পরিচ্ছেদ: অশুদ্ধ বই

১২৫

এ বিষয়ের উপর আমরা কত বই দেখেছি, একটার পর একটা প্রকাশিত হচ্ছে, এসবের অধিকাংশই এখান থেকে সেখান থেকে সংগ্রহ করা উদ্ধৃতির সংকলন মাত্র। যারা এসব বই লেখেন তাদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞানই নেই, তারা এর মাধ্যমে নিজেদের কৃতিত্বই জাহির করতে চান। তাই তারা আরেকজনের লেখা চুরি করেন, আরেকজনের প্রচেষ্টাকে অর্থের বিনিময়ে কিনে নেন এবং বই তৈরি করেন।যে বইয়ের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় লেখা থাকে, উমুক কর্তৃক রচিত, তিনি উমুকের ছেলে ইত্যাদি, আসলে তার এ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞানই নেই। তাদের বইগুলো বিদআতের বাজে বিবরণে পরিপূর্ণ থাকে, শরীয়াহ বিরোধী ছবি ও বিষয় দিয়ে বই তৈরি করা হয়। এতবার এসব বই পড়েছি আর এত এত এ সম্পর্কে শুনেছি যে, তার পুনরাবৃত্তি করা এখন দুঃসাধ্য মনে হয়। এসব কপটরা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে বই রচনা করেন, আর দাবি করে বসেন, এ গ্রন্থ যাচাই-বাচাই করা হয়েছে, পাশাপাশি এর ভিত্তি সম্পর্কেও বড় বড় দাবি করে বসেন। পরবর্তীতে দেখা যায় কপটদের রচিত এসব বই লোকজ গল্পের প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়, অথচ দেখে মনে হবে পাঠকরা এমন কিছু বই পড়ছেন, যেগুলো জ্ঞানে পরিপূর্ণ।অন্য দিকে এতে করে বিদ্বান ব্যক্তিরা খুব হতাশ, কারণ এ কপটতার মাধ্যমে ফিতনার দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেছে। আমাদের সম্মানিত শায়খ বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ সুন্দর বাচনভঙ্গীতে এসব রক্বির ও কপট শাইখদের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে:আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, কিছু মানুষ জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে ইচ্ছুক, কিন্তু তারা এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা অর্জন করার আগেই। বিখ্যাত হতে চান, অর্থাৎ তারা হাঁটতে শাইখার আগেই দৌড়াতে চান। [ড. বকর আবদুল্লাহ আবু যায়েদ, আল-তা'লামুন]তাদের রচিত বইসমূহে যেসব অদ্ভুত বিষয় পাওয়া যায় সেগুলো হল:কাউকে কোনো একটি আয়াত নির্দিষ্ট সংখ্যক বার পড়ার নির্দেশ দেয়া, যেমন-৩৬৬ বার অথবা ১০০২ বার; রোগীর দেহের উপর কুরআনের আয়াত লেখার নির্দেশ দেয়া, যেমন রোগীর নাভির নিচে অথবা কপালে লিখতে বলা।একজনের হাতের তালুতে রেখে কুরআন তেলাওয়াত করা, অতঃপর রোগীকে তার হাতের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখছে কি না তা জিজ্ঞেস করা।তাদের মধ্যে অনেকে আবার জ্বিনের উপস্থিতি আছে কি না তা জানার জন্য রোগীকে পাঁচ মিনিট ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বিসমিল্লাহি আউয়ালুহু ওয়া আখিরিহি পাঠ করতে বলেন।কিছু লোক আবার বলেন, একটি সাদা কাগজের উপর বৃত্ত এঁকে তার মধ্যে কুরআনের আয়াত লেখার জন্য, অতঃপর আয়াত লেখা এ কাগজ জ্বিনে আক্রান্ত ব্যক্তির সামনে উপস্থাপন করার পরামর্শ দেন। এরফলে জ্বিন পালিয়ে যাবে এবং এ বৃত্তের ফাঁদে আটকা পড়বে।অনেকে বলেন, আপনি যদি কোনো অবিবাহিত মেয়ের চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই তাকে রক্ষা করতে হবে এ কথা বলে, “পরম করুণাময় আল্লাহর নামে, হে মেয়ে তোমার সম্মান ও ভবিষ্যত সুরক্ষিত হোক।” এর কারণ হিসেবে তারা বলে থাকেন জ্বিন যাতে এ মেয়ের যোনীপথ থেকে প্রস্থান করে তার সতী পর্দা ভেঙ্গে না দিতে পারে, সেজন্য তারা এটা করে থাকেন।তারা আবার অনেক নারী রোগীকে নির্দেশ দেন, তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে, আর রক্বির তাকিয়ে থাকেন রোগীর দিকে, তারা এ চোখাচোখিকে বলে থাকেন শয়তান তাড়ানোর জন্য “তাকানোর মাধ্যমে রোগ আবিষ্কার" পদ্ধতি।তাদের মধ্যে অনেকে কুরআন তেলাওয়াত করার সময় রোগীকে হাত উত্তোলন করার নির্দেশ দেন, আর বলেন, রোগীর হাত যদি ডান দিকে। নড়ে বা হেলে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে তাকে জ্বিন স্পর্শ করেছে, আর হাত যদি বাম দিকে হেলে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে রোগী ওঝা-কবিরাজের যাদুটোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।শায়খ ও জ্বিনদের মধ্যকার দীর্ঘ কথোপকথনও প্রকাশিত হয়েছে, আমি জানিনা আসলে কোন পয়েন্টে বা কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের কথোপকথন প্রকাশ করা হল, এটা শায়খের কৃতিত্বের প্রচার ব্যতিত কিছু নয়, তিনি যে জ্বিনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, সেটা মানুষকে জানানোই এর উদ্দেশ্য। তাদের মধ্যে অনেকে আবার বলেন, জ্বিন ইসলাম গ্রহণ করেছে অথবা জ্বিন তওবা করেছে এবং রোগীর দেহ ত্যাগ করেছে। আমরা অনেক অনেক শুনেছি যে, জ্বিনদের রাজা ও রাণী তাদের বিশেষ দেহরক্ষীসহ মুসলিম হয়েছে, আরো শুনেছি নারীর দেহে অবস্থান নেয়া অসংখ্য জ্বিন রক্বির হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং দেহ ত্যাগ করে চলে গেছে, আর প্রস্থান করানোর সময় তাদের মধ্যকার মজার ও মুখরোচক কথোপকথনও আমরা শুনেছি।এরকম আরো অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে, এগুলো আদৌ সত্যি কি না, কারণ এসব কথোপকথন হয়েছে রোগীর ঠোঁটে, আমরা তো জ্বিনকে বা অন্য কাউকে দেখতে পাইনি। এমন হতে পারে যে, এটা এমন এক জ্বিন যে তার কণ্ঠ পরিবর্তন করতে পারে, অথবা এমনও হতে পারে, এ জ্বিন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়, অর্থাৎ রাজা বা মন্ত্রী নয়; অথবা এমনও হতে পারে যে, রোগীই মানসিকভাবে অসুস্থ।এসব শায়খরা জ্বিন থেকে প্রতিকারের বিষয়ে যা বর্ণনা করেছেন সে। ব্যাপারে বলব, একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে দ্বিধান্বিত ও হতাশ করার জন্য এ বর্ণনাই যথেষ্ট। তাদের মধ্যে অনেকে আবার নিজেকে ডাক্তার হিসেবে দাবি করেন এবং বিভিন্ন রোগের জন্য ওষুধের পরামর্শ দেয়াও শুরু করেছেন, যেমন-বাইল (পাচক রস), অ্যাসাফিটিডা ও “ড্রাগনের রক্ত”। [ড্রাগনের রক্ত: এক ধরনের গাঢ়ো লাল রঙের রজন সদৃশ পদার্থ যা উৎপন্ন হয় ড্রাগন গাছ থেকে, এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল ড্রাসিনা ড্রাকো]

সেটিংস

বর্তমান ভাষা