অধ্যায়: রুকিয়াহ সম্পর্কে
পরিচ্ছেদ: রুকিয়াহ কাকে বলে?
০১
ব্যক্তি যখন শারীরিক, মানসিক, আত্মিক কিংবা জ্বিন, জাদু ও বদনজর ইত্যাদি রােগ থেকে আরােগ্যের প্রত্যাশায় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে নিজে কুরআন পাঠ করে কিংবা অন্য কেউ তাকে পাঠ করে শােনায়, একে আমরা শারঈ রুকিয়াহ বলি। শারঈ রুকিয়াহর মাঝে শুধু কুরআন নয়, হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহও অন্তর্ভুক্ত। রুকিয়াহ শাব্দিক অর্থ বিবেচনায় রক্বী রুকিয়াহ পড়ে রােগীকে ঝাড়ফুঁক করতে পারে আবার ঝাড়ফুঁক না করলেও সমস্যা নেই।স্বাস্থ্যবিধিসমূহ পালন করার মাধ্যমে এবং ঔষধ সুপথ্য গ্রহণের দ্বারা ইসলাম যেমন রােগ নিরাময়ের পরামর্শ দান করেছে তেমনি বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দোয়া বা মন্ত্র পাঠের সাহায্যেও রােগ সারানাের অনুমতি দান করেছে। যেসব ক্ষেত্রে ঔষধ-পথ্য কোন উপকারে আসে না, বিশেষতঃ সেই সব ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করতে কোন আপত্তি নেই বরং ঐসব ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁক দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয় বা বেশী উপযােগী।তবে এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় ও লক্ষণীয় কথা হচ্ছে, দোয়া বা মন্ত্রের বাক্য যেন শরীয়ত গর্হিত কোন কথা না থাকে। যেমন, যাদু-মন্ত্র, শির্কমূলক বাক্য, জ্যোতিষ শ্বাস্ত্রের নির্দেশমত শরীয়ত-নিষিদ্ধ তিথি ও ক্ষণ পালন ইত্যাদি। এগুলিকে ইসলাম স্বীকৃতি দেয়নি বরং এগুলাে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম বলে বিঘােষিত হয়েছে। নিম্নের হাদীসটি বুঝতে চেষ্টা করুনঃহযরত আউফ বিন মালিক (রাঃ) বলেন যে, আমরা জাহেলী যুগে মন্ত্রাদি পাঠ করতাম। তাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! ঐসব মন্ত্রের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?'রসূল (ﷺ) বললেন, 'তােমাদের মন্ত্রগুলি আমার কাছে পেশ করাে। যতক্ষণ ঐগুলিতে শির্কমূলক কোন বাক্য থাকবে না, ততক্ষণ সেগুলির ব্যবহারে আমার আপত্তি নেই।' (মুসলিম, মিশকাত ৮৮ পৃঃ)অতএব যে দোয়া বা মন্ত্রে দেব-দেবী, জ্বিন-ভূত, অথবা কোন পীর-ওলীর নাম কিংবা তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার মত কোন বাক্য থাকবে না, সে সব মন্ত্র পাঠে কোন দোষ নেই। আবার যেসব মন্ত্রের অর্থ বােধগম্য নয়, সেই সব মন্ত্র পাঠ থেকেও তফাতে থাকা দরকার। কারণ, সে গুলােতে হয়ত নিষিদ্ধ কোন ব্যাপার থাকতে পারে- এই আশংকায়।পক্ষান্তরে যে সব মন্ত্রে নিষিদ্ধ কোন বাক্য থাকবে না, সে গুলি ব্যবহার করতে কোন বারণ নেই। নিম্নের দু’টি হাদীসে তার প্রমাণ রয়েছেঃ১. আয়েশা (রাঃ) বলেন, যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে বদ-নজরের কুফল দূর করনার্থে মন্ত্রপাঠ করতঃ ঝাড়ফুঁক করতে নির্দেশ দান করেছেন। (বুখারী মুসলিম, মিশকাত ৩৮৮ পৃঃ )২. হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, “রসূলুল্লাহ নজর-দোষ, বিষাক্ত জন্তুর দংশন এবং দূষিত ঘা সারাবার নিমিত্তে ঝাড়ফুঁক করতে অনুমতি দান করেছেন।” (মুসলিম, মিশকাত ৩৮৮ পৃঃ)সর্বপ্রকার রােগ ব্যাধিতে দোয়া ও মন্ত্রপাঠের সাহায্য গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু অন্যান্য ব্যাধি অপেক্ষা উপরােক্ত তিনটি ব্যাধির ক্ষেত্রে মন্ত্রপাঠ বেশী ক্রিয়াশীল এবং মন্ত্রপাঠের সুফল বেশী পরিলক্ষিত হয় বলে হাদীসে তিনটির উল্লেখ নির্দিষ্ট হয়েছে।দোয়া-মন্ত্র লিখে ধৌত করে সেই পানি পান করা অথবা মন্ত্র পড়ে ঝাড়ফুঁক করা অবৈধ নয়; বরং হাদীস সম্মত জিনিস। কিন্তু লিখে তাবিজ করে হাতে অথবা গলায় লটকানাে ঠিক নয়। এ মর্মে একটি হাদীস লক্ষ্য করুনঃআব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর সহধর্মিনী হযরত যয়নাব (রাঃ) বলেন, একদা আমার গলায় সুতাে লটকানাে দেখে আব্দুল্লাহ বলেছিলেন যে, তােমার গলায় এটা কি? আমি বললাম, 'এটা একটি সুতাে, এতে মন্ত্র পাঠ করা হয়েছে।' ইহা শুনে আব্দুল্লাহ সুতােটিকে ধরে ছিড়ে ফেলেছিলেন এবং বলেছিলেন, 'আব্দুল্লাহর পরিবার শির্ক থেকে এ যাবৎ বিরত আছে, আর তােমার এটা কি? এটা যে শির্কের পর্যায়ভুক্ত! আমি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট স্বকর্ণে শ্রবণ করেছি। তিনি বলেছেন “নিষিদ্ধ দোয়া-মন্ত্র, হাতে-গলায় তাবিজ লটকানাে এবং যাদু মন্ত্র এ সবই শির্কের অন্তর্ভুক্ত। (আবু দাউদ, মিশকাত ৩৮৯ পৃঃ)আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন, “কবজ, বালা নােয়া ইত্যাদি ব্যবহারে লাভ তাে কিছুই হয় না বরং ক্ষতিই হয়।” (আহমাদ ৪:৪৫, ইবনে মাজাহ ৩৫৩১) যে সমস্ত তাবিজ নক্সা বানিয়ে সংখ্যা দ্বারা লিখা হয়, কোন ফিরিস্তা, জ্বীন কিংবা শয়তানের নাম দ্বারা তৈরী করা হয় অথবা কোন তেলেস্মতি জাদুবিদ্যার সাহায্য নিয়ে অথবা কোন ধাতু, পশু-পাখীর হাড়, লােম বা পালক কিংবা গাছের শিকড় দিয়ে বানানাে হয়, তা ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শির্ক।অবশ্য কুরআনী আয়াত দ্বারা লিখিত তাবিজ প্রসঙ্গে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে তাও ব্যবহার না করাটাই সঠিক। কারণ, প্রথমতঃ আল্লাহর রসুল (ﷺ) তাবিজ ব্যবহারকে শির্ক বলেছেন। তাতে সমস্ত রকমেরই তাবিজ উদ্দিষ্ট হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ কুরআনী আয়াত দ্বারা লিখিত তাবিজ ব্যবহারকারী গলায়, হাতে কিংবা কোমরে বেঁধেই প্রস্রাব-পায়খানা করবে, স্ত্রী-মিলন করবে মহিলারা মাসিক অবস্থায় ও অন্যান্য অপবিত্রতায় ব্যবহার করবে। যাতে কুরআন মাজীদের অসম্মান ও অমর্যাদা হবে। আশ্চর্যের কথা যে ওদের মতে তাবিজ় বেঁধে মাড়াঘর বা আতুড়ঘর গেলে তাবিজ ছুত হয়ে যায়। কিন্তু অচ্ছুতের গায়ে এ তাবিজ কি করে ছুত না হয়ে থাকে।তৃতীয়তঃ যদি এরূপ তাবিজ ব্যবহার বৈধ করা যায়, তাহলে অ-কুরআনী তাবিজও ব্যবহার করতে দেখা যাবে। তাই এই শির্কের মুলােৎপাটন করার মানসে তার ছিদ্রপথ বন্ধ করতে কুরআনী তাবিজ ব্যবহারও অবৈধ হবে।
পরিচ্ছেদ: সুন্নাহ-তে বর্ণিত রুকিয়াহ সমূহ
০২
ভূমিকাবিশুদ্ধ সুন্নাহ-তে বর্ণিত কিছু দোয়া এবং আয়াত রয়েছে। যেমন:أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিল্লা-হিস্ সামি‘ইল-‘আলীমি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম মিন হামঝিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহঅর্থঃ অভিশপ্ত শয়তান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হতে আমি সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে আশ্রয় চাই। [হাদীসটি সহীহ। আবু দাউদঃ ৭৭৫, ৭৬৪; সুনান আত-তিরমিযীঃ ২৪২]৩ বার বলবে,بِسْمِ اللَّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল লাযী লা- ইয়াদুর্রু মা‘আসমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা- ফিস সামা-ই, ওয়াহুআস সামীউল ‘আলীম।অর্থঃ আল্লাহ্র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” [আবূ দাউদ, ৪/৩২৩, নং ৫০৮৮; তিরমিযী, ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৮]اَللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ اِشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِيْ لَا شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًاউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স, আয্হিবিল বা-'স, ইশ্ফি, ওয়া আনতাশ শা-ফী, লা- শিফা- আ ইল্লা- শিফা-উকা, শিফা-আন লা- ইউগা-দিরু সাক্বমা।অর্থঃ হে আল্লাহ, হে মানুষের প্রতিপালক, অসুবিধা দূর করুন, সুস্থতা দান করুন, আপনিই শিফা বা সুস্থতা দানকারী, আপনার শিফা (সুস্থতা প্রদান বা রোগ নিরাময়) ছাড়া আর কোনো শিফা নেই, এমনভাবে শিফা দান করুন যার পরে আর কোনো অসুস্থতা-রোগব্যাধি অবশিষ্ট থাকবে না। [বুখারীঃ ৫৭৪৩]৭ বার বলবে,أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَউচ্চারণঃ আসআলুল্লা-হাল ‘আযীম, রব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম, আঁই ইয়াশফিয়াকঅর্থঃ আমি মহান আল্লাহ্র কাছে চাচ্ছি, যিনি মহান আরশের রব, তিনি যেন আপনাকে রোগমুক্তি প্রদান করেন। [তিরমিযী, নং ২০৮৩; আবূ দাউদ, নং ৩১০৬]সূরা ফাতিহা, সূরা ফালাক, সূরা নাস প্রভৃতি।হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর দোয়া-أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁ ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লা-ম্মাহ।অর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের, সকল শয়তান থেকে, সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও প্রাণী থেকে এবং সকল ক্ষতিকারক দৃষ্টি থেকে। [বুখারীঃ ৩৩৭১]
রোগীর আক্রান্ত অঙ্গে হাত রেখে রুকিয়াহ করা“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমার শরীরের যে জায়গায় ব্যথা হয়, তার ওপর তোমার হাত রেখে৩ বার বলবে,بِسْمِ اللّٰهِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হঅর্থঃ আল্লাহর নামেতারপর ৭ বার বলবে, أَعُوْذُ بِاللّٰهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُউচ্চারণঃ আ’ঊযু বিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহী মিন শার্রি মা- আজিদু ওয়া উ’হা-যিরঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহর ও তার ক্ষমতার, যা আমি অনুভব করছি এবং ভয় পাচ্ছি তা থেকে। [মুসলিমঃ ২২২, তিরমিযীঃ ৩৫৮৮]
তিলাওয়াত করার পর ফুঁঁ দেওয়াইয়াযীদ ইবনু আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি সালামাহ (রাঃ) এর পায়ের গোছায় একটি ক্ষতচিহ্ন দেখে বললাম, এটা কি? তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে এখানে আঘাত পেয়েছিলাম। লোকেরা বলতে লাগলো যে, সালামাহ আহত হয়েছেন। অতঃপর নবী (ﷺ)-কে আমার নিকট আনা হলে তিনি আমার ক্ষতস্থানে তিনবার ফুঁ দিলেন। ফলে আজ পর্যন্ত আমি তাতে কোন ব্যথা অনুভব করি না। [সুনানে আবি দাউদ (সহিহ): ৩৮৯৪]
সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করে ফুঁ দেয়া“রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর একদল সাহাবী একবার এক সফরে গমন করেন। অবশেষে তারা আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে এক গোত্রের নিকট এসে গোত্রের কাছে মেহমান হতে চান। কিন্তু সে গোত্র তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করে। ঘটনাক্রমে সে গোত্রের সর্দারকে সাপে দংশন করে। তারা তাকে সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ফল হয় না। তখন তাদের কেউ বললোঃ তোমরা যদি ঐ দলের কাছে যেতে যারা তোমাদের মাঝে এসেছিল। হয়তো তাদের কারও কাছে কোন তদবীর থাকতে পারে।তখন তারা সে দলের কাছে এসে বলল হে দলের লোকেরা! আমাদের সর্দারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা তার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি। তোমাদের কারও নিকট কি কোন তদবীর আছে? একজন বললেন হ্যাঁ। আল্লাহর কসম আমি ঝাড়ফুঁক জানি। তবে আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের নিকট মেহমান হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। তাই আমি ততক্ষন পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করবো না যতক্ষন না তোমরা আমাদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে।তখন তারা তাদের একপাল বকরী দিতে সম্মত হল। তারপর সে সাহাবী সেখানে গেলেন এবং আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে ফুঁক দিতে থাকলেন। অবশেষে সে ব্যাক্তি এমন সুস্থ হল যেন বন্ধন থেকে মুক্তি পেল। সে চলাফেরা করতে লাগলো, যেন তার কোন রোগই নেই। রাবী বলেনঃ তখন তারা যে মজুরী ঠিক করেছিল, তা পরিশোধ করলাম। এরপর সাহাবীদের মধ্যে একজন বললেনঃ এগুলো বন্টন করে দাও। এতে যিনি ঝাড়ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট যেয়ে যতক্ষন না এসব ঘটনা ব্যক্ত করবো এবং তিনি আমাদের কি নির্দেশ দেন তা প্রত্যক্ষ করব, ততক্ষন তোমরা তা বণ্টন করো না। তারপর তাঁরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। তিনি বললেন তুমি কি করে জানলে যে এর দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা যায়? তোমরা সঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বণ্টন করে নাও এবং সে সঙ্গে আমার জন্য এক ভাগ নির্ধারণ কর।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন): ৫৩৩৮]
মাটিতে আঙ্গুল লাগিয়ে দোয়া পড়া, এরপর সেটা আক্রান্ত জায়গায় লাগানো‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ স্থানে তাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন,بِاسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفَىِ سَقِيمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَاউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ। তুরবাতু আরদ্বিনা, বিরীক্বতি বা’অদ্বিনা, লি- ইউশফা সাক্বীমুনা, বিইযনি রাব্বিনা-অর্থঃ আল্লাহর নামে, আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারও লালার সাথে (মিলিয়ে) আমাদের প্রতিপালকের হুকুমে তা দিয়ে আমাদের রোগীর আরোগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে (মালিশ করছি)” [মিশকাতুল মাসাবীহ (সহীহ): ১৫৩১]
রোগীর আক্রান্ত অঙ্গে হাত রেখে রুকিয়াহ করা“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমার শরীরের যে জায়গায় ব্যথা হয়, তার ওপর তোমার হাত রেখে৩ বার বলবে,بِسْمِ اللّٰهِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হঅর্থঃ আল্লাহর নামেতারপর ৭ বার বলবে, أَعُوْذُ بِاللّٰهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُউচ্চারণঃ আ’ঊযু বিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহী মিন শার্রি মা- আজিদু ওয়া উ’হা-যিরঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহর ও তার ক্ষমতার, যা আমি অনুভব করছি এবং ভয় পাচ্ছি তা থেকে। [মুসলিমঃ ২২২, তিরমিযীঃ ৩৫৮৮]
তিলাওয়াত করার পর ফুঁঁ দেওয়াইয়াযীদ ইবনু আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি সালামাহ (রাঃ) এর পায়ের গোছায় একটি ক্ষতচিহ্ন দেখে বললাম, এটা কি? তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে এখানে আঘাত পেয়েছিলাম। লোকেরা বলতে লাগলো যে, সালামাহ আহত হয়েছেন। অতঃপর নবী (ﷺ)-কে আমার নিকট আনা হলে তিনি আমার ক্ষতস্থানে তিনবার ফুঁ দিলেন। ফলে আজ পর্যন্ত আমি তাতে কোন ব্যথা অনুভব করি না। [সুনানে আবি দাউদ (সহিহ): ৩৮৯৪]
সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করে ফুঁ দেয়া“রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর একদল সাহাবী একবার এক সফরে গমন করেন। অবশেষে তারা আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে এক গোত্রের নিকট এসে গোত্রের কাছে মেহমান হতে চান। কিন্তু সে গোত্র তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করে। ঘটনাক্রমে সে গোত্রের সর্দারকে সাপে দংশন করে। তারা তাকে সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ফল হয় না। তখন তাদের কেউ বললোঃ তোমরা যদি ঐ দলের কাছে যেতে যারা তোমাদের মাঝে এসেছিল। হয়তো তাদের কারও কাছে কোন তদবীর থাকতে পারে।তখন তারা সে দলের কাছে এসে বলল হে দলের লোকেরা! আমাদের সর্দারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা তার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি। তোমাদের কারও নিকট কি কোন তদবীর আছে? একজন বললেন হ্যাঁ। আল্লাহর কসম আমি ঝাড়ফুঁক জানি। তবে আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের নিকট মেহমান হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। তাই আমি ততক্ষন পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করবো না যতক্ষন না তোমরা আমাদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে।তখন তারা তাদের একপাল বকরী দিতে সম্মত হল। তারপর সে সাহাবী সেখানে গেলেন এবং আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে ফুঁক দিতে থাকলেন। অবশেষে সে ব্যাক্তি এমন সুস্থ হল যেন বন্ধন থেকে মুক্তি পেল। সে চলাফেরা করতে লাগলো, যেন তার কোন রোগই নেই। রাবী বলেনঃ তখন তারা যে মজুরী ঠিক করেছিল, তা পরিশোধ করলাম। এরপর সাহাবীদের মধ্যে একজন বললেনঃ এগুলো বন্টন করে দাও। এতে যিনি ঝাড়ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট যেয়ে যতক্ষন না এসব ঘটনা ব্যক্ত করবো এবং তিনি আমাদের কি নির্দেশ দেন তা প্রত্যক্ষ করব, ততক্ষন তোমরা তা বণ্টন করো না। তারপর তাঁরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। তিনি বললেন তুমি কি করে জানলে যে এর দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা যায়? তোমরা সঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বণ্টন করে নাও এবং সে সঙ্গে আমার জন্য এক ভাগ নির্ধারণ কর।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন): ৫৩৩৮]
মাটিতে আঙ্গুল লাগিয়ে দোয়া পড়া, এরপর সেটা আক্রান্ত জায়গায় লাগানো‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ স্থানে তাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন,بِاسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفَىِ سَقِيمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَاউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ। তুরবাতু আরদ্বিনা, বিরীক্বতি বা’অদ্বিনা, লি- ইউশফা সাক্বীমুনা, বিইযনি রাব্বিনা-অর্থঃ আল্লাহর নামে, আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারও লালার সাথে (মিলিয়ে) আমাদের প্রতিপালকের হুকুমে তা দিয়ে আমাদের রোগীর আরোগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে (মালিশ করছি)” [মিশকাতুল মাসাবীহ (সহীহ): ১৫৩১]
পরিচ্ছেদ: কিভাবে রুকিয়াহর গোসল করবেন
০৩
ভূমিকাতেলাওয়াতকৃত পানির দিয়ে গোসল করাকে বলা হয় রুকিয়াহ গোসল। রুকিয়াহ গোসলের পানি প্রস্তুতের জন্য পানির কাছে মুখ লাগিয়ে তেলাওয়াত করতে হবে। তেলাওয়াত করার সময় একটু পর পর ফুঁক দিতে হবে (কিছুটা থুথুর ছিটাসহ) রুকিয়াহ গোসল যদি প্রতিদিন করা হয় তাহলে ইনশা-আল্লাহ পজেটিভ রেসাল্ট পাওয়া যাবে। যদি রোগ বেশি হয় তাহলে রোগমুক্তির আগ পর্যন্ত নিয়মিত রুকিয়াহ গোসল চালিয়ে যাওয়া উচিৎ।
রুকিয়াহর গোসল কিভাবে করতে হবে?শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায শাইখ (রহঃ) গোসলের নিয়ম বর্ণনা করেছেন। যথা: ১. সূরা ফাতিহা ২. আয়াতুল কুরসী ৩. সূরা আরাফের ১০৬-১২২ নং আয়াত ৪. সূরা ইউনুসের ৭৯-৮২ নং আয়াত ৫. সূরা ত্বহা এর ৬৫-৬৯ নং আয়াত ৬. সূরা কাফিরুন ৭. সূরা ইখলাস [৩ বার] ৮. সূরা ফালাক [৩ বার] ৯. সূরা নাস [৩ বার] সাথে কিছু দোয়া যেমন-৩ বার বলবে, اَللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ اِشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِيْ لَا شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًاউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স, আয্হিবিল বা-'স, ইশ্ফি, ওয়া আনতাশ শা-ফী, লা- শিফা- আ ইল্লা- শিফা-উকা, শিফা-আন লা- ইউগা-দিরু সাক্বমা।অর্থঃ হে আল্লাহ, হে মানুষের প্রতিপালক, অসুবিধা দূর করুন, সুস্থতা দান করুন, আপনিই শিফা বা সুস্থতা দানকারী, আপনার শিফা (সুস্থতা প্রদান বা রোগ নিরাময়) ছাড়া আর কোনো শিফা নেই, এমনভাবে শিফা দান করুন যার পরে আর কোনো অসুস্থতা-রোগব্যাধি অবশিষ্ট থাকবে না। [বুখারীঃ ৫৭৪৩] ৩ বার বলবে, بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللّٰهُ يَشْفِيْكَ، بِاسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ.উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি আর্ক্কীক, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীক, মিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ আইনিন ‘হা-সিদিন, আল্লা-হু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আর্ক্কীকঅর্থঃ আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ফুঁক করছি, সকল কিছু থেকে যা তোমাকে কষ্ট দেয়, সকল প্রাণী ও হিংসুক চক্ষুর অনিষ্ট থেকে, আল্লাহ তোমাকে রোগমুক্ত করবেন, আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ফুক করছি। [মুসলিমঃ ২১৮৬]জাদুতে আক্রান্ত রোগীর ওপর অথবা কোনো একটি পাত্রে পানি নিয়ে উপরে উল্লিখিত আয়াত এবং দোয়া সমূহ পড়ে ফুঁ দেবে। এরপর জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে, আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করবে। প্রয়োজন মতো এক বা একাধিকবার এরকম করলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে। [মাজমুউল ফাতওয়া লিবনি বায; ৮/১৪৪]রুকিয়াহর পানি গরম করবে না বা সেখানে অন্য পানি মেশাবে না। আশা করা যায়, প্রথম গোসলেই জাদু নষ্ট হয়ে যাবে। আর এভাবে কয়েকদিন গোসল করলে ইনশাআল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। [কালো যাদুকরের গলায় ধারালো তরবারী: ২১৪]
রুকিয়াহর গোসল কিভাবে করতে হবে?শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায শাইখ (রহঃ) গোসলের নিয়ম বর্ণনা করেছেন। যথা: ১. সূরা ফাতিহা ২. আয়াতুল কুরসী ৩. সূরা আরাফের ১০৬-১২২ নং আয়াত ৪. সূরা ইউনুসের ৭৯-৮২ নং আয়াত ৫. সূরা ত্বহা এর ৬৫-৬৯ নং আয়াত ৬. সূরা কাফিরুন ৭. সূরা ইখলাস [৩ বার] ৮. সূরা ফালাক [৩ বার] ৯. সূরা নাস [৩ বার] সাথে কিছু দোয়া যেমন-৩ বার বলবে, اَللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ اِشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِيْ لَا شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًاউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স, আয্হিবিল বা-'স, ইশ্ফি, ওয়া আনতাশ শা-ফী, লা- শিফা- আ ইল্লা- শিফা-উকা, শিফা-আন লা- ইউগা-দিরু সাক্বমা।অর্থঃ হে আল্লাহ, হে মানুষের প্রতিপালক, অসুবিধা দূর করুন, সুস্থতা দান করুন, আপনিই শিফা বা সুস্থতা দানকারী, আপনার শিফা (সুস্থতা প্রদান বা রোগ নিরাময়) ছাড়া আর কোনো শিফা নেই, এমনভাবে শিফা দান করুন যার পরে আর কোনো অসুস্থতা-রোগব্যাধি অবশিষ্ট থাকবে না। [বুখারীঃ ৫৭৪৩] ৩ বার বলবে, بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللّٰهُ يَشْفِيْكَ، بِاسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ.উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি আর্ক্কীক, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীক, মিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ আইনিন ‘হা-সিদিন, আল্লা-হু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আর্ক্কীকঅর্থঃ আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ফুঁক করছি, সকল কিছু থেকে যা তোমাকে কষ্ট দেয়, সকল প্রাণী ও হিংসুক চক্ষুর অনিষ্ট থেকে, আল্লাহ তোমাকে রোগমুক্ত করবেন, আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ফুক করছি। [মুসলিমঃ ২১৮৬]জাদুতে আক্রান্ত রোগীর ওপর অথবা কোনো একটি পাত্রে পানি নিয়ে উপরে উল্লিখিত আয়াত এবং দোয়া সমূহ পড়ে ফুঁ দেবে। এরপর জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে, আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করবে। প্রয়োজন মতো এক বা একাধিকবার এরকম করলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে। [মাজমুউল ফাতওয়া লিবনি বায; ৮/১৪৪]রুকিয়াহর পানি গরম করবে না বা সেখানে অন্য পানি মেশাবে না। আশা করা যায়, প্রথম গোসলেই জাদু নষ্ট হয়ে যাবে। আর এভাবে কয়েকদিন গোসল করলে ইনশাআল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। [কালো যাদুকরের গলায় ধারালো তরবারী: ২১৪]
পরিচ্ছেদ: রুকিয়াহ করে কি পারিশ্রমিক নেওয়া যায়?
০৪
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা রহিমাহুল্লাহ বলেন, “রুকিয়াহ করে বিনিময় নেওয়ায় কোনও আপত্তি নেই। এ বিষয়ে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ-এর সুস্পষ্ট অভিমত রয়েছে।' [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা, ফাতাওয়া আল-কুবরা, ৫/৪০৮]প্রমাণস্বরূপ আমরা আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসটি স্মরণ করতে পারি। হাদীসটি আবারও বিশদভাবে তুলে ধরা হলাে, রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবিদের এক জামাআত সফরে ছিলেন; তারা আরবের একটি জনবসতিতে অবতরণ করলেন। তারা জনপদবাসীকে মেহমানদারীর অনুরােধ করলেন, কিন্তু জনপদবাসী সাহাবিদের আপ্যায়ন করল না।ইতােমধ্যে তাদের গােত্রপ্রধানকে সাপ দংশন করল। তখন তারা বলল, আপনাদের মাঝে কি কোনও রক্বী আছে? কারণ আমাদের জনবসতির প্রধান সাপের দংশনের শিকার এবং জাদু দ্বারা আক্রান্ত। জামাত থেকে বলা হলাে, 'হ্যাঁ আছে। তবে আপনারা আমাদেরকে আপ্যায়ন করেননি। সুতরাং আগে আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করুন, তারপর রুকিয়াহ করব। তারা একপাল মেষ নির্ধারণ করল। তখন একজন সাহাবি সূরা ফাতিহা পড়ে গােত্রপ্রধানকে রুকিয়াহ করলেন। গােত্রপ্রধান ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলেন; ফলে সাহাবিদেরকে এক পাল মেষ দেওয়া হলাে। তখন আবার সাহাবিগণ পারিশ্রমিক নিতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, আগে রাসূল (ﷺ)-কে বিষয়টি বলি। তারা রাসূল (ﷺ)-এর কাছে এলেন। রক্বী রাসূল (ﷺ)-কে বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! ওয়াল্লাহি! আমি শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে তাকে রুকিয়াহ করেছি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম সব শুনে হেসে বললেন, “কে বলেছিল তােমাকে, এটা রুকিয়াহ? আচ্ছা! তাদের থেকে সেগুলাে গ্রহণ করাে এবং আমাকেও সেখান থেকে একটি অংশ দিয়াে।'ইমাম নবাবি রহিমাহুল্লাহ বললেন, এ হাদীস সুস্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কোনও ধরণের অপছন্দনীয়তা ছাড়াই ফাতিহা ও কুরআন দ্বারা রুকিয়াহ করে পারিশ্রমিক নেওয়া হালাল। [নববি, শারহু সহীহ মুসলিম:১৪/১৮৮]রুকিয়াহ করে অর্থ-গ্রহণ বৈধ হলেও রক্বী ভাই-বােনদের এতটুকু লক্ষ রাখা কর্তব্য যে, কুরআন মাজীদ সকলের জন্য এবং তা কোনও পার্থিব সম্পদ নয়। সুতরাং টাকার অভাবে কেউ যেন শারঈ চিকিৎসা রুকিয়াহ থেকে বঞ্চিত না হয়। যদি অর্থের কারণে কাউকে রুকিয়াহ থেকে বঞ্চিত করা হয়, নিঃসন্দেহে এ হবে চরম গর্হিত কাজ। কুরআনকে আল্লাহ তাআলা সার্বজনীন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন,إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَٰلَمِينَঅর্থঃ “কুরআন হলাে বিশ্ববাসীর জন্য যিকর।' [সূরা সােয়াদ ৩৮ঃ৮৭]উল্লেখ্য যে, উপরিউক্ত হাদীসে রাসূল (ﷺ) মেষপালের একটি অংশ চেয়ে প্রশ্নকারী সাহাবিগণকে বােঝালেন যে, এই উপটৌকন হালাল হওয়ার বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।রুকিয়াহ ফলপ্রসূ হওয়ার পূর্বশর্ত রুকিয়াহ হলাে সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে সমস্যার সমাধান গ্রহণের একটি মাধ্যম। সুতরাং রুকিয়াহর ফল পেতে হলে রক্বীকে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধের বিধানগুলাে মেনে চলতে হবে। রক্বীর জন্য অবশ্যপালনীয় কিছু বিধান নিচে উল্লেখ করা হলাে: ১. সমস্ত গাইরে মাহরামের সাথে শারীয়ার হিজাবের বিধান মেনে চলুন এবং দৈনন্দিন জীবনে সকল ইসলামি বিধি-বিধানকে প্রাধান্য দিন;২. কুফুরি তাবিজ এবং এ-জাতীয় কোনও শিরকি বা বিদআতি চিকিৎসা গ্রহণ করলে তা আগে বর্জন করুন এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় রাখুন;৩. নিয়মিত ঘরে সূরা আল-বাকারাহ'র আমল জারি রাখুন; ৪. পরিবার পরামর্শভিত্তিক পরিচালনা করুন। পারিবারিক গােলযােগের কারণে সন্তান মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে। পরে সব দোষ পড়ে জ্বিনের ঘাড়ে! ৫. আপনার সন্তানকে সঠিক সময়ে বিয়ে দিন। অবৈধ সম্পর্ক ভেঙে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ (বিশেষত মেয়েরা) ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। ছেলে-মেয়েরা অবৈধ সম্পর্কে জড়ালে রহমত উঠে যায়; বিষগ্নতা সৃষ্টি হয়। ৬. নারী হােন কিংবা পুরুষ! দৃষ্টি অবনত রাখুন। নারী হলে শারঈ পর্দার বিধান মেনে চলুন। ৭. ঘরে কোনও ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য থাকলে আগে সরিয়ে ফেলুন। তা ছাড়া রহমতের ফেরেশতা ঘরে আসবে না এবং রুকিয়াহ-তে কাজ হবে না।রক্বীকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সচেতন হতে হবে। যেমন ক্যান্সার, সিজোফ্রেনিয়া বা কোনও জটিল রােগে শুধু ঝাড়ফুঁকের পরামর্শ না দিয়ে রক্বী যেন রােগীকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেক সময় দেখা যায় কুকুর কামড়ালে মানুষ হুজুরের কাছে যায়; আবার সাপের দংশনে অনেকেই ওঝার কাছে যায়। রক্বীর কর্তব্য হলাে তাদেরকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া, তারা যেন কুরআন-সুন্নাহর আমলের পাশাপাশি তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।
পরিচ্ছেদ: রুকিয়াহ কি অমুসলিমদের জন্য প্রযােজ্য?
০৫
এই প্রশ্নটির উত্তরে বলতে হয়, অবশ্যই প্রযােজ্য। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য কুরআনে শিফা রেখেছেন; যেমন তিনি মধু ও জয়তুনের মাঝে শিফা রেখেছেন। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের জন্যই মধু ও জায়তুন আরােগ্য। মধু ও জায়তুনের মতাে কুরআনের ক্ষেত্রেও মুসলিম ও অমুসলিমের ভেদাভেদ থাকবে না, এটিই কুরআনের (নসের) অর্থের ব্যাপকতার দাবি। কেননা কুরআনকে আল্লাহ যিকরুললিল আলামিন' বা সমগ্র বিশ্বের জন্য যিকর বা স্মরণিকা বলেছেন। তবে মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্যই রুকিয়াহ দ্বারা উপকৃত হওয়ার পূর্বশর্ত হলাে রুকিয়াহ-পাঠকারীকে অবশ্যই ইখলাস ও ইয়াক্বিনের সাথে পড়তে হবে। যেহেতু ইখলাস ও ইয়াকিনের ভিত্তি ঈমান, সেহেতু রক্বীকে মুসলিম হতে হবে। আমরা ইতঃপূর্বে আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ)-এর হাদীসটি উল্লেখ করেছি। সেখানে দেখেছি যে, জনপদবাসীরা সফররত সাহাবিদেরকে মেহমানদারী করাতে রাজি হয়নি; বরং তাদেরকে অগ্রাহ্য করেছে। ইবনু ক্বায়্যিম রহিমাহুল্লাহ হাদীসের আলােকে বলেন, 'আরবের ওই জনপদ হয় কাফিরদের ছিল, নয়তাে সাহাবাদের কাছে তাদের ধর্মের বিষয়টি অজানা ছিল; অন্তত এতটুকু তাে বলাই যায়, তারা কৃপণ ছিল।' তা ছাড়া মেহমানদারী না করে রুকিয়াহর শর্ত কেন জুড়ে দিলাে তারা? ঈমানের গুণে গুণান্বিত সাহাবায়ে কেরাম কখনােই কৃপণ ছিলেন না। সাহাবাদের মাঝে যে সখ্যতা ছিল, জনপদবাসী মুসলিম হলে মেহমানদারী না করানাের প্রশ্নই আসে না।সুতরাং বলাই যায় যে, উক্ত জনপদবাসী হয়তাে কাফির ছিল। তা সত্ত্বেও আমরা হাদীসে দেখেছি যে, জনপদবাসীদের সরদার সুস্থ হয়ে গেল। এতে প্রমাণিত হয় যে, রুকিয়াহ অমুসলিমদের জন্যও প্রযােজ্য।
পরিচ্ছেদ: রুকিয়াহর যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা
০৬
চলুন! জ্বিন ও জাদুর চিকিৎসায় কুরআন পাঠের যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা অনুধাবনের জন্য আগে সূরা ফালাক ও সূরা নাসের অর্থ পড়ে নিইঃবল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। (সূরা ফালাকঃ ১১২)“বলাে, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের প্রভু, মানুষের অধিপতি ও মানুষের ইলাহের কাছে ওয়াসওয়াসা দানকারী খান্নাস মানুষ ও জ্বিনের অনিষ্ট থেকে, যারা মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা প্রক্ষেপণ করে।”- (সূরা নাস)উল্লিখিত সূরাদ্বয় থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়:১. কুরআন যদি জ্বিন, হিংসা ও জাদুর চিকিৎসায় যথেষ্ট না হত, তবে আল্লাহর পানাহ চাওয়ার নির্দেশ এবং সূরাদ্বয়ের মর্ম অনর্থক ও অসাড় সাব্যস্ত হয়ে যেত! নাউযুবিল্লাহ!২. আল্লাহ এ সূরা দুটিতে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দিয়ে যেন আমাদেরকে শারঈ চিকিৎসার পন্থা বাতলে দিচ্ছেন।৩. সমগ্র কুরআন মাজীদ আল্লাহ নাযিল করেছেন আমলের জন্য, নিজে তিলাওয়াতের জন্য এবং অন্যকে মুখে বলার জন্য। তারপরও আল্লাহ কোথাও কোথাও ‘বলাে বলে আয়াত নাযিল করেন। যেমন সূরা ফালাক ও সূরা নাস আল্লাহ শুরু করছেন 'বলাে' কথার মাধ্যমে। তার মানে সে আয়াতগুলাে বলা স্বতন্ত্র একটা ইবাদাত বা 'বলাে' শব্দের মর্ম হলাে সে আয়াতগুলাে বারংবার বলার জন্য বিশেষ গুরুত্বারােপ করা হচ্ছে। সুতরাং জ্বিন-জাদু-বদনজর ইত্যাদির অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে উক্ত সূরাদ্বয় পড়তে হবে এবং পড়ে পড়ে আত্মরক্ষা করতে হবে।পরিতাপের বিষয় হলাে, আমরা আল্লাহর নির্দেশিত পাঠের বিধানকে উপেক্ষা করি; আর শুধু ঝুলাঝুলিতে বিশ্বাস করি। আমরা তাবিজ ঝুলাই; পৈতা ঝুলাই; এবং.. এবং... আমাদের গলায় তাবিজ, কোমরে তাবিজ, হাতে তাবিজ, ঘরের দরজায় তাবিজ, বালিশের নিচে তাবিজ, মাজারের গাছে তাবিজ... শুধু তাবিজ ঝুলাঝুলি। শিশু ভয় পেয়েছে! তাবিজ দাও। সাপে কেটেছে! তাবিজ দাও। সন্তান হয় না! তাবিজ নাও। অথচ হাদীসের কিতাবাদি খুলে দেখুন! রাসূল (ﷺ) ও সাহাবাদের আমল কেমন ছিল।আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) জ্বিন থেকে এবং মানুষের নজর থেকে পানাহ চাইতেন। যখন সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলাে, তিনি এ দুটি গ্রহণ করলেন, অন্য সমস্ত পাঠ তিনি বর্জন করলেন। [তিরমিযি, আস-সুনান: ২০১৮]অন্য সমস্ত পাঠ বর্জন করলেন মানে তিনি সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠে তিনি অধিক গুরুত্ব দিলেন। কেননা, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ছাড়াও জ্বিন-জাদু-বদনজর থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর বেশ কিছু দোয়া মাসূরাও আছে।রুকিয়াহর আমল সাহাবাদের মাঝেও ছিল। বুখারি-তে বর্ণিত একাট ঘটনা সংক্ষেপে বলি। রাসূল (ﷺ)-এর একদল সাহাবি আরবের কোনও এক জনপদে এলেন। কিন্তু জনপদবাসী তাদেরকে মেহমানদারি করল না। এমন সময় এই জনপদের প্রধানকে সাপ দংশন করল। তারা আগন্তুক সাহাবিদেরকে বলল, 'আপনাদের কাছে কি কোনও ঔষধ আছে কিংবা কোনও ঝাড়ফুঁক করার মতাে কেউ?' সাহাবিরা বললেন, 'আপনারা আমাদেরকে আপ্যায়ন করেননি। প্রতিদান ধার্য না করলে আমরা কিছুই করব না।' জনপদবাসী তাদের জন্য এক পাল মেষ নির্ধারণ করলেন। তখন একজন সাহাবি সূরা ফাতিহা পড়ে রুকিয়াহ করলেন। সেই জনপদের সরদার আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে গেলেন।রুকিয়াহ ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য শর্ত হলাে—কুরআনের দোয়া ও রুকিয়াহর পাঠ অন্তর থেকে হতে হবে; এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত দোয়া ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম' (হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সরল পথ দেখাও) দোয়াটি এতবার পাঠের পরও মানুষ ভ্রষ্ট হয় কেন? কারণ অন্তর থেকে আসে না যে দোয়া, তা নিছক অসাড়-প্রার্থনা। মাছের পেটে ইউনুস আলাইহিস সালাম আটকা পড়লেন। এ বিপদে ইউনুস (আঃ)-এর মুক্তির বাহ্যিক কোনও অবলম্বনই ছিল না। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন—لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَউচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লা-আনতা সুব্হা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্যা-লিমীন্।অর্থঃ ‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’। [সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৭]আল্লাহ তাঁর দোয়া শুনলেন; তাঁকে মুক্তি দিলেন। আপনি যদি মনে করেন, এ দোয়া পড়ার দ্বারা আপনার মুক্তি মিলবে না, তা হলে এ দোয়া কুরআনে উল্লেখের কি মানে? শুধু ইউনুস নয়! আল্লাহ বলেন,وَكَذَلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَঅর্থঃ আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। [সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৮]আইয়ূব (আঃ)-এর কথা স্মরণ করুন। তিনি শয়তানদের আছর ও জাদুর দ্বারা আক্রান্ত হলেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ বলেন,وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍঅর্থঃ আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, ‘শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে’। [সূরা সােয়াদ ৩৮:৪১]আল্লাহ এ দোয়ার ওসিলায় আইয়ূব (আঃ)-কে সুস্থ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাকে পা দ্বারা জমিনে আঘাত করতে বললেন। তিনি আঘাত করলেন। দেখা গেল গােসল ও খাবারের জন্য শীতল পানি উৎসরিত হচ্ছে। সূরা সােয়াদের ৪১ নং আয়াত থেকে ঘটনাটা দেখতে পারেন। প্রিয় পাঠক! রুকিয়াহ আর কিছু নয়, কুরআন হাদীসে বর্ণিত এ-সমস্ত দোয়া পড়ার নামই রুকিয়াহ। রুকিয়াহতে এ-সমস্ত পাঠের পাশাপাশি কুরআন হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট কিছু ট্রিটমেন্ট মেথডও ফলাে করি আমরা।রক্বীকে ও রােগীকে মনে রাখতে হবে, কুরআন পাঠের দ্বারা আল্লাহ উপকৃত করবেন কি করবেন না, এটা আল্লাহর বিষয়। রােগের নিরাময় কারও ঔষধ দ্বারা হয় আবার কেউ সেই একই অসুস্থতায় ভুগে ভুগে মারা যায়। তাই রুকিয়াহ আস্থা নিয়ে পাঠ করতে হবে; তবে এ বিশ্বাস রাখতে হবে, এ পাঠের বিনিময় আল্লাহ কোনও-না-কোনওভাবে অবশ্যই দেবেন। আল্লাহ বলেন,فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُحْسِنِينَঅর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইহসানকারীদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। [সুরা হুদ: ১১৫]কুসংস্কারপূর্ণ সমাজে কুরআনের শুদ্ধতা ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আপনার প্রতিদান অবশ্যই দেবেন ইন শা আল্লাহ। সমাজে মানুষের ক্ষতির জন্য যতটুকু জাদু হয়, কুসংস্কারের কারণে কবিরাজদের কাছে গিয়ে জাদুর শিকার মানুষ এর চেয়ে বেশি হয়। আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন। আল্লাহর বিধান হলাে,إِنَّمَآ أَمْرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيْـًٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُঅর্থঃ “যখন তিনি কোনও কিছুর ইচ্ছা করেন আর বলেন 'হও', সাথে সাথেই তা হয়ে যায়।" [সূরা ইয়াসীন, ৩৬:৮২]হতাশ হবেন না! হাল ছাড়বেন না। বাহ্যিক উপকরণকেও তথা মেডিকেল ট্রিটমেন্টকেও উপেক্ষা করবেন না। ওই যে! আল্লাহ বদরে পাঁচ হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করলেন। শুধু ফেরেশতারাই তাে যথেষ্ট ছিল। তারপরও মুসলমানদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। কারণ সাহায্য তাে আল্লাহই করবেন! কিন্তু তিনি দেখেন, বান্দা তার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে কি না! আযীযের স্ত্রীর বন্ধ দরজাগুলাে তাে আল্লাহই খুলে দিয়েছেন নবি ইউসুফের জন্য। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য নবি ইউসুফ (আঃ)-কে দৌড় তাে দিতে হয়েছিল। আল্লাহ আপনার কাছে এই দৌড়টুকুই দেখতে চান।শারীরিক রােগের জন্য প্রয়ােজনে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নিন।
পরিচ্ছেদ: যে ঝাড়ফুঁক রুকিয়াহ শারইয়া হবে না
০৭
রুকিয়াহ মানে ঝাড়ফুঁক হলেও ইসলামে কেবল সেসব রুকিয়াহরই অনুমতি আছে, যেটা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ হতে গৃহীত। যদি কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করে রুকিয়াহ করা হয়, তা কখনােই শারীআসম্মত রুকিয়াহ বলে গণ্য হবে না। যেমন কুফুরিকালাম বলা কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সাহায্য চাওয়া। তবে হ্যাঁ, সরাসরি আল্লাহর কাছে যে-কোনও ভাষায় আরােগ্যের দোয়া করে রােগাক্রান্ত ব্যক্তিকে ফুঁ দিলে কোনও সমস্যা নেই। এটা জায়েজ। রাসূল (ﷺ) শুধু সেই রুকিয়াহরই অনুমতি দিয়েছেন, যেখানে কোনও শিরক নেই। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘ঝাড়ফুঁকে কোনও সমস্যা নেই যদি তাতে শিরক না থাকে।' [মুসলিম, আস-সহীহ: ২২০০]এ ছাড়া সমস্ত শিরকি রুকিয়াহ ও তাবিজ-তিওয়ালাহ তিনি নিষিদ্ধ করেন। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও তিওয়ালাহ শিরক।” [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৩৬১৫]