পরিচ্ছেদ: জ্বিন দ্বারা সংঘটিত রোগ ও ক্ষতির ধরণ

৩৬. ভুমিকা

জ্বিন মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি ও ক্ষতি করতে পারে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, মেজাজ, দেহ, সম্পদ, অবস্থান, ব্যবসা, সম্পর্ক ও পড়ালেখার ক্ষতি করতে সক্ষম।আমরা এখানে যে অসুস্থতার কথা আলোচনা করব, তা মানুষের ওপর জ্বিনের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ অথবা ডাকিনীবিদের কারণে সংঘটিত হতে পারে। আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এসব রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করব। এসব অসুস্থতা হলো নিম্নরূপঃ১. তীব্র ভয়২. মানসিক ও স্নায়ু রোগ (উন্মাদ রোগ, বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা, মৃগীরোগ, ওয়াসওয়াসা, ব্যক্তিত্বের ঘাটতি)৩. শারীরিক অসুস্থতা (যেসব অসুস্থতা মানুষের তৈরি ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করা যায় না, এবং যার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানেও কোনো নিরাময় নেই)৪. হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিবিভ্রম৫. মানুষের মাঝে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে শত্রুতা ও বিভাজন তৈরি করা, যেমন-স্বামী ও স্ত্রী, ব্যবসায়িক অংশীদার, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে৬. স্ত্রীরোগ (বন্ধ্যাত্ব, অতিরিক্ত রক্তপাত, অনিয়মিত রজঃচক্র, ইনফেকশন ইত্যাদি)৭. যৌন সমস্যা (অক্ষমতা, অপরিণত বয়সে বীর্যপাত)৮. মানুষের বাড়িঘর ও বস্তুগত সম্পদের ক্ষতি করা (ঘরের আসবাবপত্র চারদিকে ছুঁড়ে ফেলা, ঘরের চালে পাথর নিক্ষেপ করা)

৩৭. তীব্র ভয়

জ্বিনের কারণে ভয় পাওয়ার দুটি দিক রয়েছে। একটি সঠিক, অন্যটি সঠিক নয়। সঠিক দিকটি হল, কিছু জ্বিন মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এর মাধ্যমে তারা মানুষকে বিভিন্ন কণ্ঠস্বর শোনায়, কিছু দেখায় এবং তার মধ্যে এমন একটি অনুভূতি তৈরি করে দেয় যে, তার মনে হবে কেউ যেন তার পিছু পিছু আসছে বা তাকে অনুসরণ করছে এবং এই অনুভূতি তৈরির মাধ্যমে তারা মানুষকে তার নিজ বাড়িতেও ভয় পাইয়ে দেয়। এই ভয় দূর করার জন্য নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে, সকালে ও সন্ধ্যায় আযকার করতে হবে, আর এই ভয়ের কারণে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অনুসরণ করতে হবে বিশেষ কর্মসূচি।আর ভুল দিকটি হল জ্বিনকে নিয়ে মানুষের মনে প্রোথিত গভীর আতঙ্ক। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব ভয় যাচাই করার কোনো উপায় নেই। তাই এখন আমরা একটি রূপরেখা তৈরি করব যে, কেন মানুষ জ্বিনকে এত ভয় পায়, জ্বিনের নাম উল্লেখ করলেই কেন তারা আতঙ্কে শিউরে ওঠে, তাহলেই আমরা এ সমস্যাটি ধরতে পারব এবং এর প্রতিকারও করতে পারব।যেসব কারণে মানুষ জ্বিনকে ভয় পায়১. ভয় পাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধানতম হল তাওহীদ সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা। কোনো স্থানে যদি তাওহীদ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব থাকে, তাহলে সেখানে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করে। পুরাণ বিজয়ী হয়, মন্দরা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। হাতুড়ে ওঝারা তাদের মিথ্যা জ্ঞান চর্চার জন্য পাবে উর্বর ভূমি এবং শয়তানও তাদের কাজে সহায়তা করবে। আর এ কারণেই মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে, জ্বিনরা অদৃশ্যের খবর জানতে সক্ষম, তারা সুবিধা বয়ে আনতে পারে এবং ক্ষতি প্রতিহত করতে পারে, অথচ এসব গুণাবলী একমাত্র আল্লাহ তা'আলার। এ কারণে জ্বিনের নামোল্লেখ মাত্রই মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যায়।২. বানোয়াট গল্পের ব্যাপক প্রসার। লোকেরা এ ধরনের গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে এবং শোনার পর তারা এগুলোকে বিস্ময়কর গতিতে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এসব গল্প নারী, শিশু ও দুর্বলচিত্তের মানুষের মাঝে সহজেই ভয় তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।৩. জাদুকররাও এ ভয়, এসব গল্প ও পুরাণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।৪. শরীয়াহ-তে নির্দেশিত আযকার তেলাওয়াতে অবহেলা ও ব্যর্থতার কারণে অনেক সময় মানুষের মাঝে জ্বিন অবস্থান নেয়, অনেক ক্ষেত্রে এর কারণে মানুষ জ্বিনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়।

৩৮. মানসিক ও স্নায়ুরোগ

জ্বিন দ্বারা যেসব রোগ সংঘটিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হল মানসিক ও স্নায়ুরোগ, যেমন-উন্মাদরোগ, বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি। কিন্তু এ কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়, যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নির্দেশিত মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির ভূমিকা অস্বীকার করবেন, তারা ঠিক কাজ করবেন না। কুরআনে নির্দেশিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও বিজ্ঞানে নির্দেশিত মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে কোনো বিরোধ বা সংঘর্ষ নেই। হাসপাতাল ও মানসিক রোগের ক্লিনিকগুলোতে, কুরআনিক চিকিৎসার জন্যও একটি বিভাগ থাকা দরকার, যেখানে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা হবে। রোগী যদি এ বিভাগের কুরআনিক চিকিৎসায় সাড়া প্রদান করে এবং ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করতে শুরু করে, তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর যদি এতে সাড়া প্রদান না করে, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই, কারণ কুরআনিক চিকিৎসায় সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির ওষুধ ও ইনজেকশনের মতো কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মজার ব্যাপার হল, আমার একবার এক মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে বিতর্ক হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: যিনি কুরআনিক চিকিৎসার চেষ্টা বা অনুশীলন করেন, তার আগে মনোবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা উচিত, যাতে করে তিনি এ ধরনের চিকিৎসা করার সক্ষমতা অর্জন করেন। আমি তাকে বললাম: আপনি যা বলতে চাচ্ছেন, ঠিক একই কথা আমি আপনাকে বলতে চাচ্ছি। কুরআনিক চিকিৎসায় আপনার চিকিৎসার মতো কোনো নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। রোগের চিকিৎসা করাই যেহেতু আপনার পেশা, সেহেতু আপনার চিকিৎসা পদ্ধতিতে কুরআনিক চিকিৎসাও যোগ করে নিন।

৩৯. শারীরিক রোগ

জ্বিনের কারণে বেশ কিছু শারীরিক রোগও দেখা দেয়। এ রকম রোগের সংখ্যা অনেক, কিন্তু সংক্ষেপে বলতে গেলে, যখন কোনো রোগের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করবে না, তখন আল্লাহ চাইলে তাকে নিরাময় দান করতে পারেন এ আশায় তার উপর কুরআনিক রুকইয়া পাঠ করা উচিত।

৪০. হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টি বিভ্রম

জ্বিনরা যদি মানুষকে জাদু করার মাধ্যমে বশীভূত বা সম্মোহিত করতে পারে, তাহলে তারা এ ক্ষমতা দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন অবাস্তব জিনিস বা বস্তু দেখাতে সক্ষম হয়। সে কারণে একজন তার স্ত্রীকে কুৎসিত ও কদাকার হিসেবে দেখতে পারে, অথবা একজন স্ত্রী তার স্বামীকে জ্বিনের কারণে কুৎসিত আকারে দেখতে পারে, এর ফলে ওই স্বামী বা স্ত্রীর মনে তার পার্টনারের এ কুৎসিত রূপ তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এক সময় তা রূপ নিতে পারে তীব্র বিরক্তি ও বিষন্নতায়- সত্যিকার অর্থে। যদিও ওই স্বামী বা স্ত্রী মোটেই কুৎসিত নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন:قَالَ بَلْ أَلْقُوا ۖ فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِن سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ ﴿٦٦﴾অর্থঃ মূসা বলল, “বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ তখন তাদের যাদুর কারণে মূসার মনে হল যে, তাদের রশি আর লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে। (ত্ব-হা ২০:৬৬)

৪১. ঘৃণা উদ্রেক করার মাধ্যমে মানুষের মাঝে শত্রুতা ও বিভাজন তৈরি

মানুষের বিভিন্ন ধরনের জোড়া বা বন্ধন রয়েছে যেমন- স্বামী ও স্ত্রী অথবা ব্যবসায়িক অংশীদার অথবা বন্ধু-বান্ধব, এসব জোড়া বা বন্ধনের মাঝে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের রয়েছে বিভিন্ন কৌশল। আর শয়তানের এ চক্রান্তে প্রিয়জনদের মাঝে অতি তুচ্ছ কারণে সৃষ্টি হয় গভীর দূরত্ব, প্রত্যেক পক্ষই নিজ নিজ যুক্তি বা ব্যাখ্যায় ধূর্ততার সাথে অবস্থান নেন।যখন কেউ এ ধরনের দ্বন্দ্ব মিটানোর জন্য অগ্রসর হন, তখন তিনি দেখতে পান, প্রত্যেক পক্ষই মনে করেন যে, তিনিই সঠিক অবস্থানে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, শয়তান তার বাহিনীকে মিছিলাকারে এ দ্বন্দ্ব তৈরির অভিযানে প্রেরণ করে। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,“শয়তানের সিংহাসন থাকে সমুদ্রে, সেখানে বসেই শয়তান তার বাহিনীকে লোকালয়ে প্রেরণ করে মানুষকে প্ররোচনা দেয়ার জন্য। আর তার বাহিনীতে যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যা বা ভয়ঙ্কর বিবাদ তৈরিতে পটু, তারাই শয়তানের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার দাবিদার। এ মর্যাদাসম্পন্ন শয়তানদের মধ্যে থেকে একজন এসে বলে, আমি অমুক ও অমুকের স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া না লাগানো পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করিনি। শয়তান তাকে কাছে টেনে নেয় এবং বলে: “তুমি ভালো কাজ করেছ। [সহীহ মুসলিম, ৬৬, ৬৮]

৪২. স্ত্রীরোগ

জ্বিনরা আরো কিছু রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যার দ্বারা কেবল মহিলারাই আক্রান্ত হন, যেমন-বন্ধ্যাত্ব, যার জন্য কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাখ্যা যোগ্য কারণ নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রী কারোরই কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তারপরও স্ত্রী গর্ভধারণ করছেন না।আমার এক বন্ধু আমাকে বলেন, তিনি চার বছর ধরে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন, ওই চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থায় বেশ সন্তুষ্ট, ওই চিকিৎসক তাকে বলেন, আপনার স্ত্রীর গর্ভধারণ না করার কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না। তারা দুজনেই শতভাগ সুস্থ। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলাও আদেশ জারি করলেন, তাদের সন্তান থাকা দরকার এবং আমার ওই বন্ধুর স্ত্রী গর্ভধারণ করলেন।কিন্তু এমনটি হতে পারে যে, জরায়ুতে অথবা ডিম্বাশয়ে একটি জ্বিন রয়েছে, যেই জ্বিন শুক্রাণু বা ডিম্বাণু নষ্ট করে দেয়।এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু মেডিক্যাল লক্ষণও রয়েছে, এর মধ্যে আমরা কয়েকটি এখানে উল্লেখ করব:১. মহিলারা তাদের পিঠে প্রচুর ব্যথা অনুভব করেন। ২. ইউটেরাস এলাকায় ব্যথা ও ইনফেকশন। ৩. অনিয়মিত ঋতুস্রাব। ৪. অনিয়মিত রক্তপাত।৫. সহবাসের সময় স্ত্রী চরম অনীহা বোধ করে এবং সে শুধু স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এতে অংশ নেয়।এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো এর পাশাপাশি দেখা দিতে পারে, যেমন-মাথাব্যথা, দুঃস্বপ্ন ও চরম মুহূর্তে অসাড়তা ইত্যাদি।

৪৩. ঘর-বাড়ি ধ্বংস

জ্বিনরা বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে খেলা করে এবং অনেক আসবাব পুড়িয়েও দেয়, এভাবে তারা মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস করতে পারে। এ ধরনের ঘটনা বাস্তবেই ঘটে, কিন্তু খুবই বিরল। আমি এ ধরনের কিছু বাস্তব জীবনের ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করব।[মুসলিমুন (সংখ্যা-৩৩৮, ১৫ মহররম ১৪১২ হিজরি/২৬ জুলাই ১৯৯১ খ্রীস্টাব্দ, পৃ-৩) পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় এ শিরোনামে ‘মুনিফ হারবি: বিনা কারণে আমার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড।]মুনিফ হারবি একজন সউদী নাগরিক, পশ্চিম রিয়াদের আল নাসিম কোয়ার্টারে তিনি বসবাস করেন, এ অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন,স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই আমার ঘরের প্রতি কোণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। এ ধরনের ঘটনা ইতোপূর্বে আর কেউ দেখেননি। আর সিভিল ডিফেন্স বাহিনীও এ আগুনের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এ আগুনের ফলে দৃশ্যত তার জীবন অনেকটা নরকের অসহনীয়, যন্ত্রণার মতো হতে চলছিল, কিন্তু মহান আল্লাহর অপরিসীম কৃপায় তা হয়নি।একইভাবে আখবার আল ইয়াওম (সংখ্যা-২৪৮১, ২০ জিলক্বদ ১৪১২ হিজরী/ ২৩ মে ১৯৯২ পৃ-১৪) পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় সেই শিরোনামে ‘জর্জিয়া ফায়ার ব্রিগেডের প্রধানের সামনেই এক ডাক্তারের বাড়িতে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর অগ্নিকাণ্ড’।সুহাজের দক্ষিণাঞ্চলের ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান মেজর রজব সুলতান কায়রোতে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসে ফরেনসিক ল্যাবের দরজায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন, যেন তিনি ল্যাবে কিছু একটা খুঁজছেন। তিনি সুহাজ থেকে মাত্র একটি আশ্চর্যজনক অভিযান শেষ করে ফিরেছেন, সঙ্গে থাকা ব্যাগে করে সুহাজে সংঘটিত একটি আশ্চর্যজনক অগ্নিকাণ্ডের কিছু আলমত বয়ে নিয়ে এসেছেন, অগ্নিকাণ্ডের পিছনে কী কারণ জড়িত, মূলত তা বিশ্লেষণ করার জন্যই এ আলামতগুলো নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তিনি আরো আশ্চর্য হয়ে গেলেন, যখন তিনি দেখতে পেলেন, সেই আলামতগুলো তিনি ফরেনসিক ল্যাবে পা দেয়ার আগেই হাওয়া হয়ে গেছে, আলমতের চিহ্নটি পর্যন্ত নেই।মেজর রজব নিজ মুখে সেই বিস্ময়কর গল্পটি বলেন, তিনি বলেন, গত সপ্তাহে জর্জিয়া জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার উসমান রিফায়ি আমার কাছে এসে বলেন যে, তার বাড়িতে আধা ঘণ্টা আগে আগুন লেগেছে, এবং তিনি ফায়ার ব্রিগেডকেও খবর দিয়েছেন আগুন নিভিয়ে তার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য। তার এ বার্তা আমার কাছে কেমন আশ্চর্যজনক মনে হল, তবু আমি আমার লোকজন ও সরঞ্জমাদি নিয়ে তার বাড়িতে ছুটে গেলাম, যদি তার বাসার কাপড়-চোপড় থেকে আগুনের কোনো সূত্র পাওয়া যায় কি না। ওই ডাক্তার আমাকে বলেন, ঘটনার দিন তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন, এ সময় হঠাৎ তাদের শোবার ঘরে আগুন লেগে যায়।তিনি তার প্রতিবেশীদের ডাকলেন, তারা এসে আগুন নিভাতে সাহায্য করল, আগুন নিভেও গেল। কিন্তু তারপর, প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর তার বাসার কাপড়-চোপড় রয়েছে এমন সব ওয়্যারড্রোব থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে লাগল। কয়েক মিনিট পরে আমার চোখের সামনেই একটি ওয়ারড্রোবে আগুন জ্বলে উঠলো, আমি তো আকস্মিক বিস্ময়ে চমকে উঠলাম। আমি আমার লোকজন নিয়ে আগুন নেভালাম। পরে আমি আবিস্কার করলাম যে, কোনো একটি কাপড়ের শেলফ থেকে এমনি এমনিই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।ওই অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর থেকেই আমি জেনারেল আল সাইয়িদ হাসানের সঙ্গে রেডিও প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ করলাম, হাসান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী এবং সুহাজ অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রধান। তাকে এখানের অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে অ্যাপার্টমেন্ট ত্যাগ না করার জন্য বললেন, একই সঙ্গে তিনি পুলিশ প্রধান, অপরাধ তদন্তকারী টিম ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদেরকে পাঠালেন এ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে আমাকে সহায়তা করার জন্য।মেজর রজব সুলতান আরো বলেন, ওই চিকিৎসকের অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনীর সদস্যদের ভিড় জমে গেল, তারা অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ভালো করে পরীক্ষা করল, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খোঁজার চেষ্টা করল তারা। তারা একটি সম্ভাবনা দাঁড় করানোর চেষ্টা করল যে, হয়ত ঘরের কোথাও কোনো পাউডার রাখা ছিল, যা আগুনের সূত্রপাত ঘটিয়েছে, কিন্তু অনেক অনুসন্ধানের পরও তারা এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা খুঁজে পেল না। বরং এ নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনীর সামনেই আবারো অ্যাপার্টমেন্টে আগুন জ্বলে উঠল, অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটি জায়গায়, বাচ্চাদের শোবার ঘর থেকে শুরু করে ঘরের ফার্নিচার, এমনকি ধোয়ার জন্য ভেজানো কাপড় চোপড়েও আগুন ধরে যায়। এ দৃশ্য দেখে দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরঞ্জামাদি। নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল আগুন নেভানোর জন্য, চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা ও শিশুরা আতঙ্কে চিৎকার করছিল। নিরাপত্তা ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা পরদিন পর্যন্ত এ আগুন নিয়ে টানা কাজ করল। কিন্তু প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর জ্বলে ওঠা এ আগুনের কোনো কারণ বা উৎস খুঁজে বের করতে পারল না।নিরাপত্তা প্রধান দমকল বাহিনীর কিছু সদস্যকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, যাতে তারা চিকিৎসকের পরিবারকে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচাতে পারে। আর তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন পরদিন সকালে কায়রোতে এক বিশেষ মিশনে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার সময় ব্যাগে করে অ্যাপার্টমেন্টের আগুনে পোড়া কাপড় থেকে আলামত নিয়ে যেতেও বললেন ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করতে। যাতে করে এর মাধ্যমে এ অগ্নিকাণ্ডের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বের করা যায়। কিন্তু ফরেনসিক ল্যাবের দরজায় গিয়েই আমি আবিস্কার করলাম, আমার ব্যাগে করে আনা অগ্নিকাণ্ডের সেই নমুনাগুলো হাওয়া হয়ে গেছে। আমি জানতেও পারলাম না যে, এ ঘটনা কখন কিভাবে ঘটল।পরে মেজর রজব সুলতান আবার সুহাজে ফেরত আসলেন নতুন করে আলামত সংগ্রহের জন্য। তখনো তিনি বিস্ময়ে হতবিহ্বল, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছেন, আমি ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান উপস্থিত থাকার পরও সেখানে কিভাবে এ আগুনের সূত্রপাত হল? এ অদ্ভুত আগুনের কবল থেকে চিকিৎসকের পরিবারকে কিভাবে রক্ষা করা যায়? এ মিশন সফল করতে কি আমাদের অন্য কোনো ফায়ার ব্রিগেডের সহায়তা লাগবে?দ্বিতীয় গল্পটি বর্ণনা করেছেন ইবনুল ক্বয়্যিম (রহ) তার আল ওয়াবিলুস সাইয়্যিব গ্রন্থে (পৃ-১৭৬-১৭৭) বর্ণিত আছে যে, আবূ নযর আল হাশিম বিন আল কাশিম বলেন, আমার বাড়িতে আমাকে লক্ষ্য করে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হল এবং পরক্ষণেই একটি আওয়াজ শোনা গেল ‘হে আবূ নযর! বের হয়ে এস তোমার বাড়ি থেকে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি গভীর বিষন্নতায় পড়ে গেলাম। তাই এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে আমি কুফায় ইবনে ইদরিস আল মুহারিবি ও আবু উসামাহর কাছে চিঠি লিখলাম। মুহারিবি আমার চিঠির জবাবে লেখেন: মদীনায় একটি শুকনো কুপ ছিল। একবার এক কাফেলা এসে এ কুপের কাছে তাবু খাটালো। এলাকাবাসী এসে তাদেরকে শুকনো কুপটির ব্যাপারে জানালো। কাফেলার লোকেরা এ কথা শুনে এলাকাবাসীর কাছে এক বালতি পানি চাইল।পরে তারা নিম্নোক্ত কথাগুলো বলে বালতির পানি কুপের মধ্যে ঢেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে কুপের মধ্যে থেকে আগুন জ্বলে উঠলো এবং কুপের মুখেই সে আগুন নিভিয়ে ফেলা হল। পানি ঢালার সময় তারা যে কথা বলেছিল তা হল, পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে, আমরা আল্লাহ তাআলার হেফাজতে আছি, যার কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, এবং আল্লাহর মহত্বের কারণে যা কখনো পরাভূত করা সম্ভব নয়, এবং আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কারণে, আমরা শক্তিশালীরাও তাঁর কাছে সুরক্ষার প্রার্থনা করি। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের কসম, আমি শয়তানের হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষ ও জ্বিনদের অনিষ্ট থেকে, আরও আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওই সব শয়তান থেকে যারা দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান, যারা রাতে আবির্ভূত হয় এবং দিনে মিলিয়ে যায়, আবার যারা রাতে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং দিনে আবির্ভূত হয়, আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওইসব শয়তান থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি ইবলিস ও তার বাহিনীর সকল ধরনের অনিষ্ট থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেইসব জন্তুর অনিষ্ট থেকে, যাদের কপালের চুলের গুচ্ছ (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে। আমি আল্লাহর কাছে ওইসব বিষয় থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন মুসা, ঈসা ও ইবরাহিমও (আঃ) (আন নাজম: ৫৩:৩৭), এবং ওই সকল অনিষ্ট থেকেও আশ্রয় চাচ্ছি যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, শয়তান ও তার বাহিনীর অনিষ্ট এবং অন্য সকল অশুভ বিষয় যা ক্ষতিকর তা থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে অভিশপ্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে আরম্ভ করছি,وَالصَّافَّاتِ صَفًّا ﴿١﴾ فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا ﴿٢﴾ فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا ﴿٣﴾ إِنَّ إِلَٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ ﴿٤﴾ رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ ﴿٥﴾ إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ ﴿٦﴾ وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ ﴿٧﴾ لَّا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٍ ﴿٨﴾ دُحُورًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ ﴿٩﴾ إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ ﴿١٠﴾অর্থঃ কসম সারিবদ্ধ ফেরেশতাদের,অতঃপর (মেঘমালা) সুচারুরূপে পরিচালনাকারীদের,আর উপদেশ গ্রন্থ (আসমানী কিতাব) তিলাওয়াতকারীদের; নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক; তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে তার রব এবং রব উদয়স্থলসমূহের। নিশ্চয় আমি কাছের আসমানকে তারকারাজির সৌন্দর্যে সুশোভিত করেছি। আর প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে হিফাযত করেছি। তারা ঊর্ধ্বজগতের কিছু শুনতে পারে না, কারণ প্রত্যেক দিক থেকে তাদের দিকে নিক্ষেপ করা হয় (উল্কাপিন্ড) তাড়ানোর জন্য, আর তাদের জন্য আছে অব্যাহত আযাব। তবে কেউ সন্তর্পণে কিছু শুনে নিলে তাকে পিছু তাড়া করে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড। (আল-সাফফাত ৩৭:১-১০)আবুল নাযর বলেন: অতঃপর আমি এক বালতি পানি নিয়ে এর উপর উপরোক্ত দুয়া পাঠ করলাম, তারপর এ পানি ঘরের চারদিকে ছিটিয়ে দিলাম। এতে তারা (জ্বিনরা) আমাকে লক্ষ্য করে আর্তনাদ করে উঠল, তারা বলল: “আপনি আমাদেরকে পুড়িয়ে দিয়েছেন! আমরা আর আপনাকে বিরক্ত করব না।” [আল-ওয়াবিলুস সাইব- ইবনুল কায়্যিম ১৭৬-১৭৭]শাইখ আলী বিন মুশাররফ আল উমারি তাঁর এক ভাষণে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বলেন, মদিনার কাছাকাছি হাদবান নামক স্থানের একটি বাড়িতে বিনা কারণে আগুন লেগে যায়, কিন্তু আগুন নেভানোর পর আবারো আগুন জ্বলে উঠে, দমকল বাহিনী এ আগুনের কোনো কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। শাইখ মান্নই ওই স্থানে আসার পর কারণ বের করলেন, তিনি ওই স্থানে বসে কুরআন তেলাওয়াত করলেন, অতঃপর যেসব জ্বিন এ অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে ঘরের বাসিন্দাদের বিপদে ফেলেছে। তাদেরকে বিতাড়িত করলেন।যদিও এ ধরনের ঘটনা ঘটা সম্ভব, কিন্তু তা খুবই বিরল। আমাদেরকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে, এটি আসলেই জ্বিনের কাজ কি। না, কারণ মিথ্যাবাদী ও হাতুড়ে ওঝারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এরকম অসংখ্য গল্প তৈরি করে। এরকম একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন শাইখ ইয়াসিন আহমদ ঈদ। তিনি বলেন:“অল্প কিছু দিন আগে এক ব্যক্তি মারা যান, মৃত্যুর সময় তিনি একটি সুন্দর বাড়ি রেখে যান, বাড়িটি ছিল অন্যান্য বাড়ি থেকে কিছুটা পৃথক বা। বিচ্ছিন্ন। বাড়িটি ছিল বেশ বড়সড়, রুম ছিল অনেকগুলো, ছিল সুসজ্জিত।বাড়ির চত্বরে ছিল মার্বেল পাথরের তৈরি পুল। এর চারপার্শে ছিল বিভিন্ন আকার ও বর্ণের বেশ কিছু মূর্তি, যেগুলোর মুখ দিয়ে পানিও প্রবাহিত হত।ওই লোকটির ওয়ারিশ হওয়ার মতো কোনো সন্তান ছিল না, সে কারণে তার মৃত্যুর পর বাড়িটি ফাঁকা হয়ে যায়, অনেক দাম পাওয়া যাবে এ আশায় তার স্বজনরা বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হলেন, কিন্তু যখনি তারা বাড়িটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে তোড়জোড় শুরু করলেন, ঠিক তখনি গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, বাড়িটি জ্বিনরা দখল করেছে এবং ভিতরে ইফরিত বসবাস করছে।এ গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এক সময় পরিণত হয় শহরের মুখ্য আলোচনার বিষয়, টক অব দ্যা টাউন। সন্ধ্যার খোশ গল্পের আসরে আলোচিত হতে থাকে এ গুজব। যদি কেউ এতে দ্বিমত পোষণ করে রাতে ওই বাড়িতে যেত সত্যতা যাচাই করতে, সকালে সে ফিরে আসত এ ধারণা নিয়ে যে, আসলেই ওই বাড়িটি জ্বিনরা দখল করেছে। যার ফলে কেউ আর ওই বাড়িটি কিনতে আগ্রহী হল না, ওয়ারিশ যারা ছিলেন তারাও অনেকটা হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন এর মন্দ পরিণাম ভেবে, বিশেষ করে ক্রেতারা যখন বাড়িটির দাম হাঁকল চার ভাগের এক ভাগ দামে, তখন তারা বুঝতে পারলেন অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। উপায় না দেখে ওয়ারিশগণ বাড়িটি প্রায় বেচেই দিচ্ছিলেন, এরই মধ্যে এক সাহসী যুবক বাড়িটির খবর শুনে এগিয়ে এল, সে লোকজনের মুখে এ বাড়ি সম্পর্কে সবই শুনেছে। সে জ্বিন বা ইফরিত বিষয়ে কোনো ভয় পেত না, এমনকি এদেরকে পাত্তাও দিত না। সে লোকজনের কাছে প্রতিজ্ঞাই করে বসল যে, সে ওই বাড়ি থেকে জ্বিন তাড়াবে এবং ইফরিতকে ধরবে অথবা টাকার বিনিময়ে তাকে বহিষ্কার করবে। ওয়ারিশগণ তার প্রস্তাবে রাজি হলেন, এবং তারা তাকে কথামতো পারিশ্রমিকের অর্ধেক আগেই পরিশোধ করলেন।সকালে যুবকটি সঙ্গে একটি পিস্তল নিয়ে ওই বাড়ির দিকে রওয়ানা হল। বাড়িতে পৌছার পর সে কিছুক্ষণে বিশ্রাম নিল, মোমবাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল এক পর্যায়ে। কিছুক্ষণ সে টের পেল, কেউ একজন তার কাছ থেকে কম্বল টেনে নিচ্ছে, যুবকটি তৎক্ষণাৎ সর্বশক্তি দিয়ে কম্বলটি আঁকড়ে ধরল এবং বলল: “কে আমার কম্বল টেনে নিচ্ছ?” তখন একটি আওয়াজ বলে উঠল “আমি একজন ইফরিত, আর আমাকে এ কম্বলটি নিতেই হবে, অন্যথায় আমি তোমার দেহে অবস্থান নেব।” যুবক কম্বল ছেড়ে দিতেই ওই লোকটি তার পিছনে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। যুবকটি উঠে গিয়ে ওই ইফরিতের বুকের ওপর বসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলল: "আমাকে বল, কে তুমি?”। ইফরিতটি খুব ভয় পেয়ে গেল, সে বলল: “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে বলব, আসলে কে আমি।” যুবক বলল: "কথা বল হে ইফরিত!” সে বলল: “আমি ইফরিত নই, জ্বিনও নই, আমি তোমার মতোই একজন মানুষ। আমাদের মাঝে পার্থক্য একটাই, আমি দেখতে খুবই কালো ও কুৎসিত।” এ কথা শোনার পর যুবকটি তাকে ছেড়ে দিয়ে মোমবাতিটি জ্বালাল লোকটি আসলে কে দেখার জন্য। মোমের আলোতে সে দেখতে পেল একজন নগ্ন কালো মানুষ। যুবকটি বলল: “আমাকে বল, হে কালো মানুষ! কেন তুমি এখানে। এসেছ?” লোকটি বলল: প্রয়োজনই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, কারণ। আমি খুবই দরিদ্র, কোনো আয় নেই, বাড়িতে রয়েছে বিশাল পরিবার, আমি ছাড়া তাদেরকে দেখার আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি এক লোকের শরণাপন্ন হয়েছিলাম কাজের জন্য। ওই লোক আমাকে প্রতি রাতে এ বাড়িতে এসে থাকতে বলে। ওই লোকটি আমাকে বলল, যদি কেউ এ বাড়ির দিকে আসার চেষ্টা করে, তাহলে আমি যেন প্রথমে আমি। তালি বাজাই এবং দেয়ালে আঘাত করি। কিন্তু তারপরও যদি দেখা যায় যে, লোকটি খুবই সাহসী এবং এসব ভীতিকর শব্দকে আমলেই নিচ্ছে না, তখন যেন আমি পানির টেপগুলো খুলে দেই, যাতে মূর্তিগুলোর মুখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে, তারপর যেন আমি দ্রুত ছাদে উঠে বিভিন্ন কণ্ঠে চিৎকার করে তাকে ভয় দেখাই। অতঃপর সে আমাকে এ কথা গোপন রাখার জন্য বলল। যুবক এ ঘটনা শোনার পর লোকটিকে তার সঙ্গে করে নিয়ে গেল এবং বাড়ির ওয়ারিশদের কাছে তাকে হস্তান্তর করল। সে তাদের কাছে সব খুলে বলল এবং এভাবেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যে লোকটি এ কালো মানুষটিকে ভাড়া করেছিল, সে চেয়েছিল বাড়িটি খুবই কম দামে কিনতে।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা