পরিচ্ছেদ: জাদুকর যেভাবে জাদুটোনা করেন
৭১
যিনি জাদুটোনা করাতে চান, নারী হোক বা পুরুষ হোক, তিনি জাদুকরের কাছে যান এবং নির্দিষ্ট একজনের ওপর জাদুটোনা করার অনুরোধ করেন। অথবা তিনি মনে করতে পারেন, এ লোক জাদুকর নন, তাই তিনি তাকে তার অথবা তার কোনো আত্মীয়ের চিকিৎসা করার অনুরোধ করে। এ পর্যায়ে জাদুকর যার ওপর জাদুটোনা করানো হবে তার ও তার মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেন এবং তার পরিধেয় কাপড়, মাথার চুন অথবা তার ছবি নিয়ে আসতে বলেন।কিন্তু জাদুকর পিতার নামের স্থলে মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেন কেন? এর কারণ হল, ওই জাদুকর এবং তার সঙ্গে থাকা জ্বিন হল কাফির, তারা সকল ধর্ম ও ঐশী নিয়ম-কানুন অস্বীকার করেন এবং এগুলো নিয়ে উপহাস করেন। তাই তারা বিধিসম্মত বৈবাহিক চুক্তিও স্বীকার করেন না। জাদুকরের মতে, তার কাছে যারা আসেন তারা প্রত্যেকেই অবৈধ এবং যিনার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছেন-যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। এরপর জাদুকর উভয়ের নামের অক্ষর গণনা করেন। যদি তিনি মনে করেন, তার নাম মাটির (আল-তীন) কাছাকাছি, তাহলে তিনি তার জাদুমন্ত্র মাটিতে পুঁতে দেন, আর নাম যদি হয় পানির (আল-মা') কাছাকাছি, তাহলে তিনি তার মন্ত্র পানিতে ডুবিয়ে দেন-যেমন কুপে ফেলে দেয়া। যেভাবে ইহুদি লাবিদ বিন আযাম আল্লাহর রাসূল (ﷺ) জাদুটোনা করার সময় করেছিলেন। লাবিদ যখন মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নামের অক্ষর গণনা করে পেল যে, মুহাম্মাদের ও তার মায়ের নাম আমিনায় আলিফ ও মীম বর্ণের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং এটা পানির (আল-মা’) কাছাকাছি, তাই সে তার জাদুমন্ত্র যারওয়ান নামক কুপে ফেলে দিল।নাম পানির কাছাকাছি হলে জাদুকর তার কবচ কুপে অথবা সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। আর নাম যদি বাতাসের কাছাকাছি হয় তাহলে তারা এ কবচ কোনো গাছে অথবা খেজুর বৃক্ষে অথবা উঁচু দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়। এর পর সে জ্বিনের প্রতি উৎসর্গস্বরূপ ধুপ জ্বালায়, কারণ জ্বিনরা তাদের উপর উৎসর্গকৃত ধুপ খেয়ে থাকে। ধূপ জ্বালানোর পাশাপাশি জাদুকর জ্বিনদের নেতাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে কুফরি ও শিরক যুক্ত কালাম পাঠ করে। প্রত্যেক জাদুর জন্য আলাদা আলাদা ধুপ রয়েছে। এরপর জাদুকর তার মন্ত্র বা কবচ লেখা শুরু করে, এটা অনেকটা জ্বিনদের নেতাদের প্রতি দাসত্ব প্রকাশ করে এবং জ্বিনদের নেতাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং আল্লাহর বাণীর প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে লেখা চিঠির মতো। এরপর জ্বিনরা জাদুকরের কাছে তাদের শর্তাবলী তুলে ধরে, আর জাদুকর এ শর্তাবলী তার কাছে তাবিজ-কবচ নিতে আসা রোগীর ওপর চাপিয়ে দেয়, রোগীকে যর চক্রে অংশ নিতে বলা হয়, শর্তানুসারে একটি নির্দিষ্ট প্রাণী জবেহ করা, নির্দিষ্ট ধরনের খাবার খাওয়া এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে কোনো অন্ধকার রুমে নির্জনবাস করার আদেশ দেয়া হয়। আর এ মন্ত্র বা কবচ যদি পোড়ানো হয়, অথবা নষ্ট বা বাতিল হয়ে যায় তাহলে ভিকটিমের জন্য বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। এজন্য অনেক জাদুকর তাদের তাবিজ রক্ষার্থে তামার কৌটার ভেতরে তাবিজ রেখে সীসা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। এ পদ্ধতিকে অনেক সাধারণ মানুষ হিজাব বলে। এরপর জাদুকর জ্বিনকে ডাকে ভিকটিমের বিরুদ্ধে তার মিশন পরিচালনা করার জন্য। এ মিশন হল ভিকটিমকে অসুস্থ করে দেয়া, তার মধ্যে দৃষ্টিবিভ্রম সৃষ্টি করা এবং তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিভেদ তৈরি করা।এ জ্বিনকে বলা হয় জাদুর সেবক। এ সেবক জ্বিন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত মালামাল, কাপড়ের ঘ্রাণ শুকে ও তার ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করে। এরপর সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করতে থাকে এবং তার বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে। অনুসন্ধানে যদি সে বুঝতে পারে যে, আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর আদেশের প্রতি অবিচল থাকে না, তখন তার মিশন সহজ হয়ে যায়; তখন জ্বিন ওই ব্যক্তির ওপর আছর করে অথবা তার মধ্যে দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি করে ভয়ঙ্কর কিছু দেখিয়ে তাকে নিদারুণ যন্ত্রণা ও বিষন্নতায় ফেলে দেয়। কিন্তু জ্বিন যদি দেখে যে, তার আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর আদেশের প্রতি অবিচল থাকে এবং ভিকটিম অনেক আল্লাহভীরু, তখন জ্বিন তাকে ভয় পায় এবং তাকে অনুসরণ করতে থাকে, যখনই ভিকটিম একটু আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় অথবা খুব রাগান্বিত হয়ে যায় সেই মুহূর্তটা জ্বিন কাজে লাগায়। এ সুযোগে সে ভিকটিমের ওপর আছর করে বসে। এরপর জাদুকর তার ও সেবক জ্বিনের মধ্যবর্তী একজনের সহায়তায় তার জাদুটোনা চালিয়ে যেতে থাকে, এ মধ্যস্থতাকারী দৈনিক ফলাফলের খবর এনে দেয় এবং জাদুকরের নির্দেশাবলী সেবক জ্বিনের কাছে পৌঁছে দেয়।ভিকটিম যদি হয় আল্লাহভীরু ও ধার্মিক এবং দৈনিক যদি যিকির-আযকার পাঠ করেন, তাহলে জাদুকরের সেবক জ্বিন তাকে ভয় পায় এবং ভিকটিমের এ আল্লাহভীরুতা জ্বিনকে নিঃশেষ করে দেয়, যাতে করে জাদুটোনা তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে। মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি যদি এ চাকর জ্বিনকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ না দিত এবং শয়তানের পক্ষ থেকে পুরস্কারের লোভ না দেখাত অথবা তাকে হত্যা করার হুমকি না দিত, তাহলে এ জ্বিন পালিয়ে যেত। কিন্তু ভিকটিমের ঈমান যদি হয় দূর্বল, আল্লাহর সঙ্গে যদি সত্যিকারের কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এটাই তার জন্য সমস্যা হয়ে যায়, কারণ এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জাদুকর তার দেহের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়, যার প্রতিফলন ভিকটিমের জীবনে দেখা যায় এবং এ জাদুটোনার সঙ্গে সে এমন দুঃসাহসিক অভিযানে জড়িয়ে পড়ে যার কোনো শেষ নাও থাকতে পারে এবং তার এ সমস্যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এখানে আমরা দু' ধরনের মন্ত্র বা কবচের সঙ্গে পরিচিত হব; একধরনের কবচ অসুস্থ রোগীর দেহের ভিতরে প্রবেশ করানো হয় খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে অথবা সুগন্ধির মাধ্যমে অথবা রোগীর সঙ্গে করমর্দন করার মাধ্যমে; আরেক ধরনের কবচ রাখা হয় বাইরে, হয়তো কোথাও পুতে রাখা হয়। অথবা কোনো গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।