অধ্যায়: বদনজর সম্পর্কিত অসুস্থতা
পরিচ্ছেদ: বদনজর সম্পর্কে ইসলামী আকীদা
৮০. বদনজরের কুপ্রভাব সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীল
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃوَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللَّـهِ مِن شَيْءٍ ۖ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّـهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ ﴿٦٧﴾ وَلَمَّا دَخَلُوا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُم مَّا كَانَ يُغْنِي عَنْهُم مِّنَ اللَّـهِ مِن شَيْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا ۚ وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿٦٨﴾অর্থঃ সে বলল, ‘হে আমার ছেলেরা, তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হুকুম একমাত্র আল্লাহরই। তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করছি এবং তাঁরই উপর যেন সকল তাওয়াক্কুলকারী তাওয়াক্কুল করে’। আর যখন তারা প্রবেশ করল, যেভাবে তাদের পিতা তাদেরকে আদেশ করেছিল, তা আল্লাহর হুকুমের বিপরীতে তাদের কোন উপকারে আসেনি, তবে তা ছিল ইয়া‘কূবের মনের একটি ইচ্ছা, যা সে ব্যক্ত করেছিল। আর সে ছিল জ্ঞানী, কারণ আমি তাকে শিখিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা ইউসুফঃ ৬৭-৬৮)হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) উপরোক্ত দু’টি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ)-এর ভাই বিনইয়ামিনকে তার অন্য ভাইদের সাথে মিশরে পাঠিয়েছিলেন। আয়াতে ইয়াকুবের (আঃ) উক্ত নির্দেশনার ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) মুহাম্মাদ বিন কা’ব, মুজাহিদ, যাহহাক, কাতাদা এবং সুদ্দী (রাঃ) প্রমুখ বলেছেন যে, এমনটি তিনি বদ নজরের ভয়ে বলেছিলেন। কেননা তাঁর সন্তানরা খুবই সুন্দর সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। তাই তাদের উপর লোকদের বদনজরের আশঙ্কা করে উক্ত নির্দেশ দেন। কেননা বদনজরের ক্রিয়া বাস্তব; কিন্তু পরে তিনি এও বলেনঃ তবে এ ব্যবস্থা আল্লাহর তাকদীরকে প্রতিহত করতে পারবে না। তিনি যা চাবেন তাই হবে পরিশেষে তা তাদের জন্য বদনজর হতে প্রতিরোধক হিসেবেই আল্লাহর হুকুমে কাজ হয়েছিল। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ২/৪৮৫)অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেনঃوَإِن يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ ﴿٥١﴾অর্থঃ আর কাফিররা যখন উপদেশবাণী শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, ‘এ তো এক পাগল’। (সূরা কলামঃ ৫১)হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, (ليزلقونك) “তোমার প্রতি বদনজর দিবে।” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রুগী বানিয়ে দিবে যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাযত না থাকে। আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে। যেমন এ ব্যাপারে হাদীসও রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)
৮১. বদনজরের কুপ্রভাব সম্পর্কে হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণ
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) এরশাদ করেনঃعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قال: قال رَسُوْ اللَّهِ ﷺ، العَيْنُ حَقٌّবদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।২. আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেনঃاستَعِيْذُوا بِاللّٰهِ مِنَ الْعَيْنِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّতোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)৩. ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃالعَيْنُ حَقٌّ وَلَو كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ لِسَبَقَتْهُ الْعَيْنُ، وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُواবদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু তকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর। (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)৪. আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (ﷺ) বললেনঃঅর্থঃ হা! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদনজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮)৫. আবু যার (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃإِنَّ الْعَيْنَ لَتُولَعُ بِالرَّجُلِ بِإِذْنِ اللّٰهِ حَتَّى يَصْعَدَ حَالِقًا فَيَتَرَدَّی مِنْهُইমাম আহমদ ও আবু ইয়ালা বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের সারমর্ম হল, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির যখন নজর লাগে তখন এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উঁচু স্থানে চড়ল অতঃপর কোন নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল। (শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেনঃ ৮৮৯)৬. ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃالعَيْنُ حَقٌّ تَسْتَنْزِلُ الْحَالِقَঅর্থঃ বদ নজর 'সত্য তা যেন মানুষকে উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়। ৭. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃالْعَيْنُ تَدْخُلُ الرَّجُلَ القَبْرَ، وَتَدْخُلَ الْجَمَلَ القِدْرِঅর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে। (সহীহ আল জামেঃ শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১২৪৯) অর্থাৎ মানুষের নজর লাগায় সে মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয়।৮. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃأَكْثَرُ مَنْ يَمُوتُ مِنْ أُمَّتِى بَعْدَ قَضَاءِ اللّٰهِ وَقَدَرِهِ بِالْعَيْنِঅর্থঃ আমার উম্মতের মধ্যে তাক্বদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃতু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে। (বুখারী)৯. আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) আমাকে বদ নজর থেকে বাঁচার জন্যে ঝাড়-ফুঁক করার নির্দেশ দিতেন। (বুখারীঃ ১০/১৭০, মুসলিমঃ ২১৯৫)১০. আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) নজর থেকে হেফাযত ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশন ও ক্ষত বিশিষ্ট রোগ থেকে রক্ষার জন্যে ঝাড়ফুঁকের অনুমতি প্রদান করেছেন। (মুসলিমঃ ২১৯৬)১১. উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) তার ঘরে এক মেয়ে শিশুর চেহারায় দাগ দেখে তিনি বলেছেন যে, তার চেহারায় বদ নজরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাকে ঝাড়ফুঁক করাও। (বুখারীঃ ১/১৭১, মুসলিমঃ ৯৭) ১২. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) আলে হাযমকে সাপে দংশিত ব্যক্তির ঝাড়ফুঁকের অনুমতি প্রদান করেছেন। আর আসমা বিনতে উমাইসকে বললেন, কি ব্যাপার আমার ভাইয়ের সান্তানদেরকে দুর্বল দেখছি, তাদের কি কিছু হয়েছে? আসমা (রাঃ) বললেন না, কিছু হয়নি তবে বদ নজর তাদেরকে দ্রুত লেগে যায়। রাসূল (ﷺ) বললেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুঁক করাও অতঃপর তাকে তাঁর সামনে নিয়ে আসা হলোঃ তিনি বলেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুঁক কর। (ইমাম মুসলিম রেওয়ায়েত করেছেনঃ ২১৯৮)
পরিচ্ছেদ: বদনজর কাকে বলে ও তার প্রতিকার কি?
৮২. বদনজর সম্পর্কে বিস্তারিত
বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “আল-আইনু হাক্কুন” অর্থাৎ নজর দোষ একটি বাস্তব সত্য জিনিস। যদি কোন জিনিস অদৃশ্যের লিখন খন্ডন করতে পারত, তবে নজরদোষ তা খন্ডন করতে পারত। যখন (নজরদোষ হেতু) তােমাদেরকে কোন অঙ্গ ধৌত করার জন্য বলা হবে, তখন তােমরা তা ধৌত করে দাও।” (মুসলিম, মিশকাত ৩৮৮ পৃঃ)নজর দোষের প্রভাবশতঃ মানুষ, পশু, ধন-সম্পত্তি বাগান-ক্ষেত ইত্যাদিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। দুনিয়ার তাবৎ জিনিস আল্লাহর মীমাংসায় সংঘটিত হয়। আল্লাহর মীমাংসাকৃত কোন বিষয়ই খন্ডন করার কোন উপায় নেই। কিন্তু বদ-নজর এমন মারাত্মক জিনিস যে, যদি কোন জিনিসে উক্ত বিষয় খন্ডন করার মত কোন শক্তি থাকত, তাহলে বদ-নজরে তা থাকত। অর্থাৎ, বদ-নজর একটা বাস্তব সত্য জিনিস। এর কবলে পড়লে নজর গ্রস্থ ব্যাক্তি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়। ঔষধ-পথ্যের মাধ্যমে এর কোন প্রতিকার ব্যাবস্থা নেই। কাজেই ঔষধ-পথ্য গ্রহণ করলেও কোন উপকার আসে না। এর থেকে আরােগ্য লাভের একটাই ব্যবস্থা আছে। আর সে ব্যবস্থা হচ্ছে, দোয়া বা মন্ত্র পাঠ করতঃ ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থা। এই অবস্থায় আল্লাহানুগ্রহে মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। উপরােক্ত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে নজরদোষ কাটাবার নিমিত্তে একটি পদ্ধতির উল্লেখ এসেছে। ঐ সময়ে আরবের প্রথা ছিল যে, যখন কারাে উপর বদ-নজর হতাে তখন যার নজর লেগেছে তার দুই হাত, দুই পা এবং নাভীর তলদেশ ধৌত করতঃ সেই পানি দ্বারা বদ-নজরগ্রস্ত ব্যক্তিকে গােসল দেওয়া হতাে। আর এই পদ্ধতিকে তার দোষমুক্তির একটা উপায় মনে করত। নবী (ﷺ)-এই পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দান করতঃ বলেছেন যে, “যার বদ-নজর লেগেছে তাকে যদি হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ ধৌত করার জন্য বলা হয়, তবে সে যেন তাতে আপত্তি না করে; বরং সে যেন অঙ্গ ধৌত করা পানি নজরদোষগ্রস্ত ব্যক্তিকে দিয়ে উপকৃত করে।এই প্রসঙ্গে আর একটি বিস্তৃত ঘটনা অন্য এক হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। পাঠকদের উপকারার্থে নিম্নে সেটি উদ্ধৃত করলাম।একদা আমের বিন রাবিয়াহ (রাঃ) সহল বিন হুনাইফকে (রাঃ)-কে গােসল করতে দেখে খুব মুগ্ধ হয়ে পড়লেন এবং মুখে বলতে লাগলেন, 'আল্লাহর কসম! সহলের মত অত সুন্দর রূপ-লাবণ্য আর কখনাে দেখি নি। এমন কি অন্দর মহলে অবস্থানরতা কোন রূপসী। নারীর ত্বক (চর্ম)ও অত সুন্দর আজ পর্যন্ত দেখতে পাই নি।'আমেরের এ কথা বলাও ছিল আর অমনি সহল জমির উপরে টলে পড়ে গেলেন। অর্থাৎ, এমনভাবে বদ-নজর লাগল যে, তিনি অজ্ঞান হয়ে ভূপতিত হয়ে পড়লেন। অতঃপর সহলকে উঠিয়ে হুযুর এক-এর সমীপে ধরাধরি করে আনা হলাে এবং অনুরােধ করে বলা হলাে, 'হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এঁকে সারানাে যায় কি করে? আল্লাহর কসম, ইনি যে মাথা তুলতে সক্ষম নন।'সহলের অবস্থা দেখে রাসূল (ﷺ) একি বললেন, “কারাে সম্পর্কে তােমাদের ধারণা আছে কি যে, তার বদ নজর এর প্রতি লেগেছে?”লােকেরা বলল, 'জী হা! আমাদের ধারণা হচ্ছে যে আমের বিন রাবীআর বদনজর ঐকে আক্রান্ত করেছে।' ইহা শ্রবণ করতঃ রসুলুল্লাহ (ﷺ) আমেরকে ডেকে পাঠালেন এবং কড়া-মিঠ স্বরে বললেন, “তােমরা তােমাদের কোন ভাইকে মারবার তালে কেন থাকো? তুমি সহলের রূপ-লাবণ্য দেখে যখন অভিভূত হয়েছিলে, তখন তুমি ওকে বরকতের দোয়া দাওনি কেন? অর্থাৎ, 'বা-রাকাল্লাহু ফীক' (তােমার প্রতি আল্লাহ বরকত দান করেন) বাক্য কেন পাঠ করাে নাই? তাহলে ওর উপর বদনজর লাগত না।”অতঃপর রাসূল (ﷺ) ঐ আমেরকে নির্দেশ দিলেন, “তুমি সহলের জন্য তােমার অঙ্গগুলি ধুয়ে ঐ পানি ওর উপরে বহে দাও।” এই নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে আমের (রাঃ) একটি পাত্রে নিজের মুখমন্ডল, হাত, কনুই, হাঁট, দুই পা ও পায়ের আঙ্গুলগুলি এবং নাভীর তলদেশ (লজ্জাস্থান) প্রভৃতি অঙ্গগুলি ধুয়ে দিলেন। অতঃপর সেই পানি সহলের উপরে ঢেলে দেওয়া হলাে। এইরূপ ব্যবস্থা অবলম্বনে সহল এক সঙ্গে সঙ্গে সেরে উঠলেন। চাঙ্গা হয়ে উঠে সকলের সঙ্গে এমনভাবে চলাফেরা করতে লাগলেন যেন মনে হচ্ছিল, ওর কিছুই হয় নি। (মা-লে, শরহে সুন্নাহ, মিশকাত ৩৯০ পৃঃ) বদ-নযরের প্রভাব দূর করার জন্য যেমন শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি ধৌত করতঃ সেই পানি বদ-নজরগ্রস্ত ব্যক্তির শরীরে ঢেলে দেওয়ার কথা এসেছে -তেমনি ওর থেকে অব্যাহতি পাবার দোয়াও আছে। আর সে দোয়া খুব কঠিন নয়; বরং খুব সহজ ও সকলের জানা। অর্থাৎ, সূরা ফালাক, ও সূরা নাস পাঠ করে ফুক দেওয়া।আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) জ্বিনদের আক্রমণ থেকে এবং মানুষের বদনজরের প্রভাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তারপর যখন ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আব্বযু বিরান্বিন্নাস সুরা দুটি অবতীর্ণ হলাে তখন তিনি ঐ সূরা দুটিই ধরে পড়লেন এবং ঐ দুটি ছাড়া অন্য সমস্ত দোয়া পরিত্যাগ করে দিলেন। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩৯০ পৃঃ) 'সিফরুস সাআদাহ’ গ্রন্থের লেখক হাদীসের বরাত দিয়ে লিখেছেন, কোন ব্যক্তি যখন নিজের অথবা অপরের সন্তান-সন্ততি, ধন-দৌলত ইত্যাদি দর্শন করে খুব মুগ্ধ হয়ে পড়বে, তখন সে ব্যক্তি যদি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করে তবে ওই সব জিনিসে তার বদনজর লাগবে না। আয়াতটি এই,مَا شَاءَ اللّٰهُ، لَا قُوَّةَ إلاَّ باللّٰه."মা- শা-আল্লাহ, লা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা- বিল্লা-হ।' (মাযাহেরে হক জাদীদ চতুর্থ, খন্ড ১ম কিস্তি ১০ পৃষ্টা)বদ নজর যেমন মারাত্মক জিনিস, যাদু বিদ্যাও তেমনি সব ভয়ংকর বিষয়। এর ফলে মানুষের অনেক অঘটন ঘটে গিয়ে থাকে। ইসলামী শরীয়তে বহুবিধ বিদ্যাচর্চার অনুমতি আছে, কিন্তু যাদুবিদ্যার চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম ঘােষণা করা হয়েছে। এ মর্মে নিমের হাদীসটি প্রনিধান করুনঃইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জ্যোতিষবিদ্যার এমন কোন বিষয় আয়ত্ব করল (যার স্বীকৃতি আল্লাহ দেন নি), সে যেন যাদুবিদ্যার কিয়দংশ আয়ত্ব করল এবং সে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ-বক্তা গণক-ঠাকুর সমতুল্য। আর ভবিষৎ-বক্তা গণক যাদুকর সমতুল্য আর যাদুকর ব্যক্তি কাফের সমতুল্য। (মিশকাত ৩৯৪ পৃঃ) উপরােক্ত হাদীসের শেষােক্ত বাক্য (الساحر كافر) ‘আস-সা-হিরু কা-ফির’ অর্থাৎ, যাদুবিদ্যা চর্চাকারী কাফের, ঈমানের গন্ডী থেকে বহির্ভূত। অতএব ওর থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে তফাতে থাকা দরকার।পক্ষান্তরে বদনজরের মত যাদু-মন্ত্রের কুফলজনিত মানুষের রকমারি অনিষ্ট সাধন হয়ে থাকে। এই অনিষ্টকর পরিস্থিতির মুকাবেলা করার মত ব্যবস্থা ঔষধপথ্যে অথবা কোন প্রক্রিয়ায় করা সম্ভব হয় না। এর প্রতিকার একমাত্র বিশুদ্ধ দোয়া বা ইসলামী মন্ত্র দ্বারা করা সম্ভব।এ প্রসঙ্গে হযরত রসুলে করীম (ﷺ) একটি ঘটনার উল্লেখ করা সুসঙ্গত হবে বলে মনে করি। ঘটনাটি প্রসিদ্ধ ও বহু জনশ্রুত ঘটনা। যথাঃখয়বর যুদ্ধের পর বড় বড় ইয়াহুদী দলপতিগণ লাবীদ বিন আসেম নামক প্রখ্যাত যাদুকরের নিকটে এসে বলল, 'আমরা মুহাম্মদের ধ্বংস-সাধনের জন্য অনেক যাদুমন্ত্র করলাম। কিন্তু কোন কিছু করা গেল না। আপনি আমাদের মধ্যে সব চেয়ে বড় যাদুবিদ। অতএব আপনি একবার যাদু-মন্ত্র দ্বারা তদবীর করে দেখুন। আপনাকে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। অতঃপর তাকে তিনটি স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করার কথা চুক্তি হলে সে তার তদবীর শুরু করে দিল। প্রথমতঃ সে একজন ইয়াহুদী ছেলেকে হাত করল। যে ছেলেটি নবী করীম (ﷺ)-এর খিদমত (সেবা) করত। চিরুনী করার সময় যে চুলগুলি দাড়ি ও মাথা থেকে চিরুনীতে লেগে বের হয়ে আসত, সেই চুল কিছু সংগ্রহ করল ঐ ছেলেটির হাত দিয়ে। তারপর সেই চুলে যাদু-মন্ত্র দ্বারা এগারােটা গিরা বেঁধে একটা কূপে পাথর চাপা দিয়ে রাখল। বাস, এই যাদুর কুফলে নবী (ﷺ) প্রায় এক বছর কাল আক্রান্ত থাকেন। এবং ভীষণ কষ্ট ভােগ করেন। পরে করুণাময় আল্লাহ রাসূল (ﷺ)-এর এই কষ্ট দূরীভূত করে দেন। যাদু-মন্ত্র কে করেছে, কোথায় কি ভাবে যাদু করেছে ইত্যাদি সমস্ত খবর রাসূল (ﷺ)-কে জ্ঞাত করানাে হলাে এবং ফালাক ও নাস সূরা দুটি অবতীর্ণ করা হলাে। সুতরাং রাসূল (ﷺ) আল্লাহর নির্দেশ মুতাবেক যাদুকৃত চুলগুলি প্রথমে উদ্ধার করলেন। তারপর একটি করে যাদুকৃত গিরা খুলে দিতে লাগলেন। যেহেতু যাদুকৃত গিরা সংখ্যা ছিল ১১টি, সেই হেতু দেখা যাচ্ছে উপরােক্ত সূরা দুটিতেও আয়াতের সংখ্যা মােট ১১টি। যখন আয়াতগুলি পাঠ করতঃ সব গিরা ক’টি খুলে দেওয়া হলাে তখন নবী করীম ও আরাম পেয়ে গেলেন। মনে হলাে যেন তাকে শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এক্ষণে তিনি বন্ধনমুক্ত হয়ে নিজেকে খুব হালকা মনে করতে লাগলেন। (ফালিল্লাহিল হামদ) (বিস্তারিত বিবরণের জন্য তফসীর জালালাইনের ৫০৮ পৃষ্ঠায় তফসীর ও টীকা দ্রষ্টব্য)বদ-নজর, যাদু-মন্ত্র, জ্বিন-ভুতের আক্রমণাদি থেকে নিষ্কৃতি পাবার নিমিত্তে উত্তম ঝাড়ফুঁক হচ্ছে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। এই সূরা দুটি সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (ﷺ) একটি হাদীসে বলেন, “আজকের রাত্রে এমন কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যে, ঐ রকম আর কোন আয়াত (আশ্রয় প্রার্থনা মূলক) পরিদৃষ্ট হয় না। আর সে আয়াতগুলি হচ্ছে ‘ক্বুল আ'ঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও ক্বুল আ'ঊযু বিরাব্বিন্না-স।” (মুসলিম, মিশকাত ১৮৬ পৃঃ)অন্যত্রে জননী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ কে যখন রাত্রে শয্যা গ্রহণ করতেন তখন প্রত্যহ শােবার আগে তিনি দুই হাতের তালু দুটি একত্রিত করে তাতে নিম্নের সূরা তিনটি পড়ে ফুক দিতেন। তারপর হাত দুটি দেহে যতটা পারতেন ফিরিয়ে নিতেন। আরম্ভ করতেন মস্তক, মুখমন্ডল এবং শরীরের সম্মুখ ভাগ থেকে। এইভাবে তিনি তিনবার করে করতেন। সূরা তিনটি এই ১. কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। ২. ক্বুল আ'ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব। ৩. ক্বুল আ'ঊযু বিরাব্বিন্না-স। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৮৬ পৃঃ)
৮৩. বদনজরে সৃষ্ট অসুস্থতার ধরন
বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার প্রভাবকে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যেতে পারেঃ১. প্রাণঘাতি প্রভাব, যা দ্রুত ফলাফল নিয়ে আসে। যেমন: কোনো মানুষ অথবা গবাদিপশুকে হত্যা করা অথবা বাড়িঘর ও ফসল ধ্বংস করা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কোনো প্রতিকার নেই। শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহ) রিয়াদের নিকটবর্তী গ্রামের এক লোকের ঘটনা বর্ণনা করেন। ওই লোকটি আরেক লোকের পালিত কিছু ভেড়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এসময় সে ভেড়াগুলোর প্রতি বদনজর দেয় এবং সবগুলো ভেড়া মারা যায়। ভেড়াগুলোর মালিক এসে তার সবগুলো ভেড়াই মারা গেছে দেখে তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পাশ দিয়ে কে গেছে? তার ছেলে বলল: তার ভেড়ার পালের পাশ দিয়ে অমুকের ছেলে অমুক ব্যতীত আর কেউ যায়নি। অতঃপর তিনি ওই লোকটির খোঁজে বের হন এবং তাকে গিয়ে তার (ওই লোকটির) নতুন ভবনের ছাদে পেলেন। তিনি তাকে। ডাকলেন, হে অমুক, তুমি আমার ভেড়ার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ এ করেছ (বদনজর দিয়েছ) এখন তুমি এর বদলে হয় তোমার দেহ দান করবে অথবা তোমার এ নতুন ভবন দিয়ে দেবে। ভবনের মালিক বলল: আমি নিচে নেমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। লোকটি ছাদ থেকে নেমে আসার পরপরই হঠাৎ ভবনটি ধসে পড়ল। [রিয়াদের একটি কেন্দ্রীয় মসজিদের দেয়া বক্তব্য থেকে পৃ. ২০৫ নোট: ১]এ ধরনের বদনজর বিষাক্ত ও ধ্বংসাত্মক এবং এর কোনো প্রতিকার নেই।২. প্রাণঘাতী নয় এমন প্রভাব। এর প্রতিকারকে আবার তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়ঃ(ক) যে প্রতিকার ব্যবস্থা ঘটনা ঘটার আগেই বদনজরকে বাতিল করে দেয়। (খ) বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত কার্যকরি প্রতিকার ব্যবস্থা। (গ) রুকিয়া ও আযকার পাঠের মাধ্যমে প্রতিকার।
৮৪. বদনজর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই একে বাতিল করা
এটা করা হয় আল্লাহর অনুগ্রহ কামনার মাধ্যমে। যদি কোনো ব্যক্তি আরেকজনের উপর বদনজর দিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করে তাহলে আল্লাহর রহমতে ওই বদনজরের প্রভাব বাতিল হয়ে যায় এবং সেটা আর কাজ করে না। আল্লাহ তাঁর নিজের আদেশের মাধ্যমে ওই লোকের আদেশ বাতিল করে দেন। সুতরাং বোঝা গেল, পুরো ব্যাপারটিই আল্লাহ তা'আলার নিয়ন্ত্রণে, সকল মহিমা ও গৌরব তাঁরই। এজন্যই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে আমাদের পছন্দনীয় সব অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:“যদি তোমাদের মধ্যে কেউ দেখে যে, তার ভাইয়ের কিছু অনুগ্রহ রয়েছে, তাহলে তাকে তার জন্য প্রার্থনা করতে দাও।”এবং তিনি আমীর বিন রাবিয়াহকে বললেনঃ“তুমি বরকত লাভের জন্য কেন প্রার্থনা করছ না?” সাহল বিন হানীফ (রঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“যদি তোমাদের কেউ তার নিজের জন্য কোনো অনুগ্রহ পছন্দ করে, তাহলে তাকে এর জন্য প্রার্থনা করতে দাও, কারণ বদনজরের প্রভাব সত্য।” [ইবনে আল সুন্নি, ইমাম আহমাদ ও আল হাকিম কর্তৃক বর্ণিত]উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, বদনজর কোনো ক্ষতি করতে পারে না, যদি ওই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের প্রার্থনা করে; বরং এ বদনজর তখনই তার ক্ষতি করবে যখন তিনি আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য প্রার্থনা করবেন না।বিষয়টি কুরতুবিসহ অন্যান্যরা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন: প্রত্যেক মুসলিমকেই তার পছন্দনীয় অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর কাছে। প্রার্থনা করতে হবে, কারণ অনুগ্রহের জন্য প্রার্থনা করা হলে এর কল্যাণে নিঃসন্দেহে সকল সম্ভাব্য ক্ষতির সম্ভাবনা দূরীভূত হয়ে যাবে।ইবনে হাজার (রহ) বলেন: যদি কেউ তার নিজের জন্য কোনো কিছু পছন্দ করেন, তাহলে তিনি যেন তার জন্য অতি দ্রুত আল্লাহ তাআলার কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করেন এবং তার এ প্রার্থনা তার জন্য রুকিয়া হয়ে যাবে।আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ ও বারাকাতের জন্য এভাবে প্রার্থনা করতে হবে: “বারিকাল্লাহু ফিহ্ (আল্লাহ এতে রহমত দিক) অথবা “আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি” (হে আল্লাহ আপনি বারকাত দান করুন)অথবা বলা যেতে পারে, মা শা আল্লাহ (আল্লাহ যা চান) যেভাবে নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃوَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا ﴿٣٩﴾অর্থঃ ‘আর যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন তুমি বললে না, ‘মাশাআল্লাহ’! আল্লাহর তৌফিক ছাড়া কোন শক্তি নেই। তুমি যদি দেখ যে, আমি সম্পদে ও সন্তানে তোমার চেয়ে কম। (সূরা কাহফ ১৮: ৩৯)
৮৫. বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার পরে এর প্রতিকার
যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো উপর বদনজর দেয় এবং বদনজর দেয়া ব্যক্তি যদি পরিচিত হয়, তাহলে তার গোসল অথবা অযুতে ব্যবহৃত পানি সংগ্রহ করে নিয়ে বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে ঢালতে হবে, এতে করে তার উপর থেকে বদনজরের সকল প্রভাব কেটে যাবে, অর্থাৎ ওই বদনজর বাতিল হয়ে যাবে।সাহল বিন হানিফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:“কেন তোমরা তোমাদের একজন ভাইকে হত্যা করছ? কেন তোমরা তার জন্য বারকাতের প্রার্থনা করছ না? তার জন্য তোমার নিজেকে ধৌত কর।”রাসূলের (ﷺ) একথা শুনে আমীর তার মুখমণ্ডল, উভয় হাত কনুই পর্যন্ত, উভয় হাঁটু, দুই পায়ের পাশ এবং তার ইযারের ভেতর ধৌত করলেন এবং এ পানি সাহলের পেছন থেকে তার শরীরের উপর ঢেলে দেয়া হল এবং তিনি এতে সুস্থ হয়ে গেলেন। [মুয়াত্তা মালিক, ২/৯৩৮]অন্য এক হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তুমি তার জন্য অযু কর।” অতঃপর আমীর অযু করলেন এবং সেই পানি পেছন দিক থেকে সাহলের গায়ে ঢেলে দেয়া হল। এরপরই সাহল আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) কাছে গেলেন এবং তখন তার শরীরের আর কোনো সমস্যা রইল না। ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেনঃ“বদনজর ব্যাপারটি সত্য এবং আল্লাহর আদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো যদি কিছু থাকত তাহলে তা হত বদনজর। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কাউকে যদি অযু বা শরীর ধৌত করতে বলা হয়, তাহলে তাকে তা করতে দাও।” [ইমাম মুসলিম, কিতাবুস সালাম, বাবুত তিব্ব ওয়াল মারাদ ওয়ার রুকা, ৫/৩২]সুনানে আবু দাউদে আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে:“যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো উপর বদনজর দেয় তাহলে বদনজর দেয়া ব্যক্তিকে অযু করার নির্দেশ দিতে হবে এবং তার অযুর সেই পানি দিয়ে আবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে অযু করতে হবে। [সুনান বায়হাকী ৯/২৫২]
৮৬. বদ নজর ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য
১. প্রত্যেক বদ নজরওয়ালা হিংসুক; কিন্তু প্রত্যেক হিংসুক বদ নজর ওয়ালা নয়। এজন্য সূরা ফালাকে হিংসাকারীর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। যাতে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করার ফলে সে বদ নজর থেকেও রক্ষা পায়। আর এটিই হলো কুরআনের ব্যাপকতা এবং তার মোজেযা ও অলংকারিত্ব।২. হিংসার মূল বিষয় হল বিদ্ধেষ এবং অপরের নেয়ামত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আকাক্ষা হয়ে থাকে। অন্যদিকে বদ নজরের মূল বিষয় হল অন্যের কোন কিছুকে খুব ভাল মনে করা।৩. হিংসা এবং বদ নজরের পরিণাম একই যার ফলে উভয়ই ক্ষতিসাধনের কারণ হয়ে থাকে; কিন্তু উভয়ের উৎসের পার্থক্য রয়েছেঃ হিংসার উৎস অন্তরের জ্বলন সৃষ্টি হওয়া এবং সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর বদ নজরের উৎস চোখের দৃষ্টি শক্তির খারাপ প্রভাব এজন্য নজর দ্বারা এমন সব জিনিস ও প্রভাবিত হয় যার উপর হিংসার ক্ষেত্র নেই যেমন জড় পদার্থ, প্রাণীসমূহ, উদ্ভিদসমূহ এবং চাষাবাদ ও সম্পদ। আর কখনও নিজের নজর নিজেকেই লেগে যায়। কোন ব্যক্তি যখন কোন বস্তুকে আশ্চর্যের সাথে এবং গভীর দৃষ্টিতে দেখে এবং সাথে সাথে তার আত্মা ও অন্তর এক প্রকারের চাঞ্চল্যের অবস্থা সৃষ্টি হয় তখন তা দ্বারা বদ নজর লেগে থাকে।৪. হিংসার প্রভাব ভবিষ্যতের কোন ভাল জিনিসের উপরও হয়ে থাকে আর বদ নজরের প্রভাব বর্তমান উপস্থিত বিষয়ের উপর হয়ে থাকে।৫. কোন ব্যক্তি নিজেকে এবং নিজের সম্পদকে হিংসার দৃষ্টিতে দেখে, তবে তার নিজের সম্পদসমূহে ও শরীরে নিজের বদনজর লেগে যেতে পারে।৬. হিংসা নিকৃষ্ট হৃদয়ের মানুষ থেকেই হয়। প্রকারান্তরে বদ নজর নেক ব্যক্তির দ্বারাও হয়ে থাকে। যখন সে কোন বস্তুকে খুব বেশী পছন্দ করে ফেলে অথচ সে সেটার ধ্বংস চায় না। এর উদাহরণ আমের বিন রাবীয়ার ঘটনা যখন সাহাল বিন হুনাইফকে তার নজর লেগে যায় অথচ আমের (রাঃ) প্রথম যুগের মুসলমান ও আহলে বদরের অন্তর্ভুক্ত।উপরোক্ত নজর ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য যারা বর্ণনা করেছেন তারা হলেনঃ ইবনে জাওযী (রহঃ), ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ), ইবনে হাজার, নববী (রহঃ) ও প্রমুখ। আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলের প্রতি দয়া ও রহমত করুন।মুসলমানদের উচিত যখন কোন কিছু দেখে পছন্দ হয়ে যায়; তখন বরকতের দোয়া করা, সেই বস্তু নিজের হোক অথবা অন্যের কেননা নবী করীম (ﷺ) আমেরকে বলেছিলেন, তুমি তার জন্যে (সাহাল বিন হুনাইফের জন্যে) বরকতের দোয়া করনি? কেননা এই দোয়া বদ নজর থেকে সুরক্ষা হয়ে থাকে।
৮৭. জ্বিনের বদ নজর মানুষকে লাগতে পারে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) জ্বিনের নজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং এরপর মানুষের বদ নজর থেকেও পানাহ চাইতেন; সুতরাং যখন সূরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হল তখন অন্য দোয়া ছেড়ে দিয়ে এই সূরাদ্বয় দিয়ে প্রার্থনা করতেন। (ইমাম তিরমিযী চিকিৎসা বিষয়ক অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেনঃ ২০৫৯, ইবনে মাযাহঃ ৩৫১১, আর আলবানী এটাকে সহীহ বলেছেন।)উম্মুল মু'মিনীন উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) তার ঘরে একটি বালিকা দেখলেন, যার মুখমন্ডলে জ্বিনের বদনজরের কাল দাগ। তা দেখে তিনি বলেনঃ তাকে ঝাড়-ফুঁক কর কেননা তাকে জ্বিনের বদনজর লেগেছে।” (বুখারীঃ ২০১০/১৭১ ও মুসলিমঃ ২১৯৭)উপরোক্ত হাদীসদ্বয় হতে বুঝা যায়, মানুষ হতে যেমন বদনজর লাগে অনুরূপ জ্বিন হতেও লাগে। এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সে যখন পোশাক খুলবে, আয়না দেখবে বা সে যে কর্ম করবে তখন যেন দোয়াযিকির পড়ে যাতে সে নিজের, মানুষের ও জ্বিনের বদনজর বা অন্য কোন কষ্ট হতে নিরাপদ বা সংরক্ষিত থাকতে পারে।
৮৮. বদ নজরের চিকিৎসা
যে ব্যক্তি তার অন্য কোনো ভাইয়ের ওপর বদনজর দিয়েছে তার কাছে। একটি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসতে হবে। অতঃপর ওই ব্যক্তি পানিতে হাত দেবে এবং পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে পরে আবার কুলি করে সেই পানি পাত্রে ফেলবে। অতঃপর সে আবার এ পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল ধৌত করবে। এরপর সে তার ডান হাত পানিতে দিয়ে পানি নিয়ে বাম বাহুর উপর একবার ঢালবে। একইভাবে সে তার বাম হাত দিয়ে পানি নিয়ে ডান বাহুর উপর ঢালবে। অতঃপর সে তার বাম হাত পানিতে দেবে এবং পানি নিয়ে তার ডান হাতের কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত অংশে ঢালবে, একইভাবে সে তার ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাতের কনুই থেকে কজি পর্যন্ত অংশে ঢালবে।অতঃপর সে আবার তার বাম হাত দিয়ে পানি নিয়ে ডান পা ধৌত করবে, একইভাবে সে তার ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম পা ধৌত করবে। অতঃপর সে তার বাম হাত দিয়ে পানি নিয়ে ডান হাঁটুর উপর ঢালবে, একইভাবে সে তার ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাটুর উপর ঢালবে। এ সবকিছুই করতে হবে পানির পাত্রে উপর, যাতে করে ব্যবহৃত পানি আবার পাত্রেই জমা হয়। অতঃপর সে তার ইযারের উপরের অংশ (ট্রাউজারের কোমরবন্ধনী) পানির পাত্রে রাখবে। পানির পাত্র মাটিতে রাখা যাবে না, এটি রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার উপর, এবং এ পানি পেছন দিক থেকে একবারে তার শরীরে ঢালতে হবে।' [সুনান বায়হাকী ৯/২৫২]কাউকে ধৌত করতে বলা হলে সেটা তার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যাবেঅনেকেই বদনজর দেয়া ব্যক্তিকে তাদের জন্য অযু বা ধৌত করতে বলতে লজ্জা পান। কিন্তু তাদের এ ব্রিতবোধ আসলে ঠিক নয়। কারণ বদনজর অনেক সময় ধর্মভীরু ব্যক্তির পক্ষ থেকেও আসতে পারে। সে কারণেই অনেক স্কলার বলেছেন যে, যে ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির উপর বদনজর দেয়, তার জন্য অযু করা বাধ্যতামূলক।কারণ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:“যদি তোমাকে কেউ ধৌত করতে বলে, তাহলে তার জন্য তুমি তা করবে।”তিনি এ ধরনের ব্যক্তিকে ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং তার নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক।
পরিচ্ছেদ: কিভাবে বদনজরের ধৌতকাজ সম্পন্ন করতে হবে?
৮৯
ভূমিকাযে ব্যক্তি তার অন্য কোনো ভাইয়ের ওপর বদনজর দিয়েছে তার কাছে। একটি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসতে হবে। অতঃপর ওই ব্যক্তি পানিতে হাত দেবে এবং পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে পরে আবার কুলি করে সেই পানি পাত্রে ফেলবে। অতঃপর সে আবার এ পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল ধৌত করবে। এরপর সে তার ডান হাত পানিতে দিয়ে পানি নিয়ে বাম বাহুর উপর একবার ঢালবে। একইভাবে সে তার বাম হাত দিয়ে পানি নিয়ে ডান বাহুর উপর ঢালবে। অতঃপর সে তার বাম হাত পানিতে দেবে এবং পানি নিয়ে তার ডান হাতের কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত অংশে ঢালবে, একইভাবে সে তার ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাতের কনুই থেকে কজি পর্যন্ত অংশে ঢালবে। অতঃপর সে আবার তার বাম হাত দিয়ে পানি নিয়ে ডান পা ধৌত করবে, একইভাবে সে তার ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম পা ধৌত করবে। অতঃপর সে তার বাম হাত দিয়ে পানি নিয়ে ডান হাঁটুর উপর ঢালবে, একইভাবে সে তার ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাটুর উপর ঢালবে। এ সবকিছুই করতে হবে পানির পাত্রে উপর, যাতে করে ব্যবহৃত পানি আবার পাত্রেই জমা হয়। অতঃপর সে তার ইযারের উপরের অংশ (ট্রাউজারের কোমরবন্ধনী) পানির পাত্রে রাখবে। পানির পাত্র মাটিতে রাখা যাবে না, এটি রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার উপর, এবং এ পানি পেছন দিক থেকে একবারে তার শরীরে ঢালতে হবে।' [সুনান বায়হাকী ৯/২৫২]
কাউকে ধৌত করতে বলা হলে সেটা তার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যাবেঅনেকেই বদনজর দেয়া ব্যক্তিকে তাদের জন্য অযু বা ধৌত করতে বলতে লজ্জা পান। কিন্তু তাদের এ ব্রিতবোধ আসলে ঠিক নয়। কারণ বদনজর অনেক সময় ধর্মভীরু ব্যক্তির পক্ষ থেকেও আসতে পারে। সে কারণেই অনেক স্কলার বলেছেন যে, যে ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির উপর বদনজর দেয়, তার জন্য অযু করা বাধ্যতামূলক।কারণ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:“যদি তোমাকে কেউ ধৌত করতে বলে, তাহলে তার জন্য তুমি তা করবে।”তিনি এ ধরনের ব্যক্তিকে ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং তার নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক।
কাউকে ধৌত করতে বলা হলে সেটা তার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যাবেঅনেকেই বদনজর দেয়া ব্যক্তিকে তাদের জন্য অযু বা ধৌত করতে বলতে লজ্জা পান। কিন্তু তাদের এ ব্রিতবোধ আসলে ঠিক নয়। কারণ বদনজর অনেক সময় ধর্মভীরু ব্যক্তির পক্ষ থেকেও আসতে পারে। সে কারণেই অনেক স্কলার বলেছেন যে, যে ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির উপর বদনজর দেয়, তার জন্য অযু করা বাধ্যতামূলক।কারণ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:“যদি তোমাকে কেউ ধৌত করতে বলে, তাহলে তার জন্য তুমি তা করবে।”তিনি এ ধরনের ব্যক্তিকে ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং তার নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক।
পরিচ্ছেদ: হিংসাকারীর বৈশিষ্ট্য জানা যাতে তাকে এড়িয়ে চলা যায়
৯০. ভূমিকা
বদনজরের মধ্যে সব ধরনের মানুষই অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনকি যারা আল্লাহভীরু তারাও এর দ্বারা আক্রান্ত হবে যদি না তারা এর প্রতি সঠিক মনোযোগ প্রদান করে, যদিও হিংসার বিষয়টি নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হিংসুক মানুষের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তাকে চেনা যায়, অন্যদের থেকে তাকে আলাদা করা যায়। যেমন-তার তাকানো ও হাসির ধরণ, মুখের অভিব্যক্তি এবং তার কথা বলার ধরন দেখেই তাকে আলাদা করা যাবে। আর এসব বৈশিষ্ট্যই বলে দেবে তার মনে কী আছে। মানুষ যা কিছুই গোপন করুক না কেন তার বহিঃপ্রকাশ। তার চেহারায় ঘটবেই, মুখ ফসকে বের হয়ে যাবে তার মনের কুটিলতা। তার তাকানোর ধরন, তার হাসি এবং তার পুরো গতিবিধি থেকেই তার মনের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হবে।প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের মুখমণ্ডলকে আয়না হিসেবে তৈরি করেছেন, এ আয়নায় তার মনের লুকানো চিন্তার প্রতিফলন ঘটে। অসুস্থ মানুষের মুখে অসুস্থতার লক্ষণ ও চিহ্ন ফুটে ওঠে, বিষন্ন ও দুঃখী মানুষের মুখেও ফুটে ওঠে তার কষ্টের চিহ্ন, ঠিক একইভাবে সুস্থ-সবল। মানুষের মুখেও দেখা যায় সুস্থতার লক্ষণ। কোনো মানুষ যদি তার জীবনে সুখী ও পরিতৃপ্ত হয়, তবে তার মুখে তার গোপন চিন্তার ছাপ দেখা যায়। এবং কখনো কখনো সে মুখ ফসকে সে চিন্তা প্রকাশও করে দেয়। কোনো মুমিন যদি তার ঈমানের প্রতি সত্যবাদী ও আন্তরিক হন, পরম করুণাময়ের সামনে যদি তিনি বিনয়ী ও নম্র হন, নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেন, তাহলে এ তেলাওয়াত ও ঈমানের আনন্দ এবং এর আভা তার মুখে ফুটে উঠবে। তার স্বভাব হবে খুবই নম্র ও সদয়, তার কথা হবে খুবই পরিশীলিত ও ভদ্র। এর বিপরীত চিত্রও সত্য: একজন অসৎ মানুষের যাবতীয় কুকর্ম ও অনৈতিক কর্মের প্রতিফলনও ঘটবে তার চেহারায়, বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাকে সৎ মনে হলেও মুখ ফসকে কোনো একসময় সে তার কুকীর্তির কথা বর্ণনা করবে। একইভাবে যে হিংসাকারী মানুষের ভালো জিনিসে অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং তার উপর থেকে যেন আল্লাহর রহমত চলে যায় সেই কামনা করে, সে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং তার ঈমান নেই। সে তার ভেতরের ইচ্ছা বা ভাবনা যতই গোপন করার চেষ্টা করুক না কেন, শিগগিরই তার মনে পুষে রাখা হিংসা প্রকাশ পেয়ে যাবে।
৯১. হিংসুকের বৈশিষ্ট্যাবলী
১. হিংসাকারী সবসময় আল্লাহ তা'আলার আদেশ বা আদেশের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে।২. হিংসাকারী সবসময় অভিযোগ করে এবং কদাচিৎ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, এমনকি যদি সে পুরো পৃথিবীর মালিকও হয়।৩. সে যাকে হিংসা করে তার ভুলকে অনুসরণ করে এবং সবসময় তার দোষ অনুসন্ধান করে, সেগুলোকে প্রকাশ করে এবং অন্যদের কাছে। সেগুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করে।৪. সে সবসময় যাকে হিংসা করে তার ভালো ও স্বতন্ত্র গুণাবলি গোপন করে অথবা অবজ্ঞা করে অথবা এ গুণগুলোকে খাটো করে দেখে।৫. আপনি খেয়াল করে দেখবেন, হিংসাকারী যাকে হিংসা করে তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা বা রসিকতা ছাড়া কথা বলতে পারে না, কিন্তু তার। হৃদয় থাকে ঘৃণা ও অসন্তোষে পরিপূর্ণ, যা তার তাকানোর ধরনে প্রকাশ। পেয়ে যায়।৬. সে কোনো প্রমাণ ছাড়াই প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করে।৭. সে সবসময় সুযোগ সন্ধান করে এবং তার সবটুকু সুযোগ কাজে লাগায় যাকে সে হিংসা করে তার অথবা তার সম্পদের ক্ষতি করার পেছনে।৮. সর্বশেষ, হিংসাকারী আসলে একজন ঝামেলা পাকানো লোক, তার হৃদয়ে সবসময় অন্যের ভালোতে অসন্তোষ থাকার কারণে তার চেহারায় ফুটে ওঠে বিষন্নতা ও নিষ্প্রভতার ছাপ।
৯২. ইসলামের আলোকে হিংসার প্রতিকার
হিংসা একটি মারাত্মক ব্যাধি, যার পরিণাম খুবই ভয়াবহ, সামাজিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ও মানুষের পারস্পরিক অশালীন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে বিকশিত হয় এ হিংসা-বিদ্বেষ। যা মানুষকে অজ্ঞতা ও পশ্চাৎপদতার সর্বনিম্ন স্তরে নিমজ্জিত করে।এ কারণেই ইসলাম এ মারাত্মক ব্যাধির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তোমরা একে অন্যকে হিংসা কর না, অন্যের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন কর না, একে অপরকে ঘৃণা কর না, একজনকে আরেকজনের কাছ থেকে টেনে নিও না; হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা পরস্পর ভাইয়ের মতো আচরণ কর।”অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তোমরা সতর্ক বা কৌশলী হয়ে লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা করবে, কারণ যার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ থাকে, সেই হিংসার মুখে পতিত হয়।” [ইবনু আবিদ দুনইয়া ও তাবারানী মুয়ায (রা) হতে যঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন]এ ভুল এড়িয়ে চলতে হলে একজন মুসলিমকে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে, আচরণে শান্তশিষ্টতা থাকতে হবে। অন্য একজনের প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ দেখে তার মতো নিজের জন্যও ওই বিশেষ অনুগ্রহ কামনা করা ইসলামে অনুমোদিত, তবে এক শর্তে, ওই ব্যক্তির অনুগ্রহ কেড়ে নেয়ার কামনা করা যাবে না এবং অন্য একজনের কেন এমন অনুগ্রহ হল সেজন্য অসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না।হিংসা একটি মারাত্মক মানসিক রোগ, আর এ রোগের চিকিৎসা কেবল উপকারি জ্ঞান দিয়েই করা সম্ভব। হিংসা নামক ব্যাধির ক্ষেত্রে উপকারি জ্ঞান মানে এ উপলব্ধি হওয়া যে, এ পৃথিবীতে হিংসা তোমার জন্য ক্ষতি তো বয়ে আনবেই, পাশপাশি এতে তোমার গুণাহ হবে এবং এ গুণাহর ফলে কপালে শুধুই আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ জুটবে, আর অন্যদিকে শুধুই এ হিংসার পথ এড়িয়ে চলাই জান্নাতে প্রবেশের একটি মাধ্যম।আনাস বিহার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) সঙ্গে এক মজলিসে বসা ছিলাম, তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেনঃ“এ পথে তোমাদের দিকে একজন জান্নাতের অধিবাসী আসবে।”অতঃপর আনসারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি এলেন। তার দাড়ি থেকে ওযুর পানি টপ টপ করে পড়ছিল। বাম হাতে তার পায়ের স্যান্ডেল। তিনি এসে সবাইকে সালাম দিয়ে অভিবাদন জানালেন।পরের দিনও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একই কথা বললেন এবং সেই ব্যক্তি হাজির হলেন। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) চলে যাওয়ার পর আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস লোকটিকে অনুসরণ করলেন এবং তাকে বললেন: আমার পিতার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে এবং আমি শপথ করেছি আগামী তিনদিন তার সঙ্গে থাকব না। আপনি কি আমাকে এ তিনদিন থাকার সুযোগ দিতে পারবেন? তিনি বললেন: “হ্যা”। অতঃপর তিনি তার সঙ্গে তিন রাত্রি কাটালেন। কিন্তু তিনি তাকে রাতে কিয়াম করতে দেখলেন না, কিন্তু যখনই তিনি বিছানায় যেতেন আল্লাহকে স্মরণ করতেন। তিনি বললেন: তবে আমি তার মুখে ভালো ব্যতিত খারাপ কোনো কথা শুনিনি।তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমি তার কাজকর্ম নিয়ে খুব কমই ভাবলাম। আমি তাকে বললাম: হে আল্লাহর বান্দা, আমার সঙ্গে আমার পিতার কোনো ঝগড়া হয়নি, কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনার ব্যাপারে এ এ কথা বলতে শুনেছি এবং সেই কারণেই আমি জানতে চেয়েছিলাম যে, আসলে আপনি কী কী কাজ করেন। কিন্তু আমি আপনাকে বেশি কিছু করতে দেখলাম না, তারপরও আপনার এ মর্যাদা হল কিভাবে? তিনি বললেন: আপনি যা দেখেছেন আমি তার বেশি কিছু করি না। অতঃপর আমি যখন ফিরে আসতে চাইলাম তখন তিনি বললেন: আপনি যা দেখেছেন আমি তার বেশি কিছু করি না, কিন্তু আমি কখনো অন্যের কল্যাণে, অন্যকে দেয়া আল্লাহর অনুগ্রহে হিংসা বোধ করি না।” আবদুল্লাহ বললেন: আমি তাকে বললাম: এ কর্মই আপনাকে ওই মর্যাদা এনে দিয়েছে এবং এটাই আমরা করতে পারি না।অতএব এটা স্পষ্ট যে, হিংসার পথ পরিহার করে চলাও একটি মহৎ কাজ, কারণ এর জন্য আল্লাহ তা'আলা উত্তম প্রতিদান দেবেন।
পরিচ্ছেদ: রুকিয়া ও যিকিরের মাধ্যমে বদনজরের চিকিৎসা
৯৩
বদনজর দেয়া ব্যক্তি যদি অপরিচিত হয়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কোনো উপায় থাকবে না, তবে তিনি শরীয়াহ্ নির্দেশিত রুকিয়া ও যিকির বেশি বেশি করে তেলাওয়াত করবেন, কারণ আল্লাহ চাইলে এর মাধ্যমেই আরোগ্য দান করবেন।অসুস্থ ব্যক্তি তার দুই হাত উপরে তুলে সূরা আল ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী ও আল মুয়াব্বিযাত তেলাওয়াত করবেন এবং তার দুই হাতে ফুঁ দেবেন, অতঃপর দুই হাত দিয়ে পুরো শরীর মাসেহ্ করবেন।এছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তি এসব আয়াত পাঠ করে জলপাই তেলে ফু দেবেন এবং এ তেল দিয়ে ব্যথার স্থানে মালিশ করবেন, এবং তিনি অযু করে সেই পানি থেকে পানও করতে পারেন।আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বর্ণনা করেছেন:১.أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ’ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্রি মা-খালাক্বঅর্থঃ আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে।২.أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَّامَّةٍউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বা-নিওঁ ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লা-ম্মাহঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের, সকল শয়তান থেকে, সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও প্রাণী থেকে এবং সকল ধরনের বদনজর থেকে।৩. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ حَاسِدٍ، اَللَّهُ يَشْفِيكْ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيْكَউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি আর্ক্বীক, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীক, মিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ আ'ইনিন ‘হা-সিদিন, আল্লা-হু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আর্ক্বীকঅর্থঃ পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে আমি তোমার জন্য রুকিয়া পাঠ করছি, তোমার জন্য ক্ষতিকর সকল কিছু থেকে, প্রত্যেক আত্মা অথবা হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করুক, পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে আমি তোমার জন্য রুকিয়া পাঠ করছি।৪.بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيْكَ وَمِنْ كُلِّ ذَاءٍ يَشْفِيْكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍউচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়া মিন কুল্লি দায়িন ইয়াশফিকা ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ ওয়া মিন শাররি কুল্লি যি আ’ইনিন।অর্থঃ পরম করুণাময় আল্লাহর নামে, তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করুক, সকল ধরনের রোগ থেকে তোমাকে আরোগ্য দান করুক, এবং হিংসুকের সকল ধরনের হিংসা ও অনিষ্ট থেকে এবং প্রত্যেককে বদনজরের প্রভাব থেকে আল্লাহ রক্ষা করুক।ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আরো দোয়া ও রুকিয়া রয়েছে যেগুলো একজন অসুস্থ ব্যক্তি তার নিজের জন্য পাঠ করতে পারেন, এরকম কিছু দোয়া ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) তার যা’দ আল মায়াদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ১. أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وبَرَأَ وَذَرَأَ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত তা-ম্মা-তিল্লাতী লা- ইউজা-ওয়িঝুহুন্না বার্রুন ওয়ালা- ফা-জিরুন, মিন শার্রি মা- খালাক্বা ওয়া বারাআ ওয়া যারাআ, ওয়া মিন শার্রি মা- ইয়ানঝিলু মিনাস সামা-য়ি ওয়া মিন শার্রি মা- ইয়া’অ্রুজু ফীহা-, ওয়া মিন শার্রি মা- যারাআ ফিল আরদ্বি, ওয়া মিন শার্রি মা- ইয়া’খরুজু মিন্হা-, ওয়া মিন শার্রি ফিতানিল্লাইলি ওয়ান নাহা-রি, ওয়া মিন শার্রি কুল্লি ত্বা-রিক্কিন ইল্লা- ত্বারিক্বান ইয়াত্বরুক্বু বিখাইরিন ইয়া- রা’হমা-নঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাক্যাবলির, যেগুলোকে অতিক্রম করতে পারে না কোনো পুণ্যবান বা কোনো পাপী, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, বানিয়েছেন ও ছড়িয়ে দিয়েছেন তার অনিষ্ট থেকে, যা কিছু আসমান থেকে অবতরণ করে তার অনিষ্ট থেকে, যা কিছু আসমানে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, যা কিছু যমিনে ছড়ানো তার অনিষ্ট থেকে যা কিছু যমিন থেকে বের হয় তার অনিষ্ট থেকে, রাত ও দিনের ফিতনার অনিষ্ট থেকে এবং সকল আগন্তুকের অনিষ্ট থেকে, শুধু যে আগম্ভক কল্যাণ-সহ আগমন করে সে ব্যতীত, হে মহা-দয়াময়।২.أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَحْضُرُوْنِউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি (তা-ম্মা-তি) মিন ‘গাদ্বাবিহী ওয়া ‘ইক্বা-বিহী ওয়া (মিন) শার্রি ‘ইবা-দিহী, ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়া-তীনি ওয়া আন ইয়া’হদ্বুরূনঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাক্যাবলির, তাঁর গযব-ক্রোধ থেকে, তার শাস্তি থেকে, তাঁর সৃষ্টির অকল্যাণ থেকে, শয়তানের তাড়না বা প্ররোচনা থেকে এবং আমার কাছে তাদের উপস্থিতি থেকে।৩.اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيْمِ وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللّٰهُمَّ، أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ، اَللّٰهُمَّ إِنَّهُ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَا يَخْلُفُ وَعَدُكَ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَউচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিওয়াযহিকাল কারিম ওয়া কালিমাতিকা তাম্মাতি মিন শাররি মা আনতা আ’খিয বি নাসিয়াতিহি আল্লাহুম্মা আনতা তাকশিফুল মাগরামা ওয়াল মা’সামা আল্লাহুম্মা ইন্নাহু লা ইউহযামু যুনদুকা ওয়ালা ইউখলাফু ওয়া’দুকা সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা।অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার মহান প্রসন্নতা ও উত্তম কথা দিয়ে সেই অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা আপনি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে পাকড়াও করেন। হে আল্লাহ আপনি আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং স্নায়বিক চাপ দূর করে দিন। হে আল্লাহ তোমার সেনাবাহিনী কখনো পরাজিত হতে পারে না, তোমার ওয়াদার কখনো বরখেলাপ হতে পারে না, সকল মহিমা ও প্রশংসা একমাত্র তোমারই।৪.اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ أَعْلَمُ أَنَّ اللّٰهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللّٰهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا وَأَحْصِيْ كُلَّ شَيْئٍ عَدَدًا. اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ وَمِنْ شَرِّ السَّيْطَانِ وَشَرِكِهِ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّيْ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍউচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা আ'লাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আনতা রাব্বুল আরশীল আযীম। মাশাআল্লাহ কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। আ’লামু আন্নাল্লাহা আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির ওয়া আন্না আল্লাহা আহাতা বি কুল্লি শাইয়িন ই'লমান ওয়া আহসা কুল্লা শাইয়িন ‘আদাদান। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন শাররিল শায়তানি ওয়া শারাকিহি ওয়া মিন শাররি কুল্লি দাব্বাতিন আনতা আখিযুন বি নাসিয়াতিহি, ইন্না রাব্বি আ'লা সিরাতিম মুসতাকিম।”অর্থঃ “হে আল্লাহ, হে আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আপনার প্রতি আমার সকল আস্থা এবং আপনি পবিত্র আরশীল আযীমের মালিক। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই ঘটে এবং তিনি। যা ইচ্ছা করেন না তা কখনোই ঘটে না। আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ক্ষমতা নেই, কোনো শক্তি নেই। আমি জানি আল্লাহ তাআলা সব করতে। সক্ষম, চারপাশে যা কিছু রয়েছে, যা কিছু ঘটছে সবই আল্লাহর জ্ঞাতসারে। এবং তিনি সব কিছুই গণনা করেছেন। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে। আমার নিজের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, শয়তান ও তার ফাঁদ থেকে বাচার প্রার্থনা করছি, আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওইসব সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে যেগুলোকে তুমি তোমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে পাকড়াও কর। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সহজ-সোজা পথে রয়েছেন।”অতঃপর তিনি বলেন: যারা আশ্রয়ের জন্য এ দুয়া ও প্রার্থনা পাঠ করবে, তারা যেন এর উপকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কেও জ্ঞান রাখেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ও অনুমতিক্রমে এসব দোয়া মানুষকে বদনজরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং বদনজরকে বাতিল করে দেয়, তবে এটা নির্ভর করবে দোয়া পাঠকারীর ঈমানি শক্তির উপর, তার আত্মার শক্তি, সম্ভাব্যতা, আল্লাহর প্রতি তার আস্থার শক্তি এবং তার হৃদয়ের দৃঢ়তার উপর। কারণ এ দোয়াগুলো এক ধরনের হাতিয়ার এবং মানুষ যখন এ হাতিয়ার ব্যবহার করে, তখন এটা খুব ভালো কাজ করে। [যাদুল মা'আদ, ৪/১৭০]