পরিচ্ছেদ: জাদুটোনার জন্য কাপিং (কাঁচপ্রয়োগে চিকিৎসা) থেরাপী

১৪০. ভূমিকা

কাপিং হলো নবীদের (ﷺ) ব্যবহৃত একটি উপকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। কবচ করার স্থানে যদি কাপিং করা হয় তাহলে এটা ওই স্থানের সকল দূষিত জিনিস বের করে দেবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে মন্ত্রের কার্যকারিতা নষ্ট ও বাতিল হয়ে যাবে।কিন্তু নবীদের (ﷺ) ব্যবহৃত এ অতি উপকারী চিকিৎসা পদ্ধটির ব্যবহার মানুষ এখন ছেড়ে দিয়েছে। ইমাম বুখারী (রাহঃ) তার সহীহ গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“তিনটি জিনিসের মধ্যে তোমাদের জন্য নিরাময় রয়েছে: মধু, কাপিং করার হাতিয়ার ও আগুন দিয়ে ক্ষতের সংক্রমণ পুড়িয়ে দেয়া, তবে আমি আমার উম্মতের জন্য আগুন দিয়ে শরীরের ক্ষত পোড়ানো নিষিদ্ধ করে দিলাম।” (ফাতহুল বারী ১০/১৪৩)জাবির বিন আবদুল্লাহ (কাল) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছিঃ“তোমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভালো কিছু যদি থেকে থাকে তবে। রয়েছে কাপিং করার যন্ত্রে, মধুতে অথবা আগুন দিয়ে ক্ষতের সংক্রমণ পোড়ানোর মধ্যে, তবে আমি আমার উম্মতের জন্য শেষেরটি নিষিদ্ধ করলাম।অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাবির বিন আবদুল্লাহর (রাঃ) সঙ্গে আল মুকান্নার (তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন) দেখা হলে তিনি তাকে বললেন: আমি তাকে কাপিং চিকিৎসা না দেয়ার আগে ছাড়ব না, কারণ আমি। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছি,“এর মধ্যে নিরাময় রয়েছে।” [ফাতহুল বারী, ১০/১৫৯]অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একবার আনাস (রাঃ)-কে কাপিং চিকিৎসকের পারিশ্রমিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আবূ তাইবা কাপিংয়ের মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর চিকিৎসা করেছেন এবং বিনিময়ে রাসূল (ﷺ) তাকে দুই সা’ গম অথবা যব দিয়েছেন। আর আবূ তাইবার মনিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন যেন তারা তার প্রতি সদয় হন। এবং তিনি বলেন:“তোমরা যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার কর তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল কাপিং ও সামুদ্রিক কস্টাস।”রাসূল (ﷺ) আরো বলেন:“টনসিলের চিকিৎসা করার জন্য তোমরা তোমাদের সন্তানদের টনসিল চেপে নির্যাতন কর না, বরং তোমরা এর জন্য কস্টাস ব্যবহার কর।” [ফাতহুল বারী, ১০/১৫৯]গারীবুল হাদীস গ্রন্থে আবূ উবায়েদ আবদুর রহমান বিন আবু লায়লা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন জাদুটোনা। দ্বারা আক্রান্ত হলেন, তখন কাপিংয়ের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়েছিল।ওই সময় তাদের অনেকে বলেছিলেন, যেসব জিনিস দিয়ে জাদুটোনা করা হয়েছে সেগুলো তার মাথা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। শয়তানের আত্মার প্রভাব দিয়ে জাদুটোনা করা হয় এবং এর কিছু প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একে বলা হয় সিহর ও নামরিজাত, আর প্রভাবই সবচেয়ে খারাপ।কাপিং যদি কবচ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সঠিকভাবে করা যায় তাহলে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। ইবনে আল কাইয়ুম (রাঃ) বলেন, ক্ষতিকর জাদুটোনার প্রভাবে এতে ব্যবহৃত জিনিস যেখানে পৌঁছেছে সেখান থেকে বের করতে হবে। কারণ জাদুটোনা শরীরের উপর বেশ প্রভাব ফেলে মন মেজাজ উত্তেজিত করে তোলে এবং মানসিক মেজাজকে বিরক্ত করে। জাদুটোনার প্রভাব যদি শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশে প্রকট আকার ধারণ করে এক্ষেত্রে জাদুটোনায় ব্যবহৃত পদার্থগুলো বের করতে পারলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যাবে। [যাদুল মা'আদ, ৪/১২৫, ১২৬]

১৪১. মেডিসিন বিশেষজ্ঞগণের অভিমত

কাঁধে ও ঘাড়ে ব্যথার জন্য ঘাড়ের উপর কাপিং করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাথা ও মুখমণ্ডলের সমস্যা যেমন: নাক, কান, গলা ও চোখের সমস্যার ক্ষেত্রে ঘাড়ের মোটা শিরার উপর কাপিং করলে বেশ। উপকার পাওয়া যায়। উরু ও পায়ের গুলে ঘা হলে, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা। (ঋতুস্রাব না হওয়া) ও অণ্ডকোষে চুলকানি হলে সেক্ষেত্রে পায়ের উপরে কাপিং করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আর বুকের নিচের দিকে কাপিং করলে তা ফোড়া, খোস-পাঁচড়া, ফুসকুড়ি, গেঁটে বাত, হেমোরয়েড, গোদ রোগের জন্য বেশ উপকারি হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কেও তার ঘাড়ের মোটা শিরায় ও দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে কাপিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়েছিল। [আত্-তিরমিযি, আবু দাউদ ও ইবনে মাযাহ হাদিসটিকে হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল হাকিম একে সহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।] তীব্র মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের জন্য কাপিং বেশ উপকারি ও ফলপ্রসু চিকিৎসা। ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে এ কাপিংয়ের উপর একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন এ শিরোনামে ‘মাইগ্রেন ও মাথাব্যথার জন্য কাপিংয়ের অধ্যায়।' ইবনে হাজার মাইগ্রেন হওয়ার কারণসমূহ বর্ণনা করেছেন এবং এর চিকিৎসায়। কাপিংয়ের ভূমিকাও উল্লেখ করেছেন। [ফাতহুল বারি, ১০/১৬২-১৬৩]মাথায় কাপিংয়ের উপকারিতা সম্পর্কে আরেকটি যঈফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, হাদীসটি ইবনে আদি বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে, হাদীসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“সাতটি রোগের জন্য মাথায় কাপিং উপকারি: পাগলরোগ, কুষ্ঠরোগ, আলস্য, মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ও বদনজর।”হাদীসটি দুর্বল হলেও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা দিয়ে একে সমর্থন করা হয়েছে।

১৪২. কাপিংয়ের সময়

কাপিংয়ের সময় সংক্রান্ত একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ভিজাত থেকে। হাদীসটি ইবনে মাজাহ তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“আল্লাহর রহমত লাভের জন্য বৃহস্পতিবার কাপিং ব্যবহার কর, এছাড়াও সোমবার ও মঙ্গলবার কাপিং ব্যবহার করবে, আর বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবার কাপিং করা পরিহার করবে।” [হাদিসটি ইবনে মাজাহ দুটি দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের তৃতীয় সনদ উলেখ করেছেন দারাকুতনি তার আল ইফরাদ গ্রন্থে]আল খাল্লাল থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমাদ (রাহঃ) উপরোক্ত দিনগুলোতে কাপিং ব্যবহার অপছন্দ করতেন। কিন্তু মাসের কোন দিন কাপিং করা উচিত?আবূ দাউদ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উদ্ধৃত করে তিনি বলেন:“যে ব্যক্তি মাসের সতেরতম, ঊনিশতম অথবা একুশতম দিনে কাপিং করবে, সে যে কোনো রোগ থেকে নিরাময় লাভ করবে।” চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন, মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে, আরো স্পষ্ট করে বললে মাসের তিন চতুর্থাংশে গিয়ে কাপিং করলে মাসের শুরু অথবা শেষের তুলনায় ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে, কারণ মানুষের মানসিক অবস্থা মাসের শুরুর দিকে উত্তেজিত থাকে, আর মাসের শেষের দিকে শান্ত থাকে, সুতরাং এ সময়টাতেই রক্ত বের করা ভালো। তবে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।এ কাজ করার পাশাপাশি উপরোক্ত যমযমের পানির জন্য নির্দেশিত রুকিয়া পাঠ করতে হবে, যমযমের পানি না পাওয়া গেলে সাধারণ বিশুদ্ধ পানি দিয়েও হবে, এ রুকিয়া পাঠ করা পানি রোগীকে দিতে হবে এবং রোগী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এ পানি পান করবেন এবং এ পানি দিয়ে ধৌত করার কাজ সম্পন্ন করবেন।এছাড়া জলপাইয়ের তেলের উপরও রুকিয়া পাঠ করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে রোগী রুকিয়া পড়া তেল তার শরীরের যে স্থান জাদুটোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে এবং মাথা ও বুকে লাগাতে পারেন।রোগী নিজেই বেশি বেশি করে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করবেন এবং যতটা সম্ভব এর রেকর্ড শুনবেন।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা