পরিচ্ছেদ: তাওয়াক্কা করে দোয়া পরিত্যাগ
দোয়া না করার একটি অবস্থা হচ্ছে, আল্লাহ দেখছেন বলে দোয়া না করা বা আল্লাহর তাকদীরের উপর নির্ভর করে দোয়া থেকে বিরত থাকা। এভাবে দোয়া পরিত্যাগ কঠিন অপরাধ ও সুন্নাত বিরোধী কর্ম। সকল বিষয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়া আল্লাহর নির্দেশ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত এবং একটি অতিরিক্ত ইবাদত। সুন্নাতের আলোকে আমরা একটি ঘটনাও খুঁজে পাব না, যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দোয়া না করে তথাকথিত তাওয়াক্কুল করেছেন। অথবা আল্লাহ তো আল্লাহ আমার অবস্থা দেখছেন কাজেই দোয়ার কী দরকার? - একথা বলে দোয়া করা থেকে বিরত থেকেছেন এমন একটি ঘটনাও আমরা খুঁজে পাব না।মুহতারাম পাঠক, সাহাবীগণের যুগের পর থেকে, অনেক নেককার মানুষের ঘটনা আপনি বিভিন্ন গ্রন্থে পাবেন, যেখানে তারা বিপদে আপদে দোয়া করেননি। দোয়া করতে বলা হলে তারা বলেছেন, “আল্লাহ তো আমার অবস্থা দেখছেন, অথবা আল্লাহই আমার বিপদ দিয়েছেন আমি কেন তার কাছে বিপদ কাটাতে বলব, ইত্যাদি। কেউ হয়ত বলেছেন, দোয়ার চেয়ে তাওয়াক্কুলই উত্তম।এ সকল বুজুর্গের কর্ম, কারামত ও ঈমানের এই দৃঢ়তা দেখে আমরা বিমোহিত হয়ে মনে করি, এটিই বুঝি ঈমানের ও তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ স্তর। আমরা ভুলে যাই যে, ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর। তার পরেই তাঁর সাহাবীগণ। আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবনের একটি ঘটনাও পাব না যে, তিনি কখনো কোনো সমস্যায় বা প্রয়োজনে দোয়া না করে তাওয়াক্কুল করেছেন। তিনি সর্বদা দোয়া করেছেন ও দোয়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দোয়াই ইবাদত, দোয়াই তাওয়াক্কুল এবং দোয়াই ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর। উপরিউক্ত বুজুর্গগণের স্তর এর নিচে। তারা কূলবের বিশেষ হালতে এসকল কথা বলেছেন।ইবাদত, বন্দেগি, নির্জনবাস, যিকর আযকার ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে আমাদের এ বিষয়টি খুব বেশি মনে রাখতে হবে। অগণিত বুজুর্গের অগণিত আকর্ষণীয় বিবরণ আমরা দেখতে পাব। এগুলো হয়ত ভাল। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদর্শই অনুকরণীয় আদর্শ।বানোয়াট একটি গল্প আমাদেরকে ভুল বুঝতে সাহায্য করে। এ গল্পে বলা হয়েছে: ইবরাহীমকে (আ) যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন জিবরাঈল (আ) এসে তাঁকে বলেন: আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলুন। তিনি বলেন: আপনার কাছে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। জিবরাঈল (আ) বলেন: তাহলে আপনি আপনার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন। তখন ইবরাহীম (আ) বলেন,“তিনি আমার অবস্থা জানেন, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট, অতএব আমার আর কোনো প্রার্থনার প্রয়োজন নেই।”এ কাহিনীটি ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা। কুরআনে ইবরাহীম (আ)এর অনেক দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কখনো কোনো প্রয়োজনে দোয়া করেননি এরূপ কোনো ঘটনা কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত হয়নি। [ইবনু আবূক, তানযীহুশ শারীয়াহ ১/২৫০, আজনী, কাশফুল খাফা ১/১৩৬, আলবানী, সিলসিলাতুদ দাঈফা ১৭৪-৭৬, নং ২১]সর্বোপরি দোয়া পরিত্যাগ করা কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার বিপরীত। বিভিন্ন হাদীসে দোয়া করার নির্দেশ আমরা দেখেছি। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সকল বিষয় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে তাও দেখেছি। উপরন্তু না চাইলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আবু হুরাইরা (রা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন:“কেউ আল্লাহর কাছে না চাইলে আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন। [ইবন মাজাহ (৩৪-কিতাবুদ দোয়া, ১-বাৰ ফাদলিদ দোয়া) ২/১২৫৮, নং ৩৮২৭, (ভারতীয় ২/২৭১); | মুসনাদ আহমাদ ২/৪৪৩, ২/৪৭৭; আলবানী, সহীহ সুনানু ইবন মাজাহ ৩/২৫২। হাদীসটি হাসান]আমরা দেখেছি যে, আল্লাহর কাছে দোয়া না করার ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা ঘোষণা করে আল্লাহ বলেছেন: “এবং তোমাদের প্রভু বললেন: তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর আমি তোমাদের প্রার্থনায় সাড়া দিব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহষ্কার করে তারা লাঞ্ছিত অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” আমরা দেখেছি যে, এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: দোয়াই ইবাদত। আল্লাহর কাছে দোয়া না করাই আল্লাহর ইবাদত থেকে অহষ্কার করা।