পরিচ্ছেদ: জাদুকর সমাজে যা যা করেন

৭০

জাদুকর সমাজে সকল ধরনের ক্ষতিকর ও কলুষিত কাজ ছড়িয়ে দিতে চান এবং এটা তিনি উপভোগ করেন। তিনি সৃষ্ট জীবের যে কোনো ক্ষতি করতে অথবা যে কোনো ভয়ঙ্কর খারাপ কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন না অথবা নিজেকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখেন না। জাদুকর যেসব কাজ করেন সেগুলো হল-ফসল ও গবাদিপশু ধ্বংস করা, আগুন লাগানো, ব্যবসায়ের মালামাল নষ্ট করা, স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিভেদ তৈরি করা, বিবাহিত দম্পত্তির মাঝে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করা, এমন ক্রিম উৎপন্ন করা যা মানুষের আকাঙ্ক্ষা নষ্ট করে দেয়, গর্ভপাত ঘটায়, মানুষকে পাগল, দ্বিধান্বিত অথবা অমনোযোগী করে তোলে, এমন পাউডার তৈরি করা যা ভালোবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি করে, জাদুমন্ত্র প্রয়োগ করে বাগদান ভণ্ডুল করে দেয়া এবং বিয়ের আগেই স্বামীকে নিবার্য করে দেয়া ইত্যাদি।অতঃপর এ জাদুকর জীবাণুর মতো কাজ শুরু করেন, দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত সমাজের মেরুদণ্ড ও হাঁড় খেতে থাকেন। এ জীবাণু যদি হত্যা করা না হয়, তাহলে এক পর্যায়ে পুরো দেহ দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়ে যাবে। এ কারণেই ইসলাম জাদুটোনা ও জাদুকরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সবচেয়ে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য আলিমদের মতে, এসব জাদুকরকে হত্যা করতে হবে এবং তাদেরকে প্রথমে তওবা করার সুযোগ না দিয়েই তাদের রক্ত ঝরানোও জায়েয।আল্লাহ তা'আলা বলেন:وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْঅর্থঃ আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। (আল বাকারা ২:১০২)যদি প্রশ্ন করা হয় যে: যেখানে স্বধর্মত্যাগীকে তওবা করার সুযোগ দেয়া হয়, সেখানে জাদুকরকে কেন তওবা করার সুযোগ দেয়া হবে না? মালিকি মতানুসারে এ প্রশ্নের জবাব হল-জাদু হলো বিপথগামীদের মতো এবং বিপথগামীকে তওবা করার কোনো সুযোগ দেয়া হয় না।জাদুকরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ছিল খলিফা হযরত ওমর বিন খাত্তাবের (রাঃ) দেখানো পথ। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, বাযালাহ বিন আবদাহ বলেন: আমি আল আহনাফ বিন কায়েসের চাচা যুজ বিন মুয়াবিয়ার অনুলেখক ছিলাম। একবার ওমরের (রাঃ) পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর পূর্বে একটি চিঠি এল আমাদের কাছে, ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল: “প্রত্যেক জাদুকরকে হত্যা কর”। [সুনানে আবু দাউদ, ৩/২২৮, হাদিস নং-৩০৪৩] এবং এ হাদীসের সনদও সহীহ। [মুসনাদ আল ইমাম আহমাদ, ১/১৯০, ১৯২; আল বায়হাকি, ৮/১৩৬, বিন হাজাম, আল মুহাল্লা ১১/৩৯৭]জাদুকরদের হত্যা করার ব্যাপারে আরেকটি সহীহ হাদীস রয়েছে। মু'মিনদের মাতা হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এবং এটি মুয়াত্তা ইমাম মালিক-এ আবদুর রহমান বিন সাদ বিন যারারাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি শুনেছেন যে, আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) স্ত্রী হযরত হাফসা (রাঃ) একজন দাসীকে হত্যা করেছিলেন, কারণ ওই দাসী তাকে জাদুটোনা করেছিল। এ দাসীর সঙ্গে মুক্তির বিষয়ে হাফসার (রাঃ) একটি লিখিত চুক্তি ছিল; তিনি ওই দাসীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নির্দেশ দিলেন। [মুয়াত্তা, পৃ-৫৪৩]জাদুকরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পক্ষে অনেক সাহাবীও সমর্থন জানিয়েছেন, তারা হলেন-ওমর বিন খাত্তাব, উসমান বিন আফফান, ইবনে ওমর, মুমিনদের মাতা হাফসা ও আবু মুসা আল-আশআরী (রাঃ) [তাফসীর আল কুরতুবি, ২/৪৮]ইমামদের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা ও মালিক এ মতের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন, আর ইমাম আহমাদ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

সেটিংস

বর্তমান ভাষা