পরিচ্ছেদ: অনভিজ্ঞদের কাছে রুকইয়াহর পরামর্শ চাওয়া
১২৯
প্রচুর সংখ্যক মানুষ যারা চিকিৎসার জন্য রক্বির শরণাপন্ন হন, তারা আসলে মানসিকভাবে অসুস্থ। কলহে লিপ্ত সব দম্পত্তি কিন্তু যাদুটোনায় আক্রান্ত নয়। জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সকল নারী ও পুরুষই জ্বিনের কবলে পড়েনি। যে ছাত্র পড়ালেখায় অবহেলা এবং সঠিক সময়ে পড়ালেখা না করার কারণে অকৃতকার্য হয়েছে, তার উপর কারো বদনজর লাগেনি। তাই এ বিষয়টিতে দরকারের চেয়ে একটু বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হল তা জানতে ড. আলী বিন নাফী আল আলিয়ানীর বক্তব্য শুনতে হবে, তিনি বলেন: মানুষের বিরুদ্ধে শয়তানের চক্রান্ত অনেক বড়, কিন্তু সেটা একমাত্র তারা বুঝতে পারেন যাদের আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে ভালো জানাশোনা রয়েছে। লোকেরা দল বেঁধে পাঠকের কাছে যান, তার কাছে যাওয়ার জন্য পাড়ি দেন অনেক পথ, শুধুমাত্র তাকে ঘিরে সর্বত্র প্রচলিত গল্প-কাহিনীর কারণে, যেমন-বদ জ্বিনরা কিভাবে এ পাঠকের কাছে মানসিক রোগীর ঠোটে কথা বলে, এবং এ কপট শায়খরা কিভাবে জ্বিনদের কাছ থেকে। পুনরায় ফিরে না আসার ওয়াদা আদায় করে নেন। সত্যি এটাই যদি হয় বাস্তবতা এবং এরকমভাবেই ঘটতে থাকে, সত্যিকার অর্থেই এটা যদি অলৌকিক হয়ে থাকে, তাহলে পাঠককে অবশ্যই এর পরিণামের বিষয়ে ভয় পেতে হবে। [আর রুক্বা ফি দা-, আক্বীদাতু আললি সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ- ড. আলী আল-আলাইয়ানী পৃ. ৮০-৮১]আল যাহাবি (রহঃ) বলেন: তালুত থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি। ইবরাহিম বিন আদহামকে বলতে শুনেছি: যার মধ্যে বিখ্যাত হওয়ার বাসনা রয়েছে, সে কখনোই আন্তরিক হতে পারবে না। বিখ্যাত হওয়ার বাসনা রয়েছে এমন অকৃত্রিম ব্যক্তির লক্ষণ হল, সে কখনোই বুঝতে পারবে না যে, তার মধ্যে এ বাসনা আছে, তাকে যদি কেউ এ বাসনার বিষয়টি নিয়ে গালমন্দও করে, তবু সে রাগবে না অথবা নিজের প্রতিরক্ষার চেষ্টা করবে না, বরং সে এটা স্বীকার করবে এবং বলবে: যে আমার। অনুকূলে এমন কথা বলল এবং আমার খুঁত ধরিয়ে দিল, তার উপর যেন আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আসলে তার হৃদয় আত্মতৃপ্তিতে পরিপূর্ণ নয়। এবং সে তার দোষ-ক্রটির ব্যাপারেও অসচেতন নয়, বরং সে স্বীকার করে নেবে যে, তার মধ্যে এরকম দোষ-ত্রুটি থাকতেও পারে। এটা হল ক্রনিক বা অত্যন্ত পুরাতন ও কঠিন সমস্যা।ইনশাআল্লাহ, আমাদের ইচ্ছা আছে এ বাজে চর্চা নিয়ে আলোচনা করব এবং ধর্মের মুখোশের অন্তরালে করা এসব অশোভন ও মন্দ প্রাকটিসের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করব, কারণ যাদের সামান্য পরিমাণেও সাধারণ জ্ঞান রয়েছে এবং যুক্তি নির্ভর চিন্তা করতে অভ্যস্ত, তারা সহজাতভাবেই তাদের থেকে দূরে থাকবে। তিনি যখন দেখবেন, তাদের। এ আইডিয়ার সমর্থনে শরীয়ায় কোনো প্রমাণ খুঁজে পাবেন না, তখন স্বভাবতই তিনি বিষয়টি নিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদ ও বিদ্বান ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হবেন, যাতে করে তারা এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তি খণ্ডনের অভিযানে নামতে পারেন।এরপর আমরা নজর দেব অর্থ লিপ্সায় পড়ে রক্বিরদের দ্বারা সংঘটিত পাপ ও অপরাধের দিকে, কারণ যারা এ ধরনের চিকিৎসার অনুশীলন করেন তারা সকলেই মানুষ, আর মানুষের ভালো ও মন্দ উভয় দিকেই ঝোঁক থাকে, তাদের মধ্যে থাকে সকল স্বাভাবিক ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, জাগতিক ভালোবাসা ও সুখ-স্বাছন্দ্যের প্রতি অসম্ভব রকমের টান, আর এ সবই থাকে তাদের মুখোশের অন্তরালে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ ﴿١٤﴾অর্থঃ মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চিহ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৪)