পরিচ্ছেদ: রক্বিকে অবশ্যই যেসকল কাজ গুলো করতে হবে

১৩৬

১. তিনি যে স্থানে বসে চিকিৎসা করবেন, সেই স্থান থেকে আল্লাহর অবাধ্যতাকারী বা অশ্রদ্ধাজ্ঞাপনকারী সব বস্তু সরিয়ে ফেলবেন।২. শুরুতেই রোগীকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে, তার কাছে কোনো তাবিজ-কবচ আছে কি না অথবা তিনি কোনো জাদুকরের কাছে। গিয়েছিলেন কি না। যদি তার সঙ্গে কোনো তাবিজ কবচ থাকে তবে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং তিনি যদি কোনো জাদুকরের কাছে গিয়ে থাকেন তাহলে তাকে বলতে হবে যে, কত বড় ভুল তিনি করেছেন এবং এর প্রভাব কত মারাত্মক হতে পারে, এটা তার আত্মিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর।৩. তাকে অবশ্যই রোগ নির্ণয় করতে হবে। এর এটা করা হয় রোগীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে। রোগীকে কেমন ধরনের প্রশ্ন করতে হবে সেক্ষেত্রে। রক্বির অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবাহিত লোকের। প্রশ্ন অবিবাহিত থেকে আলাদা হবে। প্রশ্ন নিম্নরূপ হতে পারে:১. রোগী কী ধরনের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। ২. এ সমস্যা শুরু হয়েছে কখন। ৩. রোগী কি কোনো স্বপ্ন দেখেন, আর দেখলে তা কী ধরনের? ৪. তিনি কি পেটে ব্যথা অনুভব করেন? এ ব্যথার শুরু কখন? ৫. তার কি মাথা ব্যথা আছে অথবা তিনি কি মাথা অথবা দেহে ভারী কিছু অনুভব করেন? ৬. তিনি কি তার বুকে শক্ত ভাব অনুভব করেন? রোগ নির্ণয়ের জন্য করা প্রশ্ন ঘটনা ভেদে বিভিন্ন রকম হয়। এসব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তি করে রক্বির আরো চিন্তা ভাবনা করে পুনরায় প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন পর্ব শেষে তিনি রোগীর উপর নিম্নোক্ত রুকিয়া পাঠ করবেন১. সূরা আল ফাতিহা: (১-৭)بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴿١﴾ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿٢﴾ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴿٣﴾ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ﴿٤﴾ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٥﴾ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿٦﴾ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ﴿٧﴾অর্থঃ (১) পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। (২) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। (৩) দয়াময়, পরম দয়ালু, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। (৪) বিচার দিবসের মালিক। (৫) আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই। (৬) আমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন। (৭) তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।২. আয়াতুল কুরসী (বাকারা ২:২৫৫)اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ﴿٢٥٥﴾অর্থঃ আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সব কিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারেনা। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয়না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান।৩. আল-আ'রাফ: (১১৭-১২২)وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ ﴿١١٧﴾ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿١١٨﴾ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ ﴿١١٩﴾ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ ﴿١٢٠﴾ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١٢١﴾ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ ﴿١٢٢﴾অর্থঃ (১১৭) আর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম যে, ‘তুমি তোমার লাঠি ছেড়ে দাও’ তৎক্ষণাৎ সে গিলতে লাগল সেগুলিকে যে অলীক বস্তু তারা বানিয়েছিল। (১১৮) ফলে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যা কিছু করছিল তা বাতিল হয়ে গেল। (১১৯) তাই সেখানে তারা পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত হয়ে গেল। (১২০) আর যাদুকররা সিজদায় পড়ে গেল। (১২১) তারা বলল, ‘আমরা সকল সৃষ্টির রবের প্রতি ঈমান আনলাম, (১২২) মূসা ও হারূনের রবের প্রতি।’ ৪. সূরা-ইউনুস: (৮১-৮২)فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ ﴿٨١﴾ وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ ﴿٨٢﴾অর্থঃ (৮১) অতঃপর যখন তারা (তাদের রশি ও লাঠি) ফেলল, তখন মূসা বলল, ‘তোমরা যা আনলে, তা যাদু। নিশ্চয় আল্লাহ তা বাতিল করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের আমল পরিশুদ্ধ করেন না’। (৮২) আর আল্লাহ তাঁর বাণীসমূহের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।৫. সূরা ত্ব-হা: (২০:৬৯)وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ ﴿٦٩﴾অর্থঃ ‘আর তোমার ডান হাতে যা আছে, তা ফেলে দাও। তারা যা করেছে, এটা সেগুলো গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে, তাতো কেবল যাদুকরের কৌশল। আর যাদুকর যেখানেই আসুক না কেন, সে সফল হবে না’।৬. যেসব সূরাহ তেলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে সুরক্ষার প্রার্থনা করা হয়-সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাসقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ﴿١﴾ اللَّهُ الصَّمَدُ ﴿٢﴾ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ﴿٣﴾ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴿٤﴾অর্থঃ (১) বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। (২) আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। (৩) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। (৪) আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। (সূরা ইখলাস)قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ﴿١﴾ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ ﴿٢﴾ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ﴿٣﴾ وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ﴿٤﴾ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ﴿٥﴾অর্থঃ (১) বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, (২) তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, (৩) আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, (৪) আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, (৫) আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। (সূরা ফালাক্ব)قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ﴿١﴾ مَلِكِ النَّاسِ ﴿٢﴾ إِلَٰهِ النَّاسِ ﴿٣﴾ مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ﴿٤﴾ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ﴿٥﴾ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ﴿٦﴾অর্থঃ (১) বল, ‘আমি আশ্রয় চাই মানুষের রব, (২) মানুষের অধিপতি, (৩) মানুষের ইলাহ-এর কাছে, (৪) কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে দ্রুত আত্মগোপন করে। (৫) যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। (৬) জিন ও মানুষ থেকে। (সূরা নাস)এ রুকিয়া পাঠ করা হলে রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে এবং সেবক জ্বিন কথা বলা শুরু করবে। এক্ষেত্রে জ্বিনকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করতে হবে:১. তার নাম।২. তার ধর্ম।৩. তাবিজ কোথায় আছে।প্রশ্ন পর্ব শেষে তাকে বলতে হবে, সে অসৎকর্মকারী, সে যা করছে তা ভুল এবং জাদুকর একজন কাফির এবং জাদুকরের সঙ্গে মিলে কাজ করা ইসলামে অনুমোদিত নয়।দ্রষ্টব্য: জ্বিন আপনাকে বলতে পারে যে, সে বের হয়ে যেতে চায়, কিন্তু জাদুকর কিছু জ্বিনকে পাঠিয়েছে তাকে হত্যা করার জন্য, যদি সে বের হয় তাহলেই হত্যার শিকার হবে, সেক্ষেত্রে আপনি তাকে তার। সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত করবেন, সে যদি মুসলমান হয় তাহলে তাকে নিজের আত্মরক্ষার জন্য কিছু শিখিয়ে দেবেন।এছাড়াও জ্বিন আপনাকে বলতে পারে, অমুক অমুক এ জাদুটোনা করেছে। সেক্ষেত্রে আপনি জ্বিনের কথা বিশ্বাস করবেন না এবং রোগীর পরিবারকে বোঝাবেন যে, জ্বিনদের মধ্যেও অনেক মিথ্যাবাদি রয়েছে।জ্বিন যদি আপনাকে কবচের অবস্থান বলে, আর এটি যদি দেহের বাইরে কোথাও হয় তাহলে আপনি লোক পাঠিয়ে সেই তাবিজ নিয়ে এসে পুড়িয়ে ফেলবেন। আর এ কবচ যদি রোগীর দেহের ভেতরে খাবার অথবা পানীয়ের আকারে থাকে তাহলে রোগীকে জিজ্ঞেস করুন যে, তার পেটে ব্যথা হচ্ছে কি না, আর ব্যথা হলে তা কখন শুরু হয়েছে। অত:পর আপনাকে সোনামুখী পাতার পানীয় তৈরি করতে হবে রোগীর জন্য, এ পানীয় খুবই উপকারী এবং এটা পরীক্ষিত।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা