পরিচ্ছেদ: রুকিয়া ও যিকিরের মাধ্যমে বদনজরের চিকিৎসা

৯৩

বদনজর দেয়া ব্যক্তি যদি অপরিচিত হয়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কোনো উপায় থাকবে না, তবে তিনি শরীয়াহ্ নির্দেশিত রুকিয়া ও যিকির বেশি বেশি করে তেলাওয়াত করবেন, কারণ আল্লাহ চাইলে এর মাধ্যমেই আরোগ্য দান করবেন।অসুস্থ ব্যক্তি তার দুই হাত উপরে তুলে সূরা আল ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী ও আল মুয়াব্বিযাত তেলাওয়াত করবেন এবং তার দুই হাতে ফুঁ দেবেন, অতঃপর দুই হাত দিয়ে পুরো শরীর মাসেহ্ করবেন।এছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তি এসব আয়াত পাঠ করে জলপাই তেলে ফু দেবেন এবং এ তেল দিয়ে ব্যথার স্থানে মালিশ করবেন, এবং তিনি অযু করে সেই পানি থেকে পানও করতে পারেন।আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বর্ণনা করেছেন:১.أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণঃ আ’ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন শার্‌রি মা-খালাক্বঅর্থঃ আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে।২.أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَّامَّةٍউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বা-নিওঁ ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লা-ম্মাহঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের, সকল শয়তান থেকে, সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও প্রাণী থেকে এবং সকল ধরনের বদনজর থেকে।৩. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ حَاسِدٍ، اَللَّهُ يَشْفِيكْ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيْكَউচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি আর্‌ক্বীক, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীক, মিন শার্‌রি কুল্লি নাফসিন আউ আ'ইনিন ‘হা-সিদিন, আল্লা-হু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আর্‌ক্বীকঅর্থঃ পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে আমি তোমার জন্য রুকিয়া পাঠ করছি, তোমার জন্য ক্ষতিকর সকল কিছু থেকে, প্রত্যেক আত্মা অথবা হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করুক, পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার নামে আমি তোমার জন্য রুকিয়া পাঠ করছি।৪.بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيْكَ وَمِنْ كُلِّ ذَاءٍ يَشْفِيْكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍউচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়া মিন কুল্লি দায়িন ইয়াশফিকা ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ ওয়া মিন শাররি কুল্লি যি আ’ইনিন।অর্থঃ পরম করুণাময় আল্লাহর নামে, তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করুক, সকল ধরনের রোগ থেকে তোমাকে আরোগ্য দান করুক, এবং হিংসুকের সকল ধরনের হিংসা ও অনিষ্ট থেকে এবং প্রত্যেককে বদনজরের প্রভাব থেকে আল্লাহ রক্ষা করুক।ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আরো দোয়া ও রুকিয়া রয়েছে যেগুলো একজন অসুস্থ ব্যক্তি তার নিজের জন্য পাঠ করতে পারেন, এরকম কিছু দোয়া ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) তার যা’দ আল মায়াদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ১. أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وبَرَأَ وَذَرَأَ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত তা-ম্মা-তিল্লাতী লা- ইউজা-ওয়িঝুহুন্না বার্‌রুন ওয়ালা- ফা-জিরুন, মিন শার্‌রি মা- খালাক্বা ওয়া বারাআ ওয়া যারাআ, ওয়া মিন শার্‌রি মা- ইয়ানঝিলু মিনাস সামা-য়ি ওয়া মিন শার্‌রি মা- ইয়া’অ্‌রুজু ফীহা-, ওয়া মিন শার্‌রি মা- যারাআ ফিল আরদ্বি, ওয়া মিন শার্‌রি মা- ইয়া’খরুজু মিন্‌হা-, ওয়া মিন শার্‌রি ফিতানিল্লাইলি ওয়ান নাহা-রি, ওয়া মিন শার্‌রি কুল্লি ত্বা-রিক্কিন ইল্লা- ত্বারিক্বান ইয়াত্বরুক্বু বিখাইরিন ইয়া- রা’হমা-নঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাক্যাবলির, যেগুলোকে অতিক্রম করতে পারে না কোনো পুণ্যবান বা কোনো পাপী, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, বানিয়েছেন ও ছড়িয়ে দিয়েছেন তার অনিষ্ট থেকে, যা কিছু আসমান থেকে অবতরণ করে তার অনিষ্ট থেকে, যা কিছু আসমানে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, যা কিছু যমিনে ছড়ানো তার অনিষ্ট থেকে যা কিছু যমিন থেকে বের হয় তার অনিষ্ট থেকে, রাত ও দিনের ফিতনার অনিষ্ট থেকে এবং সকল আগন্তুকের অনিষ্ট থেকে, শুধু যে আগম্ভক কল্যাণ-সহ আগমন করে সে ব্যতীত, হে মহা-দয়াময়।২.أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَحْضُرُوْنِউচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি (তা-ম্মা-তি) মিন ‘গাদ্বাবিহী ওয়া ‘ইক্বা-বিহী ওয়া (মিন) শার্‌রি ‘ইবা-দিহী, ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়া-তীনি ওয়া আন ইয়া’হদ্বুরূনঅর্থঃ আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাক্যাবলির, তাঁর গযব-ক্রোধ থেকে, তার শাস্তি থেকে, তাঁর সৃষ্টির অকল্যাণ থেকে, শয়তানের তাড়না বা প্ররোচনা থেকে এবং আমার কাছে তাদের উপস্থিতি থেকে।৩.اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيْمِ وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللّٰهُمَّ، أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ، اَللّٰهُمَّ إِنَّهُ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَا يَخْلُفُ وَعَدُكَ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَউচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিওয়াযহিকাল কারিম ওয়া কালিমাতিকা তাম্মাতি মিন শাররি মা আনতা আ’খিয বি নাসিয়াতিহি আল্লাহুম্মা আনতা তাকশিফুল মাগরামা ওয়াল মা’সামা আল্লাহুম্মা ইন্নাহু লা ইউহযামু যুনদুকা ওয়ালা ইউখলাফু ওয়া’দুকা সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা।অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার মহান প্রসন্নতা ও উত্তম কথা দিয়ে সেই অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা আপনি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে পাকড়াও করেন। হে আল্লাহ আপনি আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং স্নায়বিক চাপ দূর করে দিন। হে আল্লাহ তোমার সেনাবাহিনী কখনো পরাজিত হতে পারে না, তোমার ওয়াদার কখনো বরখেলাপ হতে পারে না, সকল মহিমা ও প্রশংসা একমাত্র তোমারই।৪.اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ أَعْلَمُ أَنَّ اللّٰهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللّٰهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا وَأَحْصِيْ كُلَّ شَيْئٍ عَدَدًا. اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ وَمِنْ شَرِّ السَّيْطَانِ وَشَرِكِهِ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّيْ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍউচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা আ'লাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আনতা রাব্বুল আরশীল আযীম। মাশাআল্লাহ কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। আ’লামু আন্নাল্লাহা আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির ওয়া আন্না আল্লাহা আহাতা বি কুল্লি শাইয়িন ই'লমান ওয়া আহসা কুল্লা শাইয়িন ‘আদাদান। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন শাররিল শায়তানি ওয়া শারাকিহি ওয়া মিন শাররি কুল্লি দাব্বাতিন আনতা আখিযুন বি নাসিয়াতিহি, ইন্না রাব্বি আ'লা সিরাতিম মুসতাকিম।”অর্থঃ “হে আল্লাহ, হে আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আপনার প্রতি আমার সকল আস্থা এবং আপনি পবিত্র আরশীল আযীমের মালিক। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই ঘটে এবং তিনি। যা ইচ্ছা করেন না তা কখনোই ঘটে না। আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ক্ষমতা নেই, কোনো শক্তি নেই। আমি জানি আল্লাহ তাআলা সব করতে। সক্ষম, চারপাশে যা কিছু রয়েছে, যা কিছু ঘটছে সবই আল্লাহর জ্ঞাতসারে। এবং তিনি সব কিছুই গণনা করেছেন। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে। আমার নিজের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, শয়তান ও তার ফাঁদ থেকে বাচার প্রার্থনা করছি, আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওইসব সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে যেগুলোকে তুমি তোমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে পাকড়াও কর। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সহজ-সোজা পথে রয়েছেন।”অতঃপর তিনি বলেন: যারা আশ্রয়ের জন্য এ দুয়া ও প্রার্থনা পাঠ করবে, তারা যেন এর উপকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কেও জ্ঞান রাখেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ও অনুমতিক্রমে এসব দোয়া মানুষকে বদনজরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং বদনজরকে বাতিল করে দেয়, তবে এটা নির্ভর করবে দোয়া পাঠকারীর ঈমানি শক্তির উপর, তার আত্মার শক্তি, সম্ভাব্যতা, আল্লাহর প্রতি তার আস্থার শক্তি এবং তার হৃদয়ের দৃঢ়তার উপর। কারণ এ দোয়াগুলো এক ধরনের হাতিয়ার এবং মানুষ যখন এ হাতিয়ার ব্যবহার করে, তখন এটা খুব ভালো কাজ করে। [যাদুল মা'আদ, ৪/১৭০]

সেটিংস

বর্তমান ভাষা