অধ্যায়: জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
পরিচ্ছেদ: জ্বীন আছরের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে
১২. জ্বীনের পরিচয়
জ্বীন আল্লাহ তা'আলার একটি সৃষ্টি। যেমন তিনি ফিরিশতা, মানুষ সৃষ্টি করেছেন তেমনি সৃষ্টি করেছেন জ্বীন। তাদের বিবেক, বুদ্ধি, অনুভূতি শক্তি রয়েছে। তাদের আছে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে আছে ভাল জ্বীন ও মন্দ জ্বীন। আল কুরআনে জ্বীনদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে:وَّ اَنَّا مِنَّا الصّٰلِحُوۡنَ وَ مِنَّا دُوۡنَ ذٰلِکَ ؕ کُنَّا طَرَآئِقَ قِدَدًا ﴿ۙ۱۱﴾অর্থঃ ‘আর নিশ্চয় আমাদের কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রম। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত’। (সূরা আল জ্বীন:১১)এ গােষ্ঠির নাম জ্বীন রাখা হয়েছে, কারণ জ্বীন শব্দের অর্থ গােপন। আরবী জ্বীন শব্দ থেকে ইজতিনান এর অর্থ হল ইসতেতার বা গােপন হওয়া। যেমন আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:فَلَمَّا جَنَّ عَلَیۡہِ الَّیۡلُঅর্থঃ অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল ... (সূরা আল আনআম: ৭৬)এখানে জান্না অর্থ হল, আচ্ছন হওয়া, ঢেকে যাওয়া, গােপন হওয়া। তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে গােপন থাকে বলেই তাদের নাম রাখা হয়েছে জ্বীন। যেমন আল্লাহ রাব্দুল আলামীন বলেন:اِنَّہٗ یَرٰىکُمۡ ہُوَ وَ قَبِیۡلُہٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَہُمۡঅর্থঃ নিশ্চয় সে ও তার দলবল তােমাদেরকে দেখে যেখানে তােমরা তাদেরকে দেখ না। (সূরা আল আরাফ: ২৭)জ্বীনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দিয়ে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন:وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰہُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ ﴿۲۷﴾অর্থঃ আর ইতঃপূর্বে জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। (সূরা আল হিজর: ২৭)এ আয়াত দ্বারা আমরা আরাে জানতে পারলাম যে, আল্লাহ রাব্দুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে জ্বীন সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে:وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ ﴿ۚ۲۶﴾ وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰہُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ ﴿۲۷﴾অর্থঃ আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। (সূরা আল হিজর: ২৬-২৭)আল্লাহ তাআলা যে উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন সে-ই উদ্দেশ্যেই জ্বীনকে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বলেন:وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾অর্থঃ আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে। (সূরা আয যারিয়াত: ৫৬)জ্বীনদের কাছেও তিনি নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন। তিনি বলেন:یٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ اَلَمۡ یَاۡتِکُمۡ رُسُلٌ مِّنۡکُمۡ یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ وَ یُنۡذِرُوۡنَکُمۡ لِقَآءَ یَوۡمِکُمۡ ہٰذَا ؕ قَالُوۡا شَہِدۡنَا عَلٰۤی اَنۡفُسِنَا وَ غَرَّتۡہُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا وَ شَہِدُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ اَنَّہُمۡ کَانُوۡا کٰفِرِیۡنَ ﴿۱۳۰﴾অর্থঃ ‘হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত?’ তারা বলবে, ‘আমরা আমাদের নিজদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’ আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির। (সূরা আল আনআম: ১৩০)এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বিচার দিবসে মানুষের যেমন বিচার হবে তেমনি জ্বীন জাতিকেও বিচার ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।তারা বিবিধ রূপ ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে এসেছে। এমনিভাবে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে বলে আল কুরআনের সূরা আন নামলে উল্লেখ করা হয়েছে।আসমানী কিতাবে যারা বিশ্বাসী-ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমান- তারা সকলে জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। তারা কেউ জ্বীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। পৌত্তলিক, কতিপয় দার্শনিক, বস্তুবাদী গবেষকরা জ্বীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। দার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফিরিশতা ও জ্বীন রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। সুন্দর চরিত্রকে ফেরেশতা আর খারাপ চরিত্রকে জ্বীন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বুঝানাে হয়। অবশ্য তাদের এ বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহর সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
১৩. জ্বীনের তিন প্রকার
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এ সম্পর্কে বলেছেন, জ্বীন তিন প্রকার-১. যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়। ২. কিছু সাপ ও কুকুর। ৩. মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়।(সূত্র: তাবারানী। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ আল জামে আস সাগীর, হাদীস নং ৩১১৪, আবু সালাবা আল খাশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।) (মুজামু আলফাজ আল-আকীদাহ)জ্বীন বিভিন্ন প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু তাদের একটি গ্রুপ সর্বদা সাপ ও কুকুরের বেশ ধারণ করে চলাফেরা করে মানব সমাজে। এটা তাদের স্থায়ী রূপ।
১৪. জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈমানের দাবী
একজন মুসলিমকে অবশ্যই জ্বীনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হবে। যদি সে জ্বীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে, তাহলে সে মুমিন থাকবে না। জ্বীনের অস্তিত্ব স্বীকার ঈমান বিল গাইব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনের প্রায় পঞ্চাশ বার জ্বীনের আলােচনা করেছেন। জ্বীনজাতির সৃষ্টি, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তাদের ইসলাম গ্রহণ, মানুষের পূর্বে তাদের সৃষ্টি করা, ইবলীস জ্বীনের অন্তর্ভুক্ত, সূরা আর রাহমানে জ্বীন ও মানুষকে এক সাথে সম্বােধন, নবী সুলাইমান (আঃ) এর আমলে জ্বীনদের কাজ-কর্ম করা, তাদের মধ্যে রাজমিস্ত্রী ও ডুবুরী থাকার কথা, তাদের রােজ হাশরে বিচার শাস্তি ও পুরস্কারের সম্মুখীন হওয়া ইত্যাদি বহু তথ্য আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উল্লেখ করেছেন। তাদের সম্পর্কে বলতে যেয়ে সূরা আল-জ্বীন নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন।তাই কোন মুসলমান জ্বীনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করার মত কাজ করতে পারে না। তেমনি জ্বীনকে রূপক অর্থে ব্যবহার করার কথাও ভাবতে পারে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা এটাই। বিভ্রান্ত ও বিলুপ্ত মু'তাযিলা ও জাহমিয়্যা সম্প্রদায় জ্বীনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
১৫. জ্বীন কি মানুষকে আছর করে?
এর উত্তর হল, অবশ্যই জ্বীন মানুষকে আছর করতে পারে। স্পর্শ দ্বারা পাগল করতে পারে। মানুষের উপর ভর করতে পারে। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তার জীবনের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যাহত করতে পারে। এটা বিশ্বাস করতে হয়। তবে এ বিষয়টি কেহ অবিশ্বাস করলে তাকে কাফের বলা যাবে না। সে ভুল করেছে, এটা বলা হবে। জ্বীন যে মানুষকে আছর করে তার কিছু প্রমাণ:আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُہُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّঅর্থঃ যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় দাড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। (সূরা আল বাকারা: ২৭৫)এ আয়াত দ্বারা যে সকল বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়: এক, যারা সুদ খায় তাদের শাস্তির ধরণ সম্পর্কে ধারণা। দুই. শয়তান বা জ্বীন মানুষকে স্পর্শ দ্বারা পাগলের মত করতে পারে। তিন, মানুষের উপর শয়তান বা জ্বীনের স্পর্শ একটি সত্য বিষয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। চার, জ্বীন-শয়তানের এ স্পর্শ দ্বারা মানুষ যেমন আধ্যাত্নিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি শারীরিক দিক দিয়েও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:وَ مَنۡ یَّعۡشُ عَنۡ ذِکۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَیِّضۡ لَہٗ شَیۡطٰنًا فَہُوَ لَہٗ قَرِیۡنٌ ﴿۳۶﴾অর্থঃ আর যে পরম করুণাময়ের যিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী। (সূরা যুখরুফ: ৩৬)এ আয়াত দ্বারা যা স্পষ্ট হল: মহান রাহমান ও রহীম আল্লাহ তাআলার জিকির থেকে বিরত থাকা জ্বীন শয়তানের স্পর্শ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটি কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন:وَاذۡکُرۡ عَبۡدَنَاۤ اَیُّوۡبَ ۘ اِذۡ نَادٰی رَبَّہٗۤ اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الشَّیۡطٰنُ بِنُصۡبٍ وَّ عَذَابٍ ﴿ؕ۴۱﴾অর্থঃ আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, ‘শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে’। (সূরা সাদ: ৪১)এ আয়াত দ্বারা আমরা স্পষ্টভাবে বুঝলাম:১. শয়তান নবী আইউব (আঃ) স্পর্শ করে শারীরিক রােগ-কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২. তিনি শয়তানের স্পর্শ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছেই প্রার্থনা করেছিলেন।আল্লাহ তা'আলা বলেন:اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا اِذَا مَسَّہُمۡ طٰٓئِفٌ مِّنَ الشَّیۡطٰنِ تَذَکَّرُوۡا فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡصِرُوۡنَ ﴿۲۰۱﴾ۚঅর্থঃ নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়। (সূরা আল আরাফ: ২০১)এ আয়াত থেকে যা বুঝে আসে তা হল: এক, যারা মুত্তাকী বা আল্লাহ ভীরু তাদেরকেও জ্বীন বা শয়তান স্পর্শ করতে পারে। তারা মুত্তাকী হয়েও জ্বীন বা শয়তানের আছরে নিপতিত হতে পারে। দুই, যারা মুত্তাকী তাদের শয়তান বা জ্বীন স্পর্শ করলে তারা আল্লাহ-কেই স্মরণ করে। অন্য কোন কিছুর দ্বারস্থ হয় না।তিন. মুত্তাকীগণ জ্বীন বা শয়তান দ্বারা স্পর্শ হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে তাদের সত্যিকার দৃষ্টি খুলে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:وَ اِمَّا یَنۡزَغَنَّکَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰہِ ؕ اِنَّہٗ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۰۰﴾অর্থঃ আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল আরাফ: ২০০)এ আয়াতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল:১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কেও জ্বীন-শয়তান আছর করতে পারে। ২. জ্বীন আছর করলে বা শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।তিন. সূরা আল ফালাক ও সূরা আন-নাস হল জ্বীন শয়তানের আছর থেকে আশ্রয় প্রার্থনার অতি মুল্যবান বাক্য। এ আয়াতের তাফসীর দ্বারা এটা প্রমাণিত।হাদীসে এসেছে-আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অবশ্যই শয়তান মানুষের রক্তের শিরা উপশিরায় চলতে সক্ষম। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম) হাদীসে আরাে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন বললেন,গত রাতে একটি শক্তিশালী জ্বীন আমার উপর চড়াও হতে চেয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল আমার নামাজ নষ্ট করা। আল্লাহ তার বিরুদ্ধে আমাকে শক্তি দিলেন। (বর্ণনায়: বুখারী, সালাত অধ্যায়)ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাসায়ীর বর্ণনায় আরাে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি তাকে ধরে ফেললাম। আছার দিলাম ও গলা চেপে ধরলাম। এমনকি তার জিহবার আদ্রতা আমার হাতে অনুভব করলাম। এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম:১. জ্বীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কেও আছর করতে চেয়েছিল।২. জ্বীনটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামাজ নষ্ট করার জন্য তার কাছে এসেছিল।৩. ইফরীত শব্দের বাংলা অর্থ হল ভূত। জ্বীনদের মধ্যে যারা দুষ্ট ও মাস্তান প্রকৃতির তাদের ইফরীত বলা হয়।৪. জ্বীন দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন ভয় পাননি। তিনি তার সাথে লড়াই করে পরাস্ত করেছেন।৫. জ্বীনদের শরীর বা কাঠামাে আছে যদিও তা সাধারণত আমাদের দৃষ্টিগােচর হয় না।
১৬. জ্বীন ও ভূতের মধ্যে পার্থক্য
জ্বীন আরবী শব্দ। বাংলাতেও জ্বীন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ভূত বাংলা শব্দ। এর আরবী হল ইফরীত, বহুবচনে আফারীত। আল কুরআনে সূরা আন-নামলের ৩৯ নং আয়াতে ইফরীত কথাটি এসেছে এভাবে:قَالَ عِفۡرِیۡتٌ مِّنَ الۡجِنِّ اَنَا اٰتِیۡکَ بِہٖ قَبۡلَ اَنۡ تَقُوۡمَ مِنۡ مَّقَامِکَ ۚ وَ اِنِّیۡ عَلَیۡہِ لَقَوِیٌّ اَمِیۡنٌ ﴿۳۹﴾অর্থঃ এক শক্তিশালী জ্বীন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত। (সুরা নামল: ৩৯)এ আয়াতে ইফরীতুম মিনাল জ্বীন অর্থাৎ জ্বীনদের মধ্যে থেকে এক ইফরীত বা ভুত .. কথাটি এসেছে। এমনিভাবে উপরে বর্ণিত হাদীসেও ইফরীতুম মিনাল জ্বীন কথাটি এসেছে। তাফসীরবিদগণ বলেছেন, জ্বীনদের মধ্যে যারা অবাধ্য, বেয়ারা, মাস্তান, দুষ্ট প্রকৃতির ও শক্তিশালী হয়ে থাকে তাদের ইফরীত বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফী গারিবিল কুরআন)ইফরীত শব্দের অর্থ বাংলাতে ভুত।অতএব দেখা গেল ইফরীত বা ভূত, জ্বীন ছাড়া আর কিছু নয়। সব ভূতই জ্বীন তবে সব জ্বীন কিন্তু ভূত নয়।
১৭. মানসিক রােগী আর জ্বীনে ধরা রােগীর মধ্যে পার্থক্য
অনেক সময় আমরা এ সমস্যায় পড়ে যাই। ঠিক করতে পারি না রােগটা কি মানসিক না-কি পাগল, না কি জনিরে আছর থেকে রােগ দেখা দিয়েছে। অনেক সময় তাই আমরা মানসিক-রােগীকে জ্বীনে ধরা রােগী বলে থাকি। তেমনি জ্বীনে ধরা রােগীকে মানসিক রােগী বলে চালাতে চেষ্টা করি। বিশেষ করে ডাক্তার ও মনােরােগ বিশেষজ্ঞরা কোনভাবেই জ্বীনের আছরকে স্বীকার করতে চান না। তারা এ জাতীয় সকল রােগীকে মানসিক রােগী বলে সনাক্ত করে থাকেন। পাগলামী-কে আরবীতে বলা হয় জুনুন। আর পাগল-কে বলা হয় মাজনূন। আরবীতে এ জুনুন ও মাজনুন শব্দ দুটো কিন্তু জ্বীন শব্দ থেকেই এসেছে। যেমন আল কুরআনে এসেছে:إِنۡ هُوَ إِلَّا رَجُلُۢ بِهِۦ جِنَّةࣱ فَتَرَبَّصُوا۟ بِهِۦ حَتَّىٰ حِینࣲঅর্থঃ “সে কেবল এমন এক লােক, যার মধ্যে পাগলামী রয়েছে। অতএব তােমরা তার সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা কর।” [সূরা মুমিনুন ২৩ঃ২৫]এ কথাটি নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের লােকেরা তার সম্পর্কে বলেছিল। এ আয়াতে জ্বীন্নাতুন শব্দের অর্থ হল পাগলামী। কাজেই কাউকে পাগলামীর মত অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখলে সেটা যেমন জ্বীনের আছরের কারণে হতে পারে, আবার তা মানসিক রােগের কারণেও হতে পারে। তবে এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা অভিজ্ঞতার আলােকে কিছু বিষয় নির্ধারণ করেছেন, যার মাধ্যমে মানসিক রােগী আর জ্বীনে -ধরা রােগীর মধ্যে পার্থক্য করা যায়। এগুলাে হল: ১. জ্বীনে ধরা রােগী কিছুক্ষণের জন্য বেহুশ হয়ে যায়। মানসিক রােগী বেহুশ হয়ে পড়ে না। ২. কখনাে কখনাে জ্বীনে -ধরা রােগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয়। দাতে খিল লেগে যায়। মানসিক রােগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয় না। ৩. জ্বীনে ধরা রােগী প্রায়ই সপ্নে সাপ, কুকুর, বিচ্ছু, বানর, শিয়াল, ইদুর ইত্যাদি দেখে থাকে। কখনাে কখনাে সপ্নে দেখে সে অনেক উচু স্থান থেকে পড়ে যাচ্ছে। ৪. জ্বীনে ধরা রােগীর সর্বদা ভীতু ভাব থাকে। সর্বদা তার ভয় লাগে। মানসিক রােগীর তেমন ভয় থাকে না। ৫. জ্বীনে ধরা রােগী নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির ইত্যাদি পছন্দ করে না। বরং এগুলাে তার অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়। ৬. জ্বীনে ধরা রােগী কখনাে কখনাে ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন ভঙ্গিতে কথা বলে। ৭. জ্বীনে ধরা রােগী অধিকাংশ সময় স্বাভাবিক থাকে। মাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করে। ৮. জ্বীনে ধরা রােগী থেকে অনেক সময় আশ্চর্যজনক বিষয় প্রকাশ হয়ে থাকে। যেমন অল্প সময়ে সে বহু দূরে চলে যায়। গাছে উঠে সরু ডালে বসে থাকে ইত্যাদি।৯. জ্বীনে ধরা রােগীর কাছে স্বামী, ঘর-সংসার, স্ত্রী-সন্তানদের ভাল লাগে না। ১০. জ্বীনে ধরা রােগীর উপর যখন জ্বীন চড়াও হয় তখন ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তুললে ছবি ধোয়ার মত অস্পষ্ট হয়। দেখা গেছে আশে পাশের সকলের ছবি স্পষ্টভাবে উঠেছে কিন্তু রােগীর ছবিটি ধোয়াচ্ছন্ন। এটা কারাে কারাে নিজস্ব অভিজ্ঞতা। মনে রাখতে হবে অভিজ্ঞতা সর্বদা এক রকম ফলাফল নাও দিতে পারে। কিন্তু বড় সমস্যা হবে তখন, যখন রােগীটি নিজেকে জ্বীনে ধরা বলে অভিনয় করে কিন্তু তাকে জ্বীনে ও আছর করেনি আর সে মানসিক রােগীও নয়। সে তার নিজস্ব একটি লক্ষ্য পূরণের জন্য জ্বীনে ধরার অভিনয় করছে। এ অবস্থায় অভিভাবকের করণীয় হল, তারা তাকে তার দাবী পুরণের আশ্বাস দেবে। তাহলে তার জ্বীন ছেড়ে যাবে। পরে তার দাবীটি যৌক্তিক হলে পূরণ করা হবে আর অযৌক্তিক হলে পূরণ করা হবে না। এরপর যদি সে আবার জ্বীনে ধরার অভিনয় করে তাহলে তাকে জ্বীনে ধরা রােগী বলে আর বিশ্বাস করার দরকার নেই। অনেক সময় শারিরিক শাস্তির ভয় দেখালে এ ধরনের বাতিল জ্বীন চলে যায়।
১৮. কি কারণে জ্বীন চড়াও হয়
কিছু বিষয় রয়েছে যার উপস্থিতির কারণে মানুষকে জ্বীনে আছর করে-১. প্রেম। কোন পুরুষ জ্বীন কোন নারীর প্রেমে পড়ে যায়, অথবা কোন নারী জ্বীন যদি কোন পুরুষের প্রেমে পড়ে তাহলে জ্বীন তার ঐ প্রিয় মানুষটির উপর আছর করে। ২. কোন মানুষ যদি কোন জ্বীনের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে বা কষ্ট দেয় তাহলে অত্যাচারিত জ্বীনটি সেই মানুষের উপর চড়াও হয়। যেমন জ্বীনের গায়ে আঘাত করলে, তার গায়ে গরম পানি নিক্ষেপ করলে, কিংবা তার খাদ্য-খাবার নষ্ট করে দিলে জ্বীন সেই মানুষটির উপর চড়াও হয়। ৩. জ্বীন খামােখা জুলুম-অত্যাচার করার জন্য মানুষের উপর চড়াও হয়। তবে এটি পাঁচটি কারণে হতে পারে: (ক) অতিরিক্ত রাগ(খ) অতিরিক্ত ভয়(গ) যৌন চাহিদা লােপ পাওয়া(ঘ) মাত্রাতিরিক্ত উদাসীনতা।(ঙ) নােংড়া ও অপবিত্র থাকা।কারাে মধ্যে এ স্বভাবগুলাে থাকলে জ্বীন তাকে আছর করে অত্যাচার করার সুযােগ পেয়ে যায়।
১৯. জ্বীনের আছরের প্রকারভেদ
মানুষের উপর জ্বীন চড়াও হওয়ার ধরনটি চার প্রকারের হতে পারে-১. জ্বীন মানুষের পুরাে শরীরে প্রভাব বিস্তার করে কিছু সময়ের জন্য। ২. আংশিকভাবে শরীরের এক বা একাধিক অংশে সে প্রভাব বিস্তার করে কিছু সময়ের জন্য। যেমন হাতে অথবা পায়ে কিংবা মুখে। ৩. স্থায়ীভাবে জ্বীন মানুষের শরীরে চড়াও হতে পারে। এর মেয়াদ হতে পারে অনেক দীর্ঘ। চার, মানুষের মনের উপর কিছু সময়ের জন্য প্রভাব বিস্তার করে। মানুষ যখন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা শুরু করে তখন চলে যায়।
পরিচ্ছেদ: জ্বীন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
২০. যে সকল আলামত ঝাড়ফুঁক করার পূর্বে রোগীর মাঝে দেখা যায়
নিশ্চয় নজরলাগা, জাদু ও জ্বীনের আসরের কিছু আলামত ও উপসর্গ রয়েছে যা রোগীর মাঝে দেখা যায়। এগুলো একটি অপরটির সদৃশ্যপূর্ণ যার পার্থক্য করা বড় কঠিন। রোগীর মধ্যে এর সবগুলোই এক সঙ্গে পাওয়া শর্ত নয়। বরং কখনো কিছু আলামত প্রকাশ পেয়ে থাকে। আবার কখনো শারীরিক বা মানসিক রোগের কারণে হয়ে থাকে, যার নজরলাগা বা জাদু কিংবা জ্বীনের আসরের সাথে কোন সম্পর্ক থাকে না। এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। উপসর্গ ও আলামতগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: যে সকল আলামত ঝাড়ফুঁক করার পূর্বে রোগীর মাঝে দেখা যায়:১. হঠাৎ করে কোন ভালবাসার জিনিস ঘৃণা বা ঘৃণীত জিনিস ভালাবাসায় পরিণত হওয়া।২. সুস্পষ্ট কোন ডাক্তারী কারণ ছাড়াই বিভিন্ন ধরণের ও বেশি বেশি রোগ হওয়া।৩. অন্তরে সঙ্কীর্ণতা অনুভব করা, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের সালাতের পর।৪. কাজ করতে অপছন্দ, সমাজ ও লেখাপড়ার প্রতি অনীহা এবং একাকী থাকা পছন্দ করা।৫. বিভিন্ন কাজ করেছে মনে করা কিন্তু সে আসলে করেনি এমন হওয়া।৬. চেহারা ফ্যাকাশে হওয়া অথবা হলুদ হওয়া কিংবা কোন কারণ জানা ছাড়াই শরীরে নীল বা বাদামী রঙ্গের দাগ প্রকাশ পাওয়া।৭. বারবার মাথা ব্যথা বা হঠাৎ করে জ্বর হওয়া।৮. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকা এবং দু’জনের মাঝে ঘৃণা বাড়তেই থাকা। অথবা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তুচ্ছ ও সামান্য কারণে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া।৯. জাগ্রত অবস্থায় বিভিন্ন খেয়ালের স্বপ্ন দেখার ধারণা হওয়া।১০. অলসতা ও নিষ্ক্রিয়তা, সর্বদা ক্লান্ত অনুভব করা এবং খানাপিনার রুচি না থাকা।১১. চলতে বারবার ভারসাম্য না থাকা অনুভব করা।১২. দুই কানে বা এক কানে বারবার শো শো আয়াজ শুনা।১৩. মহিলাদের নিচ পেটে ব্যথা হওয়া বা রক্ত খরণ হওয়া, বিশেষ করে মাসিক চলা কালিন। অথবা বারবার ইস্তেহাযা তথা প্রদর-লিকুরিয়া স্ত্রীরোগ হওয়া।১৪. ছোট কারণে ভিষণ রাগ হওয়া।১৫. সবসময় ঘুমের ইচ্ছা হওয়া এবং গভীর ঘুম হতে জাগার পর কষ্ট পাওয়া।১৬. কে যেন তার নাম ধরে ডাকতেছে এমন শুনা কিন্তু কাউকে দেখে না।১৭. পিঠের শেষ ভাগে বা মধ্যখানে কিংবা দুই কাঁধের মাঝে সর্বদা চলমান ব্যথা অনুভব করা।১৮. চর্ম এলার্জি যা চুলকায় এবং পেট ফুলে-ফেঁপে ও কখনো কখনো শরীরে দানা প্রকাশ পাওয়া।১৯. বারবার কঠিৎ আমাশা হওয়া অথবা পেটে বেশি বেশি গ্যাস কিংবা অম্ল বা জ্বালা-পুড়া অথবা স্থায়ী কোষ্টকাঠিন্য হওয়া।২০. দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া ও দেখাতে সুস্পষ্ট বাঁকা দেখা।২১. সবসময় দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, আতঙ্ক ও ভিষণ ভয় পাওয়া।২২. মনের ভিতর কঠিন শক্ত ওয়াসওয়াসা (সন্দেহ-সংশয়) জাগা।২৩. সর্বদা মন-মগজ চঞ্চল ও বেশি বেশি ভুলে যাওয়া।২৪. আল্লাহ্র জিকিরে বাধা এবং এবাদত করতে ঘৃণা সৃষ্টি হওয়া।২৫. অস্বাভাবিক ঘামের গন্ধ বা আশ্চর্য ধরণের দুর্গন্ধ কিংবা এমন গন্ধ যা রোগী পায় কিন্তু পাশের অন্য কেউ পায় না। এ ছাড়া এর সঙ্গে বেশি বেশি ঘাম বের হওয়া কিংবা বারবার পেশাব হওয়া।২৬. যৌনশক্তি দুর্বল হওয়া ও স্বামী কিংবা স্ত্রীর পক্ষ থেকে সহবাসের অনীহা প্রকাশ করা কষ্টদায়ক জীবজন্তু দেখা। যেমন: কালো সাপ বা কালো কুকুর কিংবা কালো বিড়াল। এছাড়া অন্য কিছু যেমন: উট কিংবা কবরস্থান বা ময়লা ফেলার স্থান বা উপর থেকে পড়ে যাওয়া অথবা গভীর পানিতে ডুবে যাওয়া ইত্যাদি দেখা।২৮. ঘুমের ঘরে বারবার কথা বলা, শব্দ করে দাঁত কিড়মিড় করা, দীর্ঘশ্বাস ফেলা ও হঠাৎ করে কান্না করা।২৯. ঘুমের ঘরে বারবার বুকের উপরে প্রচুর ভারী অনুভব করা।৩০. ঘুমের ঘরে বারবার চলাফিরা করা কিংবা বারবার অনিদ্রা অথবা ঘুম হতে আতঙ্কিত অবস্থায় দাড়ানো।
২১. যে সকল উপসর্গ ও লক্ষণ ঝাড়ফুঁক করার সময় দেখা যায়
১. মাটিতে পড়ে যাওয়া অথবা খিচুনি হওয়া। ২. বুকের মধ্যে সঙ্কিৰ্ণতা অনুভব করা। ৩. চোখের পশম দ্রুত নড়াচড়া করা। ৪. কঠিনভাবে চিৎকার করা। ৫. পেটের ব্যথা ও কুরকুর শব্দ করা কিংবা পেট ফুলে যাওয়া। ৬. আওয়াজ পরিবর্তন হওয়া বা আশ্চর্য শব্দ বের হওয়া। ৭. গলার কোন একটি রগ ফুলে যাওয়া। ৮. তন্দ্রা বা ঘুম চলে আসা। ৯. কোন কারণ ছাড়াই হাসা বা কাঁদা। ১০. মাথা ঘুরে উঠা বা শরীর মেজমেজ করা কিংবা বমি হওয়া এবং অস্বাভাবিক আকৃতি ও রঙ্গের জিনিস বমির সাথে বের হওয়া। ১১. প্রচুর মাথা ব্যথা হওয়া।১২. শরীরের পার্শ্ব ভারি লাগা কিংবা অবশ হওয়া অথবা খোচা মারা মনে করা বা বেশি তাপ কিংবা বেশি ঠাণ্ডা হওয়া।১৩. শরীরের পার্শ্ব থেকে কোন অংশ খসে পড়া অনুভব করা।১৪. শরীরের বিভিন্ন ধরণের ও অস্থায়ী ব্যথা হওয়া। ১৫. শরীরের কোন কোন অংশ অংশ কাঁপা। ১৬. বেশি বেশি কফ বের হওয়া। ১৭. দৃষ্টিতে সুস্পষ্টভাবে বাঁকা দেখা বা শরিষার ফুল দেখা। ১৮. নিজের অজান্তে কথা বলা। ১৯. বেশি বেশি বিশেষ করে পিঠে ঘাম বের হওয়া। ২০. কোন সর্দি ইত্যাদি ছাড়াই চোখ থেকে অশ্র বা নাক হতে পানি বের হওয়া। ২১. বারবার হাই উঠা বা দীর্ঘশ্বাস ফেলা। ২২. শরীরে চুলকানি বা দানা কিংবা লাল হওয়া। ২৩. নিজে ঝাড়ফুঁকের সময় কঠিন অপারগতা অনুভব এবং পূর্ণ করতে অনিচ্ছা হওয়া। ২৪. সমস্ত শরীরে কম্পন শুরু হওয়া।২৫. বেহুশ হওয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাওয়া। ২৬. চেহারা কালো হওয়া এবং রোগী বমি করলে চেহারা আলোকিত হওয়া। ২৭. পাকস্থলী থেকে মুখ দ্বারা প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হওয়া। ২৮. হঠাৎ করে হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং বাড়তেই থাকা। ২৯. দুই চোখ বন্ধ করা বা বড় বড় চোখে দেখা। ৩০. কুরআনের কিছু আয়াত দ্বারা দম করা পানি পান করার সময় মুখে তিতা অনুভব করা।
পরিচ্ছেদ: জ্বিনের আক্রমণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষার উপায়
২২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে ও ইসলামী শরিয়তের অনুসরণ করতে হবে
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন:وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌঅর্থঃ আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী। (সূরা যুখরুফ: ৩৬)হাদীসে এসেছে -রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন ঘুমিয়ে যায় শয়তান তখন তার মাথার কাছে বসে তিনটি গিরা লাগায়। প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় একটি কথা বলে: তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও। যখন সে নিদ্রা থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। এরপর যখন সে অজু করে তখন আরেকটি গিরা খুলে যায়। এরপর যখন নামাজ পড়ে তখন শেষ গিরাটি খুলে যায়। ফলে সে সারাদিন কর্মতৎপর ও সুন্দর মন নিয়ে দিন কাটায়। আর যদি এমন না করে, তাহলে সারাদিন তার কাটে খারাপ মন ও অলসভাব নিয়ে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল:১. ঠিকমত অজু করলে, নামাজ আদায় করলে শয়তানের চড়াও থেকে মুক্ত থাকা যায়।২. খারাপ মন নিয়ে থাকা ও অলসতা শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল। ৩. রীতিমত নামাজ আদায় করলে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে। কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। অলসতা দূর হয়ে যায়।৪. ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে অজু গোসল করার আগেই আল্লাহর জিকির করা উচিত। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার নির্দিষ্ট দোয়া আছে। এটি পাঠ করা সুন্নত। এতে শয়তানের কুপ্রভাব দূর হয়ে যায়।
২৩. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পাঠ করা
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবে, بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি, লা- 'হাওলা ওয়ালা-ক্বুওয়্যাতা ইল্লা- বিল্লাহ।অর্থঃ আল্লাহরই নামে আল্লাহর উপর নির্ভর করে বের হলাম। আর তার সামর্থ ব্যতীত পাপ থেকে বাচাঁর উপায় নেই এবং তার শক্তি ব্যতীত ভাল কাজ করা যায় না।তখন তাকে বলা হয়, তোমার জন্য এটা যথেষ্ট, তোমাকে সুরক্ষা দেয়া হল এবং তোমাকে পথের দিশা দেয়া হল। আর শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায়। (বর্ণনায়: আবু দাউদ ও তিরমিজী)
২৪. পেশাব পায়খানাতে যাওয়ার সময় দোয়া পাঠ করা
হাদীসে এসেছে-রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন পেশাব পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন বলতেন -بِسْمِ اللَّهِ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছঅর্থঃ আল্লাহ্র নামে। হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: এ সকল পেশাব পায়খানার স্থানে জ্বীন শয়তান থাকে। অতএব তোমাদের কেহ যখন এখানে আসে সে যেন বলে, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছ। (বর্ণনায়: ইবনে হিব্বান)
২৫. প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করা
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্রি মা-খালাক্বঅর্থঃ আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে। (বর্ণনায়: মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ)অন্য বর্ণনায় এসেছে,এক ব্যক্তি নবী কারীম (ﷺ) এর কাছে এসে বলল, গত রাতে আমাকে একটি বিচ্ছুতে দংশন করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যখন সন্ধ্যা হবে তখন তুমি বলবে, أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্রি মা-খালাক্বতাহলে তোমাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারত না। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৯)অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- একটি জ্বীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আছর করতে চেয়েছিল। তার সাথে আরেকটি জ্বীন ছিল। জিব্রাইল এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আপনি এ বাক্যটি বলুন তাহলে ওরা আপনাকে কিছু করতে পারবে না। (বর্ণনায়: ইবনে আবি হাতেম) এমনিভাবে কেউ যখন কোন স্থানে যায় আর এ দোয়াটি পাঠ করে তাহলে তাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন স্থানে অবতরণ করল অতঃপর বলল: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্রি মা-খালাক্বঅর্থঃ আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে। তখন তাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ সে ওখানে অবস্থান করবে। (বর্ণনায়: মুসলিম, খাওলা বিনতে হাকীম থেকে)
২৬. প্রতিদিন নিদ্রা গমনকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা
হাদীসে এসেছে -قلت: يا رسول اللَّه شكا حاجة شديدة وعيالا ، فرحمته فخليت سبيله ، قال: ( أما إنه كذبك ، وسيعود ) . فرصدته الثالثة ، فجاء يحثو من الطعام ، فأخذته فقلت: لأرفعنك إلى رسول اللَّه ، وهذا آخر ثلاث مرات تزعم لا تعود ، ثم تعود ، قال: دعني أعلمك كلمات ينفعك اللَّه بها ، قلت ماআবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে যাকাতের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব দিলেন। দেখলাম, কোন এক আগন্তুক এসে খাদ্যের মধ্যে হাত দিয়ে কিছু নিতে যাচ্ছে। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, আমি খূব দরিদ্র মানুষ। আমার পরিবার আছে। আমার অভাব মারাত্নক। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত রাতের আসামীর খবর কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার প্রচন্ড অভাবের কথা আমার কাছে বলেছে। আমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখবে সে আবার আসবে।আমি এ কথায় বুঝে নিলাম সে আবার আসবেই। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সে আবার আসবে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। সে পরের রাতে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত দিয়ে খুঁজতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি খুব অসহায়। আমার পরিবার আছে। আমি আর আসবো না। আমি এবারও তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম, তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার চরম অভাবের কথা আমার কাছে বলেছে। তার পরিবার আছে। আমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখো, সে আবার আসবে।তৃতীয় দিন আমি অপেক্ষায় থাকলাম, সে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুঁজতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে যাবো। তুমি তিন বারের শেষ বার এসেছ। বলেছ, আসবে না। আবার এসেছ। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেবো যা তোমার খুব উপকারে আসবে। আমি বললাম কী সে বাক্যগুলো? সে বলল, যখন তুমি নিদ্রা যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমাকে কিছু উপকারী বাক্য শিক্ষা দিয়েছে, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে সে কী শিক্ষা দিয়েছে? আমি বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি নিদ্রা যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে যদিও সে মিথ্যাবাদী। হে আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত তিন রাত যার সাথে কথা বলেছো তুমি কি জানো সে কে?আবু হুরাইরা (রাঃ) বলল, না, আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে হল শয়তান। (বর্ণনায়: বুখারী)এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:১. জনগণের সম্পদ পাহাড়া দেয়া ও তা রক্ষা করার জন্য আমানতদার দায়িত্বশীল নিয়োগ দেয়া কর্তব্য। আবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) ছিলেন একজন বিশ্বস্ত আমানতদার সাহাবী।২. আবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) দায়িত্ব পালনে একাগ্রতা ও আন্তরিকতার প্রমাণ দিলেন। তিনি রাতেও না ঘুমিয়ে যাকাতের সম্পদ পাহাড়া দিয়েছেন।৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এটি একটি মুজেযা যে, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও আবু হুরাইরা (রাঃ)র কাছে বর্ণনা শুনেই বুঝতে পেরেছেন শয়তানের আগমনের বিষয়টি।৪. দরিদ্র অসহায় পরিবারের বোঝা বাহকদের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের দয়া ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ দয়াকে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) কে বললেন না, তাকে কেন ছেড়ে দিলে? কেন দয়া দেখালে?৫. সাহাবায়ে কেরামের কাছে ইলম বা বিদ্যার মূল্য কতখানি ছিল যে, অপরাধী শয়তান যখন তাকে কিছু শিখাতে চাইল তখন তা শিখে নিলেন ও তার মূল্যায়নে তাকে ছেড়েও দিলেন।৬. খারাপ বা অসৎ মানুষ ও জ্বীন শয়তান যদি ভাল কোন কিছু শিক্ষা দেয় তা শিখতে কোন দোষ নেই। তবে কথা হল তার ষড়যন্ত্র ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, তবে সে মিথ্যুক। এ বিষয়টিকে শিক্ষার একটি মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করা যায়।৭. জ্বীন শয়তান মানুষের খাদ্য-খাবারে হাত দেয়। তা থেকে গ্রহণ করে ও নষ্ট করে।৮. আয়াতুল কুরসী একটি মস্তবড় সুরক্ষা। যারা আমল করতে পারে তাদের উচিত এ আমলটি ত্যাগ না করা। রাতে নিদ্রার পূর্বে এটি পাঠ করলে পাঠকারী সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকবে ও জ্বীন শয়তান কোন কিছু তার উপর চড়াও হতে পারবে না।৯. আয়াতুল কুরসী হল সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং এই আয়াত:اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُঅর্থঃ আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।
২৭. খাবার সময় বিসমিল্লাহ বলা ও ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পাঠ করা
হাদীসে এসেছে-যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করার সময় ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর জিকির (বিসমিল্লাহ্ বলে) করে তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার খাবার নেই ও রাত্রি যাপনও নেই। আর যখন ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার রাত যাপন হবে। আর যখন খাবার সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার রাত যাপন ও খাবার দুটোরই ব্যবস্থা হল। (বর্ণনায়: মুসলিম হাদীস নং ২০১৮)ঘরে প্রবেশের সময় নির্দিষ্ট দোয়া আছে সেটি পাঠ করবে। দোয়া মুখস্থ না থাকলে কমপক্ষে বিসমিল্লাহ্ . . বলে ঘরে প্রবেশ করবে। এমনিভাবে খাবার সময় বিসমিল্লাহ . . বলে খাওয়া শুরু করবে।
২৮. হাই তোলার সময় মুখে হাত দেয়া
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,إذا تثاءب أحدكم فليمسك على فيه ، فإن الشيطان يدخلযখন তোমাদের কেউ হাই তোলে তখন সে যেন তার মুখে হাত দিয়ে বাধা দেয়। কারণ হাই তোলার সময় শয়তান প্রবেশ করে। (বর্ণনায়: মুসলিম ও আবু দাউদ)
২৯. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা
খারাপ জ্বীন শয়তান অপবিত্র ও নাপাক স্থানে বিচরণ করে থাকে। জ্বীনের আছর থেকে বাঁচতে সর্বদা অপবিত্র ময়লাযুক্ত স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে। বাচ্চাদের ময়লা আবর্জনা ও নোংড়া অবস্থা থেকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।যেমন: যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, এ সকল প্রস্রাব পায়খানার নোংড়া স্থানগুলোতে শয়তানরা উপস্থিত থাকে। যখন তোমাদের কেহ এখানে আসবে তখন যেন সে বলে,بِسْمِ اللَّهِ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছঅর্থঃ আল্লাহ্র নামে। হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে। [বর্ণনায়: আবু দাউদ, বুখারীঃ ১৪২]অতএব আমরা এ হাদীস থেকে বুঝলাম জ্বীন, ভূত, শয়তান নোংড়া স্থানে অবস্থান করে। এ সকল নোংড়া স্থান থেকে সকলের দূরে থাকা উচিত।শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, সাধারণত জ্বীনের ময়লা আবর্জনা, মল-মুত্র ত্যাগের স্থান ডাষ্টবিন ও কবর স্থানে অবস্থান করে। (মজমুআল ফাতাওয়া)
৩০. ঘরে আল কুরআন তেলাওয়াত করা বিশেষ করে সূরা আল বাকারা পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা ঘর-কে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা আল বাকারা তেলাওয়াত করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে দূরে থাকে। (মুসলিম: ৭৮০)এ হাদীস থেকে আমরা ঘরে আল কুরআন তেলাওয়াত করার নির্দেশ জানলাম। ঘরকে কবরে পরিণত করবে না, এর মানে হল ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করবে। আর সূরা আল বাকারা ঘরে তেলাওয়াত করলে শয়তান ঘর থেকে পালিয়ে যায়। আমরা জানি সূরা আল বাকারাতেই রয়েছে আয়াতুল কুরসী।
৩১. কোন গর্তে পেশাব-পায়খানা না করা
হাদীসে এসেছে - রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞস করা হল এ নিষেধের কারণ কি? তিনি বললেন, বলা হয়ে থাকে গর্ত হল জ্বীনদের থাকার জায়গা। (বর্ণনায়: আবু দাউদ)
৩২. ঘরে কোন সাপ দেখলে তা মারতে তাড়াহুড়ো না করা
যদি ঘরে কোন সাপ দেখা যায় তবে সাথে সাথে তাকে না মেরে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা। তাকে ঘর ছেড়ে যেতে বলা। তারপর যদি না যায় তাহলে মেরে ফেলা।হাদীসে এসেছে -হিশাম ইবনে যাহরার মুক্ত দাস আবু সায়েব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সায়ীদ খুদরি (রাঃ) এর সাথে দেখা করার জন্য গেলাম। তাকে নামাজ পড়া অবস্থায় পেলাম। আমি তার নামাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলাম। এমন সময় তার ঘরের খাটের নীচে কিছু একটা নড়াচড়া করার শব্দ পেলাম। চেয়ে দেখি একটি সাপ। আমি সেটাকে মেরে ফেলতে উঠে দাঁড়ালাম। আবু সায়ীদ (রাঃ) আমাকে বসতে ইশারা দিলেন। যখন নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে বাড়ীর একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বললেন, তুমি কি এ ঘরটি দেখছো? আমি বললাম হ্যাঁ, দেখছি। তিনি বললেন, এ ঘরে বসবাস করত একজন যুবক। সে নববিবাহিত ছিল। একদিন সে খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে যোগ দিল। যেহেতু সে নব বিবাহিত যুবক, তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে অনুমতি চেয়ে বলল, হে রাসূল! আমি নববিবাহিত। আমাকে আমার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে অনুমতি দিলেন, আর বললেন, সাথে অস্ত্র নিয়ে যেও। আমি তোমার উপর বনু কুরাইযার হামলার আশঙ্কা করছি। যুবকটি তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। ঘরে পৌছে দেখল, তার স্ত্রী ঘরের বাহিরে দরজার দু পাটের মাঝে দাঁড়ানো। এ অবস্থা দেখে তার আত্নসম্মান বোধে আঘাত লাগল। সে বর্শা দিয়ে তাকে আঘাত করতে উদ্যত হল। স্ত্রী বলল, তাড়াহুড়ো করো না। আগে ঘরে প্রবেশ করে দেখ তোমার ঘরের মধ্যে কি? সে ঘরে ঢুকে দেখল, তার বিছানায় একটি সাপ গোল হয়ে শুয়ে আছে। যুবকটি বর্শা দিয়ে সাপের গায়ে আঘাত করল। এরপর এটাকে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসল। সাপটি বর্শার মাথায় ছটফট করছিলো। আর যুবকটি তখন মরে পড়ে গেল। কেহ জানে না, কে আগে মরেছে, যুবকটি না সাপটি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করা হল। তিনি বললেন, মদীনাতে কিছু জ্বীন আছে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। যদি তোমাদের কেহ তাদের কাউকে দেখে তাহলে তাকে তিন দিনের সময় দেবে। তিন দিনের পরও যদি তাকে দেখা যায় তাহলে তাকে হত্যা করবে। কারণ, সে শয়তান। (বর্ণনায়: মুসলিম, সাপ হত্যা অধ্যায়।)এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:১. সাহাবায়ে কেরাম অন্যকে ইসলামী বিধি-বিধান ও নবী কারীম (ﷺ) এর সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে।২. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মতের প্রতি কত দয়াশীল ছিলেন যে, যুদ্ধকালীন সময়ে কেউ স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তা তিনি সাথে সাথে দিয়ে দিতেন। কখনো দেখা গেছে তিনি তার সাহাবীদের নিজের পক্ষ থেকেই জিজ্ঞেস করতেন, কত দিন হল তুমি বিবাহ করেছ? তোমার বাড়ীতে কে আছে? তোমাকে ছুটি দিলাম তুমি বাড়ীতে স্ত্রীর কাছে যাও। ৩. ঘরে কোন সাপ দেখলে সাথে সাথে হত্যা করতে নেই। হতে পারে সে জ্বীন। তবে যদি সাপ দেখে বা এর আচার-আচরণ, আলামত দেখে বুঝে আসে এটা জ্বীন নয়, সাপ। তখন হত্যা করা দোষণীয় নয়। আলোচ্য হাদীসে দেখুন, সাপটি বিছানার উপর শুয়ে ছিল। যদি সে সাপ হয়, তাহলে বিছানার উপর তার কী প্রয়োজন? সে ইঁদুর বা পোকা-মাকর খুঁজবে।৪. ঘরে এ রকম সন্দেহ জনক সাপ দেখলে তাকে উচ্চস্বরে ঘর ছেড়ে যেতে বলবে। এভাবে তিন দিন বলার পরও সে না গেলে তাকে হত্যা করে ফেলবে।৫. বনে জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে, রাস্তায় কোন সাপ দেখলে জ্বীন মনে করার কোন কারণ নেই। তাকে মেরে ফেলতে হবে। শুধু ঘরের সাপকে জ্বীন বলে সন্দেহ করা যায়। একটি সহীহ হাদীসে এটি স্পষ্ট বলা আছে।৬. সাপটি জ্বীন ছিল বিধায় সে নিজেকে হত্যা করার অপরাধে হত্যাকারীকে আঘাত করে হত্যা করেছে। কিন্তু সাপটি কিভাবে যুবকটিকে আঘাত করল তা কেউ দেখেনি।৭. সাপটি মুসলিম জ্বীন ছিল বলে রাসূল (ﷺ) এর কথায় ইশারা পাওয়া যায়। সে শুরুতেই তাকে আঘাত করেনি। বা তার স্ত্রীর কোন ক্ষতি করেনি।৮. রাসূলুল্লা (ﷺ) ছিলেন রহমাতুললিল আলামীন বা সৃষ্টিকুলের জন্য করুণা। তাই তিনি জ্বীনের প্রতিও করুণা-রহমত দেখিয়েছেন। এ হাদীসটি ছাড়াও অন্যান্য অনেক হাদীস রয়েছে এ বিষয়ে।৯. কারণ সে শয়তান রাসলুল্লাহ (ﷺ) এর এ কথার অর্থ হল, সে জ্বীন নয়, সে প্রাণীদের মধ্যে দুষ্ট ও ক্ষতিকর। তাকে হত্যা করো।১০. জ্বীনকে অযথা হত্যা করা অন্যায়।
৩৩. স্ত্রীর সাথে মিলনের সময় দোয়া পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন নিজ স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে ইচ্ছে করে তখন যদি বলে -بِاسْمِ اللَّهِ اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَاউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি, আল্লা-হুম্মা, জান্নিব্নাশ্ শাইত্বা-না ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বা-না মা রাযাক্ক্তানা-অর্থঃ আল্লাহ্র নামে, হে আল্লাহ্, আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যা রিযক দিবেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন।তাহলে এ মিলনে সন্তান জন্ম নিলে সে সন্তানকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
৩৪. সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদেরকে বাহিরে বের হতে না দেয়া
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,যখন রাত্রি ডানা মেলে অথবা তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও, তখন সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখবে। বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে। কারণ, তখন শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যায় তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারো। আর দরজা বন্ধ করে দেবে। আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। জেনে রাখো, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। (বর্ণনায়: বুখারী)এ হাদীস থেকে আমরা নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো জানতে পারলাম:১. সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার নির্দেশ।২. সন্ধ্যার আগে বাচ্চাদের ঘরে আসার জন্য বলতে হবে। তখন তাদের ঘর থেকে বের হতে বারণ করবে।৩. সন্ধ্যার কিছু পরে এ আশঙ্কা থাকে না। তখন বাচ্চাদের বের হতে বারণ নেই।৪. সন্ধ্যার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার নির্দেশ।৫. আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, জ্বীন বা শয়তান ঘরের বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।৬. দরজা খোলা ও বন্ধের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৩৫. জ্বীনদের কাছে আশ্রয় চাওয়া বা তাদের সাহায্য না নেয়া
মানুষ যদি জ্বীনদের কাছে কোন কিছু চায় বা তাদের সাহায্য গ্রহণ করে তাহলে তাদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। তারা মানুষের উপর চড়াও হতে উৎসাহ পায়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِنَ الْإِنْسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًاঅর্থঃ আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জ্বীনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল। (সূরা আল জ্বীন: ৬)অনেক ওঝা ফকীর-কে দেখা যায় তারা তাবিজ-তদবীরের ক্ষেত্রে জ্বীনের সাহায্য নেয়, এটা অন্যায়।
পরিচ্ছেদ: জ্বিন দ্বারা সংঘটিত রোগ ও ক্ষতির ধরণ
৩৬. ভুমিকা
জ্বিন মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি ও ক্ষতি করতে পারে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, মেজাজ, দেহ, সম্পদ, অবস্থান, ব্যবসা, সম্পর্ক ও পড়ালেখার ক্ষতি করতে সক্ষম।আমরা এখানে যে অসুস্থতার কথা আলোচনা করব, তা মানুষের ওপর জ্বিনের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ অথবা ডাকিনীবিদের কারণে সংঘটিত হতে পারে। আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এসব রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করব। এসব অসুস্থতা হলো নিম্নরূপঃ১. তীব্র ভয়২. মানসিক ও স্নায়ু রোগ (উন্মাদ রোগ, বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা, মৃগীরোগ, ওয়াসওয়াসা, ব্যক্তিত্বের ঘাটতি)৩. শারীরিক অসুস্থতা (যেসব অসুস্থতা মানুষের তৈরি ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করা যায় না, এবং যার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানেও কোনো নিরাময় নেই)৪. হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিবিভ্রম৫. মানুষের মাঝে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে শত্রুতা ও বিভাজন তৈরি করা, যেমন-স্বামী ও স্ত্রী, ব্যবসায়িক অংশীদার, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে৬. স্ত্রীরোগ (বন্ধ্যাত্ব, অতিরিক্ত রক্তপাত, অনিয়মিত রজঃচক্র, ইনফেকশন ইত্যাদি)৭. যৌন সমস্যা (অক্ষমতা, অপরিণত বয়সে বীর্যপাত)৮. মানুষের বাড়িঘর ও বস্তুগত সম্পদের ক্ষতি করা (ঘরের আসবাবপত্র চারদিকে ছুঁড়ে ফেলা, ঘরের চালে পাথর নিক্ষেপ করা)
৩৭. তীব্র ভয়
জ্বিনের কারণে ভয় পাওয়ার দুটি দিক রয়েছে। একটি সঠিক, অন্যটি সঠিক নয়। সঠিক দিকটি হল, কিছু জ্বিন মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এর মাধ্যমে তারা মানুষকে বিভিন্ন কণ্ঠস্বর শোনায়, কিছু দেখায় এবং তার মধ্যে এমন একটি অনুভূতি তৈরি করে দেয় যে, তার মনে হবে কেউ যেন তার পিছু পিছু আসছে বা তাকে অনুসরণ করছে এবং এই অনুভূতি তৈরির মাধ্যমে তারা মানুষকে তার নিজ বাড়িতেও ভয় পাইয়ে দেয়। এই ভয় দূর করার জন্য নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে, সকালে ও সন্ধ্যায় আযকার করতে হবে, আর এই ভয়ের কারণে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অনুসরণ করতে হবে বিশেষ কর্মসূচি।আর ভুল দিকটি হল জ্বিনকে নিয়ে মানুষের মনে প্রোথিত গভীর আতঙ্ক। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব ভয় যাচাই করার কোনো উপায় নেই। তাই এখন আমরা একটি রূপরেখা তৈরি করব যে, কেন মানুষ জ্বিনকে এত ভয় পায়, জ্বিনের নাম উল্লেখ করলেই কেন তারা আতঙ্কে শিউরে ওঠে, তাহলেই আমরা এ সমস্যাটি ধরতে পারব এবং এর প্রতিকারও করতে পারব।যেসব কারণে মানুষ জ্বিনকে ভয় পায়১. ভয় পাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধানতম হল তাওহীদ সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা। কোনো স্থানে যদি তাওহীদ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব থাকে, তাহলে সেখানে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করে। পুরাণ বিজয়ী হয়, মন্দরা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। হাতুড়ে ওঝারা তাদের মিথ্যা জ্ঞান চর্চার জন্য পাবে উর্বর ভূমি এবং শয়তানও তাদের কাজে সহায়তা করবে। আর এ কারণেই মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে, জ্বিনরা অদৃশ্যের খবর জানতে সক্ষম, তারা সুবিধা বয়ে আনতে পারে এবং ক্ষতি প্রতিহত করতে পারে, অথচ এসব গুণাবলী একমাত্র আল্লাহ তা'আলার। এ কারণে জ্বিনের নামোল্লেখ মাত্রই মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যায়।২. বানোয়াট গল্পের ব্যাপক প্রসার। লোকেরা এ ধরনের গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে এবং শোনার পর তারা এগুলোকে বিস্ময়কর গতিতে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এসব গল্প নারী, শিশু ও দুর্বলচিত্তের মানুষের মাঝে সহজেই ভয় তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।৩. জাদুকররাও এ ভয়, এসব গল্প ও পুরাণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।৪. শরীয়াহ-তে নির্দেশিত আযকার তেলাওয়াতে অবহেলা ও ব্যর্থতার কারণে অনেক সময় মানুষের মাঝে জ্বিন অবস্থান নেয়, অনেক ক্ষেত্রে এর কারণে মানুষ জ্বিনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়।
৩৮. মানসিক ও স্নায়ুরোগ
জ্বিন দ্বারা যেসব রোগ সংঘটিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হল মানসিক ও স্নায়ুরোগ, যেমন-উন্মাদরোগ, বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি। কিন্তু এ কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়, যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নির্দেশিত মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির ভূমিকা অস্বীকার করবেন, তারা ঠিক কাজ করবেন না। কুরআনে নির্দেশিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও বিজ্ঞানে নির্দেশিত মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে কোনো বিরোধ বা সংঘর্ষ নেই। হাসপাতাল ও মানসিক রোগের ক্লিনিকগুলোতে, কুরআনিক চিকিৎসার জন্যও একটি বিভাগ থাকা দরকার, যেখানে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা হবে। রোগী যদি এ বিভাগের কুরআনিক চিকিৎসায় সাড়া প্রদান করে এবং ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করতে শুরু করে, তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর যদি এতে সাড়া প্রদান না করে, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই, কারণ কুরআনিক চিকিৎসায় সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির ওষুধ ও ইনজেকশনের মতো কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মজার ব্যাপার হল, আমার একবার এক মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে বিতর্ক হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: যিনি কুরআনিক চিকিৎসার চেষ্টা বা অনুশীলন করেন, তার আগে মনোবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা উচিত, যাতে করে তিনি এ ধরনের চিকিৎসা করার সক্ষমতা অর্জন করেন। আমি তাকে বললাম: আপনি যা বলতে চাচ্ছেন, ঠিক একই কথা আমি আপনাকে বলতে চাচ্ছি। কুরআনিক চিকিৎসায় আপনার চিকিৎসার মতো কোনো নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। রোগের চিকিৎসা করাই যেহেতু আপনার পেশা, সেহেতু আপনার চিকিৎসা পদ্ধতিতে কুরআনিক চিকিৎসাও যোগ করে নিন।
৩৯. শারীরিক রোগ
জ্বিনের কারণে বেশ কিছু শারীরিক রোগও দেখা দেয়। এ রকম রোগের সংখ্যা অনেক, কিন্তু সংক্ষেপে বলতে গেলে, যখন কোনো রোগের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করবে না, তখন আল্লাহ চাইলে তাকে নিরাময় দান করতে পারেন এ আশায় তার উপর কুরআনিক রুকইয়া পাঠ করা উচিত।
৪০. হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টি বিভ্রম
জ্বিনরা যদি মানুষকে জাদু করার মাধ্যমে বশীভূত বা সম্মোহিত করতে পারে, তাহলে তারা এ ক্ষমতা দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন অবাস্তব জিনিস বা বস্তু দেখাতে সক্ষম হয়। সে কারণে একজন তার স্ত্রীকে কুৎসিত ও কদাকার হিসেবে দেখতে পারে, অথবা একজন স্ত্রী তার স্বামীকে জ্বিনের কারণে কুৎসিত আকারে দেখতে পারে, এর ফলে ওই স্বামী বা স্ত্রীর মনে তার পার্টনারের এ কুৎসিত রূপ তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এক সময় তা রূপ নিতে পারে তীব্র বিরক্তি ও বিষন্নতায়- সত্যিকার অর্থে। যদিও ওই স্বামী বা স্ত্রী মোটেই কুৎসিত নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন:قَالَ بَلْ أَلْقُوا ۖ فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِن سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ ﴿٦٦﴾অর্থঃ মূসা বলল, “বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ তখন তাদের যাদুর কারণে মূসার মনে হল যে, তাদের রশি আর লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে। (ত্ব-হা ২০:৬৬)
৪১. ঘৃণা উদ্রেক করার মাধ্যমে মানুষের মাঝে শত্রুতা ও বিভাজন তৈরি
মানুষের বিভিন্ন ধরনের জোড়া বা বন্ধন রয়েছে যেমন- স্বামী ও স্ত্রী অথবা ব্যবসায়িক অংশীদার অথবা বন্ধু-বান্ধব, এসব জোড়া বা বন্ধনের মাঝে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের রয়েছে বিভিন্ন কৌশল। আর শয়তানের এ চক্রান্তে প্রিয়জনদের মাঝে অতি তুচ্ছ কারণে সৃষ্টি হয় গভীর দূরত্ব, প্রত্যেক পক্ষই নিজ নিজ যুক্তি বা ব্যাখ্যায় ধূর্ততার সাথে অবস্থান নেন।যখন কেউ এ ধরনের দ্বন্দ্ব মিটানোর জন্য অগ্রসর হন, তখন তিনি দেখতে পান, প্রত্যেক পক্ষই মনে করেন যে, তিনিই সঠিক অবস্থানে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, শয়তান তার বাহিনীকে মিছিলাকারে এ দ্বন্দ্ব তৈরির অভিযানে প্রেরণ করে। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,“শয়তানের সিংহাসন থাকে সমুদ্রে, সেখানে বসেই শয়তান তার বাহিনীকে লোকালয়ে প্রেরণ করে মানুষকে প্ররোচনা দেয়ার জন্য। আর তার বাহিনীতে যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যা বা ভয়ঙ্কর বিবাদ তৈরিতে পটু, তারাই শয়তানের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার দাবিদার। এ মর্যাদাসম্পন্ন শয়তানদের মধ্যে থেকে একজন এসে বলে, আমি অমুক ও অমুকের স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া না লাগানো পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করিনি। শয়তান তাকে কাছে টেনে নেয় এবং বলে: “তুমি ভালো কাজ করেছ। [সহীহ মুসলিম, ৬৬, ৬৮]
৪২. স্ত্রীরোগ
জ্বিনরা আরো কিছু রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যার দ্বারা কেবল মহিলারাই আক্রান্ত হন, যেমন-বন্ধ্যাত্ব, যার জন্য কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাখ্যা যোগ্য কারণ নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রী কারোরই কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তারপরও স্ত্রী গর্ভধারণ করছেন না।আমার এক বন্ধু আমাকে বলেন, তিনি চার বছর ধরে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন, ওই চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থায় বেশ সন্তুষ্ট, ওই চিকিৎসক তাকে বলেন, আপনার স্ত্রীর গর্ভধারণ না করার কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না। তারা দুজনেই শতভাগ সুস্থ। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলাও আদেশ জারি করলেন, তাদের সন্তান থাকা দরকার এবং আমার ওই বন্ধুর স্ত্রী গর্ভধারণ করলেন।কিন্তু এমনটি হতে পারে যে, জরায়ুতে অথবা ডিম্বাশয়ে একটি জ্বিন রয়েছে, যেই জ্বিন শুক্রাণু বা ডিম্বাণু নষ্ট করে দেয়।এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু মেডিক্যাল লক্ষণও রয়েছে, এর মধ্যে আমরা কয়েকটি এখানে উল্লেখ করব:১. মহিলারা তাদের পিঠে প্রচুর ব্যথা অনুভব করেন। ২. ইউটেরাস এলাকায় ব্যথা ও ইনফেকশন। ৩. অনিয়মিত ঋতুস্রাব। ৪. অনিয়মিত রক্তপাত।৫. সহবাসের সময় স্ত্রী চরম অনীহা বোধ করে এবং সে শুধু স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এতে অংশ নেয়।এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো এর পাশাপাশি দেখা দিতে পারে, যেমন-মাথাব্যথা, দুঃস্বপ্ন ও চরম মুহূর্তে অসাড়তা ইত্যাদি।
৪৩. ঘর-বাড়ি ধ্বংস
জ্বিনরা বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে খেলা করে এবং অনেক আসবাব পুড়িয়েও দেয়, এভাবে তারা মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস করতে পারে। এ ধরনের ঘটনা বাস্তবেই ঘটে, কিন্তু খুবই বিরল। আমি এ ধরনের কিছু বাস্তব জীবনের ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করব।[মুসলিমুন (সংখ্যা-৩৩৮, ১৫ মহররম ১৪১২ হিজরি/২৬ জুলাই ১৯৯১ খ্রীস্টাব্দ, পৃ-৩) পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় এ শিরোনামে ‘মুনিফ হারবি: বিনা কারণে আমার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড।]মুনিফ হারবি একজন সউদী নাগরিক, পশ্চিম রিয়াদের আল নাসিম কোয়ার্টারে তিনি বসবাস করেন, এ অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন,স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই আমার ঘরের প্রতি কোণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। এ ধরনের ঘটনা ইতোপূর্বে আর কেউ দেখেননি। আর সিভিল ডিফেন্স বাহিনীও এ আগুনের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এ আগুনের ফলে দৃশ্যত তার জীবন অনেকটা নরকের অসহনীয়, যন্ত্রণার মতো হতে চলছিল, কিন্তু মহান আল্লাহর অপরিসীম কৃপায় তা হয়নি।একইভাবে আখবার আল ইয়াওম (সংখ্যা-২৪৮১, ২০ জিলক্বদ ১৪১২ হিজরী/ ২৩ মে ১৯৯২ পৃ-১৪) পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় সেই শিরোনামে ‘জর্জিয়া ফায়ার ব্রিগেডের প্রধানের সামনেই এক ডাক্তারের বাড়িতে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর অগ্নিকাণ্ড’।সুহাজের দক্ষিণাঞ্চলের ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান মেজর রজব সুলতান কায়রোতে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসে ফরেনসিক ল্যাবের দরজায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন, যেন তিনি ল্যাবে কিছু একটা খুঁজছেন। তিনি সুহাজ থেকে মাত্র একটি আশ্চর্যজনক অভিযান শেষ করে ফিরেছেন, সঙ্গে থাকা ব্যাগে করে সুহাজে সংঘটিত একটি আশ্চর্যজনক অগ্নিকাণ্ডের কিছু আলমত বয়ে নিয়ে এসেছেন, অগ্নিকাণ্ডের পিছনে কী কারণ জড়িত, মূলত তা বিশ্লেষণ করার জন্যই এ আলামতগুলো নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তিনি আরো আশ্চর্য হয়ে গেলেন, যখন তিনি দেখতে পেলেন, সেই আলামতগুলো তিনি ফরেনসিক ল্যাবে পা দেয়ার আগেই হাওয়া হয়ে গেছে, আলমতের চিহ্নটি পর্যন্ত নেই।মেজর রজব নিজ মুখে সেই বিস্ময়কর গল্পটি বলেন, তিনি বলেন, গত সপ্তাহে জর্জিয়া জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার উসমান রিফায়ি আমার কাছে এসে বলেন যে, তার বাড়িতে আধা ঘণ্টা আগে আগুন লেগেছে, এবং তিনি ফায়ার ব্রিগেডকেও খবর দিয়েছেন আগুন নিভিয়ে তার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য। তার এ বার্তা আমার কাছে কেমন আশ্চর্যজনক মনে হল, তবু আমি আমার লোকজন ও সরঞ্জমাদি নিয়ে তার বাড়িতে ছুটে গেলাম, যদি তার বাসার কাপড়-চোপড় থেকে আগুনের কোনো সূত্র পাওয়া যায় কি না। ওই ডাক্তার আমাকে বলেন, ঘটনার দিন তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন, এ সময় হঠাৎ তাদের শোবার ঘরে আগুন লেগে যায়।তিনি তার প্রতিবেশীদের ডাকলেন, তারা এসে আগুন নিভাতে সাহায্য করল, আগুন নিভেও গেল। কিন্তু তারপর, প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর তার বাসার কাপড়-চোপড় রয়েছে এমন সব ওয়্যারড্রোব থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে লাগল। কয়েক মিনিট পরে আমার চোখের সামনেই একটি ওয়ারড্রোবে আগুন জ্বলে উঠলো, আমি তো আকস্মিক বিস্ময়ে চমকে উঠলাম। আমি আমার লোকজন নিয়ে আগুন নেভালাম। পরে আমি আবিস্কার করলাম যে, কোনো একটি কাপড়ের শেলফ থেকে এমনি এমনিই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।ওই অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর থেকেই আমি জেনারেল আল সাইয়িদ হাসানের সঙ্গে রেডিও প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ করলাম, হাসান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী এবং সুহাজ অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রধান। তাকে এখানের অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে অ্যাপার্টমেন্ট ত্যাগ না করার জন্য বললেন, একই সঙ্গে তিনি পুলিশ প্রধান, অপরাধ তদন্তকারী টিম ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদেরকে পাঠালেন এ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে আমাকে সহায়তা করার জন্য।মেজর রজব সুলতান আরো বলেন, ওই চিকিৎসকের অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনীর সদস্যদের ভিড় জমে গেল, তারা অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ভালো করে পরীক্ষা করল, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খোঁজার চেষ্টা করল তারা। তারা একটি সম্ভাবনা দাঁড় করানোর চেষ্টা করল যে, হয়ত ঘরের কোথাও কোনো পাউডার রাখা ছিল, যা আগুনের সূত্রপাত ঘটিয়েছে, কিন্তু অনেক অনুসন্ধানের পরও তারা এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা খুঁজে পেল না। বরং এ নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনীর সামনেই আবারো অ্যাপার্টমেন্টে আগুন জ্বলে উঠল, অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটি জায়গায়, বাচ্চাদের শোবার ঘর থেকে শুরু করে ঘরের ফার্নিচার, এমনকি ধোয়ার জন্য ভেজানো কাপড় চোপড়েও আগুন ধরে যায়। এ দৃশ্য দেখে দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরঞ্জামাদি। নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল আগুন নেভানোর জন্য, চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা ও শিশুরা আতঙ্কে চিৎকার করছিল। নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা পরদিন পর্যন্ত এ আগুন নিয়ে টানা কাজ করল। কিন্তু প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর জ্বলে ওঠা এ আগুনের কোনো কারণ বা উৎস খুঁজে বের করতে পারল না।নিরাপত্তা প্রধান দমকল বাহিনীর কিছু সদস্যকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, যাতে তারা চিকিৎসকের পরিবারকে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচাতে পারে। আর তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন পরদিন সকালে কায়রোতে এক বিশেষ মিশনে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার সময় ব্যাগে করে অ্যাপার্টমেন্টের আগুনে পোড়া কাপড় থেকে আলামত নিয়ে যেতেও বললেন ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করতে। যাতে করে এর মাধ্যমে এ অগ্নিকাণ্ডের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বের করা যায়। কিন্তু ফরেনসিক ল্যাবের দরজায় গিয়েই আমি আবিস্কার করলাম, আমার ব্যাগে করে আনা অগ্নিকাণ্ডের সেই নমুনাগুলো হাওয়া হয়ে গেছে। আমি জানতেও পারলাম না যে, এ ঘটনা কখন কিভাবে ঘটল।পরে মেজর রজব সুলতান আবার সুহাজে ফেরত আসলেন নতুন করে আলামত সংগ্রহের জন্য। তখনো তিনি বিস্ময়ে হতবিহ্বল, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছেন, আমি ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান উপস্থিত থাকার পরও সেখানে কিভাবে এ আগুনের সূত্রপাত হল? এ অদ্ভুত আগুনের কবল থেকে চিকিৎসকের পরিবারকে কিভাবে রক্ষা করা যায়? এ মিশন সফল করতে কি আমাদের অন্য কোনো ফায়ার ব্রিগেডের সহায়তা লাগবে?দ্বিতীয় গল্পটি বর্ণনা করেছেন ইবনুল ক্বয়্যিম (রহ) তার আল ওয়াবিলুস সাইয়্যিব গ্রন্থে (পৃ-১৭৬-১৭৭) বর্ণিত আছে যে, আবূ নযর আল হাশিম বিন আল কাশিম বলেন, আমার বাড়িতে আমাকে লক্ষ্য করে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হল এবং পরক্ষণেই একটি আওয়াজ শোনা গেল ‘হে আবূ নযর! বের হয়ে এস তোমার বাড়ি থেকে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি গভীর বিষন্নতায় পড়ে গেলাম। তাই এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে আমি কুফায় ইবনে ইদরিস আল মুহারিবি ও আবু উসামাহর কাছে চিঠি লিখলাম। মুহারিবি আমার চিঠির জবাবে লেখেন: মদীনায় একটি শুকনো কুপ ছিল। একবার এক কাফেলা এসে এ কুপের কাছে তাবু খাটালো। এলাকাবাসী এসে তাদেরকে শুকনো কুপটির ব্যাপারে জানালো। কাফেলার লোকেরা এ কথা শুনে এলাকাবাসীর কাছে এক বালতি পানি চাইল।পরে তারা নিম্নোক্ত কথাগুলো বলে বালতির পানি কুপের মধ্যে ঢেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে কুপের মধ্যে থেকে আগুন জ্বলে উঠলো এবং কুপের মুখেই সে আগুন নিভিয়ে ফেলা হল। পানি ঢালার সময় তারা যে কথা বলেছিল তা হল, পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে, আমরা আল্লাহ তাআলার হেফাজতে আছি, যার কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, এবং আল্লাহর মহত্বের কারণে যা কখনো পরাভূত করা সম্ভব নয়, এবং আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কারণে, আমরা শক্তিশালীরাও তাঁর কাছে সুরক্ষার প্রার্থনা করি। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের কসম, আমি শয়তানের হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষ ও জ্বিনদের অনিষ্ট থেকে, আরও আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওই সব শয়তান থেকে যারা দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান, যারা রাতে আবির্ভূত হয় এবং দিনে মিলিয়ে যায়, আবার যারা রাতে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং দিনে আবির্ভূত হয়, আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওইসব শয়তান থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি ইবলিস ও তার বাহিনীর সকল ধরনের অনিষ্ট থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেইসব জন্তুর অনিষ্ট থেকে, যাদের কপালের চুলের গুচ্ছ (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে। আমি আল্লাহর কাছে ওইসব বিষয় থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন মুসা, ঈসা ও ইবরাহিমও (আঃ) (আন নাজম: ৫৩:৩৭), এবং ওই সকল অনিষ্ট থেকেও আশ্রয় চাচ্ছি যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, শয়তান ও তার বাহিনীর অনিষ্ট এবং অন্য সকল অশুভ বিষয় যা ক্ষতিকর তা থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে অভিশপ্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে আরম্ভ করছি,وَالصَّافَّاتِ صَفًّا ﴿١﴾ فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا ﴿٢﴾ فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا ﴿٣﴾ إِنَّ إِلَٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ ﴿٤﴾ رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ ﴿٥﴾ إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ ﴿٦﴾ وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ ﴿٧﴾ لَّا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٍ ﴿٨﴾ دُحُورًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ ﴿٩﴾ إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ ﴿١٠﴾অর্থঃ কসম সারিবদ্ধ ফেরেশতাদের,অতঃপর (মেঘমালা) সুচারুরূপে পরিচালনাকারীদের,আর উপদেশ গ্রন্থ (আসমানী কিতাব) তিলাওয়াতকারীদের; নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক; তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে তার রব এবং রব উদয়স্থলসমূহের। নিশ্চয় আমি কাছের আসমানকে তারকারাজির সৌন্দর্যে সুশোভিত করেছি। আর প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে হিফাযত করেছি। তারা ঊর্ধ্বজগতের কিছু শুনতে পারে না, কারণ প্রত্যেক দিক থেকে তাদের দিকে নিক্ষেপ করা হয় (উল্কাপিন্ড) তাড়ানোর জন্য, আর তাদের জন্য আছে অব্যাহত আযাব। তবে কেউ সন্তর্পণে কিছু শুনে নিলে তাকে পিছু তাড়া করে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড। (আল-সাফফাত ৩৭:১-১০)আবুল নাযর বলেন: অতঃপর আমি এক বালতি পানি নিয়ে এর উপর উপরোক্ত দুয়া পাঠ করলাম, তারপর এ পানি ঘরের চারদিকে ছিটিয়ে দিলাম। এতে তারা (জ্বিনরা) আমাকে লক্ষ্য করে আর্তনাদ করে উঠল, তারা বলল: “আপনি আমাদেরকে পুড়িয়ে দিয়েছেন! আমরা আর আপনাকে বিরক্ত করব না।” [আল-ওয়াবিলুস সাইব- ইবনুল কায়্যিম ১৭৬-১৭৭]শাইখ আলী বিন মুশাররফ আল উমারি তাঁর এক ভাষণে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বলেন, মদিনার কাছাকাছি হাদবান নামক স্থানের একটি বাড়িতে বিনা কারণে আগুন লেগে যায়, কিন্তু আগুন নেভানোর পর আবারো আগুন জ্বলে উঠে, দমকল বাহিনী এ আগুনের কোনো কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। শাইখ মান্নই ওই স্থানে আসার পর কারণ বের করলেন, তিনি ওই স্থানে বসে কুরআন তেলাওয়াত করলেন, অতঃপর যেসব জ্বিন এ অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে ঘরের বাসিন্দাদের বিপদে ফেলেছে। তাদেরকে বিতাড়িত করলেন।যদিও এ ধরনের ঘটনা ঘটা সম্ভব, কিন্তু তা খুবই বিরল। আমাদেরকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে, এটি আসলেই জ্বিনের কাজ কি। না, কারণ মিথ্যাবাদী ও হাতুড়ে ওঝারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এরকম অসংখ্য গল্প তৈরি করে। এরকম একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন শাইখ ইয়াসিন আহমদ ঈদ। তিনি বলেন:“অল্প কিছু দিন আগে এক ব্যক্তি মারা যান, মৃত্যুর সময় তিনি একটি সুন্দর বাড়ি রেখে যান, বাড়িটি ছিল অন্যান্য বাড়ি থেকে কিছুটা পৃথক বা। বিচ্ছিন্ন। বাড়িটি ছিল বেশ বড়সড়, রুম ছিল অনেকগুলো, ছিল সুসজ্জিত।বাড়ির চত্বরে ছিল মার্বেল পাথরের তৈরি পুল। এর চারপার্শে ছিল বিভিন্ন আকার ও বর্ণের বেশ কিছু মূর্তি, যেগুলোর মুখ দিয়ে পানিও প্রবাহিত হত।ওই লোকটির ওয়ারিশ হওয়ার মতো কোনো সন্তান ছিল না, সে কারণে তার মৃত্যুর পর বাড়িটি ফাঁকা হয়ে যায়, অনেক দাম পাওয়া যাবে এ আশায় তার স্বজনরা বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হলেন, কিন্তু যখনি তারা বাড়িটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে তোড়জোড় শুরু করলেন, ঠিক তখনি গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, বাড়িটি জ্বিনরা দখল করেছে এবং ভিতরে ইফরিত বসবাস করছে।এ গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এক সময় পরিণত হয় শহরের মুখ্য আলোচনার বিষয়, টক অব দ্যা টাউন। সন্ধ্যার খোশ গল্পের আসরে আলোচিত হতে থাকে এ গুজব। যদি কেউ এতে দ্বিমত পোষণ করে রাতে ওই বাড়িতে যেত সত্যতা যাচাই করতে, সকালে সে ফিরে আসত এ ধারণা নিয়ে যে, আসলেই ওই বাড়িটি জ্বিনরা দখল করেছে। যার ফলে কেউ আর ওই বাড়িটি কিনতে আগ্রহী হল না, ওয়ারিশ যারা ছিলেন তারাও অনেকটা হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন এর মন্দ পরিণাম ভেবে, বিশেষ করে ক্রেতারা যখন বাড়িটির দাম হাঁকল চার ভাগের এক ভাগ দামে, তখন তারা বুঝতে পারলেন অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। উপায় না দেখে ওয়ারিশগণ বাড়িটি প্রায় বেচেই দিচ্ছিলেন, এরই মধ্যে এক সাহসী যুবক বাড়িটির খবর শুনে এগিয়ে এল, সে লোকজনের মুখে এ বাড়ি সম্পর্কে সবই শুনেছে। সে জ্বিন বা ইফরিত বিষয়ে কোনো ভয় পেত না, এমনকি এদেরকে পাত্তাও দিত না। সে লোকজনের কাছে প্রতিজ্ঞাই করে বসল যে, সে ওই বাড়ি থেকে জ্বিন তাড়াবে এবং ইফরিতকে ধরবে অথবা টাকার বিনিময়ে তাকে বহিষ্কার করবে। ওয়ারিশগণ তার প্রস্তাবে রাজি হলেন, এবং তারা তাকে কথামতো পারিশ্রমিকের অর্ধেক আগেই পরিশোধ করলেন।সকালে যুবকটি সঙ্গে একটি পিস্তল নিয়ে ওই বাড়ির দিকে রওয়ানা হল। বাড়িতে পৌছার পর সে কিছুক্ষণে বিশ্রাম নিল, মোমবাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল এক পর্যায়ে। কিছুক্ষণ সে টের পেল, কেউ একজন তার কাছ থেকে কম্বল টেনে নিচ্ছে, যুবকটি তৎক্ষণাৎ সর্বশক্তি দিয়ে কম্বলটি আঁকড়ে ধরল এবং বলল: “কে আমার কম্বল টেনে নিচ্ছ?” তখন একটি আওয়াজ বলে উঠল “আমি একজন ইফরিত, আর আমাকে এ কম্বলটি নিতেই হবে, অন্যথায় আমি তোমার দেহে অবস্থান নেব।” যুবক কম্বল ছেড়ে দিতেই ওই লোকটি তার পিছনে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। যুবকটি উঠে গিয়ে ওই ইফরিতের বুকের ওপর বসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলল: "আমাকে বল, কে তুমি?”। ইফরিতটি খুব ভয় পেয়ে গেল, সে বলল: “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে বলব, আসলে কে আমি।” যুবক বলল: "কথা বল হে ইফরিত!” সে বলল: “আমি ইফরিত নই, জ্বিনও নই, আমি তোমার মতোই একজন মানুষ। আমাদের মাঝে পার্থক্য একটাই, আমি দেখতে খুবই কালো ও কুৎসিত।” এ কথা শোনার পর যুবকটি তাকে ছেড়ে দিয়ে মোমবাতিটি জ্বালাল লোকটি আসলে কে দেখার জন্য। মোমের আলোতে সে দেখতে পেল একজন নগ্ন কালো মানুষ। যুবকটি বলল: “আমাকে বল, হে কালো মানুষ! কেন তুমি এখানে। এসেছ?” লোকটি বলল: প্রয়োজনই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, কারণ। আমি খুবই দরিদ্র, কোনো আয় নেই, বাড়িতে রয়েছে বিশাল পরিবার, আমি ছাড়া তাদেরকে দেখার আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি এক লোকের শরণাপন্ন হয়েছিলাম কাজের জন্য। ওই লোক আমাকে প্রতি রাতে এ বাড়িতে এসে থাকতে বলে। ওই লোকটি আমাকে বলল, যদি কেউ এ বাড়ির দিকে আসার চেষ্টা করে, তাহলে আমি যেন প্রথমে আমি। তালি বাজাই এবং দেয়ালে আঘাত করি। কিন্তু তারপরও যদি দেখা যায় যে, লোকটি খুবই সাহসী এবং এসব ভীতিকর শব্দকে আমলেই নিচ্ছে না, তখন যেন আমি পানির টেপগুলো খুলে দেই, যাতে মূর্তিগুলোর মুখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে, তারপর যেন আমি দ্রুত ছাদে উঠে বিভিন্ন কণ্ঠে চিৎকার করে তাকে ভয় দেখাই। অতঃপর সে আমাকে এ কথা গোপন রাখার জন্য বলল। যুবক এ ঘটনা শোনার পর লোকটিকে তার সঙ্গে করে নিয়ে গেল এবং বাড়ির ওয়ারিশদের কাছে তাকে হস্তান্তর করল। সে তাদের কাছে সব খুলে বলল এবং এভাবেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যে লোকটি এ কালো মানুষটিকে ভাড়া করেছিল, সে চেয়েছিল বাড়িটি খুবই কম দামে কিনতে।
পরিচ্ছেদ: জ্বিন সম্পর্কে মানুষের অযৌক্তিক ভয়ের চিকিৎসা
৪৪. তাওহীদ
সকল ইবাদত, ইসলামের বিভিন্ন প্রথা বা অভ্যাস পুনর্জাগরিত করা এবং সকল ভালো ও মন্দ একমাত্র আল্লাহর হাতে মানুষকে এ কথা শিক্ষা। দেয়ার মূল ভিত্তি হল মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করা।আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন সৃষ্টি তা সে যত বড়ই হোক না কেন কারো জন্য কোনো উপকার বা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে না, এ ক্ষমতা তার নেই। কারো ভালো করা বা ক্ষতি করার ক্ষমতা একমাত্র মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলার হাতে।আল্লাহ তা'আলা বলেন:قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗঅর্থঃ বল, ‘আমি নিজের ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন’। (ইউনুস ১০:৪৯)قُلْ فَمَن يَمْلِكُ لَكُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ بِكُمْ ضَرًّا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ نَفْعًا ۚঅর্থঃ ‘আল্লাহ যদি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে চান কিংবা কোন উপকার করতে চান, তবে কে আল্লাহর মোকাবিলায় তোমাদের জন্য কোন কিছুর মালিক হবে’? (আল ফাতহ ৪৮: ১১)وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖঅর্থঃ আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। (আল আনআম ৬: ১৭)إِن يُرِدْنِ الرَّحْمَٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلَا يُنقِذُونِ ﴿٢٣﴾অর্থঃ যদি পরম করুণাময় আমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধারও করতে পারবে না’।(ইয়াসিন ৩৬:২৩)উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার হাতে কেউ যদি পবিত্র কুরআনের এ বিশুদ্ধ ও পবিত্র শিক্ষায় বিশ্বাস করে, এ বিশ্বাস যদি তাদের মনে গভীরভাবে প্রোথিত হয়, তাহলে তার মধ্যে থেকে জ্বিন, মানুষ ও সকল সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল ভয় দূর হয়ে যাবে।এ কারণেই কুরআন বিভিন্ন আয়াতে আমাদের একমাত্র আল্লাহ তা'আলাকেই ভয় পাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।আল্লাহ তা'আলা বলছেন:إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٧٥﴾অর্থঃ সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। (আল ইমরান ৩:১৭৫)فَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَঅর্থঃ তোমরা যাকে ভয় করবে তার সবচেয়ে বেশি হকদার হলেন আল্লাহ যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাক। (আত-তাওবাহ ৯:১৩)وَأَوْفُوا بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِঅর্থঃ তোমরা আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর, তাহলে আমি তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর কেবল আমাকেই ভয় কর। (আল বাকারাহ ২:৪০)এ কারণেই বিদ্বান ও ফকিহগণ বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় পাওয়া এক ধরনের শিরক, কুরআন ও হাদীসের আলোকে যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।মুসলিমগণ প্রতিদিন কালিমা পাঠ করেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুতরাং তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, তারা আল্লাহর সৃষ্ট জীবকে ঘিরে যে সব ভয়ের মুখোমুখি হন, তার উপর এ কালিমার একটি প্রভাব রয়েছে।যিনি তাওহীদে বিশ্বাস করেন এবং এর উদ্দেশ্য ও ফলাফল সম্পর্কে সচেতন, তিনি কখনো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় পেতে পারেন না, কারণ যখনই তিনি বলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য বা ইলাহ নেই, তখনই তিনি বুঝতে পারেন, আল্লাহ ব্যতীত স্বস্তির আর কোনো উৎস নেই, তিনি ব্যতীত আর কারো উপরে আস্থা রাখা যায় না, আর কারো কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা যায় না, তিনিই একমাত্র সার্বভৌম, তাঁরই আনুগত্য করতে হবে, তিনি ব্যতীত আর কারো কাছেই প্রতিরক্ষার প্রার্থনা করা যাবে না, তিনিই একমাত্র শাসক এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। এ ঘোষণা, এ বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র নড়চড় বা বিচ্যুতি ঘটলে তা শিরক বলে গণ্য হবে। আর এ শিরক্ কুরআন ও হাদীসের আলোকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এমনকি যদি কেউ নিয়মিত সালাত ও রোযা পালনও করে। আল্লাহর কাছে (উবুদিয়াহ্) নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ না করা পর্যন্ত, একমাত্র তাকেই ভয় করা এবং জ্বিন অথবা মানুষ অথবা অন্য যে কোনো সৃষ্ট জীবের ভয় থেকে নিজেকে মুক্ত না করা পর্যন্ত কেউ তাওহীদের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না।
৪৫. এ উপলব্ধি অর্জন করা যে, শয়তানের ষড়যন্ত্র খুবই দুর্বল
আল্লাহ তা’আলা বলেন:إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًاঅর্থঃ নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। (আন-নিসা ৪:৭৬)এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, হাদীসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সর্বসম্মতি রয়েছে, আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“ভালো স্বপ্ন আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর খারাপ স্বপ্ন আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ যদি স্বপ্নে অপ্রীতিকর কিছু দেখে, সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে এবং শয়তানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তাহলে এটা আর তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” [সহীহুল বুখারী ৩২৯২, ৫৭৪৭, ৬৯৮৬, ৬৯৯৫, মুসলিম ২২৬১]আত-তাবারি (রহ) বলেন: এ হাদীস অনুসারে, বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপের মানে হল শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা, কারণ যখনই কোনো ময়লা বস্তু আমরা দেখি অথবা এর কথা মনে আসে তখনই আমরা থুথু নিক্ষেপ করি, আর শয়তানের চেয়ে নিকৃষ্ট কিছু তো নেই। তাই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) খারাপ স্বপ্নের কথা মনে আসা মাত্রই শয়তানের উদ্দেশ্যে থুথু নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। থুথু ফেলার জন্য ডান দিকের বদলে বাম দিক উল্লেখ করার কারণ হতে পারে এরকম, যে দিক থেকে মানুষকে খারাপ কাজের জন্য ডাকা হয়, শয়তান আদম সন্তানের কাছে সে দিক থেকেই আগমন করে। আল হাকীম আল তিরিমিযি (রহ) বলেন: এ থুথু গিয়ে শয়তানের মুখের উপর পড়ে এবং সেখানে ফোস্কার মতো চিহ্ন এঁকে দেয়। আপনি যখন বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করবেন এবং একই সঙ্গে আল্লাহর কাছে শয়তানের হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন, তখন আপনার জন্য শয়তানের আনা ওয়াসওয়াসা বাতিল হয়ে যাবে। রাবি বিন খুসাইয়াম (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ একজন তাঁর কাছে এসে বলল: আমি স্বপ্নে দেখেছি, কেউ একজন আমাকে বলছে, রাবিকে গিয়ে বল যে, তিনি জাহান্নামের অধিবাসী। এ কথা শুনে রাবি সঙ্গে সঙ্গে তার বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।পরবর্তী রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, এক ব্যক্তি একটি কুকুর নিয়ে এসে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল, কুকুরটির গলায় রশি লাগানো, আর কপালে ফোস্কা পড়া। ওই লোকটি বলল: এটা হল সেই শয়তান যে তোমার স্বপ্নে আল রাবিকে দেখিয়েছে এবং এর কপালে যেসব ফোস্কা দেখতে পাচ্ছ, সে গুলো আল রাবির বাম দিকে তিনবার থু থু নিক্ষেপ করার ফল। [মাসাইব আল ইনসান মিন মাকাঈদুশ শায়তান, পৃ-১৪২]ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হল এর ছায়া দেখামাত্রই শয়তান পালিয়ে যেত এবং রাস্তাঘাটে তার সঙ্গে দেখা হলেই শয়তান ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ত। এ রকম পরিস্থিতিতে ওমর (রাঃ) কখনো অন্য কোনো পথে যেতেন না, বরং শয়তান নিজেই ভয় পেয়ে ভিন্ন পথ ধরত। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে এক ব্যক্তি বাইরে বের হলেন, পথে তার সঙ্গে এক জ্বিনের দেখা। জ্বিন তাকে বলল: “তুমি কি আমার সঙ্গে কুস্তি লড়বে? এ কথা শুনেই ওই ব্যক্তি জ্বিনকে ধরে মাটিতে এক আছাড় মারলেন, অতঃপর তিনি বললেন: আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি খুবই ছোট এবং তোমার কুকুরের মতো চার বাহু রয়েছে, সকল জ্বিন কি তোমার মতোই দেখতে? নাকি তুমি তাদের মতো দেখতে? সে বলল: “আপনি কি আয়াতুল কুরসী তেলাওয়াত করেন?” কারণ কেউ যখন তার ঘরে প্রবেশ করার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করেন, তখন শয়তান তার প্রবেশের আগেই ঘর থেকে গাধার মতো চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে যায়। এ সময় আবদুল্লাহ বিন মাসউদকে জিজ্ঞেস করা হল: ওই ব্যক্তি কি ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ছিলেন? তিনি বললেন: “ওমর (রাঃ) ছাড়া আর কে হতে পারে?” [পূর্বোক্ত, পৃ-৫৬]
৪৬. সকল জ্বিনই খারাপ নয়
সকল জ্বিনই দেখতে কুৎসিত ও কালো নয়, যেভাবে তাদেরকে বিভিন্ন গল্পে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে ভয় দেখানো হয়ে থাকে। কিছু জ্বিন রয়েছে যারা মানুষের চেয়েও বেশি সৎকর্ম করে থাকে, আবার কিছু জ্বিনের মাঝে বিশ্বাস, দয়া এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথে ডাকার মতো চমৎকার রেকর্ডও রয়েছে, যেমনটি সূরা জ্বিনের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, একদল জ্বিন আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) সুললিত কণ্ঠের কুরআন তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনত এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ফিরে গিয়ে তার লোকদেরকে সতর্ক করতেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন:قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا ﴿١﴾ يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ ۖ وَلَن نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا ﴿٢﴾অর্থঃ বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না’। (আল জ্বিন ৭২:১-২)وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا ۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ ﴿٢٩﴾অর্থঃ আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, ‘চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। (আল-আহকাফ ৪৬:২৯) কিছু জ্বিন মানুষের চেয়েও অধিক আল্লাহভীরু ও ঈমানদার। কিছু জ্বিন অন্যদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানায়, আবার কিছু জ্বিনের রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস সম্পর্কে রয়েছে ব্যাপক জ্ঞান। শায়খুল ইসলাম তক্বিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ) তার আল ফুরকান আল কাবির গ্রন্থে এ কথা বলেন।দূরবর্তী কোনো অঞ্চলের রাজা বা গভর্নর, অথবা কোনো কাফির যিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছেন, মৃত্যুকে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছেন, তখন ওই ব্যক্তির কাছে এক জ্বিন আসবে মানুষের বেশ ধারণ করে। সে এসে তাকে পানি পান করাবে এবং তাকে ইসলামের পথে আহবান জানাবে। ফলে ওই ব্যক্তি মুসলিম হবে এবং ওই মানুষরূপী জ্বিনকে বলবে: “কে তুমি?” জবাবে সে বলবে: “আমি অমুক”।তিনি এ বর্ণনার সমর্থনে তার নিজের জীবদ্দশায় ঘটে যাওয়া আরেকটি গল্পের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন:ঠিক এরকম একটি ঘটনা সিটাডেলে ঘটেছিল। আমি সিটাডেলে থাকাকালে পূর্বাঞ্চলে এক তুর্কি যুবরাজের জীবনে এরকমটি ঘটেছিল। এক ব্যক্তি এসে যুবরাজকে বলল: আমি ইবনে তাইমিয়্যাহ, আর যুবরাজও তার এ কথায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ করলেন না। মারাদীনের রাজাকে এ কথা জানানো হলে তিনি এ সংবাদ পাঠালেন মিসরে, তখন আমি একটি কূপে বন্দী ছিলাম। মিসরের লোকেরা এ কথা শুনে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেল, কারণ তারা আমাকে কূপ থেকে বের হয়ে যেতে দেখেনি। আসলে ওই ব্যক্তি ছিল জ্বিন, সে আমাদেরকে ভালোবাসত, আর সে কারণেই আমি তুর্কিদের জন্য যা যা করতাম সেও তাই করত। যখন তারা দামেস্কে আসত, আমি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতাম, এবং তাদের মধ্যে কেউ যদি শাহাদাতাইন উচ্চারণ করত, আমরা তাকে আমাদের সাধ্য মতো সবকিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করতাম। আমি যা যা করতাম, ওই জ্বিনটিও ঠিক তাই করত। অনেক লোক এসে আমাকে বলত: এরকম কি হতে পারে না যে, ওই লোকটি আসলে ফেরেশতা? আমি বললাম: না, কারণ একজন ফেরেশতা কখনো মিথ্যা বলতে পারে না, কিন্তু ওই জ্বিনটি ঠিকই বলেছে আমি ইবনে তাইমিয়্যাহ, মিথ্যা জানার পরও সে এ কথা বলেছে। [ইবনে মুফলিহ আল হাম্বলি, মাসাইব আল ইনসান মিন মাকাঈদুল শায়তান, ১৩২-১৩৩]
৪৭. মানুষের তুলনায় জ্বিনের অবস্থান কম মর্যাদাসম্পন্ন
মুসলিমদের বোঝা উচিত যে, মানুষের তুলনায় জ্বিনের অবস্থান নিচে এবং কম মর্যাদাসম্পন্ন, এমনকি জ্বিন যদি আল্লাহভীরুও হয়। শাইখ আবু বকর আল জাযাইর (রহ) বলেন: এমনকি আল্লাহভীরু ও সৎকর্মকারী জ্বিনরাও মর্যাদার দিক থেকে মানুষের থেকে নিচু অবস্থানে, কারণ স্রষ্টা স্বয়ং বলেছেন, মানুষ হল শ্ৰেষ্ঠ ও সম্মানিত জীব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে বলেন:وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا ﴿٧٠﴾অর্থঃ আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিয্ক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি। (আল ইসরা ১৭:৭০) আল্লাহর নাযিলকৃত অন্য কোনো কিতাবে বা কোনো রাসূলের ঠোঁটের মাধ্যমে আল্লাহ জ্বিনদের প্রতি এরকম কোনো সম্মান প্রদর্শন করেননি, যেমনটি তিনি দিয়েছেন মানুষকে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, মর্যাদার দিক দিয়ে জ্বিন থেকে মানুষের অবস্থান উপরে। এটা অবশ্য জ্বিনদের নিজস্ব অনুভূতি থেকেও প্রকাশিত হয়েছে, নিচু মর্যাদা এবং মানুষের সামনে তাদের দুর্বলতার অনুভূতি থেকেও এটা স্পষ্ট। মানুষ যখন তাদের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তখন তারা গর্ব অনুভব করে এবং নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, কারণ এর মানে হল, তাদেরকে সম্মান করা হচ্ছে, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হচ্ছে, যদিও সত্যিকার অর্থে তারা এর উপযুক্ত নন, এর ফলে তাদের (মানুষের) পাপ ও সীমালঙ্ঘনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তাদের মধ্যে মিথ্যা ও কুফরি বৃদ্ধি পায়। এটা থেকেও জ্বিনদের নিম্ন মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।আল্লাহ তা'আলা বলেন:وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا ﴿٦﴾অর্থঃ আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল। (আল-জ্বিন ৭২:৬)যখন কোনো মানুষ জ্বিনদের কাছে সাহায্য কামনা করে অথবা তাদের নেতাদের নাম নেয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করে, তখন তারা ওই ব্যক্তির আহ্বানে সাড়া দেয় এবং তার প্রয়োজন পূরণ করে। এ ঘটনা থেকেই উপরোক্ত আয়াতে এ ধারণা দেয়া হয়েছে।আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত আদম সন্তানের সামনে জ্বিনরা নিজেদেরকে দুর্বল ও অগুরুত্বপূর্ণ মনে করে বলেই এসব ঘটনা ঘটে থাকে। আর আল্লাহ আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছেন এসব কারণে আদম আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তার ইবাদত করেছে, তার একত্ববাদ ও প্রভুত্বের ঘোষণা দিয়েছে, একমাত্র তাঁরই ইবাদত করেছে এবং তার নামসমূহ ও গুণাবলীর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু মানুষের মাঝে যদি এ বিশ্বাস না থাকে, তাহলে আল্লাহভীরু ও সৎকর্মকারী জ্বিনরা আদম সন্তানদের মধ্যে যারা কাফের ও মুশরিক তাদের থেকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা লাভ করবে। [আবু বকর জাবির আল জাযাইরী (রহ), আকীদাতুল মুমিন, পৃ ২২৮]
৪৮. জ্বিন সম্পর্কিত গল্পের প্রচারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
জ্বিন সম্পর্কিত গল্পের প্রচার বা অন্যদের কাছে ছড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। ভালো হয়, এসব বিষয়ে কথা না বলেই, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুদের মাঝে এসব গল্প বলা যাবে না, কারণ এসব গল্প এমন এক জগতকে নিয়ে, যা আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয়। জ্বিনরাও অনেক মিথ্যা কথা বলে, তাই আমরাও নিশ্চিত হতে পারি না যে, আসলে জ্বিন সত্য বলছে না মিথ্যা বলছে। সুতরাং এসব গল্প মানুষের মাঝে না ছড়ানোই ভালো। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মানুষের স্বপ্নের মাঝে মানুষকে নিয়ে শয়তান যে খেলা করে সে সম্পর্কেও কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন।জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা এক বেদুঈন আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার মাথা কেটে আলাদা করে মাটিতে গড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর আমি আমার মাথার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছি। এ কথা শুনে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বেদুঈনকে বললেন:“তোমার এ স্বপ্নে শয়তান তোমার সঙ্গে যেভাবে খেলা করেছে সে কথা তুমি অন্য কারো কাছে প্রকাশ কর না।”এবং তিনি বললেন: আমি এক বক্তব্যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে,“স্বপ্নের মাঝে শয়তান তোমাদের সঙ্গে যে খেলা করে, সে কথা কখনো অন্যের কাছে বলবে না।” [সহীহ মুসলিম, ২২৬৮]
৪৯. সুরক্ষার জন্য অভিভাবক হিসেবে ফেরেশতা রয়েছেন
মুসলমানদের আরো উপলব্ধি করা উচিত যে, আল্লাহ তা'আলা মানুষের সুরক্ষার জন্য অভিভাবক হিসেবে ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। এ ফেরেশতারা মানুষকে দিবা-রাত্রি সর্বক্ষণ পাহারা দিয়ে জ্বিনদের অনিষ্ট এবং মানুষের অদৃশ্যমান অন্য যে কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন:لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِঅর্থঃ মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে। (আর-রাদ ১৩:১১)এ পাহারার বিষয়ে স্কলারদের দুটি অভিমত রয়েছে:প্রথম অভিমত, আল্লাহ তা'আলা তাঁর অপরিসীম দয়া থেকে প্রত্যেক। মানুষের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন, এ ফেরেশতার কাজ হলো মানুষকে বুনো প্রাণী ও জীবজন্তু এবং ক্ষতিকর বস্তু থেকে সুরক্ষা প্রদান করা। দ্বিতীয় অভিমত, তারা মানুষকে জ্বিনদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। আল দাহ্হাক (রহ) বলেন: তারা মানুষকে জ্বিনদের কাছ থেকে রক্ষা করে, যদি না তার বিরুদ্ধে কোনো আদেশ জারি হয়ে থাকে।কা'ব (রহ) বলেন: আল্লাহ যদি তোমাকে তোমার খাদ্যে, তোমার পানীয়ে এবং তোমার আরওয়াহ্-তে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে জ্বিনরা তোমার অনেক ক্ষতি করত। [আল-কুরতুবী, ৯/১৯২-১৯৩]আল্লাহ তা'আলা বলেন:وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةًঅর্থঃ আর তিনিই নিজ বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান এবং তোমাদের উপর প্রেরণ করেন হিফাযতকারীদেরকে। (আল-আন'আম ৬:৬১)এ আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষের জন্য দিনে ও রাতে আলাদা আলাদা ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন, তারা মানুষের কর্মসমূহ লিপিবদ্ধ করে এবং মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। [আল-কুরতুবী, ৭/৬]আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে আরো বলেন:إِن كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ ﴿٤﴾অর্থঃ প্রত্যেক জীবের উপরই সংরক্ষক রয়েছে। (আত-তারিকু ৮৬:৪)আবূ উমামাহ (রাঃ) বলেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একশত ষাট জন ফেরেশতা নিয়োগ করা হয়, তাদের কাজ হল, তার জন্য যেসব বিষয়ের এখনো আদেশ হয়নি, সেসব বিষয় থেকে তাকে রক্ষা করা। যেমন, মুমিনের একটি চোখ সাতজন ফেরেশতা পাহারা দেয়, যেমনিভাবে মৌমাছিরা মৌচাকের মধু পাহারা দেয়। কাউকে যদি তার নিজ ফন্দি বা পরিকল্পনায় কিছু মুহূর্ত ফেলে রাখা হত, তাহলে শয়তান তার অনেক ক্ষতি করত। [তাফসীর কুরতুবী ২০/৪]
পরিচ্ছেদ: বাড়ি থেকে কিভাবে জ্বিন বিতাড়িত করা যায়?
৫০
শাইখ ওয়াহিদ বালি বলেন: আপনি যদি নিশ্চিত হোন যে, বাড়িতে আসলেই জ্বিন রয়েছে এবং এটা কারো কোনো কৌশল নয়, তাহলে জ্বিন তাড়ানোর উপায় হবে এরকম:১. আপনি সঙ্গে দুইজন লোক নিয়ে ওই বাড়িতে যাবেন এবং বলবেন: “আমি তোমাকে ওই শর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যেই শর্ত সোলায়মান তোমার কাছ থেকে নিয়েছিলেন। আমি আল্লাহর কসম করে তোমাকে বের হতে বলছি এবং কারো কোনো ক্ষতি না করার জন্য বলছি।” এ কথাগুলো আপনি তিনবার বলবেন।২. এর পর আপনি যদি ঘরের মধ্যে কোনো কিছু টের পান,তাহলে একটি পাত্রে করে পানি নিয়ে ওই দোয়া পাঠ করবেন, যা আল মুহারিবি আবুল নাযরকে লিখেছিলেন। দোয়া পাঠ করার পর ঘরের প্রতি কোণে পানি ছিটিয়ে দিন এবং প্রতি কোণে কিছু পানি রেখে দিন, তাহলেই তারা আল্লাহর আদেশে ঘর ছেড়ে পালাবে।৩. অতঃপর ওই ঘরে বসে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করেন, বিশেষ করে সূরা আল বাকারা তেলাওয়াত করবেন এবং নফল সালাত আদায় করবেন, আর রাতে ওই ঘরেই কিয়াম করবেন।৪. আল্লাহর অবাধ্যতার সঙ্গে জড়িত এমন সবকিছু সরিয়ে ওই ঘরকে পবিত্র করুন। [ওয়াকাইয়াতুল ইনসান]
পরিচ্ছেদ: যেসব কারণে জ্বিনরা মানুষের ওপর প্রভাব খাটাতে পারে
৫১. ভুমিকা
এটা জেনে রাখা উচিত যে, জ্বিনদের পক্ষে মানুষের ক্ষতি করা বা তার মধ্যে উপস্থিত হওয়া খুব সহজ কাজ নয়, কারণ এটা করতে গেলেই সে কুরআনের শাস্তির মুখে পড়ে যায়, মানুষের দেহের মধ্যে আটকে পড়ে যায় বলেই তার এ শাস্তি। আর জ্বিন যখন অন্য কোনো রূপে বা বেশে আবির্ভূত হয় তখন সে পড়ে যায় ধ্বংস ও মৃত্যুর মুখে, কারণ তখন সে ওই নিয়ম-কানুনের অধীন হয়ে যায়, যা তার ধারণ করা বেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো জ্বিন যদি বিড়ালের রূপে আবির্ভূত হয়, আর আপনি যদি তাকে তখন বর্শা বা বল্লম দিয়ে হত্যা করেন, তাহলে ওই জ্বিন হত্যার শিকার হবে। এরকম একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এক আনসার যুবকের মাধ্যমে, যা সহীহ মুসলিমে উল্লেখ করা হয়েছে।সুতরাং জ্বিন কোনো মানুষের ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো ক্ষতি করে না, যতক্ষণ সে নিশ্চিত হতে না পারে যে, ওই ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ, আর এটা নিশ্চিত হতে পারলেই, অর্থাৎ কোনো মানুষ যখন আল্লাহ বিমুখ হয়, তখনই কেবল জ্বিনরা তার ক্ষতি করতে পারে।জ্বিনরা মানুষের ক্ষতি করতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমি আপনাদের নিম্নোক্ত কোনো একটি কাজ না করার ব্যাপারে সতর্ক করব, কারণ আল্লাহ তো আপনাকে অসুস্থতা দিয়ে পরীক্ষাও করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে ধৈৰ্যই হবে আপনার একমাত্র হাতিয়ার, আর ইসলামে নির্দেশিত প্রতিকার বা নিরাময় ব্যবস্থা হবে আপনার একমাত্র পাথেয়।
৫২. ওঝা বা জাদুকর এবং যারা তার কাছে বার বার যান
জ্বিন তার জীবদ্দশায় ওঝা-ডাকিনীবিদের ওপর প্রচুর ক্ষমতা অর্জন করে। তারা অনেক জাদুকরকে অসুস্থ বানিয়ে দেয় এবং অনেককে হত্যাও করে, অতঃপর ওই ডাকিনীবিদের সন্তান-সন্ততির উপর ভর করে জ্বিন, তাদেরকেও বশ করে নেয়, কারণ জ্বিনরা ভালো করেই জানে যে, তাদের কোনো ক্ষমতা নেই।মন্দ জ্বিনরা শুধু ডাকিনীবিদের হয়ে কাজ করে, তার কিছু অনুরোধ রাখে, এ অনুরোধ পূর্ণ করার কারণ হলো, ওই জাদুকর বা ওঝা তার কথা অথবা তার উচ্চারিত মন্ত্রের মাধ্যমে আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে, তার মন্ত্রে এমন কিছু ছিল যা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো সত্ত্বাকে অংশিদার। করে, অথবা সে তার কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কথার প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে। এসব কারণেই জ্বিনরা তার জন্য কাজ করে এবং তার কিছু অনুরোধ পূর্ণও করে। আর অন্যদিকে ওঝা জ্বিনের সকল চাওয়া পূরণ করে, তাকে এটা করতে হয়, কারণ এ ক্ষেত্রে তার অবস্থান হলো। অবমাননার, এখানে তার ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ নেই।শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রঃ) বলেন:যদি কোনো ব্যক্তি রুকইয়াহ তেলাওয়াত করেন এবং এর মাধ্যমে শুধু নিরাময় বা প্রতিকার প্রত্যাশা করেন, তিনি কিন্তু জ্বিন প্রসঙ্গে সীমা লঙ্ঘন করেন না, একইভাবে কোনো জাদুকর যখন জ্বিনদেরকে কাউকে হত্যা করতে বলে যাকে হত্যা করা অনুমোদিত নয় অথবা কাউকে আটক। করার অনুরোধ করে যাকে আটক রাখার দরকার নাই। এক্ষেত্রে জ্বিনরা জাদুকরকে টার্গেট করতে পারে শুধু তার সীমালঙ্ঘনের কারণে, আর এ সীমালঙ্ঘন হল কাউকে হত্যা করা অথবা কাউকে অসুস্থ বানিয়ে দেয়া অথবা কারো পরিবার, শিশু বা গবাদিপশুর ক্ষতি করা। [মাজমুআ ফাতাওয়া, খণ্ড ১৯]যেসব ওঝার কাছে মানুষ বার বার শরণাপন্ন হয় তারা হল বড় ধরনের শয়তান। এদেরকে কাজে লাগিয়ে জ্বিন তাদের চাওয়া পূরণ করে এবং ওঝাদের প্রতি বেশ কিছু শর্তারোপ করে, এসব শর্ত আবার ওঝারা তাদের কাছে প্রায়ই আসা যাওয়া করে এমন লোকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়, যেমন-নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পাখি জবেহ করা, নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া, অথবা কিছু সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট অন্ধকার কক্ষে অবস্থান করা ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ওঝা মর্যাদার দিক দিয়ে যত নিচে নামবে, মন্দ জ্বিনের খারাবি তত বাড়বে, সে তত ভয়ঙ্কর হবে, আর জ্বিনদের সকল শর্ত পালন করা সত্ত্বেও ওই ওঝার কোনো চাওয়াই পূরণ হয় না। আল্লাহ তা'আলা এ প্রসঙ্গে সত্য কথাটা প্রকাশ করে দিয়েছেন:وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا ﴿٦﴾অর্থঃ আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল। (আল-জ্বিন্ন ৭২:৬)
৫৩. যর চক্র এবং যারা প্রায়শই এটা করে
যারা প্রায়শই যর চক্র আয়োজন করে তাদেরও ওপর জ্বিন ও শয়তান সহজেই কর্তৃত্ব অর্জন করে এবং তাদের বিভিন্নভাবে ক্ষতি করে, যারা এ চক্রে অংশগ্রহণ করে তারাও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হন। এ ধরনের জলসার আয়োজন করা হয় মূলত রোগ নিরাময়ের নাম করে, মহিলারা একটি স্থানে একত্রিত হন, তখন জ্বিনরা যর চক্র আয়োজনকারীদের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে, যেমন-নারীদেরকে অলঙ্কার ও সুন্দর পোশাক পরানো, তাদের শ্রেষ্ঠ গহনাগুলো পরিধান করানো, নির্দিষ্ট কিছু পাখি জবেহ করা, মহিলাদের মুখে রক্তের প্রলেপ দেয়া, মোমবাতি জ্বালানো, ড্রাম বা ঢোল বাজানো এবং এ ঢোলের বাজনার তালে তালে সংশ্লিষ্ট মহিলাকে এমন উন্মাদনায় নাচানো যা শয়তানকে খুশি করবে। অনেক ক্ষেত্রেই এ নৃত্যকারী নারী মোটেই অসুস্থ থাকেন না, কিন্তু আসরে। বসে নাচার কারণে জ্বিন এসে তার দেহে অবস্থান নেয়।এসব উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মাঝে, ওই নৃত্যকারী দরিদ্র নারীরা মনে করেন, তার অসুস্থতা ভালো হয়ে গেছে, কিন্তু জ্বিন তখন আরো বেশ বেশ করে তার দাবি পেশ করতে শুরু করবে। আর এ আসরে যতবার ওই নারীর সম্মান বিনষ্ট করা হবে তার সংখ্যাই হল যর চক্র।আমার সামনে মরক্কো থেকে আসা একটি চিঠি রয়েছে, যর চক্র আয়োজনকারী এক ব্যক্তি এটি পাঠিয়েছেন, এ চিঠি থেকে সংক্ষেপে আমি কিছু উদ্ধৃত করব এখানে। আমি এটি এখানে উল্লেখ করব তাদের জন্য, যারা তাদের নারীদেরকে এ ধরনের চক্রে নিয়ে যান, তাদেরকে এখান। থেকে কিছু শিখানোই আমার উদ্দেশ্য।চিঠির লেখক বলছেন:১৯৮৪ সাল থেকে আমি যে কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করেছি তা থেকে প্রণোদিত হয়েই আমি এ চিঠি লিখেছি। আর খোলাখুলিভাবেই বলব, তার একমাত্র কারণ ছিল আমার অবহেলা। যদিও আমি একজন শিক্ষক, সুশিক্ষিত ব্যক্তি, সাবলিলভাবে কোনো জড়তা ছাড়াই আরবী ও ফরাসি ভাষা বলতে পারি, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ি, নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যাই এবং আমি সালাত আদায় করতাম না। খুব ছোট বেলা থেকেই আমি আমার বাড়িতে যর চক্র আয়োজন করতে দেখেছি, আমার বাবা-মা এটা করতেন। ১৯৭৪ সালে আমি আমার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেই, তার গর্ভে আমার এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছিল। এর পর থেকেই আমার অন্য নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এসব নারীরা আমার মায়ের কাছে আসত চিকিৎসার জন্য। আমার কাজ ছিল তাদের জন্য পাখি সংগ্রহ করা এবং তা জবেহ করা, মোমবাতিতে তাদের জন্য লেখা, এবং তাবিজ তৈরি করা।এর দশ বছর পরে-১৯৮৪ সালে-আমি ওয়াসওয়াসায় ভুগতে শুরু করি। দুজন লোককে একসঙ্গে কথা বলতে দেখলেই আমি মনে করতাম, তারা আমাকে নিয়েই কথা বলছে, আর স্বভাবতই আমি কোনো কারণ ছাড়াই তাদের মুখোমুখি হয়ে কলহে লিপ্ত হয়ে যেতাম। ১৯৮৫ সালে আমি আবার বিয়ে করি, মদ্যপান ছেড়ে দেই এবং সালাত আদায় করতে শুরু করি। কিন্তু তখনই অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটল আমার জীবনে। আমি আমার ঘরে অবস্থানকালে প্রায়ই প্রতিবেশির কণ্ঠ শুনতে পেতাম, আমার প্রতিবেশি আমাকে গালি-গালাজ করছে, আমাকে অপমান করছে, আমি তার স্ত্রী ও মেয়েদের গলার আওয়াজও পেতে শুরু করলাম। এভাবে আমি ওই এলাকায় বসবাসরত সকল প্রতিবেশির কণ্ঠ শুনতে শুরু করলাম, তারা প্রত্যেকেই আমাকে যথাসম্ভব নিকৃষ্ট ও অশ্লীল উপায়ে গালিগালাজ করছে, যখন আর ধৈর্য্যের বাধ মানত না, তখন গিয়ে আমি তাদের সঙ্গে ঝগড়া করতাম। আমি বড়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম, ঘুমোতে পারতাম না, এক পর্যায়ে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার প্রতিবেশি ও তার স্ত্রী শপথ করে পর্যন্ত বলেছেন যে, তারা এ ধরনের কথা কখনোই আমাকে বলেননি। কিন্তু তারপরও আমি তাদের গলার আওয়াজ শুনতে পেতাম, এমনকি তারা যখন বাড়িতে থাকতেন না, তখনও তাদের গলার। আওয়াজ শুনতাম।এর কিছু দিন পরে আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিলাম, তার গর্ভেও আমার এক সন্তান ছিল। আবারো মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়লাম। এবং জাদুমন্ত্র পাঠ শুরু করলাম।পনের দিন পরে, আমি এমন কিছু কণ্ঠ শুনতে শুরু করলাম, যা অন্য কেউ শুনতে পেত না, এমনকি তারা আমার কাছে থাকা সত্ত্বেও এটা শুনতে পেত না। যার ফলে কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে আমি জাদুকরদের শরণাপন্ন হলাম। তাদের পেছনে আমার প্রচুর অর্থ খরচ হল, কিন্তু কোনো উপশম বা নিরাময় লাভ হল না। এসব জাদুকরদের কেউ কেউ আমাকে ধুপ পোড়ানোর জন্য শিডিউল তৈরি করে দিল, কেউ আবার আমাকে উটের চুল কিনে ধুপের সঙ্গে পোড়ানোর পরামর্শ দিল, কিন্তু এসবই ছিল নিষ্ফল চেষ্টা। আমি দেখতে খুব কদাকার হয়ে গেলাম, সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতাম, রাতে দেখতাম দুঃস্বপ্ন, বিভিন্ন গলার আওয়াজ শুনতাম এবং খাবারে কোনো স্বাদ পেতাম না।এর কিছু দিন পরে আমরা বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেলাম, কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। ওই অদ্ভুত কণ্ঠ আর আমার পিছু ছাড়ল না। কখনো ওই কণ্ঠগুলো আমাকে হুমকি দিত, কখনো আমাকে বলত অনৈতিক কর্মকাণ্ড করার জন্য। এ সময় আমার বন্ধুরা আমাকে আরেক জাদুকরের খোঁজ দিল, আমি তার কাছে গেলাম এ আশায় যে, হয়ত কাছে আমার জন্য উপশম রয়েছে। সে আমাকে কিছু নাম দিল এবং প্রত্যেক সালাতের পর এগুলো আবৃত্তি করার পরামর্শ দিল। তার পরামর্শ। অনুসারে আমি সবকিছুই করলাম, কিন্তু সবই নিষ্ফল। [মরক্কো থেকে শায়খ ওয়াহীদ বালির কাছে প্রেরিত এক পত্র থেকে নেয়া হয়েছে]আপনারা কি দেখতে পাননি যে, এসব আসরে কী ধরনের অনৈতিক ও মন্দ কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে, এবং জ্বিনরা কিভাবে এ চিঠির লেখকের উপর কতৃর্ত করেছে, এ লোকটিও এ ধরনের যর চক্রের আয়োজন করত। সুতরাং নারীদেরকে এসব আসরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হোন।চিঠির লেখকের উদ্দেশ্যে আমি বলব: আপনার এখন নিম্নোক্ত কাজগুলো করা দরকার:১. আপনি যেসব অনৈতিক কাজ করেছেন তার জন্য দ্রুত তওবা করুন এবং আপনার গুনাহর জন্য চোখের পানি ফেলুন।২. এমন একজন ব্যক্তির কাছে যান, যিনি মহান কুরআনের মাধ্যমে চিকিৎসা করেন, পূর্ববর্তী সেকশনে যার রূপরেখা দেয়া হয়েছে, তিনি যাতে কুরআনিক পদ্ধতিতে আপনার চিকিৎসা করতে পারেন এবং জাদুকরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।৩. নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামায়াতে সালাত আদায় করবেন।৪. সকাল ও সন্ধ্যায় আযকার পাঠ করবেন এবং এ বইয়ের শেষে উল্লেখিত সহীহ দোয়াগুলো পাঠ করবেন।৫. প্রতিদিনই কুরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করবেন এবং বাড়িতে প্রতি তিন দিন পর পর, সূরা বাকারা তেলাওয়াত করবেন।৬. যথাসম্ভব দান সদকা করবেন।৭. কিছু নফল ইবাদত করবেন, যেমন রাত জেগে কিয়াম বা সালাত আদায় করা, নফল রোযা রাখা ইত্যাদি। বেশি বেশি করে এগুলো। করবেন।৮. আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন, বেশি বেশি দোয়া করবেন, যখন দোয়া কবুল হবে, তখন সময় চাইবেন।
৫৪. নবপ্রবর্তিত বৈরাগ্য ও ইবাদত
মানুষের ওপর জ্বিনের কর্তৃত্ব লাভ করার আরেকটি কারণ হল বিদ’আতী আযকার করা, যার জন্য আল্লাহ তা'আলা কোনো নির্দেশনা অবতীর্ণ করেননি।কিছু লোক অন্ধকার কক্ষের নির্জনতায় একা বসে কিছু আয়াত অথবা আল্লাহর নামসমূহ বিদ'আতী কায়দায় আওড়াতে থাকেন, একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এটা পাঠ করেন, নির্দিষ্ট সংখ্যায় এটি পাঠ করেন এবং তারা মনে করেন এসব আয়াত বা এ নামসমূহের একজন সেবক রয়েছে, তাই তারা এ সেবকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং তারা তাকে ডাকতে থাকেন, কিন্তু শয়তান এসে দখল না করা পর্যন্ত তারা এ স্থান থেকে উঠে দাঁড়ান না।শায়খ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ) বলেন:সবশেষে বলতে চাই, বিপথগামী ও বিদআতে লিপ্ত মানুষ হল তারা, যারা শরীয়াহ বহির্ভূত বৈরাগ্যবাদ ও ইবাদত পালন করে, যারা কখনো। কখনো ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্ট করে এবং এর মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে। চায়, শয়তান বা মন্দ জ্বিন যেখানে বিচরণ করে বা এ ধরনের আসরে, যেখানে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ, সেখানে প্রায়ই যাতায়াত করে, কারণ মন্দ জ্বিনরা এখানে আসে এবং তাদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে কথা বলে, যেভাবে তারা গণকের সঙ্গে কথা বলে থাকে। [ইবনে তাইমিয়াহ, মাজমু আল ফাতওয়াহ, ১৯/৪১]
৫৫. অন্যান্য কারণসমূহ
জ্বিনের ভুল মানুষকে টার্গেট করাজ্বিন কখনো কখনো কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই ভুল মানুষকে টার্গেট করতে পারে, যেমনটি করে থাকে বোকা লোকরা।জ্বিনের মানুষের প্রেমে পড়াকখনো জ্বিন মানুষের প্রেমে পড়তে পারে এবং তাকে পাওয়ার আকাক্ষাও করতে পারে, ঠিক যেমনটি ঘটে মানুষের মাঝে, সুতরাং এ কারণেও জ্বিন মানুষের ওপর প্রভাব খাটাতে পারে। মানুষকে জ্বিনের শাস্তি দেয়াঅনেক সময় মানুষ না বুঝে কোনো জ্বিনের ক্ষতি করতে পারে, যেমন-জ্বিনের উপর পড়ে যাওয়া, জ্বিনকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা, জ্বিনের উপর প্রস্রাব করা অথবা জ্বিনের দেহে গরম পানি ঢেলে দেয়া। এসব কারণে মানুষকে জ্বিন তার প্রাপ্যেরও অধিক মাত্রায় শাস্তি দিয়ে থাকে।
পরিচ্ছেদ: যেসব আয়াত জ্বিনকে শাস্তি দেয়
৫৬
১. সূরা আল ফাতিহা (১:১-৭)بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴿١﴾ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿٢﴾ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴿٣﴾ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ﴿٤﴾ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٥﴾ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿٦﴾ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ﴿٧﴾অর্থঃ (১) পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। (২) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। (৩) দয়াময়, পরম দয়ালু, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। (৪) বিচার দিবসের মালিক। (৫) আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই। (৬) আমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন। (৭) তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।২. আয়াতুল কুরসী (বাকারা ২:২৫৫)اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ﴿٢٥٥﴾অর্থঃ আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সব কিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারেনা। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয়না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান।৩. আন-নিসা (৪:১৬৭-১৭৩)إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ قَدْ ضَلُّوا ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿١٦٧﴾ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَظَلَمُوا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا ﴿١٦٨﴾ إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا ﴿١٦٩﴾ يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِن رَّبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ وَإِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿١٧٠﴾ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۖ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ ۚ انتَهُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ ۘ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا ﴿١٧١﴾ لَّن يَسْتَنكِفَ الْمَسِيحُ أَن يَكُونَ عَبْدًا لِّلَّهِ وَلَا الْمَلَائِكَةُ الْمُقَرَّبُونَ ۚ وَمَن يَسْتَنكِفْ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيَسْتَكْبِرْ فَسَيَحْشُرُهُمْ إِلَيْهِ جَمِيعًا ﴿١٧٢﴾ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدُهُم مِّن فَضْلِهِ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ اسْتَنكَفُوا وَاسْتَكْبَرُوا فَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَلَا يَجِدُونَ لَهُم مِّن دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ﴿١٧٣﴾অর্থঃ (১৬৭) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিয়েছে,তারা অবশ্যই চূড়ান্তভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে। (১৬৮) নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং যুলম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথ দেখাবেন না। (১৬৯) জাহান্নামের পথ ছাড়া। তারা তাতে স্থায়ী হবে এবং তা আল্লাহর জন্য সহজ। (১৭০) হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি কুফরী কর, তবে নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনে যা রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (১৭১) হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, 'তিন'। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে যমীনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (১৭২) মাসীহ কখনো আল্লাহর বান্দা হতে (নিজকে) হেয় মনে করে না এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারাও না, আর যারা তাঁর ইবাদাতকে হেয় জ্ঞান করে এবং অহঙ্কার করে, তবে অচিরেই আল্লাহ তাদের সবাইকে তাঁর নিকট সমবেত করবেন। (১৭৩) পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদেরকে তাদের পুরষ্কার পরিপূর্ণ দেবেন এবং তাঁর অনুগ্রহে তাদেরকে বাড়িয়ে দেবেন। আর যারা হেয় জ্ঞান করেছে এবং অহঙ্কার করেছে, তিনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তারা তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।৪. আল মায়িদাহ (৫:৩৩-৩৪)إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿٣٣﴾ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن قَبْلِ أَن تَقْدِرُوا عَلَيْهِمْ ۖ فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿٣٤﴾অর্থঃ (৩৩) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাআযাব। (৩৪) তারা ছাড়া, যারা তাওবা করে তোমরা তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভের পূর্বে; সুতরাং জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।৫. আল আন-আম (৬:৯৩)وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثْلَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ ۗ وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمُ ۖ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ ﴿٩٣﴾অর্থঃ আর তার চেয়ে বড় যালিম কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে, অথবা বলে, ‘আমার উপর ওহী প্রেরণ করা হয়েছে’, অথচ তার প্রতি কোন কিছুই প্রেরণ করা হয়নি? এবং যে বলে ‘আমি অচিরেই নাযিল করব, যেরূপ আল্লাহ নাযিল করেছেন’। আর যদি তুমি দেখতে, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহঙ্কার করতে।৬. আল-আ'রাফ (৭:৪৪-৫১)وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ﴿٤٤﴾ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ كَافِرُونَ ﴿٤٥﴾ وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ وَعَلَى الْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّا بِسِيمَاهُمْ ۚ وَنَادَوْا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَن سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۚ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ ﴿٤٦﴾ وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَارُهُمْ تِلْقَاءَ أَصْحَابِ النَّارِ قَالُوا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ﴿٤٧﴾ وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْأَعْرَافِ رِجَالًا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَاهُمْ قَالُوا مَا أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ ﴿٤٨﴾ أَهَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ ۚ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَا أَنتُمْ تَحْزَنُونَ ﴿٤٩﴾ وَنَادَىٰ أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ ۚ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ ﴿٥٠﴾ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَٰذَا وَمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ ﴿٥١﴾অর্থঃ (৪৪) আর তখন জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে (উপহাস করে) বলবেঃ আমাদের রাব্ব যেসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়েছিলেন, আমরা বাস্তবে তা সত্য রূপে পেয়েছি, তোমরাও কি তোমাদের রাব্বের ও‘য়াদা সত্য ও বাস্তব রূপে পেয়েছো? তখন তারা বলবেঃ হ্যাঁ পেয়েছি। অতঃপর জনৈক ঘোষক ঘোষণা করবে, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (৪৫) ‘যারা আল্লাহর পথে বাধা প্রদান করত এবং তাতে বক্রতা সন্ধান করত এবং তারা ছিল আখিরাতকে অস্বীকারকারী’। (৪৬) আর তাদের মধ্যে থাকবে পর্দা এবং আ‘রাফের উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে,‘তোমাদের উপর সালাম’। তারা (এখনো) তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা করবে। (৪৭) আর যখন তাদের দৃষ্টিকে আগুনের অধিবাসীদের প্রতি ফেরানো হবে, তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না’। (৪৮) আর আ‘রাফের অধিবাসীরা এমন লোকদেরকে ডাকবে, যাদেরকে তারা চিনবে তাদের চিহ্নর মাধ্যমে, তারা বলবে, ‘তোমাদের দল এবং যে বড়াই তোমরা করতে তা তোমাদের উপকারে আসেনি’। (৪৯) এরাই কি তারা যাদের ব্যাপারে তোমরা কসম করতে যে, আল্লাহ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না’। (৫০) আর আগুনের অধিবাসীরা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমাদের উপর কিছু পানি অথবা তোমাদেরকে আল্লাহ যে রিয্ক দিয়েছেন, তা ঢেলে দাও’। তারা বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা কাফিরদের উপর হারাম করেছেন’। (৫১) ‘যারা তাদের দীনকে গ্রহণ করেছে খেলা ও তামাশারূপে এবং তাদেরকে দুনিয়ার জীবন প্রতারিত করেছে’। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখব, যেমন তারা তাদের এ দিনের সাক্ষাতের জন্য কাজ করা ছেড়ে দিয়েছিল। আর (যেভাবে) তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত।৭. আল আনফাল (৮:১২-১৩)إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا ۚ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ ﴿١٢﴾ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ وَمَن يُشَاقِقِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ﴿١٣﴾অর্থঃ (১২) স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদেরকে অনড় রাখ’। অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেব তাদের হৃদয়ে যারা কুফরী করেছে। অতএব তোমরা আঘাত কর ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে। (১৩) এটি এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।৮. আত-তাওবা (৯: ৭)كَيْفَ يَكُونُ لِلْمُشْرِكِينَ عَهْدٌ عِندَ اللَّهِ وَعِندَ رَسُولِهِ إِلَّا الَّذِينَ عَاهَدتُّمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ فَمَا اسْتَقَامُوا لَكُمْ فَاسْتَقِيمُوا لَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ ﴿٧﴾অর্থঃ কীভাবে মুশরিকদের জন্য অঙ্গীকার থাকবে আল্লাহর কাছে ও তাঁর রাসূলের কাছে? অবশ্য যাদের সাথে মসজিদে হারামে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের কথা আলাদা। অতএব যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য ঠিক থাকে, ততক্ষণ তোমরাও তাদের জন্য ঠিক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন।৯. সূরা ইব্রাহীম (১৪:১৫-১৭) وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ ﴿١٥﴾ مِّن وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّاءٍ صَدِيدٍ ﴿١٦﴾ يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ ۖ وَمِن وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ ﴿١٧﴾অর্থঃ (১৫) আর তারা বিজয় কামনা করল, আর ব্যর্থ হল সকল স্বেচ্ছাচারী, হঠকারী। (১৬) এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। (১৭) সে তা গিলতে চাইবে এবং প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব। ১০. আল হিজর (১৫:১৭-১৮)وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ ﴿١٧﴾ إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُّبِينٌ ﴿١٨﴾অর্থঃ (১৭) আর আমি তাকে সুরক্ষিত করেছি প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে। (১৮) তবে যে গোপনে শোনে, তৎক্ষণাৎ সুস্পষ্ট জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তার পিছু নেয়।১১. আল-ইসরা (১৭:১১০-১১১)قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَٰنَ ۖ أَيًّا مَّا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا ﴿١١٠﴾ وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُن لَّهُ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ ۖ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا ﴿١١١﴾অর্থঃ (১১০) বল, ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর। (১১১) আর বল, ‘সমস্ত প্রশংসা আললাহরই, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, রাজত্বে তাঁর কোন শরীক নেই এবং অপমান থেকে বাঁচতে তাঁর কোন অভিভাবকের দরকার নেই।’ সুতরাং তুমি পূর্ণরূপে তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর।১২. আল-আম্বিয়া (২১:৭০)وَأَرَادُوا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَخْسَرِينَ ﴿٧٠﴾অর্থঃ আর তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।১৩. আদ-দুখান (৪৪:৪৩-৫২)إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ ﴿٤٣﴾ طَعَامُ الْأَثِيمِ ﴿٤٤﴾ كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ ﴿٤٥﴾ كَغَلْيِ الْحَمِيمِ ﴿٤٦﴾ خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَاءِ الْجَحِيمِ ﴿٤٧﴾ ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ ﴿٤٨﴾ ذُقْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ ﴿٤٩﴾ إِنَّ هَٰذَا مَا كُنتُم بِهِ تَمْتَرُونَ ﴿٥٠﴾ إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ ﴿٥١﴾ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ ﴿٥٢﴾অর্থঃ (৪৩) নিশ্চয় যাক্কূম বৃক্ষ (৪৪) পাপীর খাদ্য; (৪৫) গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। (৪৬) ফুটন্ত পানির মত (৪৭) (বলা হবে) ‘ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও’। (৪৮) তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (৪৯) (বলা হবে) ‘তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত’। (৫০) নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে। (৫১) নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, (৫২) বাগ-বাগিচা ও ঝর্নাধারার মধ্যে।১৪. আল-আহকাফ (৪৬:২৯-৩৪)وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا ۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ ﴿٢٩﴾ قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٍ مُّسْتَقِيمٍ ﴿٣٠﴾ يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿٣١﴾ وَمَن لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللَّهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِي الْأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءُ ۚ أُولَٰئِكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ﴿٣٢﴾ أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَن يُحْيِيَ الْمَوْتَىٰ ۚ بَلَىٰ إِنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿٣٣﴾ وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِينَ كَفَرُوا عَلَى النَّارِ أَلَيْسَ هَٰذَا بِالْحَقِّ ۖ قَالُوا بَلَىٰ وَرَبِّنَا ۚ قَالَ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿٣٤﴾অর্থঃ (২৯) আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, ‘চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। (৩০) তারা বলল, ‘হে আমাদের কওম, আমরা তো এক কিতাবের বাণী শুনেছি, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাবকে সত্যায়ন করে আর সত্য ও সরল পথের প্রতি হিদায়াত করে’। (৩১) ‘হে আমাদের কওম, আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আন, আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন’। (৩২) আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না সে যমীনে তাকে অপারগকারী নয়। আর আল্লাহ ছাড়া তার কোন অভিভাবক নেই। এরাই স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। (৩৩) তারা কি দেখে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন আর এগুলোর সৃষ্টিতে তিনি ক্লান্ত হননি, তিনি মৃতদেরকে জীবন দিতে সক্ষম? অবশ্যই হ্যাঁ, নিশ্চয় তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (৩৪) আর যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের কাছে পেশ করা হবে (বলা হবে), ‘এটা কি সত্য নয়’? তারা বলবে, ‘অবশ্যই হ্যাঁ, আমাদের রবের কসম তিনি বলবেন, ‘তাহলে আযাব আস্বাদন কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করছিলে’।১৫. আল-হাজ্জ্ব (২২:১৯-২২)هَٰذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ ۖ فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ ﴿١٩﴾ يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ ﴿٢٠﴾ وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ ﴿٢١﴾ كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ ﴿٢٢﴾অর্থঃ (১৯) এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্ত্তত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। (২০) যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। (২১) আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ী। (২২) যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন কর।১৬. আল-মারিয়াম (১৯:৬৮-৭২)فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا ﴿٦٨﴾ ثُمَّ لَنَنزِعَنَّ مِن كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَٰنِ عِتِيًّا ﴿٦٩﴾ ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِالَّذِينَ هُمْ أَوْلَىٰ بِهَا صِلِيًّا ﴿٧٠﴾ وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا ۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا ﴿٧١﴾ ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا ﴿٧٢﴾অর্থঃ (৬৮) অতএব তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে ও শয়তানদেরকে সমবেত করব, অতঃপর জাহান্নামের চারপাশে নতজানু অবস্থায় তাদেরকে হাযির করব। (৬৯) তারপর প্রত্যেক দল থেকে পরম করুণাময়ের বিরুদ্ধে সর্বাধিক অবাধ্যকে আমি টেনে বের করবই। (৭০) উপরন্তু আমি সর্বাধিক ভাল জানি তাদের সম্পর্কে, যারা জাহান্নামে দগ্ধীভূত হবার অধিকতর যোগ্য। (৭১) আর তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে, এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। (৭২) তারপর আমি এদেরকে মুক্তি দেব যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর যালিমদেরকে আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায়।১৭. আল-মুলক (৬৭:৫-১১)وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ ﴿٥﴾ وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ ﴿٦﴾ إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ ﴿٧﴾ تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ ۖ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ ﴿٨﴾ قَالُوا بَلَىٰ قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ ﴿٩﴾ وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ ﴿١٠﴾ فَاعْتَرَفُوا بِذَنبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيرِ ﴿١١﴾অর্থঃ (৫) আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব। (৬) আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর কতইনা নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল! (৭) যখন তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট শব্দ শুনতে পাবে। আর তা উথলিয়ে উঠবে। (৮) ক্রোধে তা ছিন্ন-ভিন্ন হবার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি’? (৯) তারা বলবে, ‘হ্যাঁ, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল। তখন আমরা (তাদেরকে) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছ’। (১০) আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের মধ্যে থাকতাম না’। (১১) অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের জন্য।জ্বিন যদি অনেক ধূর্ত ধরনের হয় এবং চলে যেতে অস্বীকার করে, প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তাহলে রক্বির ভারতীয় কস্টাস (সুগন্ধীযুক্ত বৃক্ষ) বৃক্ষের তৈরি নাকের ড্রপ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
পরিচ্ছেদ: জ্বিন যদি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এবং আবার ফিরে আসে, তাহলে যে যে আয়াত পাঠ করতে হবে
৫৭
১. সূরা আল বাকারা (২:৯৯-১০১)وَلَقَدْ أَنزَلْنَا إِلَيْكَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۖ وَمَا يَكْفُرُ بِهَا إِلَّا الْفَاسِقُونَ ﴿٩٩﴾ أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوا عَهْدًا نَّبَذَهُ فَرِيقٌ مِّنْهُم ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿١٠٠﴾ وَلَمَّا جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ كِتَابَ اللَّهِ وَرَاءَ ظُ,هُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ﴿١٠١﴾অর্থঃ (৯৯) আর আমি অবশ্যই তোমার প্রতি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নাযিল করেছি, ফাসিকরা ছাড়া অন্য কেউ তা অস্বীকার করে না। (১০০) তবে কি যখনই তারা কোন ওয়াদা করেছে, তখনই তাদের মধ্য থেকে কোন এক দল তা ছুড়ে মেরেছে? বরং তাদের অধিকাংশ ঈমান রাখে না। (১০১) আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে একজন রাসূল এল, তাদের সাথে যা আছে তা সমর্থন করে, তখন আহলে কিতাবের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পেছনে ফেলে দিল, (এভাবে যে) মনে হয় যেন তারা জানে না।২. সূরা আল আনফাল (৮:৫৫-৫৮)إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿٥٥﴾ الَّذِينَ عَاهَدتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنقُضُونَ عَهْدَهُمْ فِي كُلِّ مَرَّةٍ وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ ﴿٥٦﴾ فَإِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِي الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِم مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ ﴿٥٧﴾ وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِن قَوْمٍ خِيَانَةً فَانبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَىٰ سَوَاءٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ ﴿٥٨﴾অর্থঃ (৫৫) নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী তারা, যারা কুফরী করে, অতঃপর ঈমান আনে না। (৫৬) যাদের থেকে তুমি অঙ্গীকার নিয়েছ, অতঃপর তারা প্রতিবার তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং তারা ভয় করে না। (৫৭) সুতরাং যদি তুমি যুদ্ধে তাদেরকে নাগালে পাও, তাহলে এদের মাধ্যমে এদের পেছনে যারা রয়েছে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দাও, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে। (৫৮) আর যদি তুমি কোন কওম থেকে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা কর, তাহলে (তাদের চুক্তি) তাদের দিকে সোজা নিক্ষেপ কর, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের পছন্দ করেন না।৩. সূরা আত-তাওবাহ (৯:১২-১৪)وَإِن نَّكَثُوا أَيْمَانَهُم مِّن بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ۙ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنتَهُونَ ﴿١٢﴾ أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُم بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣﴾ قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ ﴿١٤﴾অর্থঃ (১২) আর যদি তারা তাদের অঙ্গীকারের পর তাদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দীন সম্পর্কে কটূক্তি করে, তাহলে তোমরা কুফরের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, নিশ্চয় তাদের কোন কসম নেই, যেন তারা বিরত হয়। (১৩) তোমরা কেন এমন কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর না, যারা তাদের কসম ভঙ্গ করেছে এবং রাসূলকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে, আর তারাই প্রথমে তোমাদের সাথে আরম্ভ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় করছ? অথচ আল্লাহ অধিক উপযুক্ত যে, তোমরা তাঁকে ভয় করবে, যদি তোমরা মুমিন হও। (১৪) তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে আযাব দেবেন এবং তাদেরকে অপদস্থ করবেন, আর তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং মুমিন কওমের অন্তরসমূহকে চিন্তামুক্ত করবেন।৪. আন-নাহল (১৬:৯০-৯১)إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ﴿٩٠﴾ وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ ﴿٩١﴾আল্লাহ ন্যায়-বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দেরকে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন, আর তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, অপকর্ম আর বিদ্রোহ থেকে। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। তোমরা পরস্পর অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলে আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, নিজেদের অঙ্গীকার পাকা-পোখত করার পর তা ভঙ্গ করো না, যেহেতু তোমরা আল্লাহকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছ, তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে ওয়াকেফহাল।
পরিচ্ছেদ: জ্বিন ও মানুষের ভালোবাসার চিকিৎসা
৫৮
প্রথমে সূরা ফাতিহা, বাকারা, ইউসুফ, নূর, আস-সাফফাত, আল ইখলাস ফালাক ও নাস রেকর্ড করতে হবে। রোগী এ সূরাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবেন এবং কুরআন পাঠ করা হয়েছে এমন পানি পান করবেন এবং শরীরে যয়তুন তেল মালিশ করবেন, নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এভাবে করতে থাকবেন। অতঃপর সকাল-সন্ধ্যা সামনের ও পেছনের দিক কস্তুরি দিয়ে মালিশ করতে হবে।
পরিচ্ছেদ: জ্বিনের ক্ষতি এড়ানো এবং শয়তান থেকে রক্ষার দশটি উপায়
৫৯
১. শয়তানের ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।২. সূরা ফালাক ও নাস তেলাওয়াত করা, কারণ বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এ দুটি সূরা নাযিল না হওয়া পর্যন্ত জ্বিনের ক্ষতি ও মানুষের বদনজর থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।৩. আয়াতুল কুরসী তেলাওয়াত করা। ৪. সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা। ৫. সূরা বাকারার শেষ দু আয়াত তেলাওয়াত করা। ৬. সূরা গাফিরের প্রথম অংশ তেলাওয়াত করা। ৭. বার বার নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা:لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌউচ্চারণঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদ, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদির।”অর্থঃ “আল্লাহ ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো অংশিদার নেই, নেই কোনো সহযোগী, এ রাজত্ব তাঁর, সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।”৮. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, বিভিন্ন অবস্থায় হাদিসে বর্ণিত আযকার পাঠ করা।৯. অযু করা ও সালাত আদায় করা।১০. অপ্রয়োজনীয় তাকানো, কথা বলা, খাওয়া এবং মানুষের সঙ্গে মেশা থেকে বিরত থাকা, কারণ এ চারটি বিষয় অমান্য করলে মানুষের আধ্যাত্মিকতা দুর্বল হয়ে যায় এবং এ অবস্থায় জ্বিন বা শয়তানের তার উপর ক্ষমতা অর্জন করা সহজ হয়ে যায়।