পরিচ্ছেদ: রুকিয়াহ করে কি পারিশ্রমিক নেওয়া যায়?

০৪

ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা রহিমাহুল্লাহ বলেন, “রুকিয়াহ করে বিনিময় নেওয়ায় কোনও আপত্তি নেই। এ বিষয়ে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ-এর সুস্পষ্ট অভিমত রয়েছে।' [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা, ফাতাওয়া আল-কুবরা, ৫/৪০৮]প্রমাণস্বরূপ আমরা আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসটি স্মরণ করতে পারি। হাদীসটি আবারও বিশদভাবে তুলে ধরা হলাে, রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবিদের এক জামাআত সফরে ছিলেন; তারা আরবের একটি জনবসতিতে অবতরণ করলেন। তারা জনপদবাসীকে মেহমানদারীর অনুরােধ করলেন, কিন্তু জনপদবাসী সাহাবিদের আপ্যায়ন করল না।ইতােমধ্যে তাদের গােত্রপ্রধানকে সাপ দংশন করল। তখন তারা বলল, আপনাদের মাঝে কি কোনও রক্বী আছে? কারণ আমাদের জনবসতির প্রধান সাপের দংশনের শিকার এবং জাদু দ্বারা আক্রান্ত। জামাত থেকে বলা হলাে, 'হ্যাঁ আছে। তবে আপনারা আমাদেরকে আপ্যায়ন করেননি। সুতরাং আগে আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করুন, তারপর রুকিয়াহ করব। তারা একপাল মেষ নির্ধারণ করল। তখন একজন সাহাবি সূরা ফাতিহা পড়ে গােত্রপ্রধানকে রুকিয়াহ করলেন। গােত্রপ্রধান ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলেন; ফলে সাহাবিদেরকে এক পাল মেষ দেওয়া হলাে। তখন আবার সাহাবিগণ পারিশ্রমিক নিতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, আগে রাসূল (ﷺ)-কে বিষয়টি বলি। তারা রাসূল (ﷺ)-এর কাছে এলেন। রক্বী রাসূল (ﷺ)-কে বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! ওয়াল্লাহি! আমি শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে তাকে রুকিয়াহ করেছি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম সব শুনে হেসে বললেন, “কে বলেছিল তােমাকে, এটা রুকিয়াহ? আচ্ছা! তাদের থেকে সেগুলাে গ্রহণ করাে এবং আমাকেও সেখান থেকে একটি অংশ দিয়াে।'ইমাম নবাবি রহিমাহুল্লাহ বললেন, এ হাদীস সুস্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কোনও ধরণের অপছন্দনীয়তা ছাড়াই ফাতিহা ও কুরআন দ্বারা রুকিয়াহ করে পারিশ্রমিক নেওয়া হালাল। [নববি, শারহু সহীহ মুসলিম:১৪/১৮৮]রুকিয়াহ করে অর্থ-গ্রহণ বৈধ হলেও রক্বী ভাই-বােনদের এতটুকু লক্ষ রাখা কর্তব্য যে, কুরআন মাজীদ সকলের জন্য এবং তা কোনও পার্থিব সম্পদ নয়। সুতরাং টাকার অভাবে কেউ যেন শারঈ চিকিৎসা রুকিয়াহ থেকে বঞ্চিত না হয়। যদি অর্থের কারণে কাউকে রুকিয়াহ থেকে বঞ্চিত করা হয়, নিঃসন্দেহে এ হবে চরম গর্হিত কাজ। কুরআনকে আল্লাহ তাআলা সার্বজনীন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন,إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَٰلَمِينَঅর্থঃ “কুরআন হলাে বিশ্ববাসীর জন্য যিকর।' [সূরা সােয়াদ ৩৮ঃ৮৭]উল্লেখ্য যে, উপরিউক্ত হাদীসে রাসূল (ﷺ) মেষপালের একটি অংশ চেয়ে প্রশ্নকারী সাহাবিগণকে বােঝালেন যে, এই উপটৌকন হালাল হওয়ার বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।রুকিয়াহ ফলপ্রসূ হওয়ার পূর্বশর্ত রুকিয়াহ হলাে সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে সমস্যার সমাধান গ্রহণের একটি মাধ্যম। সুতরাং রুকিয়াহর ফল পেতে হলে রক্বীকে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধের বিধানগুলাে মেনে চলতে হবে। রক্বীর জন্য অবশ্যপালনীয় কিছু বিধান নিচে উল্লেখ করা হলাে: ১. সমস্ত গাইরে মাহরামের সাথে শারীয়ার হিজাবের বিধান মেনে চলুন এবং দৈনন্দিন জীবনে সকল ইসলামি বিধি-বিধানকে প্রাধান্য দিন;২. কুফুরি তাবিজ এবং এ-জাতীয় কোনও শিরকি বা বিদআতি চিকিৎসা গ্রহণ করলে তা আগে বর্জন করুন এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় রাখুন;৩. নিয়মিত ঘরে সূরা আল-বাকারাহ'র আমল জারি রাখুন; ৪. পরিবার পরামর্শভিত্তিক পরিচালনা করুন। পারিবারিক গােলযােগের কারণে সন্তান মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে। পরে সব দোষ পড়ে জ্বিনের ঘাড়ে! ৫. আপনার সন্তানকে সঠিক সময়ে বিয়ে দিন। অবৈধ সম্পর্ক ভেঙে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ (বিশেষত মেয়েরা) ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। ছেলে-মেয়েরা অবৈধ সম্পর্কে জড়ালে রহমত উঠে যায়; বিষগ্নতা সৃষ্টি হয়। ৬. নারী হােন কিংবা পুরুষ! দৃষ্টি অবনত রাখুন। নারী হলে শারঈ পর্দার বিধান মেনে চলুন। ৭. ঘরে কোনও ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য থাকলে আগে সরিয়ে ফেলুন। তা ছাড়া রহমতের ফেরেশতা ঘরে আসবে না এবং রুকিয়াহ-তে কাজ হবে না।রক্বীকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সচেতন হতে হবে। যেমন ক্যান্সার, সিজোফ্রেনিয়া বা কোনও জটিল রােগে শুধু ঝাড়ফুঁকের পরামর্শ না দিয়ে রক্বী যেন রােগীকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেক সময় দেখা যায় কুকুর কামড়ালে মানুষ হুজুরের কাছে যায়; আবার সাপের দংশনে অনেকেই ওঝার কাছে যায়। রক্বীর কর্তব্য হলাে তাদেরকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া, তারা যেন কুরআন-সুন্নাহর আমলের পাশাপাশি তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা