অধ্যায়: রাক্কী পরিচিতি
পরিচ্ছেদ: রাক্কী বলতে কি বুঝায়?
১৩২
ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) মুখলিস রাক্কীদের ব্যাপারে বলেছেন -“রাক্কীর উচিত গুনাহ থেকে দূরে থাকা, যেন এই সুযোগে জ্বীন তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। সে তো আল্লাহর পথে একজন জিহাদকারী ব্যক্তি। আর রুকিয়াহ চর্চা করাও জিহাদের একটি উত্তম পদ্ধতি। তাই যতদূর পারা যায়, সতর্ক থাকা উচিত, যেন তার পাপ তার শত্রুকে বিজয়ী হতে সহায়তা না করে।” [মাজমুউল ফাতওয়া: ১৯/৫৩, রিসালাতুল জ্বীন, পৃ. ৬৫| সম্পূর্ণ উক্তি দেখুন “জ্বীন কি রক্বীর ক্ষতি করবে?” অনুচ্ছেদে]হাকিকী জিহাদের সঙ্গে রুকিয়াহ চর্চার কোনো তুলনা যদিও হয় না, তবুও ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)-এর কথাটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন রাক্কী সমাজ থেকে কুফর-শিরক দূর করার জন্য নিজের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলে মেহনত করে। আর যখন কুফরী জাদু আক্রান্ত কারও চিকিৎসা করে অথবা শয়তান ভর করা ব্যক্তির ওপর রুকিয়াহ করে তখন সে আল্লাহর কালামের সাহায্যে সরাসরি শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
পরিচ্ছেদ: একজন ভালো রাক্কীর বৈশিষ্ট্য
১৩৩
যে সকল জিনিস রাক্বী ও রোগীর মাঝে থাকলে আল্লাহ্ চাহে ঝাড়ফুঁক দ্বারা পূর্ণ উপকার পাওয়া যায়:১. রুকিয়াহকারী সৎ ও আমলদার ব্যক্তি হওয়া।২. কোন রোগের জন্য কোন আয়াত ও জিকির উপযুক্ত তা ঝাড়ফুঁককারীর জন্য জানা।৩. রোগীকে সঠিক ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়া এবং সর্বপ্রকার হারাম কার্যাদি ও জুলুম থেকে বিরত থাকা। কারণ, রুকিয়াহঅধিকাংশ সময় পাপ ও নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত ব্যক্তির মাঝে প্রভাব ফেলে না।৪. আক্কীদা বিশুদ্ধ হওয়া। শিরক-বিদআতমুক্ত পরিচ্ছন্ন ইসলামী আক্বীদা অনুসারী হওয়া এবং আল্লাহর ওপর নিখাদ ভরসা থাকা।৫. আল্লাহর কালাম যে রোগব্যাধি, বদনজর, জাদু, জ্বীনের ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম—এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। সুস্থতা কেবল আল্লাহরই হাতে, আমার কোন সাধ্য নেই মানুষকে সুস্থ করার—এটা খুব ভালভাবে অন্তরে গেঁথে নেয়া। কোন রুগী সুস্থতা লাভ করার খবর পেলে আত্মগর্বে আক্রান্ত না হওয়া বরং আল্লাহর প্রতি কতজ্ঞতা জানানো। শোকরানা সিজদা আদায় করা। এর ভাল প্রভাব রয়েছে।৬. প্রতিদিনের মৌলিক আহকাম তথা নামায-রোজা, মাহরাম-গাইর মাহরাম ইত্যাদি বিষয়ে যত্নবান হওয়া। হালাল-হারামের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া, হারাম থেকে সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকা।৭. মানসিকভাবে দৃঢ় এবং সাহসী হওয়া। আর অধিক পরিমাণে যিকির-আযকার, নফল রোজা, তাহাজ্জুদ ইত্যাদির মাধ্যমে আত্মিকভাবেও সুদৃঢ় হওয়া।৮. জ্বীন জাতির অবস্থা তথা: প্রকারভেদ, সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, তাদের আচার-আচরণ, জ্বীনেরা কীভাবে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, এরপর তারা কীভাবে বিদায় হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা। জ্বীনদের মাঝে মিথ্যা বলার প্রবণতা খুবই বেশি। এজন্য জ্বীনদের স্বভাব, ধোঁকাবাজি, কূটকৌশলের ব্যাপারে সজাগ এবং সতর্ক থাকা।৯. জাদু, জ্বীন, বদনজর, ওয়াসওয়াসা—এই সব বিষয়গুলোতে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে পর্যাপ্ত ধারণা রাখা।অজ্ঞতা নিয়ে কাজে নেমে অন্যদের কাজের ক্ষেত্র নষ্ট না করা।১০. কুরআন তিলাওয়াত সহীহ-শুদ্ধ হওয়া। অশুদ্ধভাবে কুরআন পড়লে উল্টা গুনাহ হবে।১১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত প্রতিদিনের মাসনূন আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া। বিভিন্ন সময়ে হেফাজতের দোয়া যেমন: সকাল-সন্ধ্যার দোয়া, ঘুমের আগের দোয়া, বাড়ি থেকে বের হওয়ার দোয়া, নির্জন জায়গায় গেলে পড়ার দোয়া, টয়লেটে প্রবেশের দোয়া—এসব গুরুত্বের সাথে আদায় করা। প্রয়োজনীয় কিছু দোয়া এই গ্রন্থের ‘মাসনূন আমল’ অংশে পাওয়া যাবে। এছাড়াও অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য গ্রন্থের সহায়তা নিতে পারেন। যেমন: হিসনুল মুসলিম, হিসনে হাসীন, সিলাহুল মুমিন, আযকারে মাসনূনাহ, নবীজির দোয়া, আযকার ইত্যাদি।১২. নিজের পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া, তাদের প্রতিদিনের মাসনূন আমলগুলোতে অভ্যস্ত করে তোলা। তাদের অধিকারের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকা। রুকিয়াহ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে যেন কোনোভাবেই তাদের হক নষ্ট না হয়।১৩. নিজের বাড়িকে গুনাহের সরঞ্জাম থেকে পবিত্র রাখা। যেমন: কোনো জীবের ছবি, ভাস্কর্য বা মূর্তি, মানুষ বা প্রাণীর পুতুল সাজিয়ে বা ঝুলিয়ে না রাখা। গান-বাজনা না চলা, বাদ্যযন্ত্র না রাখা; ঘরে যেন রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে আর শয়তান না। থাকতে পারে—সেই ব্যবস্থা করা।
পরিচ্ছেদ: জিনের চিকিৎসা রাক্কীর জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয়
১৩৪
ইতিমধ্যে আমরা জ্বিন-আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার শরীয়ত-সম্মত পদ্ধতি বর্ণনা করেছি। এবার জাদুগ্রস্ত রোগীর প্রাথমিক রুকিয়াহসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বিশেষত জ্বিন তাড়ানোর সময় আপনি যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন, সে বিষয়ে আমরা এখানে সম্ভাব্য বিশেষ কিছু অবস্থার আলোচনা করব। কখনো এর বাইরের কোনো পরিস্থিতিও দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি দ্বারা সমাধান করতে হবে।১. লক্ষণ মিলে যাওয়ার পর জ্বিন তাড়ানোর জন্য প্রথমে রুকিয়াহ করার পর যদি রোগীর মাথা ঘুরতে শুরু করে, দম বন্ধ হয়ে আসে, ঝটকা দিয়ে কেঁপে ওঠে কিন্তু কোনো জ্বিন কথা না বলে তাহলে আরও দুই-তিনবার রুকিয়াহ করে দেখুন। তারপর তাকে ওপরে বলা ‘চিকিৎসা-পরবর্তী পরামর্শ দিয়ে দিন। এর সাথে আরও তিনটি কাজ করতে বলুন—ক. প্রথমে ৭দিন ডিটক্স রুকিয়াহ করা।খ. সুস্থতার লাভের নিয়তে অন্তত এক মাস যত বেশি সম্ভব রুকিয়াহ শোনা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ ঘন্টা। যার মাঝে থাকবে-“সূরা বাকারা এবং ৮ সূরার রুকিয়াহ (সূরা ইয়াসীন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, যিলযাল, ইখলাস, ফালাক এবং নাস), সূরা আল ইমরান, তাওবাহ, কাহাফ, হা মীম সাজদা (ফুসসিলাত), আর-রহমান, মুলক, তাকউই ইনফিতার, বুরুজ, ত্বরিক, আলা এবং শেষ ১৫টি সূরা।”লাভার জ্বিনের সমস্যা হলে বা জ্বিন সেক্সয়ালি টর্চার করলে সেক্ষেত্রে এই সূরা গুলো আগে “রুকিয়াহ যিনা, সূরা ইউসুফ এবং সূরা নূর” শোনা উচিত। আর কিছুদিন ‘আসল বা বশ করার জাদু” এর রুকিয়াহ করা উচিত।গ. সম্ভব হলে সূরা বাকারার ৫০টি থেকে ১০০টি আয়াত (সাধ্যে থাকলে আরও বেশি পড়ি) কিংবা অন্য জায়গার একপারা কুরআন তিলাওয়াত করা। এসব কিছু করার পর আবশ্যিকভাবে নিয়মিত অবস্থার আপডেট জানাতে বলুন। এক মাস পর যাচাই করে দেখুন—এই কয়দিনে জ্বিন চলে গেছে নাকি এখনো আছে। আল্লাহর ইচ্ছায় যদি জ্বিন চলে যায় তাহলে আর জ্বিন-আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো তার মানে পাওয়া যাবে না। আর যদি সমস্যা কিছু বাকি থাকে তাহলে রুকিয়াহ করে দেখুন। যেহেত এত দিনে জ্বিন অনেক দুর্বল হয়ে গেছে, তাই আশা করা যায় এবার সে চলে যেতে সম্মত হবে। তবুও যদি যেতে না চায় তাহলে আবার পূর্বের মতই প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিন। আর গুরুত্বের সাথে এক মাস এগুলো করার পর আবার দেখা করতে বলুন।উল্লেখ্য, একবার রুকিয়াহ করার পর কোনো কারণবশত যদি জ্বিনের রোগীর জন্য লাগাতার কয়েকদিন সরাসরি রুকিয়াহ করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রেও এই পরামর্শগুলোই দেবেন। এরপর সুবিধামত সময় বলে দেবেন, যেন এতদিন পর দেখা করে অবস্থার আপডেট জানায়।২. রুকিয়াহ করার সময় জ্বিন কখনো অতিরিক্ত চিৎকার-চেঁচামেচি করতে পারে কিংবা হুমকি-ধমকি দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জেনে রাখুন, সে বিপদে আছে। দেখেই এমন চেঁচাচ্ছে। এরকম অবস্থায় আপনি শান্ত থাকুন। আর কানের কাছে সূরা নিসার ৭৬ নং আয়াত পড়ুন-الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا ﴿٧٦﴾অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরী করেছে তারা লড়াই করে তাগূতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। (সূরা নিসা: ৭৬)কানের কাছে এই আয়াত কয়েকবার পড়ুন এবং ফুঁ দিন, পানিতে ফুঁ দিয়ে ছিটিয়ে দিন। ইনশাআল্লাহ খবিস জ্বিন দুর্বল হয়ে যাবে।৩. কখনো কখনো জ্বিন আপনাকে রাগাতে চেষ্টা করবে, গালিগালাজ করবে। তখন আপনাকে শান্ত থাকতে হবে, রাগান্বিত হওয়া যাবে না। আপনি আপনার মতো রুকিয়াহ করতে থাকুন। কখনো হয়তো আপনাকে বলবে, ‘আপনি অনেক ভালো মানুষ, বিরাট বুজুর্গ। আপনার কথা মেনে চলে যাচ্ছি। এসব শুনে আহ্লাদিত হওয়া বা আত্মশ্লাঘা অনুভব করা যাবে না; বরং বলুন যে, আমি আল্লাহর সাধারণ একজন বান্দা। তুমি আল্লাহর বিধান মেনে এখান থেকে চলে যাও।কখনও আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য জ্বিন হা হা করে হেসে উঠবে, বলবে এসবে আমার কিছুই হবে না, আমার কিছু করতে পারবি না, ইত্যাদি...।' যেন আপনি হতাশ হয়ে রুকিয়াহ বন্ধ করে দেন। সুতরাং এসব কথায় পাত্তা দিবেন না, উল্টা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিন আর নিজের মত তিলাওয়াত করতে থাকুন।৪. জ্বিনের রোগীর ওপর রুকিয়াহ চলাকালীন কখনো অন্য জ্বিন এসে আপনাকে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিতে পারে। সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করুন। বলুন, তোমরা যা খুশি করতে পারো। তবে আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।কখনো ঘুমের মাঝে শয়তান এসে আপনাকে সম্পদ বা গুপ্তধনের লোভ দেখাতে পারে। ভুলেও শয়তানের ফাঁদে পা দেবেন না। বহু মানুষ এই ফাঁদে পড়ে নিজের এবং পরিবারের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।৫. জ্বিনের রোগীর রুকিয়াহর ক্ষেত্রে বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, রুকিয়াহ চলাকালীন ভেতরের জ্বিন রোগীর শারীরিক ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, যেন জ্বিন চলে গেলেও একটা ক্ষতি থেকে যায়। যেমন: গলা টিপে ধরে, মুখে খামচি মারে, আঘাত করে ইত্যাদি। এজন্য উপস্থিত অন্যদের সতর্ক থাকতে বলবেন। প্রয়োজনে কাউকে বলবেন হাত ধরে রাখতে। আর আশেপাশে এমন কিছু রাখবেন না, যা দ্বারা রোগী নিজেকে আঘাত করতে পারে।৬. জ্বিনের রুকিয়াহ করার সময় যদি শুধু রোগীর কাঁধ বা পিঠ ব্যথা করে, বমি বমি লাগে অথবা কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদতে থাকে, তাকে কান্না থামাতে বলুন। যদি সে বলে, ‘আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না, এমনিতেই কান্না পাচ্ছে তাহলে সম্ভবত তাকে জাদু করা হয়েছে। তখন রোগীর কানের কাছে সিহরের অর্থাৎ জাদু সংক্রান্ত আয়াতগুলো (সূরা আরাফ: ১১৭-১২২, সূরা ইউনুস: ৮১-৮২, সূরা ত্বহা: ৬৯) কয়েকবার করে পড়ুন। এরপর যদি দেখেন কান্না বাড়ছে, বমি বমি লাগছে কিংবা এখনও শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করছে তাহলে বুঝতে হবে, সত্যিই যে জাদু আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে জাদুর জন্য রুকিয়াহ করতে হবে।এক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ সিহরের সাধারণ রুকিয়াহ করে আপডেট জানাতে বলুন। এরপরও যদি সমস্যা থাকে তাহলে তখন সমস্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট জাদুর চিকিৎসা দিন, এসব বিষয়ে পরের অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।৭. বাচ্চাদের রুকিয়াহর ক্ষেত্রে সর্বদা বাচ্চার নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন। যেহেতু বাচ্চার আচরণ ও মানসিকতা পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো না, তাই বাচ্চার সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো আচরণ করা যাবে না। এক জায়গায়, একইভাবে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে বাধ্য করা যাবে না। একটু পরপর খেয়াল করতে হবে, কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। বাচ্চার কাছে আপনি অপরিচিত কেউ হয়ে থাকলে রুকিয়াহ করার আগে ও পরে তার সাথে কিছু সময় কাটান, গল্প করুন অথবা হালকা খেলাধুলাও করতে পারেন। রুকিয়াহর মাঝে তাকে বলতে পারেন,‘আমার সাথে সাথে পড়ো’; যাতে করে সে আপনাকে সহজ ভাবে নেয়। যেহেতু বাচ্চাদের গুনাহ থাকে না, তাই তাদের রুকিয়াহতে আল্লাহর রহমতে বেশ দ্রুত ফল পাওয়া যায়।বিশেষ সতর্কতা: রুকিয়াহর সময় কখনোই বাচ্চাদের প্রহার করবেন না।৮. কখনো জ্বিন কিছু শর্ত দেয়। বলে যে, এই করতে হবে, সেই করতে হবে, তাহলে আমি চলে যাব। এ ক্ষেত্রে যদি সেটা ইসলাম-সমর্থিত হয়—যেমন: নামায-কালাম পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে—এরকম কিছু হলে বলুন, আল্লাহর বিধান হিসেবে মানতে রাজি আছি। কিন্তু শরীয়ত পরিপন্থী কিছু হলে, বিষয়টা কোনো পাপের কাজ হলে বা কোনো কিছু উৎসর্গ করতে বললে মানবেন না; বরং এসব বলার জন্য তাকে শাস্তি দিন।৯. অনেক সময় জ্বিন বোঝাবে, সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে চলে গেছে। অথচ তখনও সে ওই শরীরের মধ্যে আছে। এমনকি যখন কথা বলবে তখন আক্রান্ত ব্যক্তির মতোই বলবে। এই অবস্থায় কীভাবে বুঝবেন যে, জ্বিন চলে গেছে নাকি এখনো আছে? এমতাবস্থায় আপনি যদি রোগীর মাথায় হাত রাখেন তাহলে অস্বাভাবিক কাঁপুনি বুঝতে পারবেন। এছাড়াও হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করলে অস্বাভাবিক হারে হৃদস্পন্দন টের পাবেন। শরীরের কোন অঙ্গ অবশ হয়ে থাকবে অথবা ব্লাড প্রেশার অনেক বেশি দেখতে পাবেন। তখন আবার রুকিয়াহ করলে দেখবেন, জ্বিন কথা বলতে শুরু করছে।১০. মাঝে মাঝে জ্বিনের কাছে ওয়াদা নেওয়ার সময় পালিয়ে যায়। অর্থাৎ যখন চলে যাবার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হবে ঠিক তখনই পালিয়ে যায়। এমন হলে সূরা আর-রাহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ এই চার আয়াত বারবার পড়ুন।১১. কখনো এমন হয় যে, জ্বিন চলে যেতে রাজি হয়; কিন্তু অনভিজ্ঞ হওয়ার কারণে শরীর থেকে বের হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে তাকে সহায়তা করা। আপনি তার কানে আযান দিন, এরপর সূরা ইয়াসীন পুরোটা পড়ুন, তারপর আবার আযান দিন। এতে করে ইনশাআল্লাহ সে চলে যাবে। যদি রোগীকে জাদু করা হয় আর এজন্য জ্বিন আটকে থাকে তাহলে কিছুদিন সিহরের তথা জাদুর রুকিয়াহ করার পরামর্শ দিন, সম্ভব হলে তিন দিন পর্যন্ত ‘বরই পাতা বেটে গোসল করার নিয়ম অনুসরণ করতে বলুন। এরপর আবার রুকিয়াহ করুন। ইনশাআল্লাহ এবার জ্বিন বের হতে পারবে।১২. অনেক সময় আপনাকে ভয় দেখানো বা ঘাবড়ে দেওয়ার জন্য জ্বিন বলবে, এখানে আমি একা না। আমার সাথে আরও দুইজন আছে, চারজন আছে, ৪০ জন আছে।' এ ক্ষেত্রে তার কথাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। উল্টো তাকে ধমক দিয়ে বলতে হবে, যতজন আছিস সব ভাগ, নইলে সব একসাথে মরবি। সে যা-ই বলুক না কেন, চলে যাওয়ার পর আবার রুকিয়াহ করলেই বোঝা যাবে, অন্য কেউ আছে কি না।১৩. সবসময় একদিনের রুকিয়াহতে জ্বিন চলে নাও যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক নাগাড়ে কয়েকঘন্টা করে রুকিয়াহ করতে হবে। এতে হয়তো জ্বিন মারা পড়বে অথবা যখন একদম মৃতপ্রায় হয়ে যাবে, তখন কোনো রকম জান নিয়ে পালাতে বাধ্য হবে। ক্ষেত্র বিশেষে জ্বিনের রোগীর জন্য এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েকমাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এমতাবস্থায় প্রতিদিন রুকিয়াহ করা সম্ভব হলে ভালো, নইলে প্রথম পয়েন্টে বলা পরামর্শ অনুসরণ পাশাপাশি রুকিয়াহর আয়াতগুলো পড়ে পানি খাওয়া, রুকিয়াহর। গোসল করা, প্রতিমাসে এক-দুই বার এই গ্রন্থের শেষে আলোচিত ডিটক্স রুকিয়াহ করা বেশ উপকারি ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।১৪. জ্বিন চলে গেলেও সব লক্ষণ দূর হওয়া পর্যন্ত রুকিয়াহ চালিয়ে যেতে হবে, যেন আপদ আর ফিরে না আসে। এজন্য জ্বিন চলে যাওয়ার পর তৃতীয় ধাপ: চিকিৎসা পরবর্তী পরামর্শ যেন কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করে, এটা ভালোভাবে বলে দিতে হবে। প্রয়োজনে আরও বেশি সময় নিতে হবে।১৫. খেয়াল রাখার বিষয় হচ্ছে, রুকিয়াহ করার সময় প্রথম প্রথম কিছুদিন সমস্যা বাড়তে পারে। এতে ঘাবড়ে গিয়ে রুকিয়াহ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। কিছুদিনের মধ্যে সমস্যা ক্রমশ কমে আসবে। এভাবে আস্তে আস্তে জ্বিন-আক্রান্ত হওয়ার যত লক্ষণ আছে, সবগুলো দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।শেষ কথা হচ্ছে, রুকিয়াহ চালিয়ে যান, পাশাপাশি দোয়া এবং সাদকা করুন। সকাল-সন্ধ্যার অন্যান্য সুন্নাত আমলগুলো গুরুত্বের সাথে পালন করুন। আল্লাহ চাইলে সমস্যাগুলো একদম ভালো হয়ে যাবে। যদি আল্লাহ আপনার হাতে রোগীকে সুস্থ করেন তাহলে তাকে বলুন, যেন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। আর আপনিও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
পরিচ্ছেদ: যেসকল রক্বিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন
১৩৫
অনেক জাদুকর মানুষকে মিথ্যা ধারণা দেন, যেমন: রোগীকে কুরআন নির্দেশিত পন্থায় চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তাদের এ চুরি ও প্রতারণাকে আড়াল করার জন্য তারা শ্রবণযোগ্য স্বরে কুরআনের কয়েকটি আয়াত তেলাওয়াত করেন অথবা কোথাও আয়াত লিখে দেখান। আমি এরকম একটি আশ্চর্যজনক লেখা পড়েছি, জাদুকরদের সর্দার এটা লিখেছিল। তার নাম আবুল ফাত্তাহ আল তুখি। তার লেখা তাসখীরুল শায়তান ফি উইসাল আশিকান (ভালোবাসা তৈরিতে শয়তানের ব্যবহার) নামক একটি বইয়ের সূচনায় তিনি বলেন:“তিনি আশা করেন আল্লাহ তাকে সফলতা ও সমৃদ্ধি দান করবেন-আল তুখি আল ফালকি আবুল ফাত্তাহ বিন আল সাইয়িদ মুহাম্মাদ আবদু (আল্লাহ তাকে ও তার কাছে যারা আসেন তাদের সবাইকে ক্ষমা করুন) বলেন: এটি খুবই মুল্যবান একটি বই, আমি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জেনারেশনের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বইটি রচনা করেছি এবং আমি এর নামকরণ করেছি তাসখীরু শায়তান ফি উইসাল আশিকান (ভালোবাসা তৈরিতে শয়তানের ব্যবহার)”আল্লাহর কাছে সফলতা ও সমৃদ্ধির জন্য এ খারেজি বা বিপথগামী সাহায্য প্রার্থনা করার পর তিনি মানুষকে শাইখানোর চেষ্টা করেন যে, কুমারী নারীর হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরির জন্য অভিশপ্ত শয়তান ইবলিসের কাছে কিভাবে সাহায্য চাইতে হয়, কিভাবে আল্লাহর বাণীর প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা যায়, এমনকি তার এ কুফরি ও বিপথগামীতা এতটা মাত্রায় পৌছেছে যে, তিনি মানুষকে শাইখাচ্ছেন যৌন মিলনকালে যৌনাঙ্গে কিভাবে কুরআনের আয়াত লিখতে হয়। (নাউযুবিল্লাহ) [ড. ইবরাহিম কামাল আযাম, আল সিহর ওয়াস সাহারা থেকে উদ্ধৃত]আল্লাহ তা'আলা অবশ্য এ সংক্রান্ত সত্য প্রকাশ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন:وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْঅর্থঃ ফেরেশতাদ্বয় কাকেও (তা) শিখাতো না যে পর্যন্ত না বলত, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ, কাজেই তুমি কুফরী কর না। (আল বাকারা ২:১০২)
পরিচ্ছেদ: রক্বিকে অবশ্যই যেসকল কাজ গুলো করতে হবে
১৩৬
১. তিনি যে স্থানে বসে চিকিৎসা করবেন, সেই স্থান থেকে আল্লাহর অবাধ্যতাকারী বা অশ্রদ্ধাজ্ঞাপনকারী সব বস্তু সরিয়ে ফেলবেন।২. শুরুতেই রোগীকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে, তার কাছে কোনো তাবিজ-কবচ আছে কি না অথবা তিনি কোনো জাদুকরের কাছে। গিয়েছিলেন কি না। যদি তার সঙ্গে কোনো তাবিজ কবচ থাকে তবে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং তিনি যদি কোনো জাদুকরের কাছে গিয়ে থাকেন তাহলে তাকে বলতে হবে যে, কত বড় ভুল তিনি করেছেন এবং এর প্রভাব কত মারাত্মক হতে পারে, এটা তার আত্মিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর।৩. তাকে অবশ্যই রোগ নির্ণয় করতে হবে। এর এটা করা হয় রোগীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে। রোগীকে কেমন ধরনের প্রশ্ন করতে হবে সেক্ষেত্রে। রক্বির অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবাহিত লোকের। প্রশ্ন অবিবাহিত থেকে আলাদা হবে। প্রশ্ন নিম্নরূপ হতে পারে:১. রোগী কী ধরনের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। ২. এ সমস্যা শুরু হয়েছে কখন। ৩. রোগী কি কোনো স্বপ্ন দেখেন, আর দেখলে তা কী ধরনের? ৪. তিনি কি পেটে ব্যথা অনুভব করেন? এ ব্যথার শুরু কখন? ৫. তার কি মাথা ব্যথা আছে অথবা তিনি কি মাথা অথবা দেহে ভারী কিছু অনুভব করেন? ৬. তিনি কি তার বুকে শক্ত ভাব অনুভব করেন? রোগ নির্ণয়ের জন্য করা প্রশ্ন ঘটনা ভেদে বিভিন্ন রকম হয়। এসব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তি করে রক্বির আরো চিন্তা ভাবনা করে পুনরায় প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন পর্ব শেষে তিনি রোগীর উপর নিম্নোক্ত রুকিয়া পাঠ করবেন১. সূরা আল ফাতিহা: (১-৭)بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴿١﴾ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿٢﴾ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴿٣﴾ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ﴿٤﴾ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٥﴾ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿٦﴾ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ﴿٧﴾অর্থঃ (১) পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। (২) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। (৩) দয়াময়, পরম দয়ালু, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। (৪) বিচার দিবসের মালিক। (৫) আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই। (৬) আমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন। (৭) তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।২. আয়াতুল কুরসী (বাকারা ২:২৫৫)اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ﴿٢٥٥﴾অর্থঃ আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সব কিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারেনা। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয়না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান।৩. আল-আ'রাফ: (১১৭-১২২)وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ ﴿١١٧﴾ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿١١٨﴾ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ ﴿١١٩﴾ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ ﴿١٢٠﴾ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١٢١﴾ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ ﴿١٢٢﴾অর্থঃ (১১৭) আর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম যে, ‘তুমি তোমার লাঠি ছেড়ে দাও’ তৎক্ষণাৎ সে গিলতে লাগল সেগুলিকে যে অলীক বস্তু তারা বানিয়েছিল। (১১৮) ফলে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যা কিছু করছিল তা বাতিল হয়ে গেল। (১১৯) তাই সেখানে তারা পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত হয়ে গেল। (১২০) আর যাদুকররা সিজদায় পড়ে গেল। (১২১) তারা বলল, ‘আমরা সকল সৃষ্টির রবের প্রতি ঈমান আনলাম, (১২২) মূসা ও হারূনের রবের প্রতি।’ ৪. সূরা-ইউনুস: (৮১-৮২)فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ ﴿٨١﴾ وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ ﴿٨٢﴾অর্থঃ (৮১) অতঃপর যখন তারা (তাদের রশি ও লাঠি) ফেলল, তখন মূসা বলল, ‘তোমরা যা আনলে, তা যাদু। নিশ্চয় আল্লাহ তা বাতিল করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের আমল পরিশুদ্ধ করেন না’। (৮২) আর আল্লাহ তাঁর বাণীসমূহের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।৫. সূরা ত্ব-হা: (২০:৬৯)وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ ﴿٦٩﴾অর্থঃ ‘আর তোমার ডান হাতে যা আছে, তা ফেলে দাও। তারা যা করেছে, এটা সেগুলো গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে, তাতো কেবল যাদুকরের কৌশল। আর যাদুকর যেখানেই আসুক না কেন, সে সফল হবে না’।৬. যেসব সূরাহ তেলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে সুরক্ষার প্রার্থনা করা হয়-সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাসقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ﴿١﴾ اللَّهُ الصَّمَدُ ﴿٢﴾ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ﴿٣﴾ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴿٤﴾অর্থঃ (১) বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। (২) আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। (৩) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। (৪) আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। (সূরা ইখলাস)قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ﴿١﴾ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ ﴿٢﴾ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ﴿٣﴾ وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ﴿٤﴾ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ﴿٥﴾অর্থঃ (১) বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, (২) তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, (৩) আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, (৪) আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, (৫) আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। (সূরা ফালাক্ব)قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ﴿١﴾ مَلِكِ النَّاسِ ﴿٢﴾ إِلَٰهِ النَّاسِ ﴿٣﴾ مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ﴿٤﴾ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ﴿٥﴾ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ﴿٦﴾অর্থঃ (১) বল, ‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রব, (২) মানুষের অধিপতি, (৩) মানুষের ইলাহ-এর কাছে, (৪) কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে দ্রুত আত্মগোপন করে। (৫) যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। (৬) জিন ও মানুষ থেকে। (সূরা নাস)এ রুকিয়া পাঠ করা হলে রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে এবং সেবক জ্বিন কথা বলা শুরু করবে। এক্ষেত্রে জ্বিনকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করতে হবে:১. তার নাম।২. তার ধর্ম।৩. তাবিজ কোথায় আছে।প্রশ্ন পর্ব শেষে তাকে বলতে হবে, সে অসৎকর্মকারী, সে যা করছে তা ভুল এবং জাদুকর একজন কাফির এবং জাদুকরের সঙ্গে মিলে কাজ করা ইসলামে অনুমোদিত নয়।দ্রষ্টব্য: জ্বিন আপনাকে বলতে পারে যে, সে বের হয়ে যেতে চায়, কিন্তু জাদুকর কিছু জ্বিনকে পাঠিয়েছে তাকে হত্যা করার জন্য, যদি সে বের হয় তাহলেই হত্যার শিকার হবে, সেক্ষেত্রে আপনি তাকে তার। সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত করবেন, সে যদি মুসলমান হয় তাহলে তাকে নিজের আত্মরক্ষার জন্য কিছু শিখিয়ে দেবেন।এছাড়াও জ্বিন আপনাকে বলতে পারে, অমুক অমুক এ জাদুটোনা করেছে। সেক্ষেত্রে আপনি জ্বিনের কথা বিশ্বাস করবেন না এবং রোগীর পরিবারকে বোঝাবেন যে, জ্বিনদের মধ্যেও অনেক মিথ্যাবাদি রয়েছে।জ্বিন যদি আপনাকে কবচের অবস্থান বলে, আর এটি যদি দেহের বাইরে কোথাও হয় তাহলে আপনি লোক পাঠিয়ে সেই তাবিজ নিয়ে এসে পুড়িয়ে ফেলবেন। আর এ কবচ যদি রোগীর দেহের ভেতরে খাবার অথবা পানীয়ের আকারে থাকে তাহলে রোগীকে জিজ্ঞেস করুন যে, তার পেটে ব্যথা হচ্ছে কি না, আর ব্যথা হলে তা কখন শুরু হয়েছে। অত:পর আপনাকে সোনামুখী পাতার পানীয় তৈরি করতে হবে রোগীর জন্য, এ পানীয় খুবই উপকারী এবং এটা পরীক্ষিত।