পরিচ্ছেদ: রক্বির কিছু ভূল

১৩১

এছাড়া কিছু রক্বির আবার জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে আরেক ধরনের ভুল করেন। এটা মারাত্মক এক ভুল। শাইখ আবদুল আযীয বিন বাযকে (রহঃ) একবার জিজ্ঞেস করা হল:প্রশ্ন: কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অসুস্থ লোকদের চিকিৎসা করেন এমন একজন শায়খের একটি নেকড়ে ছিল, শায়খের বক্তব্য মতে, নেকড়েটি জ্বিনদের খেত। তার ছোট এক মেয়ে ছিল জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত।সেই মেয়েটি তাকে বলতে পারত, জ্বিন কোথায় অবস্থান করছে। ওই শায়খ যা করতেন তা কি জায়েয?উত্তর: এ উদ্দেশ্যে নিজের কাছে কোনো নেকড়ে রাখা বা পালন করা বৈধ নয়। এটা এক ধরনের শয়তানি ও মন্দ কাজ। আর জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাও অনুমোদিত নয়। এটা অনেকটা ভবিষ্যতবক্তা ও জ্যোতিষীকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করারই মতো। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:“যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ বক্তা ও গণকের কাছে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে এর মাধ্যমে মুহাম্মাদের (ﷺ) কাছে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতি অবিশ্বাস স্থাপন করে।”ভবিষ্যৎ বক্তা ও গণকদের জ্বিন বন্ধু থাকে, এ জ্বিনরা তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলে দেয়। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এটা প্রত্যাখ্যান করেছেন, বাতিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং কোনো জ্বিনকে অজানা বিষয় বলে দেয়ার জন্য আটকে রাখা অথবা কোনো নেকড়েকে জ্বিন খাওয়ার জন্য পালন করা অনুমোদিত নয়, বরং রক্বির যদি পারেন তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কুরআন তেলাওয়াত করবেন।নেকড়ে রাখা অথবা জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে লক্ষণ জিজ্ঞেস করা বৈধ নয়, কারণ এগুলো হল জাদুকর ও গণকদের কাজ। আক্রান্ত ব্যক্তির শুধু চিকিৎসা করা যাবে এবং তার দেহে অবস্থান নেয়া জ্বিন বিতাড়িত করতে হবে, আর জ্বিন তাড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বিনদের মধ্যে যদি কোনো ভালো গুণ থাকে, তাহলে তাদেরকে বলতে হবে তারা ভুল করছে। [শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রহ.) থেকে গৃহীত ফাতওয়া]হযরত রাযি (রাঃ) তার ছাত্রকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার মাধ্যমেই আমরা উপসংহার টানতে পারি, এ উপদেশমালা তিনি তার আখলাকুল তাবিব (চিকিৎসকের দৃষ্টিভঙ্গি) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:জেনে রাখ, হে আমার বৎস, একজন চিকিৎসককে মানুষের প্রতি দয়ালু হতে হবে, তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের নেতিবাচক কিছু উল্লেখ করা এবং তাদের একান্ত বিষয়গুলো গোপন করা যাবে না, কারণ কিছু মানুষের এমন কোনো ব্যক্তিগত রোগ থাকতে পারে যা তার অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যেমন-তার পিতা বা মাতা অথবা ছেলের কাছেও গোপন করেছে, কিন্তু এ রোগের কথাই সে প্রয়োজনের তাগিদে ডাক্তারের কাছে খুলে বলে। ডাক্তার যদি কোনো নারী অথবা তরুণী বা বালকের চিকিৎসা করেন, তাহলে তাকে অবশ্যই তার দৃষ্টি নিম্নগামী করতে হবে, এবং শরীরের যে অংশে সমস্যা তা ব্যতীত অন্য কোনো দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে না। ওয়াইজ গ্যালেন তার ছাত্রদেরকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, অবশ্য তিনি সত্যই বলেছেন: ডাক্তারকে অবশ্যই তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি একনিষ্ঠ হতে হবে, তার দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে এবং নারীর সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাকে অবশ্যই রোগীর দেহের যে কোনো অংশ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তিনি যদি তার চিকিৎসা করতে চান তাহলে তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে হবে, শুধু যেখানে সমস্যা সেখানেই দৃষ্টি দিতে হবে, দেহের বাকি অংশে দৃষ্টি ঘোরানো যাবে না।এছাড়া তিনি চিকিৎসকদেরকে আত্ম-গৌরবে নিমজ্জিত হতে নিষেধ করেছেন। আমি অনেক মেডিক্যাল ছাত্রকে দেখেছি, তারা যদি কোনো রোগীর চিকিৎসা করেন এবং সেই রোগী যদি নিরাময় লাভ করেন, তাহলে আত্ম-গৌরবে উদ্বেলিত হয়ে উঠেন এবং অহঙ্কারী মানুষের মতো কথা বলতে শুরু করেন। আর সত্যি যদি ঘটনা এরকম হয়, তাহলে তারা কখনোই সফল হতে পারবে না এবং সঠিক নির্দেশনাও পাবেন না, সুতরাং তাদেরকে বিনয়ী ও নম্র হওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, এ পেশায় কিছু এটিকেট ও সৌন্দর্য রয়েছে, কিছু মৌলিক জ্ঞানও থাকা দরকার এ পেশায়, কিন্তু ডাক্তারকে হতে হবে নিরহঙ্কার, তার থাকতে হবে সুন্দর বাচনভঙ্গী, কথায় হতে হবে ভদ্র ও শান্ত, রোগীর প্রতি হতে হবে দয়ালু এবং রোগীদের সঙ্গে কর্কশ ব্যবহার পরিহার করতে হবে। এগুলো করতে পারলেই ওই ডাক্তার সফল হতে পারবেন এবং সঠিক পথের দিশা পাবেন। এছাড়াও তিনি ডাক্তারদেরকে দরিদ্র লোকদেরও চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন, তিনি বলেন: ডাক্তারকে ধনী লোকদের পাশাপাশি গরীবেরও চিকিৎসা করতে হবে। [ড. আহমেদ ত্ব-হা, আত তিব্ব আল ইসলামী, পৃ-১০৫।]

সেটিংস

বর্তমান ভাষা