হিজামা

হিজামা

১৩ সাবক্যাট | ১৩ দোয়া

অধ্যায়: হিজামা

পরিচ্ছেদ: হিজামা কি ?

১৪৭

হিজামা একটি ইসলামিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। হিজামা (حِجَامَة) আরবী শব্দ আল-হাজম থেকে এসেছে। যার অর্থ চোষা বা টেনে লওয়া। আধুনিক পরিভাষায় Cupping (কাপিং) হিজামা এক ধরণের চিকিৎসা যার মাধ্যমে দুষিত রক্ত (Toxin) বের করা হয়। এতে শরীরের মাংস পেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়। এর মাধ্যমে পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকরীতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও বলবান হয়।হিজামা বা Wet Cupping অতি প্রাচীন মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট হিসাবে আরববিশ্বে জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট স্থান থেকে ধারালো সূচের স্পর্শ দিয়ে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চোষে) নিঃস্তেজ প্রবাহহীন দুষিত রক্ত বের করে আনা হয়। এ হিজামা থেরাপী (Controlled Bloodletting) ৩০০০ বৎসরেরও পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামা ক৪ে২রছেন, করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। হিজামা থেরাপী মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎপত্তি হলেও চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে চীন, ইন্ডিয়া ও আমেরিকায় বহু পূর্বে থেকে প্রচলিত ছিল। ১৮ শতক থেকে ইউরোপেও এর প্রচলন রয়েছে। শরীরের ব্যথাযুক্ত স্থান থেকে হিজামার মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ দুষিত রক্ত বের করে আনার মাধ্যমে রোগী আরোগ্য লাভ করেন এবং ব্যথ্যা মুক্ত হন, আর শরীরের মধ্যে ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরিচ্ছেদ: হিজামা করা সুন্নাহ

১৪৮

"হিজামা (Cupping) একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। বহু সহীহ হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে প্রমাণীত। হিজামা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চিকিৎসা পদ্ধতি (The Prophetic Medicine) এর অন্তর্ভূক্ত একটি চিকিৎসা।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামার উপকারীতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন, নিজে ব্যবহার করেছেন এবং হিজামা ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।হিজামার ব্যবহার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামা করেছেন উনার মাথায় মাইগ্রেইন এর [সহীহুল বুখারী, হা/৫৭০০, ৫৭০১; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)] জন্য, পায়ে, [সুনান আন-নাসাঈ, হা/২৮৫২; (মিনা বুক হাউস)] পিঠে পিঠের ব্যথার জন্য [সুনানে আবু দাউদ, হা/৩৮৫৯; সানাদ সহীহ] দুই কাধের মধ্যে [সুনানে আবু দাউদ, হা/৩৮৬০; সানাদ সহীহ], ঘাড়ের দুটি রগের উপর [সুনানে আবু দাউদ, হা/৩৮৬৩; সানাদ সহীহ] ও হাড় মচকে গেলে”।"

পরিচ্ছেদ: হিজামা সংক্রান্ত কিছু সহীহ হাদীস

১৪৯

আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর নিকট হিজামা বৃত্তির উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামা (নিজ শরীরে) লাগিয়েছেন। আবু তায়বা তাকে হিজামা করেছেন। তাকে দুই সা (প্রায় ৫কেজি) খাদ্য বস্তু দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন: তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সে সবের মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৩০; (হাদীস একাডেমী)]আমর বিন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (ﷺ) হিজামা লাগাতেন এবং কোনো লোকের পারিশ্রমিক কম দিতেন না।” [সহীহুল বুখারী, হা/২২৮০; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]‘আসিম বিন উমার বিন কাতাদা থেকে বর্ণিত যে, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) অসুস্থ মুকান্নাকে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেন: আমি সরবো না, যতক্ষণ না তাকে হিজামা লাগানো হয়। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: নিশ্চয় এর (হিজামার) মধ্যে রয়েছে নিরাময়।” [সহীহুল বুখারী, হা/৫৬৯৭; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স]ইবনু আববাস (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে রয়েছে। হিজামা লাগানো, মধু পান করা এবং আগুন দিয়ে গরম দাগ দেয়ার মধ্যে। তবে আমি আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৬৮১; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]ইবনু আববাস (রা) থেকে বর্ণিত যে, মাথা ব্যথার কারণে নবী (ﷺ) ইহরাম অবস্থায় ‘লাহয়ি জামাল’ নামক একটি কূপের নিকট মাথায় শিংগা লাগিয়েছেন। অন্যত্র ইবনু আববাস (রা) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইহরাম বাঁধা অবস্থায় অর্ধ মাথা ব্যথার কারণে তাঁর মাথায় শিংগা লাগিয়েছেন। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৭০০, ৫৭০১; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]আসেম বিন উমার বিন কাতাদা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের বাড়িতে আসেন। বাড়ির একটি লোক তার ক্ষতে রোগের কথা বলল। জাবির (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি অসুবিধা? সে বলল, ক্ষত হয়েছে যা আমার কাছে অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাবির (রাঃ) বলেন, বৎস! আমার কাছে একজন হিজামাকারী ডেকে নিয়ে এসো। সে বলল, হে আবু আবদুল্লাহ! হিজামাকারীকে দিয়ে কি করবেন? তিনি বললেন, ক্ষতস্থানে হিজামা করাতে চাই। সে বলল, আল্লাহর শপথ! মাছি আমাকে উত্যক্ত করবে কিংবা (ক্ষতস্থানে) কাপড় লেগে গেলে আমার কষ্ট হবে। হিজামা করাতে তার অসম্মতি দেখে জাবির (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: “ঔষধ হল: (1) হিজামা করানো, (2) মধু পান করা এবং (3) আগুনের টুকরা দিয়ে দাগ দেয়া”। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন: আমি ব্যক্তিগতভাবে আগুন দিয়ে দাগ লাগানো পছন্দ করি না। রাবী বলেন, অতঃপর হিজামাকারী আসলো এবং তাকে হিজামা করানো হলো। এতেই সে আরোগ্য লাভ করল। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৩৬; (হাদীস একাডেমী)]জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ)- এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা লাগিয়েছিলেন। [সুনানু আন-নাসাঈ, হা/২৮৫২; (মিনা বুক হাউস)]

পরিচ্ছেদ: হিজামা ফেরেস্তাদের দ্বারা সুপারিশকৃত

১৫০

ভূমিকাقال ابن عباس إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ عُرِجَ بِهِ مَا مَرَّ عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিরাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলকেই অতিক্রম করেন তারা বলেন, “আপনি অবশ্যই হিজামা করাবেন”। [সহীহ আত-তিরমিযী, হা/২০৫৩]عَنْ ابْنُ مَسْعُودٍ قَالَ حَدَّثَ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ عَنْ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ أَنَّهُ لَمْ يَمُرَّ عَلَى مَلَإٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلاَّ أَمَرُوهُ أَنْ مُرْ أُمَّتَكَ بِالْحِجَامَةِইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মিরাজের রাত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে, এই রাতে ফিরিশতাদের যে দলের সম্মুখ দিয়েই তিনি যাচ্ছিলেন তারা বলেছেন, “আপনার উম্মতকে হিজামার নির্দেশ দিন”। [সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/৩৪৭৭; সহীহ আত-তিরমিযী, হা/২০৫২]হিজামা একটি প্রাচীন মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট যা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। এটি ফেরেস্তাদের দ্বারা সুপারিশকৃত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর উম্মতের জন্য। এজন্য কেউ বলতে পারে না যে, এটি একটি পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমান আধুনিক যুগে অচল। বরং এটি সাফল্যপূর্ণ প্রতিশেধক সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রেরণ করা হয়েছে সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। [দেখুন: পূর্বে বর্ণিত সহীহ আত-তিরমিযী, হা/২০৫২, ২০৫৩; সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/৩৪৭৭]
সিয়াম ও ইহরাম বাধা অবস্থায় হিজামা লাগানো
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ইহরাম অবস্থায়, তখন মাথা ব্যাথার জন্য হিজামা ব্যবহার করেন। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৭০১; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিয়াম অবস্থায় হিজামা লাগিয়াছিলেন। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৬৯৪; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]
মাথা ব্যথায় হিজামা
সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “যখন কেউ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে মাথা ব্যথার কথা বলত, তিনি (ﷺ) তাদেরকে হিজামা করার কথা বলতেন”। [সুনানে আবু দাউদ, হা/৩৮৫৮; সনাদ হাসান]
জ্ঞান এবং স্মৃতি বর্ধক
ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “খালি পেটে হিজামা লাগানো উত্তম। এতে শিফা ও বরকত রয়েছে। এতে জ্ঞান এবং স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়...। [সুনান ইবনে মাজাহ, (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) হা/৩৪৮৭; সানাদ হাসান]
বিষ-ব্যথা
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বিষ যুক্ত গোস্ত খেতে দিয়েছিল, তাই তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন “কেন তুমি তা করলে?” মহিলাটি উত্তরে বলল, “যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর বার্তা বাহক হও তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন এবং তুমি যদি তাঁর বার্তা বাহক না হও তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখতাম”! যখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর যন্ত্রনা অনুভব করতে লাগলেন, তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম অবস্থায় তিনি ভ্রমনে বের হলেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রনা বোধ করলেন তখন তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন। [মুসনাদে আহমেদ, ১/৩০৫; সানাদ হাসান]যাদুইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় সিঙ্গা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ যদি সঠিকভাবে করা হয়। [যাদুল মায়’দ, ৪/১২৫-১২৬]

পরিচ্ছেদ: হিজামা করার স্থানসমূহ

১৫১

আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিন স্থানে যথা ঘাড়ের দু’পার্শ্বে দুটি রগে এবং কাঁধে হিজামা করিয়েছেন। [সুনানে ইবনে দাউদ, হা/৩৮৬০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৮৩; হাদীস সহীহ]আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মাথায় হিজামা লাগিয়েছিলেন। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৬৯৯]আবু কাবশাহ আনমারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) মাথার মাঝখানে এবং দুই কাঁধের মাঝে হিজামা করাতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি নিজ শরীরের এ অংশে হিজামা করাবে, সে তার কোনো রোগের চিকিৎসা না করালেও কোনো ক্ষতি হবে না। [সুনান আবু দাউদ, হা/৩৮৫৯; সুনান ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৮৪; সানাদ সহীহ]জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাড় মচকে গেলে তিনি এর জন্য হিজামা করান। [সুনান আবু দাউদ, হা/৩৮৬৩; সুনান ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৮৫; সানাদ সহীহ]আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যথার কারণে ইহরাম অবস্থায় তার পায়ের উপরিভাগে হিজামা করিয়েছেন। [সুনান আবু দাউদ, হা/১৮৩৭; সানাদ সহীহ]ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, “দাঁতে, মুখে এবং গলায় ব্যথা হলে থুতুনির নিচে হিজামা লাগালে উপকার পাওয়া যায় যদি তা সঠিক সময়ে করা হয়। এটা মাথা ও চোয়াল শোধন করে।পায়ের সাফিনায় (যা গোরালির বড় শিরা) পাংচারিং করার পরিবর্তে পায়ের পাতার সম্মুখে হিজামা লাগানো যেতে পারে। থাই এবং পায়ের পিছনের মাংসের আলসারের চিকিৎসায় এটি উপকারি। তা ছাড়া রক্তস্রাবে বাধা ও অন্ড কোষের চামড়ায় ক্ষয়ে তা ব্যবহার যোগ্য।উরুতে ব্যথা, চুলকানী ও খোসপাঁচরার চিকিৎসা হিসেবে বুকের নিচে হিজামা লাগানো উপকারী। এতে পিঠের গেঁটে বাত, অর্শ, গোদ রোগ, খোসপাঁচড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।” [যাদুল মায়া’দ ৪/৫৮]

পরিচ্ছেদ: মহিলাদের জন্য হিজামা

১৫২

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে হিজামা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। তাই রাসূলুল্লাহ তাকে (উম্মে সালামাকে) হিজামা লাগিয়ে দিতে আবু তাইবা (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার মনে হয়, আবু তাইবা তার (উম্মে সালামার) দুধ ভাই অথবা একজন অপ্রাপ্ত বালক ছিলেন। [সুনান আবু দাউদ, হা/৪১০৫; সুনান ইবনে মাজাহ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স), হা/৩৪৮০; সানাদ সহীহ]

পরিচ্ছেদ: হিজামার পারিশ্রমিক নেওয়া কি অবৈধ?

১৫৩

আওন বিন আবু হুযাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা একদা হিজামা লাগতে পারে এমন এক কৃতদাস কিনে আনলেন এবং আমি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বললেন: নবী (ﷺ) কুকুরের মূল্য এবং রক্তের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন এবং শরীরে খোদাই করে নকশা করা এবং করানো থেকে নিষেধ করেছেন এবং সুদ দিতে এবং নিতে নিষেধ করেছেন এবং যে ছবি উঠায় (চিত্রাংকনকারীকে) তাকে লানত করেছেন। [সহীহুল বুখারী হা/২০৮৬] আওন বিন আবু হুযাইফা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা হিজামা লাগায় এমন এক কৃতদাস কিনে এনে তার হিজামা লাগানোর যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে ফেললেন এবং অতঃপর বললেন: নিশ্চয়ই নবী (ﷺ) রক্তের মূল্য এবং কুকুরের মূল্য এবং পতিতা বৃত্ত থেকে নিষেধ করেছেন এবং সুদ দাতা ও গ্রহীতা এবং শরীর খোদাই করে নকশা করা এবং যে ছবি অংকন করে এদের সবার ওপর লা'নত করেছেন। [সহীহুল বুখারী হা/৫৯৬২]

পরিচ্ছেদ: বৈধতার হাদীসসমূহ

১৫৪

আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর নিকট হিজামা বৃত্তির উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামা (নিজ শরীরে) লাগিয়েছেন। আবু তায়বা তাকে হিজামা করেছে। তাকে দুই সা (প্রায় ৫কেজি) খাদ্য বস্তু দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন: তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সে সবের মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৩০; (হাদীস একাডেমী); সহীহুল বুখারী, হা/২১০২; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]আমর বিন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (ﷺ) হিজামা লাগাতেন এবং কোনো লোকের পারিশ্রমিক কম দিতেন না। [সহীহুল বুখারী, হা/২২৮০; (তাওহীদ পাবলিকেশন্স); সহীহ মুসলিম, হা/১৫৭৭; মাসনাদে আহমদ, হা/১২২০৭]ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) হিজামা করালেন এবং যে তাকে হিজামা করেছে তাকে তিনি মজুরী দিয়েছিলেন। যদি তিনি তা অপছন্দ করতেন তবে তাকে (পারিশ্রমিক) দিতেন না। [সহীহুল বুখারী, হা/২১০৩, ২২৭৯ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)]পর্যালোচনা: হিজামা লাগিয়ে পারিশ্রমিক নেওয়া অবৈধতা সংক্রান্ত বিধান পরবর্তিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আমল ও নির্দেশ দ্বারা বাতিল বা মনসুখ হয়ে গেছে।

পরিচ্ছেদ: হিজামার জন্য প্রস্তুতি

১৫৫

হিজামার পূর্বে গোসল করে নেওয়া উত্তম। যদি গোসল না করেন তবে হিজামার পূর্বে ঘন্টা খানেক বিশ্রাম নেওয়া ভালো। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গোসল করতেন, যৌন অপবিত্রতার পর, জুমার দিন, হিজামার পূর্বে এবং মৃতের গোসল দেয়ার পর। [সুনানে আবু দাউদ, হা/৩১৬০; সানাদ দুর্বল]খালি পেটে হিজামা (Cupping) করা ভাল। ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বাসী মুখে হিজামা করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। [সুনান ইবনে মাজাহ, (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) হা/৩৪৮৭, ৩৪৮৮; সাদ হাসান]

পরিচ্ছেদ: হিজামার উত্তম সময়সমুহ

১৫৬

সাধারণতঃ হিজামার জন্য উত্তম সময় হচ্ছে চন্দ্র মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ। আনাস বিন মালেক হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘাড়ের দুই পাশের শিরায় এবং ঘাড়ের কাছাকাছি পিঠের ফুলা অংশে হিজামা করাতেন। তিনি মাসের সতের, উনিশ ও একুশ তারিখে হিজামা করাতেন। [সহীহ আত-তিরমিযী, হা/২০৫১, ২০৫৩; সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/৩৪৮৩; সুনান আবু দাউদ, হা/৩৮৬১; সানাদ সহীহ]যদি অসুস্থতা বা ব্যথা অনুভব হয় তবে উক্ত তারিখের অপেক্ষা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হিজামা করে নেওয়া উচিত।

পরিচ্ছেদ: হিজামার জন্য উত্তম দিন সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার

১৫৭

ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ...আল্লাহর বরকত লাভের আশায় তোমরা বৃহস্পতিবার হিজামা করাও এবং এ ব্যাপারে বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবার বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে হিজামা করাও, কেননা তা সেই দিন যেদিন আল্লাহ আইউব (আ.)-কে রোগ থেকে মুক্তি দান করেন। আর বুধবার তাঁকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠ ও শ্বেত (ধবল) রোগ বুধবারের দিন কিংবা রাতেই শুরু হয়। [সুনান ইবনে মাজাহ, (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) হা/৩৪৮৭, ৩৪৮৮; সানাদ হাসান]মনে রাখবেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামা করেছেন মাসের বিভিন্ন সময়ে। যেমন: হজ্জের সময়, চন্দ্র মাসের প্রথমে। কারণ তিনি মাথা ব্যথ্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতে বুঝা যায় প্রয়োজনে যে কোনো সময় হিজামা করা যায়। হিজামা (Cupping) থেকে বিরত থাকা। দুর্বল করা অসুস্থতা, হায়েজ, অন্তসত্তা, নেফাস এবং দুর্বল শরীরের অধিকারীদেরকে হিজামা করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

পরিচ্ছেদ: হিজামা (Cupping) লাগানোর সময় মনের অবস্থা

১৫৮

মনে রাখবেন যে, সহীহ হাদীস মুতাবেক হিজামা করতেছেন। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করতে চান। কারণ আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণে আল্লাহর কাছে আরোগ্য কামনা করতেছেন। অতঃপর বিছমিল্লাহ বলে আরম্ভ করতে হবে।হিজমা থেরাপী (Cupping Therapy): রোগীকে আরামদায়ক অবস্থায় শুইয়ে অথবা বসিয়ে রাখতে হবে। যে স্থানে হিজামা করতে চান তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত (sterilize) যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। হাতে গ্লাবস পরে নেয়া উত্তম। অতঃপর হিজামার স্থানে ধারালো সুচ বা ব্লেড দ্বারা হালকা ভাবে ছিদ্র। করে নিতে হবে। অতঃপর কাপ সেট করে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে দুষিত রক্ত বের হয়ে কাপে জমতে থাকবে। এ সময় কুরআন তেলাওয়াত করা অথবা তেলাওয়াতের সিডি বাজানো যায় যা আরোগ্য দানে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ। হিজামা শেষে ঐস্থানে কালোজিরার তেল (black seed oil) অথবা Antibacterial Solutions লাগাতে হবে। প্রয়োজনে হিজামার স্থান ঢেকে (bandage) দিতে পারেন। হিজামার পর সাধারণত সে স্থানে গোল চিহ্ন বা ফোলা অনুভব হয়। যা সর্বোচ্চ দুই-তিন দিন থাকতে পারে। এটা দুষিত রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন।

পরিচ্ছেদ: হিজামার মাধ্যমে যেসব রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা হয়

১৫৯

ব্যাক পেইন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে ব্যথা, হাটুর ব্যথা, মাথা ব্যথা (মাইগ্রেইন), ঘাড়ে ব্যথা, কমরে ব্যথা, জয়েন্টে পেইন, আথ্যরাইটিজ, কালো যাদু, বাত, ঘুমের ব্যঘাত, থাইরড ব্যঘাত, জ্ঞান এবং স্মৃতি শক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিস্কার, অতিরিক্ত স্রাব বা এপিস্টাঙ্গি থামানো, অর্শ, অন্ডকোষ ফোলা, পাঁচড়া, ফোঁড়া ইত্যাদি। Cupping (Hijama) therapy was reported to treat medical conditions as hypertension, neck pain, skin diseases, infectious diseases, rheumatoid arthritis, chronic osteoarthritis, and chronic non-specific neck pain, and persistent non-specific low back pain, pain of acute gouty arthritis, headache and migraine.

সেটিংস

বর্তমান ভাষা