রুকইয়াহর পরবর্তী পদক্ষেপ

রুকইয়াহর পরবর্তী পদক্ষেপ

৪ সাবক্যাট | ৪ দোয়া

অধ্যায়: রুকইয়াহর পরবর্তী পদক্ষেপ

পরিচ্ছেদ: ভূুমিকা

০৮

রক্বির রোগীর জন্য রুকইয়াহ তেলাওয়াত করবেন। এক্ষেত্রে যে জ্বিনের ক্ষতির কারণে রোগের সৃষ্টি হয়েছে সেই জ্বিনের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে রক্বির আল্লাহভীতি (তাকওয়া) ও আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইবনে মুফলিহ আল হাম্বলি (রহ) তার মাসাইবুল ইনসান মিন মাকাইদুস শায়তান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মানুষের মতো শয়তানেরও সিজার (seizure) (অস্বাভাবিক হৃদকম্পন, দেহে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি) হয়, যখন সে ঈমানি চেতনায় পরিপূর্ণ কোনো মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি আসে। তিনি আরো বলেন:যে হৃদয় ঈমানি চেতনায় পরিপূর্ণ, তা সবসময় আলোকিত থাকে, এতে উত্তাপ আছে, যখনই কোনো শয়তানি প্ররোচনা (ওয়াসওয়াসা) এ হৃদয়ের কাছাকাছি আসে তখন এটি ছাইয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্ণিত আছে, যখন কোনো মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন। যদি কোনো শয়তান বা মন্দ জ্বিন এর কাছে আসে, তাহলে ওই শয়তানেরও মানুষের মতো সিজার (শরীরে প্রচণ্ড ঝাকুনি) হয়। ওই মুহর্তে সব শয়তান ওই শয়তানকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে এবং বলতে থাকে, “তার কী হয়েছে?” তখন বলা হয়, মানুষ তাকে পরাভূত করেছে।” [ইবনে তাইমিয়াহ, মাজমু আল ফাতওয়া, ১৯/৪১]এখানে উল্লেখ্য যে, জ্বিনের ক্ষতির ক্ষেত্রে তেলাওয়াতকারীর ঈমানী শক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। অস্ত্রের মালিকের হাতেই অস্ত্র ভালো কাজ করে।রোগীর জন্য কুরআনের যেসব আয়াত তেলাওয়াত করতে হবে: রুকইয়াহ তেলাওয়াত করার পর নিম্নোক্ত ফলাফল আসতে পারে:১. রোগী একটি ঝাঁকুনি (সিজার) অনুভব করবে এবং জ্বিন কথা বলতে শুরু করবে।২. রোগী কোনো সিজার অনুভব করবে না, তবে অন্য কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হবে যা দ্বারা বোঝা যাবে, এ সমস্যা জ্বিনের কারণেই হয়েছে।৩. আর সমস্যা যদি হয় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বা মনোবৈজ্ঞানিক, তাহলে কিছুই ঘটবে না।

পরিচ্ছেদ: রোগী যদি ঝাঁকুনি অনুভব করেন এবং জ্বিন যদি কথা বলে

০৯

তাহলে এ ক্ষেত্রে যা যা জিজ্ঞেস করতে হবেঃ১. জ্বিনের নাম ২. তার ধর্ম ৩. কী কারণে সে মানুষের উপর ভর করেছে।মানুষের দেহে ভর করার কারণ যদি হয় এমন কোনো মন্দ উদ্দেশ্যে যা আল্লাহ তা'আলা নিষিদ্ধ করেছেন, তাহলে তাকে বলতে হবে, এটা। হারাম এবং তার বিরুদ্ধে যত প্রমাণ আছে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাকে আরো বলতে হবে যে, সে-ও মানুষের মতো আল্লাহ ও তার রাসূল (ﷺ)-এর নিয়মের অধীন, রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা'আলা প্রেরণ করেছেন মানুষ ও জ্বিন উভয় জাতির জন্যই।আর জ্বিন যদি এটা করে থাকে মানুষকে শাস্তি দেয়া বা পুরনো হিসাব মেটানো অর্থাৎ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, তাহলে তাকে বলতে হবে, এ ব্যক্তি যা করেছে তা না বুঝে করেছে এবং এ ব্যক্তি সুচিন্তিতভাবে এ ক্ষতি করেনি, যার ফলে তিনি শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত নন। আর ওই ব্যক্তি যদি এ ত্রুটিপূর্ণ বা জ্বিনের জন্য ক্ষতিকর কাজ তার নিজ বাড়িতে অথবা নিজ সম্পত্তিতে বসে করে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে জ্বিনকে বলতে হবে, এটা মানুষের নিজস্ব সম্পত্তি, তাই নিজ বাড়িতে তার যে কোনো অনুমোদিত উপায়ে আচরণ করার অধিকার রয়েছে, বরং তোমার বিনা অনুমতিতে মানুষের বাড়িতে বা ঘরে অবস্থান করার কোনো অধিকার নেই। রক্বিকে আল্লাহ ও তার রাসূল (ﷺ)-এর নিয়ম-নীতির কথা বলার ক্ষেত্রে অটল থাকতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তাদেরকে ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًاঅর্থঃ আমি ‘আযাব দেই না যতক্ষণ একজন রসূল না পাঠাই। (সূরা আল ইসরা ১৭:১৫)يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَاঅর্থঃ ‘হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত?’ (সূরা আল-আনআম ৬:১৩০)আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বসবাসের গৃহে কোনো সাপ পাওয়া গেলে তা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, তিনবার চলে যেতে বলার পর সাপটি ঘর এ ছেড়ে যায়, মুসলিম শরীফে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, কারণ অবৈধভাবে যেমন কোনো মানুষ হত্যা করা ইসলামে বৈধ নয়, তেমনি কোনো জ্বিনকেও অবৈধভাবে হত্যা করা জায়েয নয়। খারাপ কাজ সর্বক্ষেত্রেই হারাম; কারো ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের খারাপ কাজ বা ভুল কাজ করা জায়েয নয়, এমনকি সে যদি কাফিরও হয়।জ্বিন যদি রক্বির সনির্বন্ধ অনুরোধে সাড়া প্রদান করে, তাহলে তো ভালো, আর যদি সাড়া না দেয়, তাহলে রক্বির জ্বিনকে ভর্ৎসনা করবেন, হুমকি দিবেন, অভিশাপ দেবেন এবং তাকে অপমান করবেন, যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সহীহ মুসলিমে আবু দারদার (রাঃ) সূত্রে। তিনি বলেন:আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমরা তাকে বলতে শুনলাম:أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنْكَ“আমি তোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” অতঃপর তিনি বলেন:“আমি আল্লাহর অভিসম্পাতে তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি”এভাবে তিনবার বলার পর তিনি কোনো কিছু নেয়ার মতো করে হাত বাড়ালেন। প্রার্থনা শেষ হলে আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমরা আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি, যা আমরা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি, এবং আমরা দেখলাম আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।তিনি বলেন: “আল্লাহর শত্রু ইবলিস আগুনের একটি শিখা নিয়ে এসেছে আমার মুখে নিক্ষেপ করবে বলে, এটা দেখেই আমি বললাম, আমি তোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি', তিনবার বলার পর আমি তাকে হাত বাড়িয়ে ধরতে চাইলাম, কিন্তু আল্লাহর শপথ, আমার ভাই সুলাইমানের প্রার্থনা যদি না থাকত, তাহলে এ সকালেই তাকে বেঁধে ফেলতাম এবং মদিনার শিশুরা তাকে নিয়ে খেলা করত।” [সর্বসম্মত রয়েছে। শাইখ আল আলবানি (রহ), সহীহ আল জামি, হাদিস নং-৩১০৮]এ হাদীসে দেখা গেল, কেউ শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন এবং তাকে আল্লাহর অভিসম্পাতে অভিশাপও দিতে পারেন।জ্বিনকে যদি কুরআন তেলাওয়াত, ভালো ও মন্দ কাজের আদেশ নিষেধ, ভর্ৎসনা ও অভিসম্পাত করার মাধ্যমে বিতাড়িত করা হয়, তাহলেই লক্ষ্য অর্জিত হবে। আর এর কারণে যদি ওই জ্বিন অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা মারা যায় তবে তা তার নিজের ভুলের জন্যই হবে, এজন্য রক্বিকে বরং প্রতিদান দেয়া হবে। কারণ এর মাধ্যমে এমন এক ব্যক্তির বিষন্নতা দূর করা হয়েছে, যার প্রতি ভুল করা হয়েছিল। যার প্রতি। ভুল করা হয়েছে যথাসাধ্য তাকে সাহায্য করার কথা ইসলামে বলা হয়েছে, এবং এটা মুস্তাহাব কাজ। সহীহাইনে আল বারাআ' বিন আযিব (রাঃ) থেকে। বর্ণিত আছে,আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে সাতটি কাজ করার এবং সাতটি কাজ না করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় অংশ নেয়ার, হাঁচি দিলে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলার, শপথ পালন করার, যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে এমন ব্যক্তির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার, দাওয়াত গ্রহণ করা এবং সালাম দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।এবং তিনি আমাদেরকে স্বর্ণের আংটি পরিধান করতে, রূপার পাত্রে পান করতে, সিল্কের তৈরি ঘোড়ার জিন ব্যবহার করতে, কাসি কাপড়চোপড় পরিধান এবং সিল্ক, সোনা ও রূপার কারুকাজ করা রেশমি বস্ত্র, ও বুটিদার রেশমি বস্ত্র পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।আস সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন: “তোমার ভাইকে সহায়তা কর, সে জুলুম করুক অথবা তার প্রতি কেউ জুলুম করুক।”আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), কারো প্রতি অন্যায় করা হলে বা ভুল করা হলে তাকে কিভাবে সাহায্য করতে হয় তা আমরা জানি, কিন্তু সে যদি নিজেই গর্হিত ও অন্যায় কাজ করে, তাহলে তাকে কিভাবে আমরা সহায়তা করব?” তিনি বললেন: “তাকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখ। এটাই হল তাকে সাহায্য করার উপায়। জ্বিন বিতাড়িত করলে অবিচার বা অন্যায়ের শিকার ব্যক্তির যন্ত্রণা লাঘব হয়। সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপর কোনো মুমিন ভাইয়ের একটি যন্ত্রণা লাঘব করে দেবে, পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ তার একটি যন্ত্রণা লাঘব করে দেবেন। আর যিনি কঠোর ব্যক্তির সঙ্গে সহজ আচরণ করবেন, দুনিয়াতে ও আখেরাতে আল্লাহ তার সঙ্গেও সহজ আচরণ করবেন। যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলমান ভাইয়ের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে। তার দোষও গোপন করবেন। আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তার কোনো বান্দাহকে সহায়তা করবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই বান্দাহ তার কোন মুসলিম ভাইকে সাহায্য করবে।” [মুসলিম ২৬৯৯]সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) রুকইয়া তেলাওয়াত করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ভাইয়ের কোনো উপকার করতে চায়, তবে তাকে তা করতে দাও। [মুসলিম ২১৯৯]এসব আলোচনা ও বর্ণনা রক্বিকে উৎসাহিত করার জন্য, তবে রক্বির জ্বিনকে উদ্দেশ্যবিহীন প্রশ্ন করেই যাবেন না অথবা জ্বিনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনাও করবেন না। তার যে লক্ষ্য তা থেকে তিনি বিচ্যুত হবেন না। নিম্নোক্ত কারণে এটা করা যাবে না:১. অতিরিক্ত মাত্রায় প্রশ্ন করার কারণে রক্বির শয়তানের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন এবং তার নিজের মধ্যে আত্ম-গৌরব ও ঔদ্ধত্য চলে আসতে পারে।২. অযথা বেশি প্রশ্ন করার কারণে জ্বিন মনে করতে পারে, রক্বির মাঝে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে, এর ফলে জ্বিন আরো ধূর্ত হয়ে যেতে পারে এবং আবিভূর্ত হতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।৩. সিজারের স্থায়িত্ব বেশী হওয়ার কারণে রোগী চেতনা ফিরে পাওয়ার পর শারীরিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।এসব চেষ্টার পরও যদি জ্বিনকে আবির্ভূত হওয়ার ব্যাপারে রাজী করানো না যায়, তাহলে রক্বির যেসব আয়াত জ্বিনকে শাস্তি দেয় সেসব আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করতে পারেন, এর ফলে জ্বিনের উপর একটি প্রভাব পড়বে এবং এ আয়াত জ্বিনকে শাস্তি প্রদান করবে এবং জ্বিনকে নিদারুণ যন্ত্রণা দেবে। সম্পূর্ণ কুরআনই মানুষের জন্য নিরাময় ও রহমত। আল্লাহ তা'আলা বলেন:وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظّٰلِمِينَ إِلَّا خَسَارًاঅর্থঃ আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়। (আল ইসরা ১৭:৮২)

পরিচ্ছেদ: রুকইয়াহ করার পর রোগীর যদি শরীরের কম্পন না হয়

১০

জ্বিন স্পর্শ করার কিছু লক্ষণ রয়েছে। এসব লক্ষণ হল: ১. হাত ও পায়ে অসাড়তা ২. দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়া বা কম্পন হওয়া ৩. ডান বাহু অথবা পায়ে অসাড়তা ৪. ঘন ঘন চোখের পাতা পড়া বা পিট পিট করা ৫. তন্দ্রালু ভাব, বিতৃষ্ণা বোধ ও বমিরোগীর ওপর কুরআন তিলাওয়াতকালে উপরোক্ত কোনো একটি লক্ষণ যদি দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে তার ওপর জ্বিনের স্পর্শ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পূর্বে নির্দেশিত কর্মসূচি অনুসরণ করতে হবে।

পরিচ্ছেদ: রুকইয়াহর পাশাপাশি রোগীকে যা যা করতে হবে

১১

১. রোগী নিজেকে শক্তিশালী মনে করবেন, ধৈর্য ধরবেন এবং হতাশায় নিমজ্জিত হবেন না। অসুস্থ ব্যক্তিকে অবশ্যই এ কথা বুঝতে হবে যে, বিপদে ধৈর্য ধারণ করাই আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের প্রতি ঈমানের অপরিহার্য দাবি। আর আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের প্রতি এ বিশ্বাস হলো ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের অন্যতম একটি।তাকে আরো উপলব্ধি করতে হবে, তার উপর যে বিপদ নেমে এসেছে তা আল্লাহর জ্ঞাতসারেই হয়েছে এবং এটি আসমান ও জমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই জারী বা আদেশ হয়েছিল।আল্লাহ তা'আলা বলেন:أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۗ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَابٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ﴿٧٠﴾অর্থঃ তুমি কি জান না যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। (সূরা আল হাজ্ব ২২:৭০)مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ﴿٢٢﴾ لِّكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْঅর্থঃ যমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। যাতে তোমরা আফসোস না কর তার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। (সূরা আল হাদীদ:২২-২৩)একবার যদি কোনো রোগী বুঝতে পারেন যে, তার উপর যে বিপদ এসেছে তা আল্লাহর জ্ঞাতসারে এবং আল্লাহ তা'আলার আদেশের ফলেই হয়েছে, তাহলে তার মধ্যেই অবশ্যই ঈমান আছে, এবং এ অবস্থায় তাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, এ বিপদকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে। আর তার মাঝে একবার যদি দৃঢ় ঈমান তৈরি হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাকে পথ দেখাবেন, তাকে পরিতৃপ্ত করবেন, প্রতিদান পাওয়ার উপযোগী করবেন, বিপদে ধৈর্য ধরার সক্ষমতা দান করবেন এবং সর্বোপরি কৃতজ্ঞতা আদায়েরও সক্ষমতা দেবেন। আর যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সঠিক পথের দিশা পাবেন, তিনিই কেবল মানসিক পরিতৃপ্তি লাভ করবেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন:مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿١١﴾ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ ۚ فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَإِنَّمَا عَلَىٰ رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ ﴿١٢﴾অর্থঃ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। কিন্তু তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার রাসূলের তো একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়া। (সূরা আত-তাগাবুন ৬৪:১১-১২)আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের উপর পূর্ণ বিশ্বাস থেকে মানুষ একটি জিনিস বুঝতে পারে যে, এ প্রাত্যহিক জীবনের নানা বিষয়ে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়েও নিয়ন্ত্রণ নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই তার খাদ্য সংস্থান অথবা তার জীবনকালের উপর, অথবা সে কি আল্লাহর রহমত পাবে কি অভিশপ্ত হবে সে বিষয়ের উপরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন: “তোমাদের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার প্রথম চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয় মায়ের গর্ভাশয়ে, অতঃপর এ ভ্রুণ পরিণত হয় আলাকায় (জমাট রক্তপিণ্ড) এরপর একই সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এ রক্তপিণ্ড চর্বণকৃত মাংসের টুকরো হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন, যিনি মাতৃগর্ভে থাকা মানুষের চারটি বিষয়-তার খাদ্য সংস্থান, জীবনের ব্যাপ্তি, তার কর্ম এবং ওই ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন না কি জান্নাতের সুবাস পাবেন- লিপিবদ্ধ করার জন্য নিযুক্ত। সেই আল্লাহর শপথ যার কোনো অংশিদার নেই, অতঃপর তোমাদের কেউ বেহেশতবাসীদের মতো সৎকর্ম করতে পার যতক্ষণ না তোমার ও বেহেশতের মধ্যবর্তী দূরত্ব আঠারো থেকে বাইশ ইঞ্চি হয়, অতঃপর একটি আদেশ জারি হতে পারে এবং তা তোমাকে অতিক্রম করে যেতে পারে এবং এর পর তুমি আবার জাহান্নামের অধিবাসীদের মতো নিকৃষ্ট কাজ করতে শুরু করবে এবং সবশেষে জাহান্নামেই প্রবেশ করবে। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে, তোমাদের কেউ জাহান্নামের অধিবাসীদের কর্ম করতে শুরু করলে, এক পর্যায়ে তোমার ও জাহান্নামের দুরত্ব মাত্র আঠারো থেকে বাইশ ইঞ্চিতে এসে দাঁড়ালো, এমন সময় আল্লাহর আদেশ জারি হল এবং তা তোমাকে অতিক্রম করল। এরপর থেকে তুমি জান্নাতের অধিবাসীদের কর্ম করতে শুরু করবে এবং অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ হাদিস, দেখুন: শাইখ আল আলবানি (রহ.) রচিত সহীহুল জামি, হাদিস নং-১৫৪৩]যারা জীবনে দুর্যোগ অথবা বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন তারা বুঝতে পারবেন যে, কোনো ভালো ফলাফল আসে দীর্ঘদিন ধৈর্য ধারণ করার পর, এবং এ উপশমের পেছনে থাকে নিদারুণ যন্ত্রণা, আর কোনো কঠিন বিপদ চলে আসে খুবই সহজে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি। বলেন, একদা আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর পেছনে ছিলাম এবং তিনি আমাকে বললেন: “হে যুবক, আমি তোমাকে কিছু উপদেশ দেব। আল্লাহকে স্মরণ করবে, তাহলেই তাকে তোমার সামনে পাবে। তখন তুমি যদি কিছু চাও, তবে তা যেন হয় আল্লাহর কাছে চাওয়া; তুমি যদি সাহায্য প্রার্থনা কর, তবে আল্লাহর সাহায্য চাও। জেনে রাখ, পুরো দেশ যদি তোমার কোনো একটি উপকার করার জন্য একত্রিত হয়, তাহলে তারা তোমার জন্য ততটুকুই করতে পারবেন যতটুকুর জন্য ইতোপূর্বে আল্লাহ তোমার জন্য আদেশ জারি করেছেন, ঠিক একইভাবে পুরো দেশ যদি তোমার কোনো ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়, তাহলে তারা তোমার ততটুকু ক্ষতি করতে পারবে, যতটুকুর জন্য আল্লাহ আদেশ করেছেন। কলমগুলোও উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠাগুলোও শুকিয়ে গেছে।” [সহীহ হাদিস, দেখুন: শাইখ আল আলবানি (রহ.) রচিত সহীহুল জামি, হাদিস নং ১৯৫৭, সহীহ মুসলিম, আত্-তিরমিযী]কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে: “তোমার সুখের ও আরামের দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ কর, আল্লাহ তোমাকে তোমার কষ্টের দিনগুলোতে স্মরণ করবেন। আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে, যার জন্য আপনি দুঃখবোধ করেছেন বা যার অভাব বোধ করেছেন, তা কখনোই। আপনার জীবনে সংঘটিত হবে না, আবার যা আপনার জীবনে ঘটবে, তার জন্য কখনো দুঃখবোধ করেননি। কোনো ভালো ফলাফল আসে দীর্ঘদিন ধৈর্য ধারণ করার পর, এবং এ উপশমের পেছনে থাকে নিদারুণ যন্ত্রণা, আর কোনো কঠিন বিপদ চলে আসে খুবই সহজে।যে ব্যক্তি জীবনে বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি অবশ্যই আল্লাহর প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ রাখবেন, আর প্রতিজ্ঞাগুলো হল, উত্তম প্রতিদান, বিপদে ধৈৰ্য্য ধারণকারী পাবেন উচ্চ মর্যাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন,একজন মানুষ আল্লাহর সামনে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতে পারেন, যা তিনি সৎকর্ম করার মাধ্যমে অর্জন করতে পারতেন না; আল্লাহ তাকে তার অপছন্দনীয় জিনিস দিয়ে পরীক্ষা করতে থাকেন, যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি সেই উচ্চ মর্যাদায় পৌছাতে পারেন।” [হাসান, শাইখ আলবানি (রহ.) এর সহীহুল জামি, হাদিস নং-১৬২৫]২. রোগীকে অবশ্যই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, রোগের নিরাময়কারী একমাত্র আল্লাহ তা'আলা। আর রুকইয়াহ নিরাময় অন্বেষণ করার শরীয়াহ নির্দেশিত পদ্ধতিগুলোর একটি। রুকাইয়াহতে যা পাঠ করা হয় তা আল্লাহরই বাণী। আল্লাহ তা'আলা বলেন,وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَঅর্থঃ আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত। (আল ইসরা ১৭: ৮২)মূল কথা হল, রুকইয়াহর ধর্তব্য বিষয় হল, এতে কী তেলাওয়াত করা হয়েছে, কে তেলাওয়াত করেছে সেটা কোনো বিষয় নয়, তাই আমরা আমাদের মনকে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করব না।৩. রোগী বেশি বেশি করে আল্লাহমুখী হবেন এবং দোয়া করবেন। অপছন্দনীয় ও ক্ষতিকর কোনো কিছুকে প্রতিহত করার এটাই সর্বোৎকৃষ্ঠ পন্থা এবং রোগ থেকে নিরাময়ের সবচেয়ে ফলপ্রসূ মাধ্যম। প্রয়োজনীয় সকল শর্ত মেনে দোয়া করা হলে, তা দুর্যোগ বা বিপদের প্রধান শত্রু হয়ে যায়; এ দোয়া বিপদকে প্রতিহত করে, বিপদের যন্ত্রণা লাঘব করে, বিপদে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করে, আর যদি বিপদ এসেই পড়ে তবে তা থেকে নিরাময়েরও ব্যবস্থা করে। মুমিনের একমাত্র হাতিয়ার হল দোয়া।অনবরত দোয়া করে যাওয়া, দোয়ায় অটল থাকা একটি বড় ধরনের হাতিয়ার, এ অস্ত্র রোগ হওয়া প্রতিরোধ করে, আর রোগ হলে তা প্রতিহত করে। আল হাকিম তা সহীহ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আয়িশাহ এর থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা আদেশের ক্ষেত্রে সতর্কতা কোনো কাজে আসে না, কিন্তু দোয়া যে বিপদ বা রোগ সংঘটিত হয়েছে সেক্ষেত্রেও উপকারী এবং যা এখনো ঘটেনি সেক্ষেত্রেও কার্যকর। বিপদ বা দুর্যোগ আক্রমণ করতেই পারে এবং তা মোকাবিলা করা হয় দোয়া। দিয়ে। কেয়ামত পর্যন্ত বিপদ ও দোয়া পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত থাকবে।” [হাসান হাদিস। দেখুন: আল আলবানি (রহঃ) এর সহীহুল জামি, হাদিস নং-১৬২৫]এজন্য মুসলমানদের পূর্ণ মনোযোগে দোয়া করতে হবে, বিক্ষিপ্ত মনে দোয়া করা যাবে না অর্থাৎ দোয়া যেন দুর্বলভাবে করা না হয়, যেন কোনো দুর্বল চিত্তের মানুষের হৃদয় থেকে এ দোয়া করা হচ্ছে এমন মনে না হয়, যেমন ঢিলা ধনুকের মতো, যা থেকে খুব দুর্বলভাবে তীর বের হয়ে আসে।সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:لَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلاَّ الدُّعَاءُ، وَلَا يَزِيْدُ فِي الْعُمُرِ إِلاَّ الْبِرُّ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ، بِالذَّنْبِ يُصِيْبُهُ“দোয়া ব্যতীত অন্য কিছু আল্লাহর আদেশকে পরিবর্তন করতে পারে না; একমাত্র সৎকর্মই পারে একজন মানুষের জীবনকাল বৃদ্ধি করতে; আর মানুষ তার কৃত অপকর্মের কারণেই খাদ্য সংস্থান থেকে বঞ্চিত হতে পারে।” [দূর্বল হাদিস। আলবানি, সহীহুল জামি, ১৪৫৩]একইভাবে দোয়ার জবাব পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করা যাবে না এবং এ কথা বলে দোয়া করা ছেড়ে দেয়াও যাবে না যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু কোনো সাড়া তো পেলাম না। সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন,“তোমরা তোমাদের দোয়ার উত্তর পাবে, যতক্ষণ না তোমরা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবে এবং বলবে, আমি দোয়া করলাম, অথচ কোনো সাড়া পেলাম না।”সহীহ মুসলিমে উল্লেখ করা হয়েছে, “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), কোন জিনিস মানুষকে তাড়াহুড়ার মধ্যে ফেলে দেয়?” আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন,“যখন কেউ বলে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি এবং এরপর সে নিজেকে খুব হতাশ মনে করে দোয়া করা ছেড়ে দেয়।যিনি দোয়া করার জন্য আল্লাহর উদ্দেশে হাত উঠাবেন, তাকে অবশ্যই তার খাবার, পানীয় ও বস্ত্রের মধ্যে কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম তা যাচাই করতে হবে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) তার কিতাবে বর্ণনা করেছেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেনঃ“হে লোক সকল, তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ নিজে ভালো, তাই তিনি ভালো কোনো কিছুকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওইসব বিষয়ের আদেশ প্রদান করেন, যার আদেশ তিনি তার রাসূলগণকেও দিয়েছিলেন।”আল্লাহ তাআলা বলেন:يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْঅর্থঃ হে মুমিনগণ, আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক দিয়েছি তা থেকে। (সূরা বাকারা ২:১৭২) অতঃপর তিনি দীর্ঘ ভ্রমণে বের হওয়া এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, লোকটি ছিল ভ্রমণের ক্লান্তিতে আলুথালু ও ধুলিমলিন। সে তার হাত দুটো আকাশের দিকে তুলে ধরে বলছিল, “হে আমার প্রভু, হে প্রভু, কিন্তু তার খাবার ছিল হারাম, তার কাপড় ছিল হারাম, সে হারাম পুষ্টি গ্রহণ করে বেড়ে উঠেছে, সুতরাং সে কিভাবে তার প্রার্থনার সাড়া পাবে?তাকে দোয়া কবুল হওয়ার ছয়টি সময় বেছে নিতে হবে: ১. রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। ২. যখন আযান দেয়া হয়।৩. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়। ৪. ফরজ সলাত আদায়ের পর।৫. জুমআর দিনে ইমাম যখন মিম্বারে আরোহণ করেন এবং ওই দিনের সকল সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত।৬. জুমআর দিনে আসরের সালাতের পরের শেষ এক ঘণ্টা।সর্বোপরি, দোয়া আসা উচিত নম্র হৃদয় থেকে, যে হৃদয় আল্লাহর সামনে নতজানু, যে হৃদয় একমাত্র তাকেই সঁপে দেয়া হয়েছে, যে হৃদয় বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর প্রতি সকাতর, আর দোয়া করতে হবে হাত উঠিয়ে কিবলামুখী হয়ে এবং উপযুক্ত কথার মাধ্যমে। হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকের দোয়া কবুল করা হয়। এজন্য দোয়াকারীকে পবিত্র অবস্থায় থাকতে হবে।আল্লাহর প্রশংসা ও মহত্ব বর্ণনার মাধ্যমে দেয়া শুরু করতে হবে, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নামে দুরুদ ও সালাম পাঠ করতে হবে, অতঃপর তিনি আল্লাহর সুন্দর ও গুণবাচক নামসমূহ স্মরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর মনোযোগ আকর্ষণ করবেন। এরপর তিনি নম্রতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকবেন, তাঁর সামনে নতজানু হয়ে কাঁদবেন, আশা ও ভয় নিয়ে তাকে ডাকবেন এবং আল্লাহকে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করবেন, এভাবে বেশি বেশি করে দোয়া করতে হবে। এছাড়াও দোয়া করার আগে সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ থেকে হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে।এভাবে দোয়া করা হলে কদাচিৎ তা প্রত্যাখ্যান করা হয়, আর রাসূল (ﷺ) যেভাবে বলেছেন সেভাবে যদি কেউ দোয়া করেন, তাহলে সেই দোয়ার উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক, আল্লাহর নাম উল্লেখ করার মাধ্যমে দোয়া করতে হবে।যারা বিপদগ্রস্ত, অসুস্থ এবং অবশ্যই সকল মুসলমানকে আমি বলব: আমাদের মধ্যে কার কাছে দোয়া নামক এ মোক্ষম অস্ত্রটি নেই? সুতরাং দোয়া করুন এবং এ শক্তিশালী হাতিয়ারটি ব্যবহার করুন। আপনার কাছে অনুসরণ করার মতো চমৎকার উদাহরণ রয়েছেন সৃষ্টির সেরা মানুষ আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) তিনি আল্লাহর কাছে সনির্বন্ধ প্রার্থনা। করতেন যতক্ষণ না তার বগলের সাদা অংশ দেখা যেত এবং যতক্ষণ না তার কাধ থেকে কাপড় পড়ে যেত, এমনকি তিনি ভুলের উর্ধ্বে থাকা সত্ত্বেও তার অতীত ও ভবিষ্যতের গুনাহ মাফ না হওয়া পর্যন্ত দোয়া করতেন।৪. রোগীকে বেশি বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, তাওবাহ করতে হবে। তিনি বলবেন:إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَউচ্চারণঃ ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউন।অর্থঃ “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ তা'আলার জন্য এবং তাঁর কাছেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।”لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِউচ্চারণঃ লা- হাওলা ওয়ালা- ক্বুওয়্যাতা ইল্লা- বিল্লা-হঅর্থঃ আল্লাহ্‌ ছাড়া কারও কোনও শক্তি-সামর্থ্য নেই।حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُউচ্চারণঃ হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল”।অর্থঃ “একমাত্র আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই আমাদের উত্তম অভিভাবক”।৫. রোগী প্রতিদিন তার যিকর ও কুরআন তেলাওয়াত করবেন, এবং অন্তত প্রতি তিনদিনে একবার করে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করবেন।৬. রোগী অবশ্যই প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তার আযকার তেলাওয়াত করবেন।৭. তাকে বেশি বেশি করে নফল ‌ইবাদত, সালাত ও সিয়াম আদায় করতে হবে।৮. যতটা সম্ভব তাকে ওযু ধরে রাখতে হবে। ৯. তিনি কোনো কাজই আল্লাহর নাম ব্যতীত শুরু করবেন না, বিশেষ করে খাওয়া ও পান করার সময়।১০. তাকে শরীয়াহ নির্দেশিত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে, যা তাকে তার রোগ নিরাময়ে সহায়তা করবে, যেমন-এমন পানি পান করতে হবে এবং এমন পানি দিয়ে ধোয়ার কাজ করতে হবে যার উপর কুরআন তেলাওয়াত করা হয়েছে। কুরআনের আয়াত পাঠ করে ফুঁ দেয়া যয়তুনের তেল দিয়ে শরীর, ব্যথার স্থান ও বুক মালিশ করবেন।অসুস্থ রোগীর জন্য তেল ও পানিতে কুরআনের আয়াত পাঠ করে ফুঁ দেয়া ইসলামে নির্দেশিত কোনো পদ্ধতি কি না সে ব্যাপারে আমি শায়খ আবদুল্লাহ আল জিবরিন ও শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীনের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম এবং তারা এর জবাব দিয়েছিলেন এভাবে: এটি ইসলামে নির্দেশিত পন্থা এবং এতে কোনো দোষ নেই, বর্ণিত আছে যে, অনেক সালাফও এটা করেছেন।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা