রুকিয়াহর জন্য উপকরন সমূহ

রুকিয়াহর জন্য উপকরন সমূহ

৮ সাবক্যাট | ১০ দোয়া

অধ্যায়: রুকিয়াহর জন্য উপকরন সমূহ

পরিচ্ছেদ: মধু

১৩৭

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ﴿٦٩﴾অর্থঃ “তার (মৌমাছির) পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় বের হয়, যাতে মানুষের জন্যে রয়েছে শিফা।” (সূরা নাহল: ৬৯)রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতিমাসে তিনদিন সকালে মধু চেটে খাবে, সে কোন বড় রকমের ব্যাধি-কষ্টে পতিত হবে না।” কুরআনে হাকীমে মহান আল্লাহ বলেছেন, (فِيْهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ) অর্থাৎ, উহাতে (মধুতে) মানুষের নিমিত্তে রােগমুক্তি বিদ্যমান আছে। সত্যিই মধু একটা মূল্যবান ও বহু দোষনাশক ভেষজ - এতে কোন সন্দেহ নেই। সিফুরুস সাআদাহ' লেখক লিখেছেন, “নবী করীম (ﷺ) প্রত্যহ একটি পিয়ালাতে পানি মিশিয়ে মধু পান করতেন।” মধু বিশেষজ্ঞগণ বলেন যে, মধু পানিতে মিশ্রিত করে পান করা স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এত ফলপ্রসূ যে, তা একমাত্র মধু সম্পর্কে পারদর্শী ব্যক্তিগণই জানেন।ভেষজ বিজ্ঞানীগণ এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন যে, মধু একটা বহুবিধ মঙ্গলদায়ক সম্পদ। বিশ্বখ্যাত হেকীম 'জালীনুস’-এর মন্তব্য, 'ঠান্ডাজনিত ব্যাধিতে মধুর তুল্য ঔষধ নেই।'ইউনানী ডাক্তারগণ লিখেছেন, সকাল বেলায় খালি পেটে পরিমাণ মত মধু পান করা বা চেটে খাওয়া খুবই উপকারী। এতে কফ নির্গত হয়। পেটের বদ্ধ ময়লা বা দূষিত বস্তুগুলি দূরীভূত হয়ে যায় এবং পাকস্থলীর যথাযথ ক্রিয়া ঠিক রেখে অগ্নিবৃদ্ধি করে। এ ছাড়া পেটের জমা বায়ু নির্গত করতেও সাহায্য করে। মেয়েদের মাসিক স্রাব, বুকের দুধ এবং প্রস্রাবধারা প্রবাহিত রাখতেও এর কাজ যথেষ্ট। এমনকি মূত্রপাথুরি ও পিত্তপাথুরিগুলিকে গলিয়ে বের করে দেয়। (মহেরে হক মুখ খণ্ড ৪২পৃঃ)

পরিচ্ছেদ: কালোজিরা

১৩৮

বিখ্যাত হাদীস বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা (রাঃ) এই নবী করীম (ﷺ) থেকে এ কথা শ্রবণ করেছেন যে, “কালােজীরাতে মৃত্যু ছাড়া সব রােগের আরােগ্যকারী গুণ আছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৮৭পৃঃ)আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, উপরােক্ত হাদীসে 'কালােজীরা'কে সর্বরােগনাশক ভেষজ বা ঔষধ বলা হয়েছে। কারণ, উহার ভেষজগত গুণ হচ্ছে শুষ্কতা ও উষ্ণতা। অতএব ইহা তার বিপরীত ধর্মী রােগ লক্ষণে -যেমন রস ও কফ জনিত ব্যাধিতে বিশেষ উল্লেখযােগ্য ভাবে ক্রিয়া করবে। বলা বাহুল্য, আরব দেশে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার ফলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রস ও কফ জনিত ব্যাধিতেই সেখানকার মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং তাদের এই রকম পরিস্থিতিতে কালােজীরা অমােঘ ঔষধ।ব্যবহার: রুকিয়াহর করার পাশাপাশি কালোজিরা মধুর সাথে খাওয়া যায়। কেবল কালোজিরাও চূর্ণ করে খাওয়া যায়। এছাড়া কালোজিরার তেল মাথা ও শরীরে ব্যবহার করা যায়।

পরিচ্ছেদ: জাদুটোনার চিকিৎসায় সোনামুখীর রস পান

১৩৯

ভূমিকাআল্লাহর রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত ওষুধগুলোর মধ্যে সোনামুখীর রেচক সবচেয়ে উপকারি। জাদুটোনায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র বা তাবিজ-কবচ যদি রোগীর পেটের মধ্যে থেকে থাকে তাহলে সম্ভব হলে এগুলো দ্রুত রোগীকে বমি করানোর মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। আর রোগী যদি বমি করতে না পারে, তাহলে তাকে সোনামুখীর রস পান করতে দিতে হবে। জাদুটোনায় আক্রান্ত অনেকেই এটা পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো উপকার পেয়েছেন।সোনমুখীর গুণাগুণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আসমা বিনতে উমাইস থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন:“রেচক ওষুধ হিসেবে তুমি কী ব্যবহার কর?”তিনি বললেন: “স্পার্জ”। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“এটা গরম, গরম”।তিনি বলেন: এরপর আমি রেচক হিসেবে সোনামুখীর রস ব্যবহার করলাম। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এ সম্পর্কে বলেন:“মৃত্যু থেকে নিরাময় লাভের জন্য যদি কোনো ওষুধ থাকত, তাহলে তা হত সোনামুখী।” [আত্-তিরমিযী, ৬/২৫৪, ২৫৬। আল আলবানি বলেন: এই হাদিসটি যঈফ। যঈফুল জামি, হাদিস নং-৪৮০৭]ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন,“তোমরা যেসব ওষুধ ব্যবহার কর, তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল, যা তোমরা মুখের পাশ দিয়ে লাগাও, নাকের ড্রপ, কাপিং ও রেচক।” [ইমাম আত-তিরমিযী হাদিসটি হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল তিব্ব আল নববী গ্রন্থে আল হাকিম ও আবু নাঈম কর্তৃক হাসান হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।]মুখের পাশ দিয়ে ওষুধ লাগানো (লাদুদ): এর মানে হল, হাতের আঙ্গুল দিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করা। আরবি শব্দ লাদুদ এসেছে লাদীদুল ওয়াদি (উপত্যকার পাশ থেকে) বাক্য থেকে। নাকের ড্রপ মানে হল, যে ওষুধ নাকের মধ্যে লাগানো হয় অথবা যা মুখের ভেতর দিয়ে টেনে নেয়া হয়। আর রেচক ওষুধ প্রয়োগ করা হয় মলত্যাগ স্বাভাবিক করার জন্য।আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন তিনি স্পার্জ গাছের পাতা পিষছিলেন। তখন এটা দেখে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেনঃ“ওটা দিয়ে তুমি কী তৈরি করছ?” তিনি বললেন: এটা আমরা পান করি। রাসূল (ﷺ) সাল) বললেন:“মৃত্যুকে দূরে সরানো বা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য যদি কোন ওষুধ থাকত, তাহলে তা হত সোনামুখী পাতা।” [মুসতাদরাক আল হাকীম, ওমর বিন আল খাত্তাব (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে নেয়া]আল হাকীম বলেন: হাদীসটির সনদ সহীহ। আল যাহাবি তার সঙ্গে একমত হয়েছেন।ইবনে মাজাহ তার সুনানের কিতাবুল তিব্বে (ওষুধ অধ্যায়) বর্ণনা করেছেন, ইবরাহিম বিন আবু আবলাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু উবাই বিন উম্ম হারামকে বলতে শুনেছি, তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছিলেন, তারা উভয়েই কিবলামুখী ছিলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তোমরা সোনামুখী পাতা ও মধু ব্যবহার করবে, কারণ এ দুটিতে আল সাম ব্যতীত সব রোগের জন্য নিরাময় রয়েছে।”তখন বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আল সাম কী? তিনি বললেন; “মৃত্যু”।
যেভাবে পানীয় তৈরি করবেন
অসুস্থ ব্যক্তি কিছু সোনামুখী পাতা সংগ্রহ করে আনবেন এবং এগুলোকে এক লিটার পানি ভর্তি পাত্রে রাখবেন। অতঃপর পাত্রটি উনুনে বসিয়ে আগুনে সেদ্ধ করবেন এবং পরে ছেকে নিয়ে ঠাণ্ডা করবেন। এরপর রোগী এখান থেকে খালি পেটে তিন কাপ পান করবেন। মিষ্টি স্বাদের জন্য এর সঙ্গে মধু মিশ্রিত করা যেতে পারে। এটা পান করার পর রোগী তার অন্ত্রে একটু ঢিলেঢালাভাব অনুভব করবেন। পানীয়ের কার্যকারিতা টের পাওয়া যাবে সাত ঘণ্টার মধ্যে এবং এর কার্যকারিতা থাকবে বাইশ ঘণ্টা। পর্যন্ত। এ সময় পেটে মৃদু ব্যথা হতে পারে, তবে অন্ত্রে কোনো ইনফেকশন হবে না। সোনামুখীর রসের কার্যকারিতা শুরু হলে অন্ত্র এর সকল দূষিত পদার্থ বের করে দেবে এবং আল্লাহ চাইলে একই সঙ্গে জাদুটোনার সকল তাবিজ-কবচও বের হয়ে যাবে।এটা অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করা হয়েছে এবং আল্লাহর রহমতে ভালো উপকার পাওয়া গেছে।ড. আলী আল বার হাদীস অনুসারে সোনামুখী পাতা ও এর গুণাগুণের উপর একটি নিবন্ধ লিখেছেন এবং এ নিবন্ধে তিনি সোনামুখী পাতার অনেক ভেষজ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:সোনামুখী পাতাকে মল নরম করার রেচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবং এটি মোটেও ক্ষতিকর নয়। এটা সরাসরি মলাশয়ে কাজ করে। সোনামুখী উত্তম রেচক, উৎকৃষ্ট মানের ওষুধ, এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটি ভারসাম্যপূর্ণ ও শুষ্ক। এর উপকারি গুণাগুণগুলো হল, বিষন্নতা আনয়নকারী চিন্তার বিরুদ্ধে কাজ করে, পা ফাটা, পেশীর প্রসারণ বা টান, চুলের স্ফিতি, উকুন, খোস-পাঁচড়া, ফুসকুড়ি ও শরীরে চুলকানির। বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে গরম করে এটি পান করা হয় এবং এটি শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। এছাড়া এটি পিঠের ও কটিদেশের ব্যথার বিরুদ্ধেও কাজ করে। সোনামুখীর আরেকটি ভালো গুণ হল এটি কালো পাচক রস ও কাশির শ্লেষ্মা বের করে দেয় এবং হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মাথা ব্যথা এবং মৃগীরোগের ক্ষেত্রেও এটি কাজ করে। এটা হেমোরয়েড দুর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে এটিকে ব্যবহার করা হয় পায়খানা নরমকারক রেচক হিসেবে। পায়খানা নরমকারক এমন কোনো ওষুধ পাওয়া যাবে না, যাতে উপাদান হিসেবে সোনামুখীর রস নেই। সোনামুখী সর্বোৎকৃষ্ট রেচক এতে কোনো সন্দেহ নেই। [ড. মোহাম্মাদ আলী আল বার, আল সিনা ওয়াল সানুত]জাদুটোনা দ্বারা যদি মাথা আক্রান্ত হয়, অর্থাৎ কবচ যদি কোনো পারফিউমের ঘ্রাণের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করানো হয়, এ কবচের উদ্দেশ্য হল, দৃষ্টিবিভ্রম, হ্যালুসিনেশন, পাগলামি অথবা অন্যান্য অসুস্থতা তৈরির মাধ্যমে মাথা আক্রান্ত করা, তাহলে এক্ষেত্রে এ জাদুটোনার জন্য কাপিং থেরাপি উপযুক্ত মাধ্যম। আল্লাহ চাইলে এ থেরাপি ভালো কাজ করবে।

পরিচ্ছেদ: জাদুটোনার জন্য কাপিং (কাঁচপ্রয়োগে চিকিৎসা) থেরাপী

১৪০. ভূমিকা

কাপিং হলো নবীদের (ﷺ) ব্যবহৃত একটি উপকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। কবচ করার স্থানে যদি কাপিং করা হয় তাহলে এটা ওই স্থানের সকল দূষিত জিনিস বের করে দেবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে মন্ত্রের কার্যকারিতা নষ্ট ও বাতিল হয়ে যাবে।কিন্তু নবীদের (ﷺ) ব্যবহৃত এ অতি উপকারী চিকিৎসা পদ্ধটির ব্যবহার মানুষ এখন ছেড়ে দিয়েছে। ইমাম বুখারী (রাহঃ) তার সহীহ গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তিনটি জিনিসের মধ্যে তোমাদের জন্য নিরাময় রয়েছে: মধু, কাপিং করার হাতিয়ার ও আগুন দিয়ে ক্ষতের সংক্রমণ পুড়িয়ে দেয়া, তবে আমি আমার উম্মতের জন্য আগুন দিয়ে শরীরের ক্ষত পোড়ানো নিষিদ্ধ করে দিলাম।” (ফাতহুল বারী ১০/১৪৩)জাবির বিন আবদুল্লাহ (কাল) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছিঃ“তোমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভালো কিছু যদি থেকে থাকে তবে। রয়েছে কাপিং করার যন্ত্রে, মধুতে অথবা আগুন দিয়ে ক্ষতের সংক্রমণ পোড়ানোর মধ্যে, তবে আমি আমার উম্মতের জন্য শেষেরটি নিষিদ্ধ করলাম।অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাবির বিন আবদুল্লাহর (রাঃ) সঙ্গে আল মুকান্নার (তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন) দেখা হলে তিনি তাকে বললেন: আমি তাকে কাপিং চিকিৎসা না দেয়ার আগে ছাড়ব না, কারণ আমি। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছি,“এর মধ্যে নিরাময় রয়েছে।” [ফাতহুল বারী, ১০/১৫৯]অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একবার আনাস (রাঃ)-কে কাপিং চিকিৎসকের পারিশ্রমিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আবূ তাইবা কাপিংয়ের মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর চিকিৎসা করেছেন এবং বিনিময়ে রাসূল (ﷺ) তাকে দুই সা’ গম অথবা যব দিয়েছেন। আর আবূ তাইবার মনিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন যেন তারা তার প্রতি সদয় হন। এবং তিনি বলেন:“তোমরা যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার কর তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল কাপিং ও সামুদ্রিক কস্টাস।”রাসূল (ﷺ) আরো বলেন:“টনসিলের চিকিৎসা করার জন্য তোমরা তোমাদের সন্তানদের টনসিল চেপে নির্যাতন কর না, বরং তোমরা এর জন্য কস্টাস ব্যবহার কর।” [ফাতহুল বারী, ১০/১৫৯]গারীবুল হাদীস গ্রন্থে আবূ উবায়েদ আবদুর রহমান বিন আবু লায়লা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন জাদুটোনা। দ্বারা আক্রান্ত হলেন, তখন কাপিংয়ের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়েছিল।ওই সময় তাদের অনেকে বলেছিলেন, যেসব জিনিস দিয়ে জাদুটোনা করা হয়েছে সেগুলো তার মাথা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। শয়তানের আত্মার প্রভাব দিয়ে জাদুটোনা করা হয় এবং এর কিছু প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একে বলা হয় সিহর ও নামরিজাত, আর প্রভাবই সবচেয়ে খারাপ।কাপিং যদি কবচ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সঠিকভাবে করা যায় তাহলে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। ইবনে আল কাইয়ুম (রাঃ) বলেন, ক্ষতিকর জাদুটোনার প্রভাবে এতে ব্যবহৃত জিনিস যেখানে পৌঁছেছে সেখান থেকে বের করতে হবে। কারণ জাদুটোনা শরীরের উপর বেশ প্রভাব ফেলে মন মেজাজ উত্তেজিত করে তোলে এবং মানসিক মেজাজকে বিরক্ত করে। জাদুটোনার প্রভাব যদি শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশে প্রকট আকার ধারণ করে এক্ষেত্রে জাদুটোনায় ব্যবহৃত পদার্থগুলো বের করতে পারলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যাবে। [যাদুল মা'আদ, ৪/১২৫, ১২৬]

১৪১. মেডিসিন বিশেষজ্ঞগণের অভিমত

কাঁধে ও ঘাড়ে ব্যথার জন্য ঘাড়ের উপর কাপিং করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাথা ও মুখমণ্ডলের সমস্যা যেমন: নাক, কান, গলা ও চোখের সমস্যার ক্ষেত্রে ঘাড়ের মোটা শিরার উপর কাপিং করলে বেশ। উপকার পাওয়া যায়। উরু ও পায়ের গুলে ঘা হলে, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা। (ঋতুস্রাব না হওয়া) ও অণ্ডকোষে চুলকানি হলে সেক্ষেত্রে পায়ের উপরে কাপিং করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আর বুকের নিচের দিকে কাপিং করলে তা ফোড়া, খোস-পাঁচড়া, ফুসকুড়ি, গেঁটে বাত, হেমোরয়েড, গোদ রোগের জন্য বেশ উপকারি হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কেও তার ঘাড়ের মোটা শিরায় ও দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে কাপিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়েছিল। [আত্-তিরমিযি, আবু দাউদ ও ইবনে মাযাহ হাদিসটিকে হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল হাকিম একে সহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।] তীব্র মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের জন্য কাপিং বেশ উপকারি ও ফলপ্রসু চিকিৎসা। ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে এ কাপিংয়ের উপর একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন এ শিরোনামে ‘মাইগ্রেন ও মাথাব্যথার জন্য কাপিংয়ের অধ্যায়।' ইবনে হাজার মাইগ্রেন হওয়ার কারণসমূহ বর্ণনা করেছেন এবং এর চিকিৎসায়। কাপিংয়ের ভূমিকাও উল্লেখ করেছেন। [ফাতহুল বারি, ১০/১৬২-১৬৩]মাথায় কাপিংয়ের উপকারিতা সম্পর্কে আরেকটি যঈফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, হাদীসটি ইবনে আদি বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে, হাদীসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“সাতটি রোগের জন্য মাথায় কাপিং উপকারি: পাগলরোগ, কুষ্ঠরোগ, আলস্য, মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ও বদনজর।”হাদীসটি দুর্বল হলেও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা দিয়ে একে সমর্থন করা হয়েছে।

১৪২. কাপিংয়ের সময়

কাপিংয়ের সময় সংক্রান্ত একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ভিজাত থেকে। হাদীসটি ইবনে মাজাহ তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“আল্লাহর রহমত লাভের জন্য বৃহস্পতিবার কাপিং ব্যবহার কর, এছাড়াও সোমবার ও মঙ্গলবার কাপিং ব্যবহার করবে, আর বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবার কাপিং করা পরিহার করবে।” [হাদিসটি ইবনে মাজাহ দুটি দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের তৃতীয় সনদ উলেখ করেছেন দারাকুতনি তার আল ইফরাদ গ্রন্থে]আল খাল্লাল থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমাদ (রাহঃ) উপরোক্ত দিনগুলোতে কাপিং ব্যবহার অপছন্দ করতেন। কিন্তু মাসের কোন দিন কাপিং করা উচিত?আবূ দাউদ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উদ্ধৃত করে তিনি বলেন:“যে ব্যক্তি মাসের সতেরতম, ঊনিশতম অথবা একুশতম দিনে কাপিং করবে, সে যে কোনো রোগ থেকে নিরাময় লাভ করবে।” চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন, মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে, আরো স্পষ্ট করে বললে মাসের তিন চতুর্থাংশে গিয়ে কাপিং করলে মাসের শুরু অথবা শেষের তুলনায় ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে, কারণ মানুষের মানসিক অবস্থা মাসের শুরুর দিকে উত্তেজিত থাকে, আর মাসের শেষের দিকে শান্ত থাকে, সুতরাং এ সময়টাতেই রক্ত বের করা ভালো। তবে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।এ কাজ করার পাশাপাশি উপরোক্ত যমযমের পানির জন্য নির্দেশিত রুকিয়া পাঠ করতে হবে, যমযমের পানি না পাওয়া গেলে সাধারণ বিশুদ্ধ পানি দিয়েও হবে, এ রুকিয়া পাঠ করা পানি রোগীকে দিতে হবে এবং রোগী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এ পানি পান করবেন এবং এ পানি দিয়ে ধৌত করার কাজ সম্পন্ন করবেন।এছাড়া জলপাইয়ের তেলের উপরও রুকিয়া পাঠ করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে রোগী রুকিয়া পড়া তেল তার শরীরের যে স্থান জাদুটোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে এবং মাথা ও বুকে লাগাতে পারেন।রোগী নিজেই বেশি বেশি করে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করবেন এবং যতটা সম্ভব এর রেকর্ড শুনবেন।

পরিচ্ছেদ: অলিভ অয়েল (যাইতুনের তেল)

১৪৩

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ ۖ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ ۖ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ ۚ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٍ ۗ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿٣٥﴾অর্থঃ আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনের নূর। তাঁর নূরের উপমা একটি তাকের মতই। তাতে রয়েছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি রয়েছে একটি চিমনির মধ্যে। চিমনিটি উজ্জ্বল তারকার মতই। প্রদীপটি বরকতময় যাইতূন গাছের তেল দ্বারা জ্বালানো হয়, যা পূর্ব দিকেরও নয় এবং পশ্চিম দিকেরও নয়। এর তেল যেন আলো বিকিরণ করে, যদিও তাতে আগুন স্পর্শ না করে। নূরের উপর নূর। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত করেন তাঁর নূরের দিকে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমাসমূহ উপস্থাপন করেন। আর আল্লাহ প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। (সূরা-আন নুর: ২৪:৩৫)وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِن طُورِ سَيْنَاءَ تَنبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِينَ ﴿٢٠﴾অর্থঃ আর এক বৃক্ষ যা সিনাই পাহাড় হতে উদগত হয়, যা আহারকারীদের জন্য তেল ও তরকারী উৎপন্ন করে। (সূরা মুমিনুন ২৩:২০)আল কুরতুবি (রহঃ) বলেন, এখানে জলপাই গাছের কথা বলা হয়েছে। একে এককভাবে উল্লেখ করার কারণ হল, এ গাছের অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন: وَالتِّيْنِ وَالزَّيْتُوْنِঅর্থঃ শপথ তীন ও যায়তূন-এর (যা জন্মে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন এলাকায় যে স্থান বহু পুণ্যময় নবী ও রাসূলের স্মৃতিতে ধন্য) (আত-তীন ৯৫:১)ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আপনারা জানেন এর দ্বারা যাইতুন (ডুমুর) ও জলপাই গাছকে বোঝানো হয়েছে। অতঃপর তিনি আরো বলেন: জলপাই গাছ হল বরকতময়। বর্ণিত আছে, আবু উসাইদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তোমরা জলপাইয়ের তেল খাও এবং শরীরে ব্যবহার কর, কারণ এ তেল উৎপন্ন হয় এক বরকতময় গাছ থেকে।” [সহীহুল জামি, ৪৪৯৮]আরো বর্ণিত আছে, ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তোমরা যয়তুন তেল রুটির সঙ্গে চাটনী হিসেবে খাও এবং এ তেল শরীরে ব্যবহার কর, কারণ এ তেল উৎপন্ন হয় এক বরকতময় গাছ থেকে।” [হাসান হাদিস, দেখুন: সহীহুল জামি, ১৮]উকবাহ বিন আমির থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেন:“তোমরা যয়তুন তেল ব্যবহার করবে: এটা খাবে এবং শরীরে মাখবে। কারণ এ তেল পাইলস রোগের বিরুদ্ধে উপকারী ভূমিকা রাখে।” [দুর্বল হাদিস। দেখুন: যঈফুল জামি, হাদিস নং-৩৭৮৪, আল তিব্ব আল নববিতে ইবনে আল সুন্নি কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে]এদের নিরাময় ক্ষমতা খুবই চমৎকার। রোগীরা তাদের ব্যথার স্থানে এ তেল ব্যবহার করতে পারেন, তবে ব্যবহারের আগে এর উপর কুরআন তেলাওয়াত করে নিতে হবে। আর যারা মন্দ জ্বিন বা ওঝা-কবিরাজের বদনজরে আক্রান্ত তারাও এ তেল ব্যবহার করে উপকার লাভ করতে পারেন।যয়তুন তেলে রয়েছে স্বস্তি ও প্রশান্তিদায়ক ক্ষমতা। কালো জিরা থেকে উৎপন্ন তেলের তুলনায় মালিশ হিসেবে যয়তুন তেল ব্যবহার করাই উত্তম। কারণ কালো জিরার তেল অনেক উত্তপ্ত।ডা. হাসান সুমাইসি যয়তুন তেলের ওপর গবেষণা করেছেন। তিনি এর ঔষধি গুণ গুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি বলেন, শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী ময়েশ্চারাইজার। হাত ও পায়ের ফাটা দাগের জন্য এ তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।বিশেষ করে হৃদরোগ আক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যয়তুন তেল বেশ উপকারী। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও পিত্ত পাথরের চিকিৎসায় এ তেল বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এটি উপকারী ভূমিকা রাখে, এ তেল পুষ্টিকর উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে যয়তুন তেল ভালো কাজ করে। [ড. হাসান সুমাইসি বাশা, যাইত আল যাইতুন বাইনা আল তিব্ব ওয়াল কুরআন]তাই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যথার্থই বলেছেন:“তোমরা যয়তুন তেল খাও এবং শরীরে ব্যবহার কর, কারণ এ তেল উৎপন্ন হয় এক বরকতময় গাছ থেকে।”অসুস্থ ব্যক্তি কোরআনের আয়াত পাঠ করা হয়েছে এমন যয়তুন তেল দিয়ে তৈরি মালিশ ব্যবহার করবে, এছাড়া একইভাবে কুরআনের আয়াত পাঠ করা পানি পান ও এ পানি দিয়ে শরীর ধৌত করলে তাও উপকারী ভূমিকা রাখবে।অসুস্থ ব্যক্তি উপরোক্ত কর্মসূচি অনুসরণ করার পাশাপাশি বেশি বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করবেন, পূর্ণ মনোযোগে কুরআনের তেলাওয়াত শুনবেন, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। এতে কারো যদি জ্বিনের ক্ষতি থেকে থাকে তাহলে সেই জ্বিন ভয়ে পালাবে এবং আর কখনো ফিরে আসবে না, অথবা জ্বিনটি মারা যাবে বা ভস্মীভূত হবে অথবা দুর্বল হয়ে যাবে অথবা এতটা পরিমাণে ওজন হারাবে যে, এ জ্বিন আর কারো ক্ষতি করতে পারবে না। আর যখন রোগীর ওপর কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন জ্বিন তিলাওয়াতকারীর আদেশ মেনে চলে।

পরিচ্ছেদ: বরই পাতা অথবা কর্পূর পাতা

১৪৪

বরই পাতার অবর্তমানে কর্পূর বা কর্পূরপাতা ব্যবহার করা যায়।“আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আসমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে কীভাবে গোসল করবে? তিনি বললেন, সে গোসলে বরই পাতা মিশ্রিত পানি ব্যবহার করবে।...” [আবু দাউদ: ৩১৪ (হাসান সহিহ)]“ক্বাসিম ইবনু ‘আসিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করার নির্দেশ দিলেন।” [আবু দাউদ: ৩৫৫ (সহিহ)]ব্যবহার: বরই পাতা সাধারণত জাদুর চিকিৎসার জন্য রুকিয়াহর গোসলে ব্যবহার হয়। এর নিয়ম "কিভাবে রুকিয়াহর গোসল করবেন" এই শিরোনামে বর্ণিত হয়েছে। (রুকিয়াহ সম্পর্কে >> কিভাবে রুকিয়াহর গোসল করবেন)

পরিচ্ছেদ: ভারতীয় কস্টাস (সুগন্ধীযুক্ত বৃক্ষ) বৃক্ষের তৈরি নাকের ড্রপ

১৪৫

ভূমিকাধূর্ত জ্বিনকে বিরক্ত করার জন্য ভারতীয় কস্টাসের তৈরি বিশেষ নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগী এ ড্রপ এমনভাবে গ্রহণ করবে, যাতে এটা সরাসরি মস্তিস্কে চলে যায়, যেখানে জ্বিন অবস্থান করে। আর এভাবে ড্রপ গ্রহণ করার ফলে জ্বিন এতটাই বিরক্ত হবে যে, এ বিরক্তি আর সহ্য করতে না পেরে দ্রুত পালাবার পথ খুঁজবে। অথবা জ্বিন রক্বির সঙ্গে কথা বলবে এবং দ্রুত চলে যাওয়ার ও আর কখনো ফিরে না আসার প্রতিজ্ঞা করবে। ভারতীয় এ কস্টাস বা কস্তুরির কথা। হাদীসেও উল্লেখ রয়েছে, যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (রহঃ) তার সহীহ গ্রন্থে।উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, “তোমরা এ ভারতীয় বৃক্ষটি ব্যবহার করবে, কারণ এর মধ্যে রয়েছে সাতটি রোগের নিরাময়। এটি নাকের ড্রপের আকারে গ্রহণ করা যেতে পারে, এটি গলায় অথবা মুখের ভিতরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। [ফাতহুল বারী, কিতাবুত তিব্ব]আত্-তিরমিযী ইবনে আব্বাস থেকে একটি মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেন, “মেডিকেল চিকিৎসার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ওষুধ হলো নাকের ড্রপ।ইমাম বুখারী তার সহীহ কিতাবে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন এ নামে: “ভারতীয় কস্টাসের তৈরি নাকের ড্রপ ব্যবহার সম্পর্কিত অধ্যায়।আবূ বকর আল আরাবী (রহ) বলেন, কস্টাস দু’ ধরনের। ভারতীয় কস্টাস (কালো) ও সামুদ্রিক কস্টাস (সাদা) ভারতীয় প্রজাতি তীব্র ঝাঁঝালো, আর এটাই আমাদের আলোচ্য বিষয়, কারণ এটি এমন এক প্রজাতির উদ্ভিদ যা জ্বিনকে প্রচণ্ডভাবে বিরক্ত করতে সক্ষম। আল হাফিজ বিন হাজার (রহঃ) “এ গাছে সাতটি রোগের নিরাময় রয়েছে এ বাক্যটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন: হাদীসে সাতটি রোগের মধ্যে দুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, হয়ত আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সাতটির কথাই বর্ণনা করেছেন, কিন্তু বর্ণনাকারী একে সংক্ষিপ্ত করেছেন, অথবা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দুটির কথাই বলেছেন, কারণ ওই সময়ে দুটিই জানা ছিল। চিকিৎসকরা কস্টাসের সাতটিরও বেশি ব্যবহারের কথা বলেছেন, আর তাফসীরবিদগণ বলেন, সাতটি জানা গেছে ওহীর মাধ্যমে আর বাকিগুলো জানা গেছে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, এ সাতটি রোগ দ্বারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে কস্টাসের বিভিন্ন প্রয়োগকে নির্দেশ করা যেতে পারে, কারণ এটিকে মলম, পানীয়, সেক দেয়া, ধূপ, নাকের ড্রপ অথবা লুদুদ (মুখের এক কোণ দিয়ে ওষুধ গ্রহণ করা) হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।মলম দ্বারা সাধারণত ক্রিম ও তেলের মিশ্রণে তৈরি পেস্ট জাতীয় ওষুধকে বোঝানো হয়, যা শরীরে প্রয়োগ করা হয়। আর কস্টাসের তৈরি পানীয় হল, কস্টাস চূর্ণ করে পাউডার বানিয়ে মধু বা পানি অথবা অন্য কোনো পদার্থ দিয়ে মিশ্রিত করা হয়। সেক দেয়ার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নাকের ড্রপের ক্ষেত্রে, কস্টাসের গুড়া জলপাইয়ের তেল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়, অতঃপর এ মিশ্রণ থেকে নাকের মধ্যে ফোটা ফেলা হয়। মালিশের লোশনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। আর ধুপের বিষয়টি তো স্পষ্ট।উপরোক্ত প্রতিটি ব্যবহার বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের জন্য বেশ উপকারী। আর এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, কারণ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সংক্ষেপে কথা বলতেন।
ভারতীয় কস্টাসের তৈরি নাকের ড্রপ প্রয়োগ পদ্ধতি
ভারতীয় কস্টাসের একটি উকিয়াকে প্রথমে গুড়া করে পাউডারে পরিণত করতে হবে। ফাতহুল বারীতে ইবনে হাজার (রহ) উল্লেখ করেছেন, কিভাবে কস্টাস ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, প্রথমে রোগীকে পিঠ নিচের দিকে দিয়ে চিৎ করে শােয়াতে হবে। কাঁধের নিচে কিছু একটা দিয়ে তার দেহের উপরের অংশকে একটু উচু করতে হবে। এতে তার মাথা পিছনের দিকে ঝুঁকে থাকবে। এবার কস্টাস মিশ্রিত জলপাইয়ের তেল। তার নাক দিয়ে ফোটায় ফোটায় ঢালতে হবে, এ তেল যেন তার মস্তিষ্কে পৌছাতে পারে। এর ফলে রোগীর হাঁচি তৈরি হবে এবং যে কোনো ধরনের অসুস্থতা এর মাধ্যমে বের হয়ে যাবে। [ফাতহুল বারি, কিতাবুল তিব্ব]সাধারণত এ উপায়ে জ্বিন বিতাড়িত হতে পারে, কিন্তু জ্বিন যদি বের হয়ে আসে এবং অন্য কোনো কারণে ফিরে যায়, যেমন জ্বিন যদি ওই রোগীর দেহে বাধ্য হয়ে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে ওই রোগী নিম্নোক্ত সূরাগুলো টেপে রেকর্ড করবেন এবং এগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকবেন।সূরা আল ফাতিহা, বাকারা, আল ইমরান, আত্-তাওবাহ, ইয়াসিন, আস্‌-সাফ্‌, আদ-দুখান, কাফ, আর-রাহমান, আল-মুলক্‌, আল-জ্বিন, আল-কাফিরুন, আল ইখলাস, আল ফালাক ও আন-নাস।

পরিচ্ছেদ: যমযমের পানি পান

১৪৬

ভূমিকাহাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যমযমের পানি পান করতেন এবং বলতেন: “এতে বরকত রয়েছে”।তিনি আরো বলেন: “এতে পুষ্টি রয়েছে এবং এটা অসুস্থতার জন্য নিরাময়”। [আবু দাউদ, আত-তাইয়ালিসি, ৪৫৯।]আরো বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“পৃথিবীর বুকে সর্বোৎকৃষ্ট পানি হল যমযমের পানি, এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মানুষের জন্য পুষ্টি যোগায় এবং এটা রোগ নিরাময় করে।” [আল-তাবারানি, আল-মুনযিরি বলেন, এই হাদিসের বর্ণনাকারীগণ সীকাত, (নির্ভরযোগ্য)]অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“যমযমের পানি যার জন্য পান করা হবে তারই কাজ করবে। তুমি যদি নিরাময় লাভের আশায় এ পানি পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন; তুমি যদি এ পানি পরিপূর্ণতা অনুভব করার আশায়। পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পরিপূর্ণতা দান করবেন; তুমি যদি তোমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এ পানি কর, আল্লাহ তোমার তৃষ্ণা মিটিয়ে দেবেন। জিবরাঈলের পদাঘাতে এর সৃষ্টি এবং আল্লাহ ইসমাঈলকে এটি দান করেছিলেন পানি পান করার জন্য।” [দারাকুতনী ও আল হাকিম, কিতাবুল মানাসিক, ১/৪৭৩]আল হাকিম আরো উল্লেখ করেন, “আপনি যদি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে এ পানি পান করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার আশ্রয় মঞ্জুর করবেন।”ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ যমযমের পানি পান করার সময় বলতেন:“হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পর্যাপ্ত খাবার এবং যে কোনো রোগ থেকে নিরাময় প্রার্থনা করছি।” [দেখুন: তাফসীর আল কুরতুবী, সুরা ইব্রাহিম, আয়াত-৩৭]ইবনুল কাইয়িম (রহ) বলেন, আমি কিছুদিন মক্কায় কাটিয়েছিলাম, সেখানে থাকা অবস্থায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কোনো ডাক্তার পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে আমার নিজের চিকিৎসা নিজেকেই করতে হয়েছিল। তো এ চিকিৎসার অংশ হিসেবে আমি যমযমের পানি পান করা শুরু করলাম। আমি এ পানি নিয়ে বেশ কয়েকবার কুরআন তেলাওয়াত করলাম এর উপর, অতঃপর পানি পান করলাম, এবং এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলাম। এরপর থেকে অনেক ব্যথার ক্ষেত্রে আমি এর উপরই নির্ভর করলাম, এবং বেশ উপকারও পেয়েছি এ পদ্ধতি থেকে।
যেভাবে যমযমের পানি পান করতে হয়
আল্লাহর নামে পান শুরু করা সুন্নাত।তিন ঢোকে পানি পান করা সুন্নাত। পান করার সময় কিবলামুখী হবেন। সবটুকু পানি পান করবেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করবেন।বর্ণিত আছে, আবূ মুলায়েখ (রহ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তুমি কি ঠিকভাবে যমযমের পানি পান কর? তিনি বললেন: সেটা কিভাবে? তিনি বললেন: যখন তুমি এ পানি পান করবে, তখন কিবলামুখী হবে, আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তিন ঢোকে পানি পান করবে, আর পান করা শেষ হলে আল্লাহর প্রশংসা করবে। কারণ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন: “আমাদের ও মোনাফিকের মাঝে পার্থক্য হল তারা যমযমের পানি পরিপূর্ণভাবে পান করে না।” [যঈফ, দেখুন আল্লামা আলবানী (রঃ)-এর যঈফুল জামি ২২]পরিপূর্ণভাবে পান করার অর্থ হল, এতটা পরিমাণে পানি পান করা যাতে তা বুকের পাঁজর পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে যমযমের পানি না থাকলে সাধারণ বিশুদ্ধ পানি হলেও চলবে; এ পানির উপর রুকুইয়া পাঠ করতে হবে এবং রোগী এ পানি থেকে পান করবে এবং এটা দিয়ে ওযু বা শরীর ধৌত করবে।মানুষ এভাবে চেষ্টা করেছে এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটা ভালো কাজও করেছে।ইউরোপের এক ডাক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন: এ মহিলার সুস্থ হওয়ার কোনো আশাই ছিল না-তার ক্যান্সার হয়েছিল এবং তা পুরো শরীরে। ছড়িয়ে পড়েছিল-কিন্তু তিনদিন যমযমের পানি পান এবং পানি দিয়ে শরীর ধৌত করার পর তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন, এতটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেন তিনি, যেন কোনো দিন তার কোনো রোগই হয়নি। বক্তাদের মধ্যে। সবচেয়ে সত্যবাদী সেই মহা মানব যথার্থই বলেছেন:“এ যমযমের পানি মানুষের পুষ্টি যোগায় এবং রোগ থেকে নিরাময় দান করে।”

সেটিংস

বর্তমান ভাষা