পরিচ্ছেদ: দোয়া করার নিয়মকানুন
দোয়ার শুরুতে ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও নবি (ﷺ)-এর দরুদ পাঠ করাদোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে। একইভাবে দোয়া শেষ করবে আল্লাহর প্রশংসা ও নবি (ﷺ) এর উপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে।আলি ইবনু আবী তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক দোয়ার সামনে। পর্দা পড়ে থাকে, যতক্ষণ না মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারের সদস্যের উপর দরুদ পাঠ করা হচ্ছে। [তাবারানি, আল-আওসাত, ১/২২০/৭২১, সামগ্রিকভাবে হাসান]ফুদালা ইবনু উবাইদিল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তিকে সালাতের মধ্যে দোয়া করতে শুনেন; সে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করেনি, আর নবি (ﷺ) এর উপর দরুদও পাঠ করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “সে বড্ড তাড়াহুড়া করল!” তিনি তাকে ডাকেন। এরপর তাকে অথবা অন্য কাউকে বলেন, “তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করবে, তখন সে যেন আল্লাহর প্রশংসা। ও গুণকীর্তন দিয়ে শুরু করে, এরপর নবি (ﷺ) উপর দরুদ পড়ে, তারপর ইচ্ছেমতো দোয়া করে।” [আবু দাউদ, ১৪৮১, হাসান]আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আরেক ব্যক্তিকে সালাত আদায় করতে দেখেন; সে আল্লাহর প্রশংসা স্ততি বর্ণনা করেছে এবং নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করেছে। তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “ওহে সালাত আদায়কারী! (আল্লাহকে) ডাকো, সাড়া পাবে; চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।” [নাসাঈ, ১২৮৫, সহীহ]আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি নবি (ﷺ)-এর পাশে সালাত আদায় করছিলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবু বকর ও উমার (রাঃ) ৷ (সালাতের বৈঠকে) বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা পাঠ করি, এরপর নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পড়ি, তারপর নিজের জন্য দোয়া করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবি (ﷺ) বলেন, “চাও, তোমাকে দেওয়া হবে; চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।” [তিরমিযি, ৫৯৩, হাসান]ইমাম ইবনুল ক্বয়্যিম (রহ) উল্লেখ করেছেন যে, দোয়া করার সময় তিন স্তরে নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করা যায়:১. দোয়ার শুরুতে ও আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা-বাক্য উচ্চারণের পর নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করা;২. দোয়ার শুরুতে, মাঝখানে ও শেষে নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ; এবং৩. দোয়ার শুরুতে ও শেষে নবি (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করা এবং মাঝখানে নিজের প্রয়োজনের কথা পেশ করা।[দেখুন: জালাউল আফহাম ফী ফালিস সলাতি ওয়াস সালাম আলা মুহাম্মাদ খাইরিল আনাম ত্র, পৃ. ৩৭৫]প্রাচুর্য ও প্রশান্তির সময় বেশি করে দোয়া করা আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যার মন চায়—তার কষ্ট ও দুশ্চিন্তার সময় আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিক, সে যেন প্রাচুর্য ও প্রশান্তির সময় বেশি বেশি দোয়া করে।” [তিরমিযি, ৩৩৮২, হাসান] অর্থাৎ, যার মন চায়—তার দুর্দিন, দুর্যোগ ও দেহ-মন-আচ্ছন্নকারী দুশ্চিন্তার সময় আল্লাহ তার দোয়ায় সাড়া দিক, তা হলে সে যেন সুস্থতা, অবসর ও নিরাপত্তার সময় বেশি বেশি দোয়া করে; কারণ মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো—আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়া, সব সময় তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগেই তাঁর কাছে আশ্রয় খোঁজা। [তুহফাতুল আহওয়াযি, ৯/৩২৪] ইউনুস (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে উদ্ধার করেছেন। তাঁর প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন—فَلَوْلَآ أَنَّهُۥ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ ﴿ ١٤٣﴾ لَلَبِثَ فِى بَطْنِهِۦٓ إِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُونَ ﴿ ١٤٤﴾অর্থঃ “যদি সে তাবীহকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতো, তা হলে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত মাছের পেটে থাকত৷” (সূরা আস-সাফফাত ৩৭:১৪৩-১৪৪) নিজের, পরিবার, সম্পদ ও সন্তানের বিরুদ্ধে বদদোয়া না করা জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (এক সফরে) এক ব্যক্তি তার উস্ট্রীকে অভিশাপ দেয়। তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, “নিজের উস্ট্রীকে অভিশাপ দিচ্ছে কে?” সে বলে, “আমি, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)” নবি (ﷺ) বলেন, “এর উপর থেকে নামো; অভিশপ্ত কোনও কিছু নিয়ে তুমি আমাদের সঙ্গে থাকবে না। তোমরা নিজেদেরকে বদদোয়া দিয়ো না; বদদোয়া দিয়ো না নিজেদের সন্তান ও সম্পদকে। এমনটি যেন না হয়—তোমরা এমন এক সময় বদদোয়া দিয়ে বসলে, যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হলো, আর তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দিলেন।” [মুসলিম, ৩০০৯] নিচু স্বরে দোয়া করাআল্লাহ তা'আলা বলেন—ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ ﴿ ٥٥﴾অর্থঃ “তোমাদের রবকে ডাকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে ও চুপে চুপে। অবশ্যই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা আল-আ'রাফ ৭:৫৫)وَاذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْءَاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغٰفِلِينَ﴿ ٢٠٥﴾অর্থঃ তোমার রবকে স্মরণ করো সকাল-সাঁঝে, মনে মনে, কান্নাজড়িত স্বরে, ভীত-বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা গাফিলতির মধ্যে ডুবে আছে।” (সূব আল-আরাফ ৭:২০৫)আবু মূসা আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'এক সফরে আমরা নবি (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলাম। ওই সফরে লোকজন জোরে জোরে “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ। সর্বশ্রেষ্ঠ)” ধ্বনি দিলে, নবি (ﷺ) বলেন, “তোমাদের আওয়াজ নিচু করো। তোমরা কোনও বধির কিংবা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না; তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা ও অতি-নিকটেথাকা এক সত্তাকে; তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন। [বুখারি , ২৯৯২] সাধারণভাবে ‘সঙ্গে-থাকা’র মানে হলো—নিজের আরশে সমাসীন থেকে, জ্ঞান ও অবগতির দিক দিয়ে (বান্দার) সঙ্গে-থাকা, যেমনটি তাঁর রাজকীয়তার জন্য মানানসই; বান্দার অন্তরের খবর তিনি জানেন; তাঁর কাছে কোনও কিছুই গোপন নেই।বিশেষায়িত অর্থে ‘সঙ্গে-থাকা মানে মুমিন বান্দাদের সাহায্য, সমর্থন, সামর্থ্য প্রদান ও সঙ্কেত-প্রদানের দিক দিয়ে সঙ্গে-থাকা। দোয়ার মধ্যে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করাঅর্থাৎ, বিনয়, নম্রতা ও কাতরস্বরে দোয়া করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন—وَلَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلٰىٓ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَخَذْنٰهُم بِالْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ ﴿٤٢﴾ فَلَوْلَآ إِذْ جَآءَهُم بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلٰكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطٰنُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿٤٣﴾অর্থঃ “তোমার পূর্বে অনেক মানবগোষ্ঠীর কাছে আমি রাসূল (ﷺ) পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে বিপদ ও কষ্ট্রের মুখে নিক্ষেপ করেছি, যাতে তারা বিনীতভাবে আমার সামনে মাথা নত করে। কাজেই যখন আমার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপিত হলো, তখন তারা বিনম্র হলো না কেন? বরং তাদের মন আরও বেশি কঠিন হয়ে গেছে এবং শয়তান। তাদেরকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, তোমরা যা-কিছু করছো ভালই করছো।” (সূরা অল- আনাম ৬:৪২-৪৩)قُلْ مَن يُنَجِّيكُم مِّن ظُلُمٰتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ تَدْعُونَهُۥ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً لَّئِنْ أَنجٰىنَا مِنْ هٰذِهِۦ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشّٰكِرِينَ ﴿٦٣﴾অর্থঃ এদের জিজ্ঞেস করো, জল-স্থলের গভীর অন্ধকারে কে তোমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে? কার কাছে তোমরা কাতর কণ্ঠে ও চুপে চুপে প্রার্থনা করো? (কার কাছে বলে থাকে) এ বিপদ থেকে আমাদের উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যই তোমার শোকরগুজারি করবো?” (সূরা আল-আনআম ৬:৬৩)وَاذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْءَاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغٰفِلِينَ ﴿٢٠٥﴾অর্থঃ “তোমার রবকে স্মরণ করো সকাল-সাঁঝে, মনে মনে, কান্নাজড়িত স্বরে, ভীত-বিহুল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা গাফিলতির মধ্যে ডুবে আছে৷” (সূরা আল-আ'রাফ ৭:২০৫)একনাগাড়ে দোয়া করে যেতে থাকা আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “তোমরা (দোয়ার মধ্যে) এ বাক্য উচ্চারণ করা বন্ধ কোরো না—يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِ كْرَامِউচ্চারণঃ ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম।অর্থঃ হে রাজকীয়তা ও মহানুভবতার অধিকারী!” [বুখারি, আত-তারীখুল কাবীর, ৩/২৮০, সহীহ]বান্দার উচিত বেশি বেশি দোয়া করা, দোয়ার পুনরাবৃত্তি করা, আল্লাহর প্রভুত্ব, সার্বভৌমত্ব, নাম ও গুণসমূহ বারবার উল্লেখ করতে থাকা। দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় [ইবনু রজব, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১/২ ৬৯-২৭৫।] যে যেমনটি নবি (ﷺ) উল্লেখ করেছেন “দীর্ঘ সফরের দরুন এক ব্যক্তির চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলামলিন; সে হাত দুটি আকাশের দিকে তুলে ধরে বলছে ‘রব। আমার! রব আমার! “ [মুসলিম, ১০১৫।] এ থেকে বোঝা গেল, দোয়ার মধ্যে আল্লাহ তা'আলার গুণবাক নামসমূহ বারবার উল্লেখ করা উচিত। আর এ জন্য নবি (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ তাড়াহুড়া না করলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যদি না সে গোনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য কোনও দোয়া করে।” জিজ্ঞাসা করা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (দোয়ার মধ্যে) তাড়াহুড়া কী?” নবি (ﷺ) বলেন, “আল্লাহকে ডাকলাম, আবারও ডাকলাম, কিন্তু আমার ডাকে তো সাড়া দিতে দেখলাম না!—এ কথা বলে কেউ যদি হতাশ হয়ে দোয়া করা বন্ধ করে দেয় (তা হলে সেটি হবে তাড়াহুড়া)” [মুসলিম, ২৭৩৫।] শারীআহ-সম্মত ওসীলা অবলম্বন করা ওসীলা মানে নৈকট্য, আনুগত্য ও কোনও কিছুর কাছে যাওয়ার মাধ্যম। রাগিব ইসপাহানী। বলেন, ‘ওসীলা হলো পরম আগ্রহ নিয়ে কোনও বস্তুর কাছে পৌঁছে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলা বলেন—وَابْتَغُوٓا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَঅর্থঃ “তাঁর নৈকট্য অন্বেষন কর” (সূরা আল-মাইদাহ ৫:৩৫)আল্লাহ তা'আলার দিকে ওসীলা অবলম্বনের মূলকথা হলো জ্ঞান ও দাসত্বের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার রাস্তা অবলম্বন করা এবং শারীআ-নির্দেশিত উত্তম আচরণবিধি মেনে চলা। [রাগিব ইসপাহানী, মুফরদাত, ৮৭১]আল্লাহর দিকে ওসীলা অনুসন্ধান করার মানে হলো, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য ও তাঁর পছন্দমত আমলের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা। [ইবনু কাসীর, তাফসীর, ২/৫৩]শারীআহ-সম্মত তাওয়াসসুল বা ওসীলা অবলম্বন তিন প্রকার: আল্লাহ তা'আলার কোনও একটি নাম বা গুণের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা, যেমন—اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ أَنْ تُعَافِيَنِيْউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস'আলুকা বি-আন্নাকা আন্তার রাহ্মানুর রাহিমুল লাত্বিফুল খাবিরু আন তুআ-ফিয়ানীঅর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই— যেহেতু তুমি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু, সূক্ষ্মদশী ও মহাজ্ঞানী তুমি আমাকে মাফ করে দাও।অথবা –أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَرْحَمَنِيْ وَتَغْفِرَلِيْউচ্চারণঃ আস'আলুকা বি-রাহ্মাতিকাল লাতী ওয়াসিআত কুল্লি শাইয়িন আন তারহামানী ওয়া তাগ্ফিরালীঅর্থঃ আমি তোমার কাছে তোমার ওই রহমতের ওসীলা দিয়ে চাই, যা সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে, তুমি আমার উপর দয়া করো এবং আমাকে মাফ করে দাও।তাই আল্লাহ তা'আলা বলেছেন—وَلِلَّهِ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوهُ بِهَاঅর্থঃ আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। (সূরা আল-আ'রাফ ৭:১৮০)সুলাইমান (আঃ)-এর দোয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন—وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ ﴿١٩﴾অর্থঃ “এবং সে বলল—হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছ এবং এমন সকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো।” (সূরা আন-নামল ২৭:১৯)আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন—اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ أَشْهَدُ أَنَّكَ اَنْتَ اللَّهُ لَا إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলূকা বিআন্নি আশ-হাদু আন্নাকা আনতাল্লা-হু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল আ‘হাদুস সামাদুল লাযী লাম ইয়ালিদ, ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুন লাহু কুফুআন আহাদঅর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, একমাত্র তুমিই আল্লাহ্, তুমি ছাড়া সত্য কোনও মা’বুদ নেই, একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারও থেকে জন্ম নেননি এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই।এর পরিপ্রেক্ষিতে নবি (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহর কাছে চেয়েছে তাঁর মহান নাম (ইসমে আ'যম)-এর ওসীলা দিয়ে, যে-নামের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা হলে তিনি সাড়া দেন এবং যার ওসীলা দিয়ে চাওয়া হলে তিনি দেন।” [নাসাঈ, ১৩০০, সহীহ] অপর এক বর্ণনায় আছে, “তুমি আল্লাহর মহান নামের ওসীলা দিয়ে চেয়েছ।” আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে বসে আছি। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছে। সে রুকু, সাজদা ও তাশাহ্হুদের পর দোয়া করে। ওই দোয়ায় সে বলে— اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস-আলূকা বিআন্না লাকাল হামদা, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল-মান্না-নু, বাদী'উস সামাওয়া-তি ওয়াল আরদি, ইয়া- যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম, ইয়া- হাইউ ইয়া- ক্বইউমঅর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই। প্রশংসা কেবল তোমারই; তুমি ছাড়া কোনও হক্ব ইলাহ নেই, তুমি মহান দাতা এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী হে মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী! হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী!তখন নবি (ﷺ) তাঁর সাহাবিদের বলেন, “তোমরা কি জানো, সে কী দোয়া করেছে?” তারা বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ভালো জানেন।” নবি (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহকে তাঁর মহান নাম নিয়ে ডেকেছে, যে নাম নিয়ে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দেন।” [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, ৭০৫, সহীহ] মিহজান ইবনুল আরদা' (রাঃ) থেকে বর্ণিত, 'আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মাসজিদে প্রবেশ করেন। তখন এক ব্যক্তি সালাতের শেষের দিকে তাশাহহুদ পাঠ করছে।اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا أَللَّهُ بِأَنَّكَ الْوَاحِدُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইয়া আল্লা-হু বিআন্নাকাল ওয়া-'হিদুল আ'হাদুস্ স্বমাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইঊ্লাদ্ ওয়ালাম ইয়াকুন লাহু কুফূওয়ান আ'হাদ, আন্ তাগফিরালী যুনূবী, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রহীমঅর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই। হে আল্লাহ্! তুমি এক, একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারও থেকে জন্ম নেননি এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই; তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, একমাত্র তুমিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।তার দোয়া শুনে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তিনবার বলেন, “তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে।” [নাসাঈ, ১৩০০, সহীহ]সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “মাছের পেটের ভেতর থাকাবস্থায় ইউনুস (আঃ) দোয়া করেছিলেন।لَا إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَউচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যা-লিমীনঅর্থঃ তুমি ছাড়া কোনও সার্বভৌম সত্তা নেই! তুমি পবিত্র! আমি তো জালিমদের একজন!কোনও মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে (আল্লাহকে) ডেকেছে, আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।” [তিরমিযি, ৩৫০৫, ইসনাদটি সহীহ]প্রার্থনাকারীর নিজের সম্পাদিত ভালো কাজের ওসীলা দিয়ে আল্লাহ তা'আলার কাছে চাওয়া, যেমন কোনও মুসলিম বলল-اَللّٰهُمَّ بِإِيْمَانِيْ بِكَ أَوْ مَحَبَّتِيْ لَكَ أَوِ اتَّبَاعِيْ لِرَسُوْلِكَ أَنْ تَغْفِرَ لِيْউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বি-ঈমানী বিকা আউ মাহাব্বাতি লাকা আউইত্তাবা-ই লি-রাসূলিকা আন তাগ্ফিরা লীঅর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার উপর আমার যে ঈমান, অথবা তোমার প্রতি আমার যে ভালোবাসা, অথবা তোমার রাসূলের প্রতি আমার যে আনুগত্য, এর ওসীলায় তুমি আমাকে মাফ করে দাও! অথবা বলল— اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِمَحَبَّتِيْ لِمُحَمَّدٍ (ﷺ) وَإِيْمَانِيْ بِهِ أَنْ تَفْرِجَ عَنِّيْউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস'আলুকা বি-মাহাব্বাতি লি-মুহাম্মাদিন (ﷺ) ওয়া ঈমানী বিহী আন তাফ্রিজা আন্নীঅর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই—মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রতি আমার মহব্বত ও তাঁর প্রতি আমার ঈমানের ওসীলায়— আমার দুশ্চিন্তা দূর করে দাও!এ ক্ষেত্রে দোয়াকারীর উচিত এমন ভালো কাজ উল্লেখ করা—যা উল্লেখ করার মতো, যেকাজ আল্লাহ তা'আলার ভয় ও অসন্তুষ্টিকে সামনে রেখে করা হয়েছে, যেখানে সব কিছুর উপর আল্লাহর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর আনুগত্য করা হয়েছে। এরপর ওই কাজের ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, যাতে দোয়া কবুলের ব্যাপারে অধিক আশা করা যায়। নিম্নোক্ত আয়াত দুটি থেকে এর বৈধতা প্রমাণিত হয়:الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ إِنَّنَآ ءَامَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴿ ١٦﴾অর্থঃ “যারা বলে: হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচাও।” (সূরা আল ইমরান ৩:১৬)رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشّٰهِدِينَ ﴿ ٥٣﴾অর্থঃ “হে আমাদের মালিক! তুমি যে ফরমান নাযিল করেছ, আমরা তা মেনে নিয়েছি এবং রাসূলের আনুগত্য কবুল করে নিয়েছি৷ সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে আমাদের নাম লিখে নিয়ো।” (সূরা আল ইমরান ৩:৫৩) গুহাবাসীদের ঘটনা-সংক্রান্ত হাদীসে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, কারণ তাদের প্রত্যেকে এমন একটি করে ভালো কাজের কথা উল্লেখ করেছে, যা সে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য করেছে; এরপর সে তার ওই ভালো কাজের ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। [বুখারি, ২২১৫]জীবিত ও উপস্থিত সৎ ব্যক্তির দোয়াকে আল্লাহ তা'আলার কাছে ওসীলা হিসেবে পেশ করা, যেমন কোনও মুসলিম কঠিন সংকটে পড়েছে অথবা বিরাট মুসিবতের মুখোমুখি হয়েছে এবং সে নিজেকে আল্লাহর সামনে একেবারে তুচ্ছ মনে করছে, এমতাবস্থায় আল্লাহর কাছে (নিজের আকুতি পেশ করার জন্য) সে একটি শক্তিশালী মাধ্যম অবলম্বন করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে এমন এক ব্যক্তির কাছে গেল, যার ব্যাপারে তার ধারণা হলো—সে ন্যায়নিষ্ঠ, আল্লাহ-সচেতন, মহৎ ও কুরআন-সুন্নাহ'র জ্ঞানে সমৃদ্ধ। সে তার কাছে চায়, তিনি যেন তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যাতে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করে দেন। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি (ﷺ)-এর যুগে একবার লোকজন খরার মুখোমুখি হলো। তখন জুমুআর দিন নবি (ﷺ) ও খুতবা (ভাষণ) দিচ্ছিলেন; এমন সময় এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলে “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (আমাদের) ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে আর (আমাদের) পরিবারের লোকজন অভুক্ত। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করুন!” এ কথা শুনে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দু' হাত উঠিয়ে বলেনاَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا، اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا، اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَاউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা আগিছনা-। আল্লা-হুম্মা আগিছনা-। আল্লা-হুম্মা আগিছনা-অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দাও! হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দাও! হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দাও!আমরা আকাশে মেঘের কোনও লক্ষণ দেখিনি। শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কিছুক্ষণের মধ্যেই পাহাড়ের মতো করে মেঘমালা আসতে শুরু করে। নবি (ﷺ) মিম্বার থেকে নামার আগেই, আমি দেখি—তাঁর দাড়ি থেকে বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ছে। ওই দিন আমরা বৃষ্টি পেলাম, এর পরদিন, তার পরদিন, তার পরদিন—এভাবে আরেক জুমুআ পর্যন্ত। তখন ওই বেদুইন (বা অন্য কোনও একজন) বলে, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) স্থাপনা ধ্বসে পড়েছে এবং সম্পদ ডুবে গিয়েছে! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করুন!” তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দু' হাত উঠিয়ে বলেন— اَللّٰهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَاউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা 'হাওয়া-লাইনা- ওয়ালা ‘আলাইনা-। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে (বর্ষিত হোক), আমাদের উপর নয়।এরপর তিনি মেঘমালার যেদিকেই ইশারা করেছেন, সেখান থেকে সেটি সরে গিয়েছে। ততদিনে মদীনা পরিণত হয়েছে একটি গর্তে; এক মাস ধরে সেখান থেকে একটি পানির নালা প্রবাহিত হতে থাকে। কোনও অঞ্চল থেকে লোকজন আসলে, তাদের প্রত্যেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা বলত। [বুখারি, ৯৩২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবি (ﷺ)-কে বলেছিলেন তার মায়ের জন্য দোয়া করতে, যাতে আল্লাহ তাকে ইসলামের দিশা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবি (ﷺ) তার জন্য দোয়া করেন, ফলে আল্লাহ তা'আলা তাকে হিদায়াত দেন। [তথ্যসূত্রের জন্য ৪৯৭ নং হাদীসের টীকা দেখুন] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নবি (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস (রাঃ) -কে বলতেন, যাতে তিনি আল্লাহ তা'আলার কাছে তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণের জন্য দোয়া করেন। তার দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। [বুখারি, ১০১০]নবি (ﷺ) উমার (রাঃ)-কে বলেছিলেন, “ইয়ামানের বাড়তি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুরাদ ও কারান গোত্র থেকে উয়াইস (কারানি) তোমাদের কাছে আসবে। সে কুষ্ঠরোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠবে, তবে এক দিরহাম পরিমাণ জায়গায় এর দাগ থেকে যাবে। তার (কেবল) মা থাকবে, আর সে হবে তার মায়ের সঙ্গে সদাচরণকারী। সে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে কিছু বললে, আল্লাহ তা অবশ্যই পুরো করবেন। তাকে দিয়ে তোমার জন্য ইসৃতিগফার (মাপ্রার্থনা) করানোর সুযোগ পেলে, তুমি তা কোরো।” [মুসলিম, ২৫৪২]দোয়ার সময় গোনাহ ও নিয়ামাতের স্বীকৃতি শিদাদ ইবনু আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) বলেন, “সাইয়িদুল ইসতিগফার বা সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাপ্রার্থনা হলো—اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوْءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, আনতা রাব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাক্বতানী, ওয়াআনা ‘আবদুকা, ওয়াআনা ‘আলা- ‘আহদিকা ওয়াওয়া‘অ্দিকা মাস তাত্বা‘অ্তু। আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা- সনা’তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়াআবূউ (লাকা) বিযামবি। ফাগ্ফিরলী, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা।অর্থঃ হে আল্লাহ্, আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার অঙ্গিকার ও প্রতিজ্ঞার উপরে রয়েছি যতটুকু পেরেছি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যে কাজ করেছি তার অকল্যাণ থেকে। আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আপনি আমাকে যত নিয়ামত দান করেছেন তা-সহ এবং আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আমার পাপ-সহ। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, কারণ আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।কেউ যদি পূর্ণ ইয়াকীন-সহ দিনের বেলা এটি পাঠ করে, আর ওইদিন সন্ধ্যার আগে মারা যায়, তা হলে সে জান্নাতবাসী হবে; আর যে-ব্যক্তি পূর্ণ ইয়াকীন-সহ রাতের বেলা এটি পড়ে, আর সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী হবে।” [বুখারি, ৬৩০৬]দোয়ার মধ্যে ছন্দময় কথা না বলা ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘লোকদের উদ্দেশে প্রতি সপ্তাহে একবার ভাষণ দিয়ো; তাতে না হলে, দু' বার; তাতে না হলে, তিনবার ভাষণ দিয়ো। কুরআন শুনিয়ে মানুষকে ক্লান্ত করে তোলো না; এমনটি যেন না হয়—লোকজন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, আর তুমি গিয়ে তাদের মধ্যে বয়ান শুরু করে দিয়েছ, এভাবে তাদের কথা বন্ধ করে দিয়ে নিজের কথা শুনিয়ে তাদের ক্লান্ত করে তুলছ। তুমি বরং চুপ থেকো; তারা তোমাকে কথা বলতে বললে, ততক্ষণ কথা বলবে, যতক্ষণ তাদের আগ্রহ থাকে। আর দোয়ার মধ্যে ছন্দময় কথা এড়িয়ে চলবে। আমি দেখেছি—আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবিগণ দোয়ার মধ্যে তা এড়িয়ে চলেছেন। [বুখারি, ৬৩৩৭]তিনবার দোয়া করাআবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যাবার পাশে সালাত আদায় করছেন। আবু জাহল ও তার সঙ্গীরা পাশে বসা। এর আগের দিন একটি উট জবাই করা হয়েছে। আবু জাহল বলে, “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে উঠে গিয়ে অমুক গোত্রের ভাগাড় থেকে উটের নাড়িভুড়ি নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ যখন সাজদায় যাবে তখন তার দু' কাঁধের উপর সেগুলো ঢেলে দেবে?” জাতিব পোড়া-কপাল লোকটি (অর্থাৎ উকবা ইবনু আবী মুআইত) গিয়ে উটের নাড়িভূড়ি নিয়ে আসে, এবং নবি (ﷺ) সাজদায় যাওয়ার পর ওইগুলো তাঁর দু' কাঁধের। মাঝখানে ঢেলে দেয়! এ দৃশ্য দেখে তারা হাসিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে। আমি তখন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি; (মক্কাতে) আমার নিরাপত্তা থাকলে আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর পিঠ থেকে ওইগুলো নামিয়ে দিতাম। নবি (ﷺ) সাজদায় পড়ে আছেন; মাথা তুলতে পারছিলেন না।পরিশেষে এক লোক গিয়ে ফাতিমাকে খবর দেয়। বয়সে সে ছিল তখন কিশোরী। সে এসে তাঁর পিঠ থেকে নাড়িভুড়ি নামিয়ে দেয় এবং তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাদের ভৎসনা করে। সালাত শেষে নবি (ﷺ) উচ্চ আওয়াজে তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করেন। তিনি দোয়া করলে তিনবার দোয়া করতেন, আর (আল্লাহর কাছে) কোনও কিছু চাইলে তিনবার চাইতেন। অতঃপর তিনি তিনবার বলেন, “হে আল্লাহ! তুমি কুরাইশের বিচার করো!” তাঁর আওয়াজ শুনে তাদের হাসি মিলিয়ে যায়; তাঁর বদদোয়ায় তারা ভয় পেয়ে যায়। সবশেষে নবি (ﷺ) বলেন, “হে আল্লাহ! আবু জাহল ইবনু হিশাম, উতবা ইবনু রবীআ, শাইবা ইবনু রবীআ, ওয়ালীদ ইবনু উতবা, উমাইয়া ইবনু খালাফ ও উকবা ইবনু আবী মুআইত—এদের বিচার তুমি করো!” [সহীহ মুসলিম গ্রন্থে তার নাম বলা হয়েছে ওয়ালীদ ইবনু উকবা। বিশুদ্ধ নামটি হলো ওয়ালীদ ইবনু ঊকবা দেখুন, ফাতহুল বারী, ৭/১৬৫]তিনি সপ্তম এক ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু আমি তা মনে রাখতে পারিনি। শপথ সেই সত্তার, যিনি মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তিনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, বদরের দিন আমি তাদের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি; পরে তাদেরকে টেনে-হিচড়ে বদরের কুয়োর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। [মুসলিম, ১৭৯৪]কিবলামুখী হয়ে দোয়া করাআবদুল্লাহ ইবনু যাইদ আনসারি মাযিনি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার উদ্দেশে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও সালাত আদায়ের স্থানের দিকে রওয়ানা হন। দোয়া করার ইচ্ছা পোষণ করলে, তিনি কিবলামুখী হতেন এবং নিজের আলখাল্লাটি উলটিয়ে পরতেন। [বুখারি, ১০০৫]দোয়ায় হাত উত্তোলন করা আবু মূসা আশআরি (রাঃ) বলেন, ‘নবি (ﷺ) দোয়া করেন; এরপর দু' হাত তোলেন। আমি তাঁর বাহুমূলের শুভ্রতা দেখতে পাই। [বুখারি, ২৮৮৪] ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, ‘নবি (ﷺ) দু' হাত তুলে বলেন, “হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে, এর সঙ্গে আমার সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি।” [বুখারি, ৪৩৩৯] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) নিজের দু' হাত তোলেন, তাতে আমি তাঁর বাহুমূলের শুভ্রতা দেখতে পাই। [বুখারি, ১০৩০]সালমান ফারিসি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের রব লাজুক ও মহানুভব; তাঁর বান্দা যখন তাঁর কাছে দু' হাত তোলে, তখন তিনি হাত দুটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।” [আবু দাউদ, ১৪৮৮, সামগ্রিকভাবে হাসান] সুযোগ থাকলে দোয়ার আগে ওযু করে নেওয়াআবু মূসা আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হুনাইন যুদ্ধ শেষে নবি (ﷺ) আবূ আমির (রাঃ) -এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী আওতাসের উদ্দেশে পাঠান। এরপর দুরাইদ। ইবনুস সিম্মা'র মুখোমুখি হলে, দুরাইদ নিহত হয়, আর আল্লাহ তার সঙ্গীদের প্রাজিত করেন। নবি (ﷺ) আবু আমিরের সঙ্গে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। (ওই যুদ্ধে) আবু আমিরের হাঁটুতে তির বিদ্ধ হয়। জুশাম গোত্রের এক ব্যক্তি তার দিকে তির নিক্ষেপ করলে সেট তার হাঁটুতে আটকে যায়।আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, “চাচা! আপনার উপর কে তির ছুড়েছে?” তিনি ইশারায় বলেন, “ওই লোকটিই আমার হত্যাকারী, যে আমার উপর তির ছুড়েছে। আমি তার উদ্দেশে এগিয়ে যাই। আমাকে দেখে সে পালিয়ে যায়। আমি তার পিছু ধাওয়া করে বলতে থাকি, “তোমার কি শরম নেই? তুমি কি দাঁড়াবে না?” তখন সে থেমে যায়। আমাদের মধ্যে দু'বার তরবারির আঘাত বিনিময় হয়। এরপর আমি তাকে হত্যা করি।তারপর আবূ আমিরকে বলি, “আপনাকে যে আঘাত করেছে, আল্লাহ তাকে হত্যা করিয়েছেন। তিনি বলেন, “এবার তা হলে এ তিরটি বের করো।” আমি তিরটি বের করলে, সেখান থেকে প্রচুর পানি নির্গত হয়। তখন তিনি বলেন, “ভাতিজা! তুমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর কাছে গিয়ে, তাঁকে আমার সালাম দিয়ে বলো, আবু আমির আপনাকে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বলেছে।বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আবূ আমির আমাকে নিযুক্ত করেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান। আমি (যুদ্ধ থেকে) ফিরে এসে নবি (ﷺ)-এর ঘরে ঢুকি তিনি তখন খেজুর পাতার একটি খাটে শুয়ে ছিলেন। খাটটির উপর ছিল একটি বিছানা। নবি (ﷺ)-এর পিঠ ও পার্শ্বদেশে বিছানার দাগ লেগে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের (যুদ্ধ) ও আবু আমিরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে বলি, “তিনি আপনাকে বলেছেন তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে। তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) পানি আনার নির্দেশ দেন। এরপর ওযু করে নিজের হাত দুটি তুলে বলেন, “হে আল্লাহ! তুমি উবাইদ আবূ আমিরকে মাফ করে দাও!” (ওই সময়) আমি তাঁর বাহুমূলের শুভ্রতা দেখতে পাই। এরপর নবি (ﷺ) বলেন, “হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন তাকে তোমার বিপুল সংখ্যক সৃষ্টি অথবা মানুষের উপর স্থান দিয়ে!” তখন আমি বলি, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমার জন্যও ক্ষমাপ্রার্থনা করুন!” তখন। তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! তুমি আবদুল্লাহ ইবনু কাইসের গোনাহ মাফ করে দাও এবং কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানজনক আবাসে প্রবেশ করাও!” [বুখারি, ৪৩২৩] দোয়ার মধ্যে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করাআবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি (ﷺ) এ আয়াত(দুটি) পাঠ করেন, যেখানে ইবরাহীম (আঃ) প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন—رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ ۖ فَمَن تَبِعَنِى فَإِنَّهُۥ مِنِّى ۖ وَمَنْ عَصَانِى فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿ ٣٦﴾অর্থঃ “হে আমার রব! এ মূর্তিগুলো অনেককে ভ্রষ্টতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, যে আমার পথে চলবে সে আমার অন্তর্গত, আর যে আমার বিপরীত পথ অবলম্বন করবে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তুমি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৬)ঈসা (আঃ) প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন—إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿ ١١٨﴾অর্থঃ “যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তা হলে তারা তো আপনার বান্দা; আর যদি মাফ করে দেন, তা হলে আপনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়৷” (সূরা মাইদাহ ৫:১১৮)এরপর নিজের দু' হাত তুলে বলেন, “হে আল্লাহ! আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ!” এ কথা বলে তিনি কেঁদে ওঠেন। তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন, “জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো 'আপনি কাঁদছেন কেন?' অবশ্য তোমার রব ভালো করেই (তা) জানেন।” জিবরীল এ এসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি নিজের বক্তব্য সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। অথচ তিনি এ সম্পর্কে অধিক অবহিত। পরিশেষে আল্লাহ বলেন, “জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে বলো—তোমার উম্মাহর ব্যাপারে আমি তোমাকে অচিরেই খুশি করে দেবো, তোমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলব না।” [মুসলিম, ২০২]আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজের অভাব-অনুযোগ পেশ করা আল্লাহ তা'আলা বলেন—وَأَيُّوبَ إِذْ نَادٰى رَبَّهُۥٓ أَنِّى مَسَّنِىَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرّٰحِمِينَ ﴿ ٨٣﴾অর্থঃ “আর (এ একই বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান) আমি আইয়ুবকে দিয়েছিলাম। স্মরণ করো, যখন সে তার রবকে ডাকলো, ‘আমি রোগগ্রস্ত হয়ে গেছি এবং তুমি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাকারী৷” (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৩) যাকারিয়্যা (আঃ) দোয়া করেন—رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ ﴿٨٩﴾অর্থঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী ছেড়ে দিয়ো না এবং সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তো তুমিই।” (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৯)ইবরাহীম (আঃ) দোয়ায় বলেন—رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ ﴿٣٧﴾অর্থঃ “হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ-পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি। পরওয়ারদিগার! এটা আমি এ জন্য করেছি যে, এরা এখানে সালাত কায়েম করবে। কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং ফল-ফলাদি দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো, হয়তো এরা শোকরগুজার হবে।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৭)অপরের জন্য দোয়া করার সময় নিজেকে দিয়ে শুরু করা উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কারও কথা স্মরণ করলে তার জন্য দোয়া করতেন (এবং) নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন। [আবু দাউদ, ৩৯৮৪, সহীহ] [৪৩৮, ৪৩৯ ও ৪৪০] এটি প্রমাণিত যে, আনাস, ইবনু আব্বাস ও উম্মু ইসমাঈল (রাঃ) এর জন্য দোয়া করার সময়, নবি (ﷺ) নিজেকে দিয়ে শুরু করেননি। [বুখারি, ১৯৮২, ১৪৩, ২৩৬৮]দোয়ার মধ্যে অপ্রয়োজনীয় শব্দ না বাড়ানো সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) এর ছেলে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আমি (দোয়ার মধ্যে) বলছিলাম—”হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত এবং এর নিয়ামতরাজি, সৌন্দর্য ও অমুক অমুক জিনিস চাই; আর জাহান্নাম এবং এর শিকল, বেড়ি ও অমুক অমুক জিনিস থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।” আমার পিতা আমার এ দোয়া শুনতে পেয়ে বলেন, “ছেলে আমার! আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, অচিরেই কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা দোয়ার মধ্যে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে। তুমি যেন। তাদের অন্তর্ভুক্ত না হও! তোমাকে জান্নাত দেওয়া হলে, জান্নাত ও এর ভেতরের সবাকছুই তোমাকে দেওয়া হবে; আর তোমাকে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় দেওয়া হলে, জাহান্নাম ও এর ভেতরকার সকল অনিষ্ট থেকেই তোমাকে আশ্রয় দেওয়া হবে।” [আবু দাউদ, ১৪৮০, সহীহ]আবু নুআম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) তার ছেলেকে বলতে শুনেন, “হে আল্লাহ! আমি জান্নাতে গেলে তোমার কাছে জান্নাতের ডানদিকে একটি শ্বেত প্রাসাদ চাই।” এ কথা শুনে তিনি বলেন, “ছেলে আমার! আল্লাহর কাছে জান্নাত চাও, আর তাঁর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাও। আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি—এ উম্মাহর মধ্যে অচিরেই কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা পরিচ্ছন্নতা-অর্জন ও দোয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে। [আবু দাউদ, ৯৬, সহীহ] তাওবা করে হারাম থেকে ফিরে আসাআবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন; আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের ওই নির্দেশই দিয়েছেন, যা তিনি দিয়েছিলেন নবি (ﷺ) দেরকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন—يٰٓأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبٰتِ وَاعْمَلُوا صٰلِحًا ۖ إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ ﴿ ٥١﴾অর্থঃ হে রাসূল (ﷺ) গণ! পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা-কিছুই করো না কেন, আমি তা ভালোভাবেই জানি৷” (সূরা আল-মু'মিনূন ২৩:৫১) তিনি (আরও) বলেছেন—يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبٰتِ مَا رَزَقْنٰكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ ﴿ ١٧٢﴾অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর ইবাদাতকারী হয়ে থাকে, তা হলে যে সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস আমি তোমাদের দিয়েছি, সেগুলো নিশ্চিন্তে খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” (সূরা আল-বাকারাহ ২:১৭২)এরপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের দরুন যার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলামলিন; সে হাত দুটি আকাশের দিকে তুলে ধরে বলছে ‘রব আমার! রব আমার!' কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম, আর তার পরিপুষ্টি। হয়েছে হারাম দিয়ে; তা হলে, কীভাবে তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে? [মুসলিম, ১০১৫]নিজের সঙ্গে পিতা-মাতার জন্য দোয়া করাআল্লাহ তা'আলা বলেন-وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا ﴿ ٢٤﴾অর্থঃ “আর দয়া ও কোমলতা-সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে: হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা-সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷” (সূরা আল-ইসরা ১৭:২৪ ) ইবরাহীম (আঃ) প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন—رَبَّنَا اغْفِرْ لِى وَلِوٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ ﴿ ٤١﴾অর্থঃ “হে পরওয়ারদিগার! যেদিন হিসেব কায়েম হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সমস্ত মুমিনদেরকে মাফ করে দিয়ো৷” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৪১) নূহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন—رَّبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا ﴿٢٨﴾অর্থঃ “হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মুমিন হিসেবে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং সব মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করে দাও। জালিমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করো না।” (সূরা নূহ ৭১:২৮)নিজের সঙ্গে মুমিন নারী-পুরুষদের জন্য দোয়া করা وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِঅর্থঃ “আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯) শুধু আল্লাহর কাছে চাওয়াআবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি ছিলাম নবি (ﷺ) এর পেছনে। তখন তিনি বলেন, “এই ছেলে! আমি তোমাকে কিছু কথা শিখিয়ে দিচ্ছি: আল্লাহকে স্মরণে রেখো, তিনি তোমাকে সুরক্ষা দেবেন; আল্লাহকে স্মরণে রেখো, তা হলে তুমি তাঁকে পাবে তোমার প্রতি মনোনিবেশকারী; কিছু চাইলে, আল্লাহর কাছে চেয়ো; আর সাহায্যের প্রয়োজন হলে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে। ভালো করে জেনে রেখো—সবাই মিলে তোমার কোনও কল্যাণ করতে চাইলে, তারা তা পারবে না, কেবল তা-ই হবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন; আবার সবাই মিলে তোমার কোনও ক্ষতি করতে চাইলে, তারা তা পারবে না, কেবল তা-ই হবে, যা আল্লাহ তোমার জনা লিখে রেখেছেন; কলম তুলে নেওয়া হয়েছে আর সহীফাগুলো(র কালি) শুকিয়ে গিয়েছে! [তিরমিযি, ২৫১৬, হাসান সহীহ]