পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওপর বেশি বেশি দুরূদ পড়া
৯১. ভূমিকা
সকালে দশবার, বিকালে দশবার আর বেশির কোনো সীমা নেই।দুরূদ পাঠের ফযিলত নিম্নে বর্ণিত হল-
৯২. চিন্তা থেকে মুক্তি, গুনাহ মার্জনা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ এর মাধ্যমে অর্জন করা
উবাই ইবন কা‘ব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করলাম) হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ করতে চাই। কাজেই আমি আমার দোয়া ও যিকিরের সময় থেকে দুরূদের জন্য কত সময় নির্দিষ্ট করবো? তিনি উত্তর দিলেন: যে পরিমাণ তুমি চাও। আমি বললাম: এক চতুর্থাংশ সময়? তিনি উত্তর দিলেন: তুমি যা চাও। তবে যদি বেশি করো তা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম: তাহলে কি অর্ধক করবো। তিনি উত্তর দিলেন তুমি যা পছন্দ কর। তবে যদি আরো বেশি কর তা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ করি। তিনি উত্তর দিলেন। যে পরিমাণ তুমি ইচ্ছা কর। তবে যদি আরো বেশি কর তবে তা তোমার পক্ষে উত্তম হবে। আমি বললাম: তাহলে আমি আমার সম্পূর্ণ সময় আপনার ওপর দুরূদ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করবে। তিনি তখন বললেন: তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমার সব চিন্তা দূর করে দিবেন এবং তোমার গুনাহও মুছে দিবেন। [তিরমিযী ৭/১৫২]শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-কে এ হাদীসের তাফসীর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, [ইবনুল কাইয়্যেম, জালাউল আফহাম, পৃ. ৭৯] “উবাই ইবন কা‘ব (রাঃ)র কিছু দোয়া ছিল যা তিনি নিজের জন্য করতেন। তখন তিনি নবী (ﷺ)-কে প্রশ্ন করলেন, আমি কি সে দোয়ার এক চতুর্থাংশ আপনার জন্য সালাত-সালামে আদায়ে ব্যয় করব? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যদি তার থেকেও তুমি বাড়াও তবে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। তখন উবাই বললেন, তাহলে কী অর্ধেক দোয়া আপনার জন্য সালাতা-সালামে ব্যয় করবো? তখন নবী (ﷺ) বললেন, যদি তুমি এর চেয়েও বাড়াও তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। শেষ পর্যন্ত উবাই (রাঃ) বললেন, তাহলে কি আমি আমার দোয়ার স্থলে সবটুকুই আপনার জন্য সালাত-সালাম আদায়ে ব্যয় করব? তখন নবী (ﷺ) বললেন, “তাহলে তা তোমার যাবতীয় চিন্তা-ক্লেশের জন্য যথেষ্ট হবে আর তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে”। কারণ যে কেউ নবী (ﷺ)-এর উপর একবার সালাত-সালাম পাঠ করবে আল্লাহ তার জন্য সেটার বিনিময়ে দশবার সালাত-সালাম পাঠ করবেন।”ইমাম শাওকানী বলেন, “এ দু’টি অভ্যাসে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কারণ যাকে আল্লাহ তা‘আলা চিন্তা-ক্লেশ থেকে মুক্তি দিবেন সে তো দুনিয়ার যাবতীয় কষ্ট ও তার আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি থেকে মুক্তি লাভ করল; কারণ প্রতিটি কষ্টই চিন্তা-ক্লেশ থেকে উদ্ভূত যদিও তার পরিমাণ কম হয়। আর আল্লাহ যার গুনাহ ক্ষমা করেছে সে তো আখেরাতের কষ্ট থেকে নিরাপদ হয়ে গেল, কারণ আখেরাতে তো কেবল বান্দার গুনাহই বান্দাকে ধ্বংস করবে”। [তুহফাতুয যাকেরীন, পৃ. ৩০]
৯৩. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সুপারিশ লাভ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,«من صلى علي حين يصبح عشرًا وحين يمسي عشرًا أدركته شفاعتي يوم القيامة»“যে কেউ সকাল বেলা দশবার আমার উপর সালাত-সালাম পেশ করবে, আর বিকাল বেলা দশবার পেশ করবে, সে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে ধন্য হবে”। [সহীহ তারগীব, হাদীস নং ৬৫৯]তন্মধ্যে উত্তম সালাত হচ্ছে, দুরূদে ইবরাহীম (সালাতে যে দুরূদ পড়া হয়)।اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌআর সংক্ষিপ্ত দুরূদ হচ্ছে যাতে সালাত ও সালাম উভয়টিই রয়েছে, যেমন বলা যে, اًللَّهم صل وسلم على نبينا محمد(অথবা صلى اًللَّه عليه وسلم)