেকে ভিন্নমতের ‘অধিক মুত্তাকীর চেয়ে নিজ মতের কম মুত্তাকীকে অধিক ভালবাসছেন। শুধু তাই নয়, নিজ মতের প্রকাশ্য ফাসিককে ভালবাসছেন। কিন্তু অন্য মতের মুত্তাকী ও সুন্নাত অনুসারীকে দলীয় বা ইজতিহাদী মতভেদের কারণে শত্রু বলে গণ্য করছেন। কুরআন ও হাদীসে কাফিরদেকে শত্রু ভাবার, ঘৃণা করার বা তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করার যে সকল আয়াত ও হাদীস রয়েছে সেগুলোকে আমরা অন্য দলের বা মতের মুমিনদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছি। মুমিনের ঈমান, তাকওয়া, সুন্নাতের অনুসরণ ইত্যাদি সকল নেক আমলকে কিছু মতভেদের কারণে বাতিল করে তাকে কাফির বলছি বা কাফিরের কাতারে ফেলে দিচ্ছি।এভাবে আমরা আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করার নামে দীনকে দলে দলে বিভক্ত করার, মুমিনের সাথে শক্রতার এবং মুমিনের ঈমান ও নেক আমলকে ঘৃণা করার কঠিন পাপে লিপ্ত হচ্ছি। আল্লাহ বলেন:إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍঅর্থঃ “যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো দায়িত্ব তোমার নয়।” [সূরা ৬. আনআম: ১৫৯ আয়াত]এ ভয়ঙ্কর পাপ থেকে রক্ষা পেতে মুমিনের দায়িত্ব দলমত নির্বিশেষে সকল মুমিনকে ভালবাসা। ইজতিহাদী মতভেদের ক্ষেত্রে নিজের মতকে সঠিক মনে করার অধিকার সকলেরই আছে। তবে ইজতিহাদী বিষয়ে নিজের পছন্দনীয় মতকে কুরআন-হাদীসের মতভেদহীন নির্দেশনাগুলোর উপরে স্থান দেওয়া যাবে না। যারা মতভেদহীন নির্দেশনাগুলো পালন করছেন তাদেরকে ইজতিহাদী মতভেদের কারণে ঘৃণা করা যাবে না কখনোই ইজতিহাদী মতভেদকে ঘৃণা বা ভালবাসার ভিত্তি বানানো যাবে না। বরং নিজ মত ও ভিন্ন মত উভয় ক্ষেত্রে ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে ভালবাসতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়।১. আল্লাহর জন্য ভালবাসা একান্তই মুমিনের নিজের আমল। এদ্বারা মুমিন নিজে লাভবান হন, সাওয়াব পান এবং মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহর মহব্বত ও বেলায়াত বৃদ্ধি পায়। যাকে ভালবাসা হলো তিনি প্রকৃতই ভালবাসার উপযুক্ত কিনা, তিনি প্রকৃতই আল্লাহর নিকট “মাক্ববুল (গ্রহণীয়)” কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।২. আল্লাহর জন্য ভালবাসার ন্যূনতম পর্যায় প্রকাশ্য শিরক- কুফরে লিপ্ত নয় এরূপ সকল মুমিনকে ঈমানের কারণে ভালবাসা। তাদের পাপের প্রতি ঘৃণা-সহ তাদের ঈমানের মূল্যায়ন করতে হবে। যারা কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত সুস্পষ্ট কবীরা গোনাহে লিপ্ত পাপের কারণে তাদের সাহচর্য, তাদের সাথে সামাজিক ও আন্তরিক সুসম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হবে। তবে তাদেরকে অমুসলিমদের মত শক্র মনে করার প্রবণতা পরিত্যাগ করতে হবে। তাদের জন্য দোয়া করতে হবে এবং তাদের সংশোধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।৩. আল্লাহর জন্য ভালবাসার সাধারণ পর্যায় দলমত নির্বিশেষ নেক আমল ও সুন্নাত অনুসরণে সচেষ্ট সকল মুমিন ও আলিমকে বিশেষভাবে ভালবাসতে হবে। তাদের কোনো মত বা কর্ম ভুল বা পাপ বলে মনে হলে তাদের হেদায়াত ও তাওফীকের জন্য দোয়া করতে হবে। এ সকল ভুলের কারণে তাদের ঈমান ও নেক আমলকে অস্বীকার করার অর্থ নিজের ইজতিহাদী মতকে কুরআন ও হাদীসের সুনিশ্চিত বক্তব্যের চেয়ে অধিক শক্তিশালী বলে মনে করা। এতে ঈমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরূপ মানসিকতা পরিহার করতে হবে।৪. (ক) “আল্লাহর ওলীগণ”-এর জন্য দুটি শর্ত: ঈমান ও তাকওয়া। দুটিই মূলত অন্তরের বিষয়, বাইরে থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না; তবে কর্ম ও আচরণের মধ্যে ঈমান ও তাকওয়ার আলামত দেখা যায়। (খ) আল্লাহর কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা করা ভয়ঙ্কর পাপ ও আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা। (গ) ফরয পালনের পাশাপাশি নফল পালনের মাধ্যমে আল্লাহর বেলায়াত অর্জন হয়।এ বিষয়গুলোকেই “আল্লাহর জন্য ভালবাসার মানদণ্ড রাখতে হবে। যে ব্যক্তির আমলে ও আচরণে ঈমান ও তাকওয়ার আলামত পাওয়া যায় এবং যিনি ফরযগুলো পালন করেন এবং নফল পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যের চেষ্টা করেন তাকেই আল্লাহর জন্য ভালবাসতে হবে। এরূপ কোনো ব্যক্তির প্রতি সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কোনো মতবিরোধের কারণে হৃদয়ে শক্রতা-বিদ্বেষ পোষণ করা, তার অমঙ্গল কামনা করা, তার সাথে অশোভন আচরণ করা বা তাঁর কুৎসা রটনা করার অর্থ আল্লাহর কোনো অলীর সাথে শত্রুতা করা। জাগতিক প্রয়োজনে নিজের হক আদায়ের জন্য এরূপ ব্যক্তির সাথে বিরোধিতা করা খুবই স্বাভাবিক। মতবিরোধের ক্ষেত্রে তার মতের সমালোচনা করাও খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এরূপ বিরোধিতার কারণে তার প্রতি শক্রতা বা বিদ্বেষ পোষণ, কুৎসা রটনা বা অশোভন আচরণ করা বৈধ নয়। এতে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার মত ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে।৫. আল্লাহর জন্য ভালবাসার সর্বোচ্চ পর্যায়, যে সকল আবিদ ও আলিমকে ঈমান, তাকওয়া ও সুন্নাত অনুসরণে বিশেষ অগ্রগণ্য বলে মনে হয় সকল দলীয়, মাযহাবী ও ইজতিহাদী মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে তাদেরকে বিশেষভাবে ভালবাসতে হবে। মাঝে মাঝে একান্তই আল্লাহর জন্য তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হবে। সম্ভব হলে মাঝে মাঝে এরূপ নেককার মানুষদের সাথে কিছু সময় মাজলিসে আখিরাতের আলোচনায় কাটাতে হবে। গীবত, নামীমা, অহঙ্কার, হিংসা ও সকল পাপমূলক আলোচনা থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহ ও তার রাসূলের (ﷺ) মহব্বত, তাকওয়া, তাওবা ও আখিরাতমুখিতা বৃদ্ধিমূলক আলোচনায় সময় কাটাতে হবে।৬. কাছে বা দূরে, দেশে বা বিশ্বের কোথাও কোনো আলিম বা দায়ীর পরিচয় জানলে ইজতিহাদী মত ও অন্যান্য বিষয়ের অনুভূতি হৃদয় থেকে দূর করে তার দীনদারী ও আল্লাহর দীনের প্রতি তার ভালবাসা ও কর্মকাণ্ডকে বড় করে দেখে তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসুন। ভালবাসার অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত করুন এবং তার জন্য দোয়া করুন। সম্ভব হলে তাকে ভালবাসার কথা জানান। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসার কথা বললে তার জন্য দোয়া করুন।৭. বন্ধুত্ব ও শক্রতা সাধারণভাবে আবেগনির্ভর। আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও শক্রতার ক্ষেত্রেও তা ক্রমান্বয়ে আবেগে পরিণত হয়। তবে মুমিনের উচিত আবেগকে সাধ্যমত নিয়ন্ত্রণ করে ঈমানী দিকটিকে মনের মধ্যে জাগরুক করা। যাকে ভালবাসব তার ঈমান ও তাকওয়ার কমতি বা বৃদ্ধি হলে যেমন আমি সচেতনভাবে ভালবাসা কমিয়ে বা বাড়িয়ে ঈমানী ভালবাসার সাওয়াব পেতে পারি। অনুরূপভাবে যাকে আংশিক বা পূর্ণ অপছন্দ করব তার মধ্যে ঈমান ও তাকওয়ার আলামত পেলে তাকে ভালবাসতে হবে। এভাবে ভালবাসা ও ঘৃণার মধ্যে সচেতন ঈমানী অবস্থা বিদ্যমান থাকবে। সামগ্রিকভাবে সকল ক্ষেত্রে আবেগের আতিশয্য বর্জনের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:“তোমার বন্ধুকে বা পছন্দনীয় ব্যক্তিকে তুমি সহজভাবে ভালবাস; হতে পারে একদিন সে অপছন্দনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হবে। আর তোমার অপছন্দের ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষে তুমি সহজ হও; হতে পারে সে একদিন তোমার বন্ধু ও পছন্দনীয় হয়ে যবে।” হাদীসটি সহীহ। [তিরমিযী (২৮-কিতাবুল বির, ৬০-ইতিসাদ ফিল হু) ৪/৩১৬, নং ১৯৯৭ (ভা ২/২০); আলবানী, সহীহুল জামি, নং ১৭৮; গায়াতুল মারাম, পৃষ্ঠা ২৭১, নং ৪৭২]৮. কাউকে আল্লাহর জন্য ভালবাসতে পারলে তার সাথে সাক্ষাৎ করে তা জানানো এবং কেউ এরূপ ঈমানী ভালবাসার কথা জানালে আহাব্বাল্লাহু... আল্লাহ আপনাকে ভালবাসুন..' বলে তার জন্য দোয়া করা সুন্নাত। মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:“যদি তোমাদের কেউ তার ভাইকে ভালবাসে তবে সে যেন তাকে তা জানায়, যে সে তাকে ভালবাসে।” হাদীসটি সহীহ। [তিরমিযী (৩৭- কিতাবুয যুহদ ৫৩-... ইলামিল হু) ৪/৫১৭, নং ২৩৯২ (ভা ২/৬৫); বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ১৯১; আলবানী, সহীহুল আদাবিল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ২১৬]অন্য হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন: একব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ছিলেন। এমতাবস্থায় অন্য এক ব্যক্তি সেখান দিয়ে গমন করেন। তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি এ (গমনরত) লোকটিকে ভালবাসি।' তিনি বলেন: “তুমি কি তাকে তা জানিয়েছ?' লোকটি বলে: না। তিনি বলেন: তুমি তাকে তা জানাও।' তখন লোকটি গমনরত লোকটির কাছে যায় এবং বলে: “আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি। তখন তিনি বলেন:“আল্লাহ আপনাকে ভালবাসুন, যার জন্য আপনি আমাকে ভালবেসেছেন।” হাদীসটি হাসান। [আবু দাউদ (৪২-কিতাবুল আদাব, ১২৩-বাব ইখবারির রাজুলি..) ৪/৪৯৫; (ভারতীয় ২/৬৯৮) আলবানী, সহীহ ওয়া যয়ীফ সুনানি আবী দাউদ ১১/১২৫; সহীহুল আদাবিল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ২১৬]সুপ্রিয় পাঠক, প্রথমে যে কথাটি আমরা বলেছি সে কথাই আবার শেষে বলছি। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর জন্য ভালবাসা” একান্তই আপনার ইবাদত। এ ইবাদতের উদ্দেশ্য নিজের আমিত্ব, বড়ত্ব, নিজের মত, ইজতিহাদ সবকিছুকে ছোট করে আল্লাহর মহত্ব ও মর্যাদাকে হৃদয়ের মধ্যে গভীর থেকে গভীরতর করা। এ ইবাদতের একমাত্র উদ্দেশ্য মহান আল্লাহকে খুশি করা। যাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসছেন তাকে প্রকৃতই “মাক্ববুল” হতে হবে এমন নয়। মূল কর্ম “আল্লাহর জন্য ভালবাসা”। উক্ত ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য, তাকওয়া ও ইত্তিবায়ে সুন্নাতের প্রকাশ দেখে আপনি তাকে ভালবেসেছেন। এতেই আপনি কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করেছেন। উক্ত ভালবাসিত ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিকট কিরূপ তা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাহ্যিক আমল ও তাকওয়ার ভিত্তিতে ভালবাসার হ্রাসবৃদ্ধি হবে।বিশর হাফী নামে প্রসিদ্ধ বিশর ইবনুল হারিস ইবনু আব্দুর রাহমান বাগদাদী (১৫২-২২৭) তৃতীয় হিজরী শতকের সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি তাঁর ইবাদত ও আখিরাতমুখিতার জন্য খুবই প্রসিদ্ধ ছিলেন। অনেক মানুষই তাঁকে ভালবাসতেন এবং তাঁর সাহচর্য গ্রহণ করতেন। তিনি বলতেন:“একব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মধ্যে নেকি ও কল্যাণ আছে কল্পনা করে তাকে ভালবাসে। যে ভালবাসে সে হয়ত নাজাত পেয়ে যাবে। কিন্তু যাকে ভালবাসা হলো তার কী পরিণতি হবে তা সে নিজেই জানে না।” [ইবনু আসাকির, তারীখ দিমাশক ১০/২০৩-২০৪; যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা ১০/৪৭৫]