পরিচ্ছেদ: জ্বিনের আক্রমণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষার উপায়

২২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে ও ইসলামী শরিয়তের অনুসরণ করতে হবে

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন:وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌঅর্থঃ আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী। (সূরা যুখরুফ: ৩৬)হাদীসে এসেছে -রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন ঘুমিয়ে যায় শয়তান তখন তার মাথার কাছে বসে তিনটি গিরা লাগায়। প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় একটি কথা বলে: তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও। যখন সে নিদ্রা থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। এরপর যখন সে অজু করে তখন আরেকটি গিরা খুলে যায়। এরপর যখন নামাজ পড়ে তখন শেষ গিরাটি খুলে যায়। ফলে সে সারাদিন কর্মতৎপর ও সুন্দর মন নিয়ে দিন কাটায়। আর যদি এমন না করে, তাহলে সারাদিন তার কাটে খারাপ মন ও অলসভাব নিয়ে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল:১. ঠিকমত অজু করলে, নামাজ আদায় করলে শয়তানের চড়াও থেকে মুক্ত থাকা যায়।২. খারাপ মন নিয়ে থাকা ও অলসতা শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল। ৩. রীতিমত নামাজ আদায় করলে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে। কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। অলসতা দূর হয়ে যায়।৪. ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে অজু গোসল করার আগেই আল্লাহর জিকির করা উচিত। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার নির্দিষ্ট দোয়া আছে। এটি পাঠ করা সুন্নত। এতে শয়তানের কুপ্রভাব দূর হয়ে যায়।

২৩. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পাঠ করা

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবে, بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি, লা- 'হাওলা ওয়ালা-ক্বুওয়্যাতা ইল্লা- বিল্লাহ।অর্থঃ আল্লাহরই নামে আল্লাহর উপর নির্ভর করে বের হলাম। আর তার সামর্থ ব্যতীত পাপ থেকে বাচাঁর উপায় নেই এবং তার শক্তি ব্যতীত ভাল কাজ করা যায় না।তখন তাকে বলা হয়, তোমার জন্য এটা যথেষ্ট, তোমাকে সুরক্ষা দেয়া হল এবং তোমাকে পথের দিশা দেয়া হল। আর শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায়। (বর্ণনায়: আবু দাউদ ও তিরমিজী)

২৪. পেশাব পায়খানাতে যাওয়ার সময় দোয়া পাঠ করা

হাদীসে এসেছে-রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন পেশাব পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন বলতেন -بِسْمِ اللَّهِ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছঅর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: এ সকল পেশাব পায়খানার স্থানে জ্বীন শয়তান থাকে। অতএব তোমাদের কেহ যখন এখানে আসে সে যেন বলে, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছ। (বর্ণনায়: ইবনে হিব্বান)

২৫. প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করা

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্‌রি মা-খালাক্বঅর্থঃ আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে। (বর্ণনায়: মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ)অন্য বর্ণনায় এসেছে,এক ব্যক্তি নবী কারীম (ﷺ) এর কাছে এসে বলল, গত রাতে আমাকে একটি বিচ্ছুতে দংশন করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যখন সন্ধ্যা হবে তখন তুমি বলবে, أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্‌রি মা-খালাক্বতাহলে তোমাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারত না। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৯)অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- একটি জ্বীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আছর করতে চেয়েছিল। তার সাথে আরেকটি জ্বীন ছিল। জিব্রাইল এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আপনি এ বাক্যটি বলুন তাহলে ওরা আপনাকে কিছু করতে পারবে না। (বর্ণনায়: ইবনে আবি হাতেম) এমনিভাবে কেউ যখন কোন স্থানে যায় আর এ দোয়াটি পাঠ করে তাহলে তাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন স্থানে অবতরণ করল অতঃপর বলল: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্‌রি মা-খালাক্বঅর্থঃ আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে। তখন তাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ সে ওখানে অবস্থান করবে। (বর্ণনায়: মুসলিম, খাওলা বিনতে হাকীম থেকে)

২৬. প্রতিদিন নিদ্রা গমনকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা

হাদীসে এসেছে -قلت: يا رسول اللَّه شكا حاجة شديدة وعيالا ، فرحمته فخليت سبيله ، قال: ( أما إنه كذبك ، وسيعود ) . فرصدته الثالثة ، فجاء يحثو من الطعام ، فأخذته فقلت: لأرفعنك إلى رسول اللَّه ، وهذا آخر ثلاث مرات تزعم لا تعود ، ثم تعود ، قال: دعني أعلمك كلمات ينفعك اللَّه بها ، قلت ماআবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে যাকাতের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব দিলেন। দেখলাম, কোন এক আগন্তুক এসে খাদ্যের মধ্যে হাত দিয়ে কিছু নিতে যাচ্ছে। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, আমি খূব দরিদ্র মানুষ। আমার পরিবার আছে। আমার অভাব মারাত্নক। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত রাতের আসামীর খবর কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার প্রচন্ড অভাবের কথা আমার কাছে বলেছে। আমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখবে সে আবার আসবে।আমি এ কথায় বুঝে নিলাম সে আবার আসবেই। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সে আবার আসবে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। সে পরের রাতে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত দিয়ে খুঁজতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি খুব অসহায়। আমার পরিবার আছে। আমি আর আসবো না। আমি এবারও তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম, তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার চরম অভাবের কথা আমার কাছে বলেছে। তার পরিবার আছে। আমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখো, সে আবার আসবে।তৃতীয় দিন আমি অপেক্ষায় থাকলাম, সে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুঁজতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে যাবো। তুমি তিন বারের শেষ বার এসেছ। বলেছ, আসবে না। আবার এসেছ। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেবো যা তোমার খুব উপকারে আসবে। আমি বললাম কী সে বাক্যগুলো? সে বলল, যখন তুমি নিদ্রা যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমাকে কিছু উপকারী বাক্য শিক্ষা দিয়েছে, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে সে কী শিক্ষা দিয়েছে? আমি বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি নিদ্রা যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে যদিও সে মিথ্যাবাদী। হে আবু হুরাইরা (রাঃ)! গত তিন রাত যার সাথে কথা বলেছো তুমি কি জানো সে কে?আবু হুরাইরা (রাঃ) বলল, না, আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে হল শয়তান। (বর্ণনায়: বুখারী)এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:১. জনগণের সম্পদ পাহাড়া দেয়া ও তা রক্ষা করার জন্য আমানতদার দায়িত্বশীল নিয়োগ দেয়া কর্তব্য। আবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) ছিলেন একজন বিশ্বস্ত আমানতদার সাহাবী।২. আবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) দায়িত্ব পালনে একাগ্রতা ও আন্তরিকতার প্রমাণ দিলেন। তিনি রাতেও না ঘুমিয়ে যাকাতের সম্পদ পাহাড়া দিয়েছেন।৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এটি একটি মুজেযা যে, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও আবু হুরাইরা (রাঃ)র কাছে বর্ণনা শুনেই বুঝতে পেরেছেন শয়তানের আগমনের বিষয়টি।৪. দরিদ্র অসহায় পরিবারের বোঝা বাহকদের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের দয়া ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ দয়াকে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ) (রাঃ) কে বললেন না, তাকে কেন ছেড়ে দিলে? কেন দয়া দেখালে?৫. সাহাবায়ে কেরামের কাছে ইলম বা বিদ্যার মূল্য কতখানি ছিল যে, অপরাধী শয়তান যখন তাকে কিছু শিখাতে চাইল তখন তা শিখে নিলেন ও তার মূল্যায়নে তাকে ছেড়েও দিলেন।৬. খারাপ বা অসৎ মানুষ ও জ্বীন শয়তান যদি ভাল কোন কিছু শিক্ষা দেয় তা শিখতে কোন দোষ নেই। তবে কথা হল তার ষড়যন্ত্র ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, তবে সে মিথ্যুক। এ বিষয়টিকে শিক্ষার একটি মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করা যায়।৭. জ্বীন শয়তান মানুষের খাদ্য-খাবারে হাত দেয়। তা থেকে গ্রহণ করে ও নষ্ট করে।৮. আয়াতুল কুরসী একটি মস্তবড় সুরক্ষা। যারা আমল করতে পারে তাদের উচিত এ আমলটি ত্যাগ না করা। রাতে নিদ্রার পূর্বে এটি পাঠ করলে পাঠকারী সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকবে ও জ্বীন শয়তান কোন কিছু তার উপর চড়াও হতে পারবে না।৯. আয়াতুল কুরসী হল সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং এই আয়াত:اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُঅর্থঃ আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।

২৭. খাবার সময় বিসমিল্লাহ বলা ও ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পাঠ করা

হাদীসে এসেছে-যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করার সময় ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর জিকির (বিসমিল্লাহ্ বলে) করে তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার খাবার নেই ও রাত্রি যাপনও নেই। আর যখন ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার রাত যাপন হবে। আর যখন খাবার সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার রাত যাপন ও খাবার দুটোরই ব্যবস্থা হল। (বর্ণনায়: মুসলিম হাদীস নং ২০১৮)ঘরে প্রবেশের সময় নির্দিষ্ট দোয়া আছে সেটি পাঠ করবে। দোয়া মুখস্থ না থাকলে কমপক্ষে বিসমিল্লাহ্ . . বলে ঘরে প্রবেশ করবে। এমনিভাবে খাবার সময় বিসমিল্লাহ . . বলে খাওয়া শুরু করবে।

২৮. হাই তোলার সময় মুখে হাত দেয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,إذا تثاءب أحدكم فليمسك على فيه ، فإن الشيطان يدخلযখন তোমাদের কেউ হাই তোলে তখন সে যেন তার মুখে হাত দিয়ে বাধা দেয়। কারণ হাই তোলার সময় শয়তান প্রবেশ করে। (বর্ণনায়: মুসলিম ও আবু দাউদ)

২৯. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা

খারাপ জ্বীন শয়তান অপবিত্র ও নাপাক স্থানে বিচরণ করে থাকে। জ্বীনের আছর থেকে বাঁচতে সর্বদা অপবিত্র ময়লাযুক্ত স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে। বাচ্চাদের ময়লা আবর্জনা ও নোংড়া অবস্থা থেকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।যেমন: যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, এ সকল প্রস্রাব পায়খানার নোংড়া স্থানগুলোতে শয়তানরা উপস্থিত থাকে। যখন তোমাদের কেহ এখানে আসবে তখন যেন সে বলে,بِسْمِ اللَّهِ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছঅর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে। [বর্ণনায়: আবু দাউদ, বুখারীঃ ১৪২]অতএব আমরা এ হাদীস থেকে বুঝলাম জ্বীন, ভূত, শয়তান নোংড়া স্থানে অবস্থান করে। এ সকল নোংড়া স্থান থেকে সকলের দূরে থাকা উচিত।‏শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, সাধারণত জ্বীনের ময়লা আবর্জনা, মল-মুত্র ত্যাগের স্থান ডাষ্টবিন ও কবর স্থানে অবস্থান করে। (মজমুআল ফাতাওয়া)

৩০. ঘরে আল কুরআন তেলাওয়াত করা বিশেষ করে সূরা আল বাকারা পাঠ করা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা ঘর-কে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা আল বাকারা তেলাওয়াত করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে দূরে থাকে। (মুসলিম: ৭৮০)এ হাদীস থেকে আমরা ঘরে আল কুরআন তেলাওয়াত করার নির্দেশ জানলাম। ঘরকে কবরে পরিণত করবে না, এর মানে হল ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করবে। আর সূরা আল বাকারা ঘরে তেলাওয়াত করলে শয়তান ঘর থেকে পালিয়ে যায়। আমরা জানি সূরা আল বাকারাতেই রয়েছে আয়াতুল কুরসী।

৩১. কোন গর্তে পেশাব-পায়খানা না করা

হাদীসে এসেছে - রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞস করা হল এ নিষেধের কারণ কি? তিনি বললেন, বলা হয়ে থাকে গর্ত হল জ্বীনদের থাকার জায়গা। (বর্ণনায়: আবু দাউদ)

৩২. ঘরে কোন সাপ দেখলে তা মারতে তাড়াহুড়ো না করা

যদি ঘরে কোন সাপ দেখা যায় তবে সাথে সাথে তাকে না মেরে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা। তাকে ঘর ছেড়ে যেতে বলা। তারপর যদি না যায় তাহলে মেরে ফেলা।হাদীসে এসেছে -হিশাম ইবনে যাহরার মুক্ত দাস আবু সায়েব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সায়ীদ খুদরি (রাঃ) এর সাথে দেখা করার জন্য গেলাম। তাকে নামাজ পড়া অবস্থায় পেলাম। আমি তার নামাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলাম। এমন সময় তার ঘরের খাটের নীচে কিছু একটা নড়াচড়া করার শব্দ পেলাম। চেয়ে দেখি একটি সাপ। আমি সেটাকে মেরে ফেলতে উঠে দাঁড়ালাম। আবু সায়ীদ (রাঃ) আমাকে বসতে ইশারা দিলেন। যখন নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে বাড়ীর একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বললেন, তুমি কি এ ঘরটি দেখছো? আমি বললাম হ্যাঁ, দেখছি। তিনি বললেন, এ ঘরে বসবাস করত একজন যুবক। সে নববিবাহিত ছিল। একদিন সে খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে যোগ দিল। যেহেতু সে নব বিবাহিত যুবক, তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে অনুমতি চেয়ে বলল, হে রাসূল! আমি নববিবাহিত। আমাকে আমার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে অনুমতি দিলেন, আর বললেন, সাথে অস্ত্র নিয়ে যেও। আমি তোমার উপর বনু কুরাইযার হামলার আশঙ্কা করছি। যুবকটি তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। ঘরে পৌছে দেখল, তার স্ত্রী ঘরের বাহিরে দরজার দু পাটের মাঝে দাঁড়ানো। এ অবস্থা দেখে তার আত্নসম্মান বোধে আঘাত লাগল। সে বর্শা দিয়ে তাকে আঘাত করতে উদ্যত হল। স্ত্রী বলল, তাড়াহুড়ো করো না। আগে ঘরে প্রবেশ করে দেখ তোমার ঘরের মধ্যে কি? সে ঘরে ঢুকে দেখল, তার বিছানায় একটি সাপ গোল হয়ে শুয়ে আছে। যুবকটি বর্শা দিয়ে সাপের গায়ে আঘাত করল। এরপর এটাকে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসল। সাপটি বর্শার মাথায় ছটফট করছিলো। আর যুবকটি তখন মরে পড়ে গেল। কেহ জানে না, কে আগে মরেছে, যুবকটি না সাপটি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করা হল। তিনি বললেন, মদীনাতে কিছু জ্বীন আছে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। যদি তোমাদের কেহ তাদের কাউকে দেখে তাহলে তাকে তিন দিনের সময় দেবে। তিন দিনের পরও যদি তাকে দেখা যায় তাহলে তাকে হত্যা করবে। কারণ, সে শয়তান। (বর্ণনায়: মুসলিম, সাপ হত্যা অধ্যায়।)এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:১. সাহাবায়ে কেরাম অন্যকে ইসলামী বিধি-বিধান ও নবী কারীম (ﷺ) এর সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে।২. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মতের প্রতি কত দয়াশীল ছিলেন যে, যুদ্ধকালীন সময়ে কেউ স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তা তিনি সাথে সাথে দিয়ে দিতেন। কখনো দেখা গেছে তিনি তার সাহাবীদের নিজের পক্ষ থেকেই জিজ্ঞেস করতেন, কত দিন হল তুমি বিবাহ করেছ? তোমার বাড়ীতে কে আছে? তোমাকে ছুটি দিলাম তুমি বাড়ীতে স্ত্রীর কাছে যাও। ৩. ঘরে কোন সাপ দেখলে সাথে সাথে হত্যা করতে নেই। হতে পারে সে জ্বীন। তবে যদি সাপ দেখে বা এর আচার-আচরণ, আলামত দেখে বুঝে আসে এটা জ্বীন নয়, সাপ। তখন হত্যা করা দোষণীয় নয়। আলোচ্য হাদীসে দেখুন, সাপটি বিছানার উপর শুয়ে ছিল। যদি সে সাপ হয়, তাহলে বিছানার উপর তার কী প্রয়োজন? সে ইঁদুর বা পোকা-মাকর খুঁজবে।৪. ঘরে এ রকম সন্দেহ জনক সাপ দেখলে তাকে উচ্চস্বরে ঘর ছেড়ে যেতে বলবে। এভাবে তিন দিন বলার পরও সে না গেলে তাকে হত্যা করে ফেলবে।৫. বনে জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে, রাস্তায় কোন সাপ দেখলে জ্বীন মনে করার কোন কারণ নেই। তাকে মেরে ফেলতে হবে। শুধু ঘরের সাপকে জ্বীন বলে সন্দেহ করা যায়। একটি সহীহ হাদীসে এটি স্পষ্ট বলা আছে।৬. সাপটি জ্বীন ছিল বিধায় সে নিজেকে হত্যা করার অপরাধে হত্যাকারীকে আঘাত করে হত্যা করেছে। কিন্তু সাপটি কিভাবে যুবকটিকে আঘাত করল তা কেউ দেখেনি।৭. সাপটি মুসলিম জ্বীন ছিল বলে রাসূল (ﷺ) এর কথায় ইশারা পাওয়া যায়। সে শুরুতেই তাকে আঘাত করেনি। বা তার স্ত্রীর কোন ক্ষতি করেনি।৮. রাসূলুল্লা (ﷺ) ছিলেন রহমাতুললিল আলামীন বা সৃষ্টিকুলের জন্য করুণা। তাই তিনি জ্বীনের প্রতিও করুণা-রহমত দেখিয়েছেন। এ হাদীসটি ছাড়াও অন্যান্য অনেক হাদীস রয়েছে এ বিষয়ে।৯. কারণ সে শয়তান রাসলুল্লাহ (ﷺ) এর এ কথার অর্থ হল, সে জ্বীন নয়, সে প্রাণীদের মধ্যে দুষ্ট ও ক্ষতিকর। তাকে হত্যা করো।১০. জ্বীনকে অযথা হত্যা করা অন্যায়।

৩৩. স্ত্রীর সাথে মিলনের সময় দোয়া পাঠ করা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন নিজ স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে ইচ্ছে করে তখন যদি বলে -بِاسْمِ اللَّهِ اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَاউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি, আল্লা-হুম্মা, জান্নিব্‌নাশ্‌ শাইত্বা-না ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বা-না মা রাযাক্ক্‌তানা-অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে, হে আল্লাহ্‌, আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যা রিযক দিবেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন।তাহলে এ মিলনে সন্তান জন্ম নিলে সে সন্তানকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

৩৪. সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদেরকে বাহিরে বের হতে না দেয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,যখন রাত্রি ডানা মেলে অথবা তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও, তখন সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখবে। বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে। কারণ, তখন শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যায় তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারো। আর দরজা বন্ধ করে দেবে। আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। জেনে রাখো, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। (বর্ণনায়: বুখারী)এ হাদীস থেকে আমরা নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো জানতে পারলাম:১. সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার নির্দেশ।২. সন্ধ্যার আগে বাচ্চাদের ঘরে আসার জন্য বলতে হবে। তখন তাদের ঘর থেকে বের হতে বারণ করবে।৩. সন্ধ্যার কিছু পরে এ আশঙ্কা থাকে না। তখন বাচ্চাদের বের হতে বারণ নেই।৪. সন্ধ্যার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার নির্দেশ।৫. আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, জ্বীন বা শয়তান ঘরের বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।৬. দরজা খোলা ও বন্ধের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৩৫. জ্বীনদের কাছে আশ্রয় চাওয়া বা তাদের সাহায্য না নেয়া

মানুষ যদি জ্বীনদের কাছে কোন কিছু চায় বা তাদের সাহায্য গ্রহণ করে তাহলে তাদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। তারা মানুষের উপর চড়াও হতে উৎসাহ পায়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِنَ الْإِنْسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًاঅর্থঃ আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জ্বীনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল। (সূরা আল জ্বীন: ৬)অনেক ওঝা ফকীর-কে দেখা যায় তারা তাবিজ-তদবীরের ক্ষেত্রে জ্বীনের সাহায্য নেয়, এটা অন্যায়।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা