০১

দোয়ার অর্থ

০২

আল্লাহর যিকরের সাধারণ ফযীলত

০৩

দোয়া ক্ববুলের সময় ও স্থান

০৪

দোয়া করার আদব বা বৈশিষ্ট্য

০৫

যে সকল স্থানে হাত তুলে দোয়া করা যায়

০৬

দোয়ার প্রকারভেদ

০৭

যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

০৮

দোয়া করার নিয়মকানুন

০৯

যাদের দোয়া কবুল হয়

১০

দোয়ার মহত্ত্ব

১১

দোয়া কবুলের শর্ত ও যেসব কারণে দোয়া কবুল হয় না

১২

দোয়া কবুলের শর্তাবলি

১৩

যিকর বা আল্লাহর স্মরণের মর্মকথা

১৪

তাওয়াক্কা করে দোয়া পরিত্যাগ

১৫

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া

১৬

মুসলিম সমাজের দোয়া কেন্দ্রিক শিরক

১৭

কুরআন আলোচনা ও গবেষণার ফযীলত

১৮

যিকর বিষয়ক কয়েকটি বিধান

১৯

তাওহীদের প্রতি ঈমান

২০

রিসালাতের প্রতি ঈমান

২১

আল্লাহর ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

২২

ভালবাসার মাপকাঠি রাসুলের (ﷺ) অনুসরণ

২৩

আল্লাহর জন্য ভালবাসা-ই ঈমান

২৪

ঈমানী ভালোবাসার অন্তরায়

২৫

অতিরিক্ত কিছু নফল সালাত

২৬

মানুষের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব

২৭

আল্লাহর কাছে যা চাওয়া বেশি গুরুত্বপূ

২৮

রুকিয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা

২৯

নবি (ﷺ)-এর উদ্দেশে দরুদ পড়ার মহত্ত্ব

৩০

ইস্তিগফারের মূলনীতি

৩১

তাওবা-ইস্তিগফারের ফযীলত ও নির্দেশনা

৩২

দোয়া বা প্রার্থনা জ্ঞাপক যিকর

৩৩

দোয়ার কতিপয় মাসনুন নিয়ম ও আদব

৩৪

শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়া

৩৫

কুরআনী যিকরের বিশেষ ফযীলত

৩৬

কুরআন তিলাওয়াতের আদব ও নিয়ম

৩৭

আত্মশুদ্ধিমূলক মানসিক ও দৈহিক কর্ম

৩৮

হতাশা বর্জন ও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা

৩৯

কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি

৪০

নির্লোভ

৪১

নফল সিয়াম ও নফল দান

৪২

কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ ও রাতের যিকর

পরিচ্ছেদ: কুরআনী যিকরের বিশেষ ফযীলত

এভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কুরআনই শ্রেষ্ঠতম যিকর। অন্যান্য যিকরের শ্রেষ্ঠত্বের কারণও কুরআনের অংশ হওয়া। অনেক হাদীসে কুরআন কেন্দ্রিক যিকরের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এক হাদীসে আবু যার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বলেছেন:“আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে (আল্লাহর নৈকট্য পেতে) তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট থেকে যা এসেছে তার চেয়ে, অর্থাৎ কুরআনের চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই।” হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৭৪১, মুনীরী, আত-তারগীব২/৩২৭, নং ২১১৯]আবু উমামাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “বান্দাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাঁর থেকে যা বেরিয়ে এসেছে তার মতো, অর্থাৎ কুরআনের মতো কিছুই নেই।” [তিরমিযী (৪৬-কিতাব ফাযায়িলিল কুরআন, ১৭-বাব) ৫/১৬২ নং ২৯১১ (ভার, ২১১৯); মুনযিরী, আত তারগীব ২/৩২১, মুবারাকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১৮৫। হাদীসটির সনদ দুর্বল]সকল মুহাদ্দিস, ফকীহ ও বুজুর্গ একবাক্যে বলেছেন যে, সকল যিকরের শ্রেষ্ঠ যিকর কুরআন তিলাওয়াত। [ইবনু খুযাইমাহ, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/১০৪, আব্দুর রাউফ মুনাবী, ফাইমুল কাদীর ১৫৪৯, ৪৭, আযীম আবাদী, আউনুল মা'বুদ ৩/৪৪]সুফিয়ান সাওরী (১৬১ হি) বলেন: “সর্বোত্তম যিকর সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত, এরপর সালাতের বাইরে কুরআন তিলাওয়াত, এরপর সিয়াম, এরপর অন্যান্য যিকর।” [আবু নুআইম আল-ইসবাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৭/৬৭]আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ বলেছেন: “সকল কথার উপর কুরআনের মর্যাদা ঠিক অনুরূপ যেমন সকল সৃষ্টির উপর আল্লাহর মর্যাদা।” হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন। [তিরমিযী (৪৬-কিতাব ফাদায়িলিল কুরআন-এর শেষ হাদীস: বাব-২৫) ৫/১৬৯, নং ২৯২৬ (ভা ২/১১৮); ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৯/৬৬; মুবারাকপূরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১৯৬]কুরআন শিক্ষার ফযীলতকুরআন তিলাওয়াত, চর্চা, গবেষণা, কুরআনের অর্থ চিন্তা করা, অনুধাবন করা, শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া ইবাদত ও সর্বোত্তম যিকর। যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত, অর্থ অনুধাবন, আলোচনা, শিক্ষা গ্রহণ, শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি কাজে রত থাকেন তাহলে স্বভাবতই তিনি পূর্বের হাদীসসমূহে বর্ণিত যিকরের ফযীলতসমূহ সর্বোত্তম পর্যায়ে অর্জন করবেন। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে কুরআন কেন্দ্রিক যিকরসমূহের অতিরিক্ত ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে এ বিষয়ে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করছি। কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দানের ফযীলতের বিষয়ে আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন:“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দান করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ।” [বুখারী (৬৯-কিতাব ফাদায়িলির কুরআন, ২১-বাৰ খাইরুকুম মান ....) ৪/১৯১৯ (ভা ২/৭৫২)]উকবা ইবনু আমির (রা) বলেন: আমরা মসজিদে নববী সংলগ্ন সুফফাতে ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের কাছে এসে বলেন: তোমাদের মধ্যে কেউ কি চায় যে, প্রতিদিন মদীনার উপকণ্ঠে আকীক প্রান্তরে যেয়ে কোনো পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতি না করে দুটি বিশাল উঁচু চুট উটনী নিয়ে ফিরে আসবে? আমরা বললাম: আমরা প্রত্যেকেই তা পছন্দ করি। তিনি বলেন:“তোমাদের কেউ যদি মসজিদে যেয়ে আল্লাহর কিতাবের দু'টি আয়াত শিক্ষা করে তবে তা দু’টি অনুরূপ উন্ত্রীর চেয়ে উত্তম। তিনটি তিনটির চেয়ে এবং চারটি চারটির চেয়ে উত্তম...।” [মুসলিম (৬-সালাতিল মুসাফিরীন, ৪১-বাব ..কিরাআতিল কুরআন) ১/৫৫২, নং ৮০৩ (ভা ১/২৭০)]স্বভাবতই, এ সকল হাদীসে কুরআন শিক্ষা বলতে কুরআন তিলাওয়াত, অর্থ অনুধাবন ও তার বিধানাবলী শিক্ষা করা বুঝান হয়েছে। আমরা আজ ইসলামের মূল প্রেরণা ও শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। একদিন আমার এক বাংলাদেশী বন্ধুকে এক মিশরীয় বন্ধুর সাথে পরিচয় করে দিয়ে বললাম: আমার বন্ধু হাফিজ অমুক। মিশরীয় বন্ধু বললেন: তাই! হাফিজ!! একলক্ষ হাদীস মুখস্থ আছে? আমি বললাম: না, তা নয়। হাফিযে কুরআন। কুরআন মুখস্থ আছে। মিশরীয় বন্ধু বললেন: মুসলিম উম্মাহর আগের দিনে প্রত্যেক আলিম, বরং সকল শিক্ষার্থীই কুরআন মুখস্থ করতেন। কুরআন মুখস্থকারীকে বিশেষভাবে কখনো হাফিজ বলা হতো না। সকলেই তো কুরআন মুখস্থ করেছেন, কাজেই কে কাকে হাফিজ বলবেন। লক্ষাধিক হাদীস মুখস্থ করতে পারলে তাকে হাফিজ বলা হতো। এখন আর কেউ হাদীস মুখস্থ করতে পারি। অধিকাংশ শিক্ষিত মুসলিম বরং অধিকাংশ আলিম কুরআনও মুখস্থ করেন। এজন্য কুরআনের হাফিজকেই হাফিজ বলা হচ্ছে। হয়ত এমন দিন আসবে, যেদিন একপারা কুরআন মুখস্থ করলেই তাকে সসম্মানে হাফিজ বলা হবে!কুরআন শিক্ষা, তিলাওয়াত, শোনা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই এ অবস্থা। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশে এবং সাহাবী-তাবেয়ীগণের ভাষায় ও কর্মে এগুলি সবই ছিল অর্থ বুঝা ও হৃদয়ঙ্গম করা ও জীবনকে সে অনুসারে পরিচালিত করার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমরা কুরআন শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র না বুঝে দেখে দেখে উচ্চারণ শিক্ষাকেই বুঝি। এর চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করি না।আমরা জানি যে, সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণের ভাষা ছিল আরবী। আরবী ভাষা বুঝার ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সকলের শীর্ষে। তা সত্ত্বেও তারা কুরআনের ৫/১০ টি আয়াতের বেশি একবারে শিখতেন না। ৫/১০টি আয়াত শিখে, সেগুলোর অর্থ, ব্যাখ্যা, নির্দেশনা ও কিভাবে তা পালন করতে হবে সবকিছু না শিখে পরবর্তী আয়াত তারা শুরু করতেন না। এমনকি অনেক সাহাবী ১০/১২ বছর ধরে একটি সূরা শিক্ষা করেছেন। অর্থ না বুঝে এবং আমল না করে শুধুমাত্র কুরআন তিলাওয়াত করাকে তারা অন্যায় বলে জেনেছেন। বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।প্রখ্যাত তাবিয়ী আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীগণ যারা আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন তাঁরা বলেছেন: “তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে দশটি আয়াত শিখে সেগুলোর মধ্যে যা ইলম ও আমল আছে সব না শিখে পরবর্তী দশ আয়াত শেখা শুরু করতেন না।” [মুসনাদ আহমদ (আরনাউতের টীকাসহ) ৫/৪১০। আরনাউত বলেন: হাদীসটি হাসান]ইবনু মাসউদ, উবাই ইবনু কা'ব, উসমান (রা) প্রমুখ সাহাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে দশ আয়াত শিক্ষা দিতেন। তাঁরা এ দশ আয়াতের মধ্যে যত প্রকার আমল আছে সব না শিখে পরবর্তী আয়াত শিখতে শুরু করতেন না। এভাবে তিনি তাদেরকে কুরআন ও আমল একত্রে শিক্ষা দান করতেন। [তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯]আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা) আট বছর ধরে সূরা বাকারাহ শিক্ষা করেন। উমার (রা) বার বছর ধরে সূরা বাকারাহ শিক্ষা করেন। যেদিন সূরাটি শিক্ষা সমাপ্ত হয় সেদিন তিনি আল্লাহর শুকরিয়া জানাতে একটি উট জবাই করে খাওয়ান। [বাইহাকী, শুআবুল ঈমান ২/৩৩১, তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯]ইবনু উমার (রা) বলেন, “আমাদের যুগের মানুষেরা কুরআন শিক্ষার পূর্বে ঈমান অর্জন করতেন। মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর কুরআনের কোনো সূরা নাযিল হলে সে সময়ের মানুষ সাথে সাথে সেই সূরার আহকাম, হালাল, হারাম, কোথায় থামতে হবে ইত্যাদি সবকিছু শিখে নিতেন। এরপর এমন মানুষদের দেখছি, যাঁরা ঈমানের আগেই কুরআন শিখছে। কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে জানে না কুরআন তাকে কি নির্দেশ প্রদান করছে, কি থেকে নিষেধ করছে এবং কোথায় তাকে থামতে হবে। এরা কুরআনকে শুধু দ্রুত পড়ে যায় যেমন করে বাজে খেজুর ছিটিয়ে দেওয়া হয় তেমনভাবে।” হাদীসটি সহীহ। [হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/১৬৫]ইবনু উমার (রা) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মহান মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবীগণ যারা এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ তাঁদের অনেকেই কুরআনের দু-একটি সূরা মাত্র জানতেন। তবে তারা কুরআন অনুসারে জীবন পরিচালনার তাওফীক পেয়েছিলেন। আর এ উম্মতের শেষ জামানার মানুষেরা ছোট, বড়, অন্ধ সকলেই কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন অনুসারে কর্ম করতে পারবে না। [তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯]মু'আয ইবনু জাবাল (রা) বলেন: “তোমরা যা ইচ্ছা যত ইচ্ছা ইলম অর্জন কর। কিন্তু যতক্ষণ না তোমরা ইলমকে কর্মে বা আমলে পরিণত করবে ততক্ষণ আল্লাহ তোমাদেরকে কোন পুরস্কার বা সাওয়াব প্রদান করবেন না। [ইবনুল মুবারাক, কিতাবুয যুহদ ১/২১, আবু নুআইম, হিলইয়া ১/২৩৬, তাফসীরে কুরতুবী ১/৩৯]প্রিয় পাঠক, কুরআন শিক্ষার এ মহান মর্যাদা যদি আমরা পেতে চাই তবে আমাদেরকে প্রথমে এ কুরআনের মর্যাদা হৃদয়পটে আঁকতে হবে। আমরা যদি উপরের হাদীসগুলো সত্যিকারের ঈমান নিয়ে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সত্যিকার অর্থে আল-আমীন, আস-সাদেক, মহাসত্যবাদী হিসেবে অবচেতন মনের গভীরে সুদৃঢ় বিশ্বাসে মেনে নিয়ে তার উপযুক্ত বাণীগুলোকে হৃদয়ের পটে এঁকে রাখতে পারি তাহলেই আমরা পরবর্তী নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারব।প্রথম পদক্ষেপ:প্রথম পদক্ষেপ বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা। আমাদের দেশের হাজার হাজার ধার্মিক মানুষ জীবনের মধ্যপ্রান্তে বা শেষপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন দরবার, বুজুর্গ, ইসলামী দল বা গ্রুপের সাথে সংযুক্ত আছেন। হয়ত তারা নিজেদেরকে যাকির মনে করেন। কিন্তু তারা কুরআনের একটি সূরাও বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে পারেন না। তারা দেখে কুরআন পড়তেও পারেন না। কি দুর্ভাগ্য আমাদের !!আমরা প্রতিদিন, প্রতিমাসে ও প্রতি বছর শত শত ঘণ্টা সময় গল্প গুজব করে, খবর পড়ে শুনে বা আলোচনা করে, গীবত ও পরচর্চা করে, খেলাধুলা করে বা দেখে নষ্ট করি। কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করার সময় পাই না। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখতে বড়জোর ৪/৫ মাস নিয়মিত প্রতিদিন ঘণ্টাখানেক ব্যয় করলেই সম্ভব। আমরা অনেকে প্রতিদিন সকালসন্ধ্যায় অনেক সময় সুন্নাত-সম্মত বা খেলাফে সুন্নাত যিকর আযকার করে কাটাই। অথচ এ সকল যিকরের চেয়ে বড় যিকর মুমিনের জীবনের অন্যতম নূর কুরআন করীম তিলাওয়াত শিক্ষা করি না। আল্লাহর কালামের প্রতি এ চরম অবহেলা করছেন আল্লাহর যাকিরগণ! আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে আহলে কুরআন হওয়ার তাওফীক দান করেন ; আমীন।দ্বিতীয় পদক্ষেপ:কুরআন বুঝার মতো আরবী ভাষা শেখা। আমি অনেক নও মুসলিমকে দেখেছি তারা ইসলাম গ্রহণের পরে অতি আগ্রহের সাথে শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিভিন্ন বই পুস্তক বা কোর্সের মাধ্যমে আরবী শিক্ষা করেন এবং কিছু সময়ের মধ্যেই কুরআন বুঝার মতো চলনসই আরবী শিখে ফেলেন। আসলে বিষয়টি ভালবাসা ও গুরুত্ব প্রদানের উপর নির্ভর করে।তৃতীয় পদক্ষেপঃ আরবী ভাষা শিক্ষা করা সম্ভব না হলে অন্তত কুরআনের এক বা একাধিক অনুবাদ গ্রন্থ বা বাংলা অথবা ইংরেজি ভাষায় তাফসীর গ্রন্থ সংগ্রহ করে নিয়মিত তিলাওয়াতের সাথে সাথে অর্থ পাঠ করা। এভাবে আমরা অন্তত মূল না বুঝলেও অনুবাদের মাধ্যমে কুরআনের আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে পারব। হয়ত আমরা এভাবে কুরআনের সাথী আল্লাহর পরিজন হয়ে যেতে পারব। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক প্রদান করুন। আমি এমন অনেক ভাইকে চিনি যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বা অতি অল্প শিক্ষিত। আরবী মোটেও জানেন না। কিন্তু নিয়মিত কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পাঠের ফলে তাদের অবস্থা এরূপ হয়েছে যে, কুরআনের যে কোনো স্থান থেকে তিলাওয়াত করলে তার অর্থ অনুধাবন করতে পারেন। শাব্দিক অর্থ বুঝেন না, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সে আয়াতগুলোতে কি বলা হয়েছে তা বুঝতে পারেন।বিশেষ সাবধানতাঃআমরা সাধারণত আল্লাহর কিতাবের জন্য এত পরিশ্রম! করার সময় পাই না। এত আগ্রহও আমাদের নেই। কিন্তু যদি কেউ সে তাওফীক পান, তবে শয়তান অন্য পথে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেষ্টা করে। শয়তান তার মধ্যে অহঙ্কার প্রবেশ করায়। তিনি মনে করতে থাকেন যে, তিনি একজন প্রাজ্ঞ মানুষ, তিনি সমাজের অন্য অনেকের চেয়ে ইসলাম ভাল জানেন, সমাজের আলিমগণ কুরআন বুঝেন না, আলিমরাই ইসলাম নষ্ট করলেন, ইত্যাদি।সকল প্রকারের অহঙ্কারই কঠিন পাপ ও ধ্বংসের কারণ। সবচেয়ে খারাপ অহঙ্কার জ্ঞান বা ধার্মিকতার অহঙ্কার। বস্তুত মুমিন কুরআন পাঠ করেন ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি পালন করেন একান্তই নিজের জন্য। কুরআন পাঠ করে মুমিন আল্লাহর রহমত ও পুরস্কার আশা করেন। মুমিন কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেন নিজের ভুলত্রুটি সংশোধন করে নিজের জীবনকে পরিচালিত করার জন্য। অহঙ্কারের উৎপত্তি হয় অন্যের দিকে তাকানোর কারণে। মুমিন কখনোই অন্যের ভুল ধরার জন্য বা অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার জন্য ইবাদত করেন না। যখনই মনে হবে যে, আমি একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ হয়ে কুরআন পড়ি, কয়েকখানা তাফসীর পড়েছি, অথচ অমুক আলিম বা তমুক ব্যক্তি তা পড়েনি, অথবা সমাজের আলিমগণ কুরআন পড়ে না... ইত্যাদি তখনই বুঝতে হবে যে, শয়তান মুমিনের এত কষ্টের উপার্জন ধ্বংস করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বাঁচতে হলে সতর্ক হতে হবে। অন্য মানুষদের ভুলভ্রান্তি চিন্তা করা অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা সর্বোতভাবে পরিত্যাগ করতে হবে। সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে যে, আল্লাহ যেন কুরআন তিলাওয়াত, চর্চা ও পালনের ইবাদত কবুল করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ নিয়ামত বহাল রাখেন।অহঙ্কারের আরেকটি প্রকাশ যে, আল্লাহর তাওফীকে কিছুদিন কুরআন চর্চার পরে নিজেকে বড় আলিম মনে করা এবং বিভিন্ন শরয়ী মাসআলা বা ফাতওয়া প্রদান করতে থাকা। কুরআন চর্চাকে নিজের আখেরাত গড়া ও আল্লাহর দরবারে অগ্রসর হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে। নিজের জীবন সে অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। ফাতওয়ার দায়িত্ব আলিমদের উপর ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে যে, প্রত্যেক মুসলিমই কুরআন পড়বেন, শিখবেন ও চর্চা করবেন নিজের জন্য। তবে প্রত্যেক মুসলিমই বিশেষজ্ঞ আলিম হবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে চিরশত্রু শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা করুন।কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলতকুরআনী যিক্‌রের সর্বপ্রথম কাজ তিলাওয়াত। আল্লাহর মহান বাণী তিলাওয়াত করার চেয়ে বড় যিকর বা মহান কর্ম আর কিছুই হতে পারে না। তিলাওয়াত বলতে মূলত কুরআন ও হাদীস বুঝে ও হৃদয় দিয়ে তিলাওয়াত করা বুঝান হয়েছে। তবে আমরা আশা করব, অপারগতার কারণে আমরা না বুঝে তিলাওয়াত করলেও আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে এ সকল সাওয়াব ও পুরস্কার প্রদান করবেন। বিশেষত যদি আমরা তিলাওয়াতের পাশাপাশি অনুবাদ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ বুঝার চেষ্টা করতে থাকি। আল্লাহ বলেন:وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًاঅর্থঃ “যখন তাঁদের (মুমিনদের) নিকট আল্লাহর (কুরআনের) আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তাঁদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।” [সূরা আনফাল: আয়াত ২]আমরা বুঝতে পারি যে, আয়াতের অর্থ যদি হৃদয়কে আলোড়িত না করতে পারে তাহলে ঈমান বৃদ্ধি পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। অন্যত্র আল্লাহ বলেন:اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ خُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِঅর্থঃ “আল্লাহ সর্বোত্তম বাণীকে সুসমঞ্জস এবং বারবার আবৃত্তিকৃত গ্রন্থ হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন। যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে এই গ্রন্থ থেকে (এ গ্রন্থ পাঠ বা শ্রবণ করলে তাদের শরীর রোমাঞ্চিত ও শিহরিত হয়। এরপর তাদের দেহ ও মন প্রশান্ত হয়ে আল্লাহর যিকরের প্রতি ঝুকে পড়ে।” [সূরা যুমার: আয়াত ২৩]কুরআনের অর্থ হৃদয়ে প্রবেশ করে হৃদয়কে নাড়া না দিলে শরীর কিভাবে শিহরিত হবে? মন কিভাবে প্রশান্ত হবে? তিলাওয়াতের সাথে সাথে অর্থ হৃদয়ঙ্গম করার বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব। এখানে প্রথমে তিলাওয়াতের ফযীলত বিষয়ক কিছু হাদীস উল্লেখ করছি।১. ইবনু মাসউদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি বর্ণ পাঠ করবে সে একটি পুণ্য বা নেকী অর্জন করবে। পুণ্য বা নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে। আমি বলছি না যে, (আলিফ-লাম-মিম) একটি বর্ণ। বরং ‘আলিফ’ একটি বর্ণ, ‘লাম’ একটি বর্ণ ও মীম' একটি বর্ণ।” হাদীসটি সহীহ। [তিরমিযী (৪৬-ফাযায়িল কুরআন, ১৬-বাব..ফীমান কুরআ হরফান) ৫/১৬১, নং ২৯১০ (ভা ২/১১৯)]২. আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে সুপারদর্শী সে সম্মানিত ফিরিশতাগণের সাথে। আর কুরআন তিলাওয়াত করতে যার জিহ্বা জড়িয়ে যায়, উচ্চারণে কষ্ট হয়, কিন্তু কষ্ট করে অপারগতা সত্ত্বেও সে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার।" [মুসলিম (৬-সালাতিল মুসাফিরীন, ৩৮-বাব ফাযলিল মাহিরী) ১/৫৪৯ নং ৭৯৮ (ভা, ১/২৬৯)]৩. অন্য হাদীসে আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে তা তিলাওয়াত করেন তিনি নেককার সম্মানিত ফিরিশতাগণের সাথে। আর যিনি বারবার কুরআন তিলাওয়াত করে তা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন এবং তার জন্য খুব কষ্টকর হচ্ছে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে।” [বুখারী (৬৮-কিতাবুত তাফসীর, ৪১৭-বাৰ তাফসীর সূরাত আবাসা) ৪/১৮৮২; ভা ২/৭৫); মুসলিম (৬-সালাতিল মুসাফিরীন, ৩৮-বাব ফাযলিল মাহিরী) ১/৫৪৯ নং ৭৯৮ (ভা, ১/২৬৯)]৪. আবু উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:“তোমরা কুরআন পাঠ করবে; কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার সঙ্গীদের (কুরআন পাঠকারীগণের) জন্য শাফা'আত করবে।” [মুসলিম (৬-সালাতিল মুসাফিরীন, ৪২ বার ফাদল কীরাআতিল কুরআন) ১/৫৫৩ নং ৮০৪ (ভা ১/২৭০)]৫. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:“কিয়ামত দিনে সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য শাফা'আত করবে। সিয়াম বলবে: হে প্রভু, আমি একে দিনের বেলায় খাদ্য ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই তার পক্ষে আমার শাফা'আত কবুল করুন। কুরআন বলবে: হে প্রভু, আমি রাতের বেলায় তাকে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই তার পক্ষে আমার শাফাআত কবুল করুন। তখন তাদের উভয়ের শাফা'আত কবুল করা হবে।” হাদীসটি সহীহ। [মুসতাদরাক হাকিম ১/৭৪০; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৩৮১; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৮]৬. মহান আল্লাহ কুরআন কারীমে বলেছেন:وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَجِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآَصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِيْنَঅর্থঃ “সকালে ও বিকালে তোমার মনের মধ্যে বিনয়, আকুতি ও ভয়ভীতির সাথে অনুচ্চ শব্দে আল্লাহর যিকর কর এবং অমনোযোগীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।” [সূরা আরাফ: ২০৫]তাহলে আল্লাহর যিকর না করলে সে অমনোযোগী এবং অমনোযোগী হওয়া নিষিদ্ধ। রাতে অন্তত কুরআনের ১০০ টি আয়াত তিলাওয়াত করলে বা তাহাজ্জুদে পাঠ করলে বান্দা আল্লাহর দরবারে অমনোযোগী হওয়ার অপরাধ থেকে মুক্তি পাবে। আবু হুরাইরা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:“যে ব্যক্তি রাতের (তাহাজ্জুদের) সালাতে ১০০ আয়াত পাঠ করবে তাঁকে গাফিল বা অনোযোগীদের তালিকায় লেখা হবে না। আর যে ব্যক্তি রাত্রের (তাহাজ্জুদের) সালাতে ২০০ আয়াত পাঠ করবে তাকে আল্লাহর খাঁটি, মুখলিস নেককার বান্দা হিসেবে লেখা হবে।” হাদীসটি সহীহ। [মুসতাদরাক হাকিম ১/৫২। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]অন্য হাদীস থেকে জানা যায় যে, অন্তত দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলে বা তাহাজ্জুদে পাঠ করলেও বান্দা অমনোযোগী হওয়ার অপরাধ থেকে মুক্তি পাবে। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:“যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে তাকে গাফিল বা অমনোযোগীদের দলভুক্ত হিসেবে লেখা হবে না।” হাদীসটি সহীহ। [মুসতাদরাক হাকিম ১৭৪২; মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩২৯। হাকিম ও যাহাবী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ]৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করল সে ধাপেধাপে নবুয়তের সিঁড়ি বেয়ে নিজের দেহের মধ্যে নবুয়ত গ্রহণ করল। পার্থক্য এটাই যে তাঁর কাছে ওহী প্রেরণ করা হবে না। (অর্থাৎ সে ওহী পেল না, তবে ওহীর বা নবুয়তের জ্ঞান সে গ্রহণ করল) কুরআনের অধিকারীর উচিত নয় যে, নিজের মধ্যে আল্লাহর কালাম থাকা অবস্থায় সে অন্যান্য মানুষদের মতো আবেগ তাড়িত হবে, অথবা কেউ রাগ করলে বা উত্তেজিত হলে সেও রাগ করবে বা উত্তেজিত হবে। [মুসতাদরাক হাকিম ১/৭৩৮; মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩২৫। হাকিম ও যাহাবী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ]স্বভাবতই এসকল হাদীসে কুরআন পাঠ বলতে বুঝে ও অর্থ হৃদয়ঙ্গম করে পড়া বুঝানো হয়েছে। তোতাপাখিকে তো আর আলিম বলা যায় না। যিনি অর্থ বুঝে কুরআন পাঠ করেন তিনিই তার হৃদয়ে নবুয়তের ইলম ধারণ করেন।৮. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “কিয়ামতের দিন কুরআনের সাথীকে বলা হবে: তুমি দুনিয়াতে যেভাবে তারতীলের সাথে কুরআন পড়তে সেভাবে পড় এবং উপরে উঠতে থাক। তোমার পড়া যে আয়াতে শেষ হবে সেখানে তোমার আবাসস্থল।” হাদীসটি সহীহ। [তিরমিযী (৪৬ কিতাৰ ফাদায়িলিল কুরআন, ১৮-বাব) ৫/১৬৩, নং ২৯১৪ (ভ ২/১১৯), আবু দাউদ (৮-কিতাবুল বিতর, ২০-ৰাৰ ইতিহবুত তারতীল..) ২৭৪, নং ১৪৬৪ (ভা ২/২০৬)]অর্থাৎ, জান্নাতের উঁচু মর্যাদা লাভের বা উপরে উঠার ধাপ হবে কুরআনের আয়াতের সংখ্যা অনুসারে। যে ব্যক্তি যত আয়াত পাঠ করতে পারবেন তিনি তত উপরে উঠে উচ্চ মর্যাদায় নিজেকে আসীন করবেন।বিশুদ্ধ তিলাওয়াত অপরিহার্যকুরআন তিলাওয়াত অর্থ আরবী ভাষার রীতিতে বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত অনুসারে ধীরে ধীরে, পরিপূর্ণ ভালবাসা সহকারে পাঠ করা। আমাদের দেশে সাধারণ ধার্মিক মুসলিম ছাড়াও অনেক আলিম বা কুরআন গবেষক’ও বাংরবি ভাষায় কুরআন তিলাওয়াত করেন। আমি টুমাকে ওয়ালোওয়াছি'- কথাটির সকল শব্দ মূলত বাংলা হলেও একে আমরা বাংলা বলতে পারি না। হয়ত ইংলা’ বা বাংলিশ’ বলা যেতে পারে। তেমনি বাংলা উচ্চারণে কুরআন পাঠ কখনই আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত বলে গণ্য নয়।আরবী ভাষায় প্রতিটি বর্ণের নির্দিষ্ট উচ্চারণ হল, উচ্চারণ পদ্ধতি, সিফাত বা গুণাবলী, মদ বা দীর্ঘতা ও অন্যান্য উচ্চারণ বিষয়ক নিয়মাবলী রয়েছে। মহান আল্লাহ কুরআন কারীমকে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় নাযিল করেছেন। আরবী ভাষার রীতি অনুসারে না পড়লে কখনই কুরআন তিলাওয়াত করা হবে। এ বিষয়ে সাধারণ মুসলিম তো দূরের কথা অধিকাংশ মাদ্রাসাতেও অমার্জনীয় অবহেলা বিরাজমান। সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের যুগে লক্ষ লক্ষ অনারব ইসলামের ছায়াতলে আসেন। তারা কুরআনের বিশুদ্ধ আরবী উচ্চারণের বিষয়ে কিরূপ গুরুত্ব আরোপ করতেন ও উচ্চারণের সামান্যতম বিচ্যুতিকে কিভাবে কঠিন গোনাহ ও ভয়ঙ্কর বেয়াদবী বলে মনে করতেন সে বিষয়ে অনেক বিবরণ আমরা হাদীসের গ্রন্থসমূহে পাই। [দেখুন: মুসান্নাফে ইবনু আবী শাইবা ৬/১১৭]রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তিলাওয়াত পদ্ধতিবিশুদ্ধ আরবী উচ্চারণের পাশাপাশি কুরআনকে শান্তভাবে, ধীরে, স্পষ্টকরে ও টেনে টেনে পড়তে হবে। এটি আল্লাহর নির্দেশিত ফরয। এ বিষয়ে আমাদের অপরাধ বড় কঠিন। অধিকাংশ হাফিজই দ্রুত কুরআন তিলাওয়াত করেন। তারাবীহের সালাতে যদি কোনো হাফিজ একটু ধীরে তিলাওয়াত করেন তাহলে মুসল্লীগণ ঘোর আপত্তি শুরু করেন। বাধ্য হয়ে হাফিজ সাহেব এমনভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন যাতে তিলাওয়াতকারী ও শ্রোতা প্রথম ও শেষের কয়েকটি শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে বা বুঝতে পারেন না। কাজেই, সাওয়াব তো দূরের কথা কুরআনের সাথে বেয়াদবীর অপরাধ কঠিন হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলেন:وَرَتِّلِ الْقُرْآَنَ تَرْتِيلًاঅর্থঃ “এবং ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট ও সুন্দরভাবে কুরআন আবৃত্তি করুন।” [সূরা মুযযাম্মিল: ৪ আয়াত]এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা), মুজাহিদ, আতা, হাসান বসরী, কাতাদাহ ও অন্যান্য সকল সাহাবী ও তাবেয়ী মুফাসসির (রাহ) বলেছেন যে, তারতীল অর্থ কুরআনকে ধীরে ধীরে, শান্তভাবে, সুস্পষ্ট করে ও টেনে টেনে পড়া, যেন তা বুঝা ও তার অর্থ চিন্তা করা সহজ হয়। [তাফসীরে তাবারী ২৯/১২৬ ১২৭, তাফসীরে ইবনু কাসীর ৪/৩৫-৩৬]রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এভাবেই তিলাওয়াত করতেন। আয়েশা (রা) বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরআনের সূরা তিলাওয়াত করলে তারতীলসহ বা ধীর ও শান্তভাবে তিলাওয়াত করতেন, ফলে সূরাটি যতটুকু লম্বা তার চেয়ে অনেক বেশি লম্বা হয়ে যেত।” [মুসলিম (৬-সালাতিল মুসাফিরীন, ১৬-বাব জাওযিন নাফিলাতি) ১/৫০৭, নং ৭৩৩ (ভা ১/২৫৩)]আনাস (রা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন: “তার কিরাআত ছিল টেনে টেনে। [বুখারী (৬৯-কিতাব ফাইলিল কুরআন, ২৯-বাব মাদ্দিকীরাআত) ৪/১৯২৫ (ভারতীয়: ২/৭৫৪)]উম্মু সালামাহ (রা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তিলাওয়াত সম্পর্কে বলেন: “তিনি প্রত্যেক আয়াতে আয়াতে থামতেন।” হাদীসটি সহীহ। [মুসনাদে আহমদ ৬/৩০২; আলবানী, সাহীহুল জামি ৮৯২, নং ৫০০০]হাফসা (রা)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তিলাওয়াত পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “তোমরা তাঁর মতো তিলাওয়াত করতে পারবে না।” প্রশ্নকারীগণ তবুও একটু শোনাতে অনুরোধ করেন। তখন তিনি খুব ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করেন। হাদীসটি সহীহ। [আহমদ, আল-মুসনাদ ৬/২৮৮, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮]অন্য হাদীসে হুযাইফা (রা) বলেন: “এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সূরা বাকারাহ শুরু করলেন। আমি ভাবলাম তিনি হয়ত ১০০ আয়াত পাঠ করে রুকুতে যাবেন। কিন্তু তিনি ১০০ আয়াত পার হয়ে গেলেন। আমি ভাবলাম তিনি হয়ত এ সূরা শেষ করে রুকু করবেন। কিন্তু তিনি সূরা নিসা শুরু করলেন এবং তা পুরোপুরি পাঠ করলেন। এরপর তিনি সূরা আলে ইমরান’ শুরু করলেন এবং তা শেষ করলেন। তিনি ধীরে ধীরে টেনে টেনে তিলাওয়াত করলেন। যখন তাসবীহের উল্লেখ আছে এমন কোনো আয়াত তিনি পড়ছিলেন তখন তিনি তাসবীহ পাঠ করছিলেন। যখন কোনো প্রার্থনার উল্লেখ আছে এমন কোনো আয়াত পাঠ করছিলেন, তখন তিনি প্রার্থনা করছিলেন। আবার আশ্রয় চাওয়ার উল্লেখ আছে এমন আয়াত আসলে তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করলেন।...।” [মুসলিম (৬-সালাতিল মুসাফিয়ীন, ২৭-বাব ইসতিহবাৰ তাতবিশীল কিমাআত) ১৫৬ ( ১/২৬৪)]বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও ধীরে ধীরে টেনে টেনে পড়ার সাথে সাথে যথাসম্ভব সুন্দর ও মধুর স্বরে কুরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করতে হবে। বিভিন্ন হাদীসে সাধ্যমতো মধুর ও সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি হাদীসে বারা ইবনু আযিব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বর দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর।” হাদীসটি সহীহ। [আবু দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব ইসতিহাবিত তারতীল) ২৭৫, নং ১৪৬৮ (ভা ১/২০৭), ইবন মাজাহ ১/২৬ (ভার ৯৫ পৃ.) নাসাঈ ২/৫২১ (ভা ১১১৬) হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/১৭১]আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ বলেন: “তোমরা কুরআনকে কবিতার মত আবৃত্তি করবে না বা সস্তা খেজুর ছিটিয়ে দেওয়ার মতো ছিটিয়ে দেবে না। কুরআনের আশ্চর্য বাণী থেমে ও বুঝে পড়বে। কুরআন দিয়ে হৃদয়কে নাড়া দেবে। কখন খতম হবে বা কখন সূরার শেষে পৌছাব এ চিন্তা করে কখনো কুরআন তিলাওয়াত করবেন না।” [বাইহাকী, শু'আবুল ঈমান ২/৩৬০, তাফসীরে ইবনু কাশীর ৪/৪৩৫]কুরআনের অর্থ চিন্তা ও হৃদয়ঙ্গম করার ফযীলতকুরআন করীমকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন অনুধাবন করার জন্য, না বুঝে তোতাপাখীর মথ তিলাওয়াতের জন্য নয়। কুরআনের তিলাওয়াত যেমন একটি ইবাদত, কুরআন অনুধাবন করা, বুঝা ও কুরআন নিয়ে চিন্তা করা অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্যই তা অনুধাবন করা। উপরের হাদীসগুলো আলোচনা করতে যেয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পেরেছি যে, কুরআন পাঠের ফযীলত মূলত পাঠ করে তা হৃদয়ঙ্গম করার জন্য। হৃদয়ঙ্গম করলেই নবুয়তের ইলম আমাদের মধ্যে সঞ্চিত হবে।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণের যুগে বা ইসলামের প্রথম শতাব্দীগুলোতে এভাবেই কুরআন পাঠ করতেন মুসলিমগণ। যেসকল অনারব দেশে ইসলাম প্রবেশ করেছে সেসকল দেশের মানুষও কুরআন বুঝার মতো আরবী শিখে নিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখন না বুঝেই পড়ি। তবুও আশা করব যে, আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে কুরআন পাঠের নির্ধারিত সাওয়াব দান করবেন।মহান আল্লাহ বারবার উল্লেখ করেছেন যে, তিনি কুরআন নাযিল করেছেন এবং তা বুঝার জন্য সহজ করেছেন যেন সবাই তা বুঝতে পারে ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এ কুরআনে আমি বিভিন্ন উপদেশ, উদাহরণ, বিধান ইত্যাদি উল্লেখ করেছি যেন তারা অনুধাবন করতে ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। প্রায় ৫০ স্থানে এভাবে বলা হয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴿٢٩﴾অর্থঃ “এক বরকতময় গ্রন্থ আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি যেন তারা এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা সাদ: ২৯ আয়াত]কুরআন কারীমে চার স্থানে মহান আল্লাহ বলেছেন:وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ ﴿١٧﴾অর্থঃ “নিশ্চয় আমি কুরআনকে বুঝার ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি , কে আছে উপদেশ গ্রহণ করার ?" [সূরা কামার: ১৭,২২,৩২, ৪০]যারা কুরআন বুঝতে চেষ্টা করে না তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে:أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا ﴿٢٤﴾অর্থঃ “তারা কি কুরআনকে অনুধাবন করে না? না কি তাদের অন্তর তালাবন্ধু?” [সূরা মুহম্মদ: ২৪]বিভিন্ন হাদীসে কুরআন তিলাওয়াতের সাথে সাথে অনুধাবন করতে ও চিন্তা করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এমনি কোনো কোনো হাদীসে বলা হয়েছে যে, যারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত পাঠ করবে কিন্তু তার অর্থ নিয়ে। চিন্তা করবে না তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। [তাফসীরে কুরতুবী ২/২০১, তাফসীরে ইবনু কাসীর ১/৪৪২]আল্লাহর কিতাব পাঠ করাকে কুরআন কারীমে তিলাওয়াত’ বলা হয়েছে, কারণ তিলাওয়াত অর্থ অনুসরণ করা। এজন্য কুরআন শুধুমাত্র না বুঝে পাঠ করলে তিলাওয়াত হয় না। বুঝে পাঠ করে তা অনুসরণ করে চললেই তা তিলাওয়াত বলে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِঅর্থঃ “যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি তারা তা সত্যিকারভাবে তেলাওয়াত করে, তারাই এ কিতাবের উপর ঈমান এনেছে।” [সূরা বাকার: ১২১]এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবী ও তাবেয়ীগণ বলেন, দু'টি গুণ থাকলেই তা হক্ক তিলাওয়াত’ বা ‘সত্য তিলাওয়াত’ হবে: ১. পঠিত আয়াতের অর্থ বুঝে হৃদয়কে তার সাথে একাত্ম করে তিলাওয়াত করতে হবে। ২. পঠিত আয়াতের সকল বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণ ও পালন করতে হবে।উমার (রা) বলেন: ‘হক্ক তিলাওয়াতে পঠিত আয়াতের সাথে হৃদয় আলোড়িত হবে। যে আয়াতে শাস্তির কথা বলা হয়েছে সেখানে থেমে আল্লাহর কাছে শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। যে আয়াতে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে, সেখানে থেমে আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে হৃদয় দিয়ে তিলাওয়াত করলেই তা সত্যিকার তিলাওয়াত বলে গণ্য হবে। [তাফসীরে ইবনু কাসির ১/১৬৪, ১৬৫]ইমাম আবু হানীফা (রহ) ও হানাফী মাযহাবের অন্যান্য ইমাম সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াতের সময়েও আয়াতের অর্থ অনুযায়ী থেমে থেমে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পছন্দ করতেন। জাহান্নামের কথা আসলে আশ্রয় প্রার্থনা করা, জান্নাতের কথা আসলে জান্নাত চাওয়া, ক্ষমার কথা আসলে ইস্তিগফার করা এবং এভাবে হৃদয়কে আলোড়িত করে সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করতে তিনি উৎসাহ দিয়েছেন, বিশেষত সকল প্রকার সুন্নাত-নফল সালাতে। [মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মাসূত (আল-আসল) ১/২০২-২০৩]সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা), আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) এবং মুজাহিদ, আবু রাযীন, কাইস ইবনু সা’দ, আতা, হাসান বসরী, কাতাদাহ, ইকরিমাহ, আবুল আলিয়াহ, ইব্রাহীম নাখয়ী প্রমুখ সকল তাবিয়ী, তাবে-তাবিয়ী মুফাসসির বলেছেন যে, সত্যিকার তিলাওয়াতের অর্থ পঠিত সকল আয়াতের সকল প্রকার বিধানাবলী পরিপূর্ণ পালন ও অনুসরণ করা। কুরআনের সহজ সঠিক অর্থ বুঝা ও সকল প্রকার দূরবর্তী ও বিকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা থেকে দূরে থাকা। যারা এভাবে বুঝবেন ও পালন করবেন তারাই শুধু সত্যিকার তিলাওয়াতকারী বলে গণ্য হবেন। [তাফসীরে তাবারী ১/৫১৯-৫২১, তাফসীরে ইবনু কাসীর ১/১৬৪-১৬৫]আমরা কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা ও সাহাবীগণের বাণী থেকে জেনেছি, কুরআন তিলাওয়াতের অন্যতম আদব কুরআন দিয়ে অন্তরকে নাড়ানো। অন্তর নড়লেই ঈমান বৃদ্ধি পাবে, শরীর শিহরিত হবে এবং কর্ম নিয়ন্ত্রিত হবে।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা