পরিচ্ছেদ: দোয়ার ক্ষেত্রে কিছু ভুল ভ্রান্তি
১৬১
১. শির্কী ও বিদআতী অসীলাহ সম্বলিত দোয়া। [শির্কী ওয়াসীলাহ হচ্ছে কুবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়া এমনিভাবে মূর্তি পাথর ও বৃক্ষরাজির কাছে চাওয়া। আরো এর অন্তর্ভুক্ত হবে নবী, ওলী বা ফেরেশতাদের কাছে প্রার্থনা করা অথবাতাদেরকে সুপারিশ করার জন্য আহ্বান করা যেমনটি মুশরিকরা মূর্তি ও প্রতিমাকে আহ্বান করে থাকে। আর বিদআতী ওয়াসীলাহ হচ্ছে কোন ব্যক্তি সত্ত্বার অধিকার বা মর্যাদার দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়া যা নবী ও সাহাবাদের থেকে প্রমাণিত নয়। যেমন দোয়ায়বলা- হে আল্লাহ! তোমার নবী বা অমুক অলীর অসীলায় আমাদেরকে ক্ষমা কর।]২. মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করা ও চাওয়া। ৩. তাড়াতাড়ি শাস্তি দানের জন্য দোয়া করা।৪. বিবেকগত, অভ্যাসগত ও শরীয়তগত সর্বদিক থেকে অবান্তর ও অসম্ভব বিষয়ের জন্য দোয়া করা।৫. যে বিষয় ঘটে গেছে এবং তা থেকে অবসর গ্রহণ করা হয়েছে এর জন্য দোয়া করা (যেমন কেউ মরে গেছে তার জন্য হায়াত বৃদ্ধির দোয়া করা। যে পরীক্ষায় ফেল করেছে সেই পরীক্ষাতে পাশের জন্য দোয়া করা ইত্যাদি)৬. এমন বিষয়ের জন্য দোয়া করা, যা হবে না বলে শরীয়ত নির্দেশ করেছে (যেমন দোয়ায় এরূপ বলা যে, আল্লাহ কিয়ামত কবে হবে তা আমাকে জানিয়ে দিন)৭. নিজের উপর বা পরিবার ও সম্পদের উপর বদ দোয়া করা।৮. পাপের দোয়া করা, যেমন কোন ব্যক্তির প্রতি এ বলে বদ দোয়া করা যে, সে যেন কোন পাপ কাজে জড়িত হয়।৯. আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নের জন্য দোয়া করা।১০. পাপের বিস্তার ঘটার জন্য দোয়া করা।১১. আল্লাহর রহমতকে গণ্ডিভুক্ত করে দোয়া করা- যথা, একথা বলাঃ হে আল্লাহ! তুমি শুধু আমাকে আরোগ্য দান কর। শুধু আমাকে রিযক দান কর।১২. ইমামের পিছনে যখন মুক্তাদীরা আমীন বলতে থাকে তখন মুক্তাদিকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য বিশেষ করে দোয়া করা। (এখানে দোয়া এ কুনুত বা দোয়া এ ইসৃতিস্কা ইত্যাদি উদ্দেশ্য)১৩. দোয়ায় আদব পরিত্যাগ করা। যেমন একথা বলা -হে কুকুর, শুকর ও বানরের প্রভু।১৪. আল্লাহকে পরীক্ষা ও যাচাই করার জন্য দোয়া করা। যেমন এ কথা বলা যে, দোয়া করে পরীক্ষা ও যাচাই করছি কবুল করা হয় কিনা। অথবা এমন বলা যে, আল্লাহর কাছে। দোয়া করে দেখবো উপকার হলে হলো না হলে ক্ষতি নেই।১৫. দোয়া কারীর উদ্দেশ্য খারাপ থাকা।১৬. দোয়ার ব্যাপারে বান্দাহর সর্বদা অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকা, নিজের উপর নির্ভরশীল হওয়ার আগ্রহ না থাকা।১৭. দোয়ার ভিতর বেশী হারে শাব্দিক ভুল করা, বিশেষ করে এমন ভুল যা অর্থ ঘুরিয়ে ফেলে। কিন্তু যে অজ্ঞ- ভাষা জ্ঞান রাখে না তার উয্র গ্রহণযোগ্য।১৮. দোয়া কালে উদ্যেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল আল্লাহর নাম ও গুণাবলী নির্বাচন করতঃ (তার অসীলায়) দোয়া করার প্রতি গুরুত্ব না দেয়া।১৯. বঞ্চিত মনোভাব ও দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে ক্ষীণ বিশ্বাস।২০. দোয়ায় অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করা যা অনাবশ্যক। যথাঃ এমন বলে দোয়া করা” হে আল্লাহ! আমাদের পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, মামা, খালা সবাইকে ক্ষমা কর। এভাবে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও অন্যান্যদেরকে উল্লেখ করতে থাকা। তবে যদি ব্যাখ্যা সীমার ভিতর থাকে ও বিবেক সম্মত হয় এতে অসুবিধা নেই।২১. আল্লাহর এমন নামের অসীলাহতে তার নিকট দোয়া করা যা কিতাব সুন্নাহতে (কুরআন হাদীসে) উল্লেখিত হয়নি।২২. বেশী উচ্চৈঃস্বরে দোয়া করা।কোন কোন মহলে উচ্চৈঃস্বরে যিকর ও দোয়ার প্রথা প্রসিদ্ধ আছে যা সুন্নাহ বিরোধী এবং দোয়া বিষয়ে যত আয়াত ও হাদীস রয়েছে তার বিপরীত।আল্লাহ বলেনঃ আর আপনি স্বীয় প্রভুকে আপনার অন্তরে কাকুতিভরে ও ভীতি সহকারে এবং মৃদুশব্দে সকাল ও সন্ধ্যায় স্মরণ করুন, আর আত্মভোলাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (সূরা আরাফঃ ২০৫)আয়াতটি যিকর সম্পর্কীয় নিম্নোক্ত শর্তগুলোর প্রতি নির্দেশ করে যথাঃ (ক) চুপিসারে যিকর করা, আর সরবে যিক্র করলে শব্দকে নিম্নগামী করা।(খ) যিক্রে কাকুতি মিনতি প্রদর্শন করা।(গ) আল্লাহর স্মরণ কালে বান্দাহর পক্ষ থেকে স্বীয় পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত, উত্তম প্রতিদানের আশা পোষণ করা। বরং দৃঢ়তার সাথে দোয়া করা আবশ্যক।২৩. দোয়া কালে এমন বলা, হে আল্লাহ তোমার নিকট আমি ভাগ্য পরিবর্তন চাই না, কিন্তু এর ব্যাপারে তোমার মেহেরবানী চাই।২৪. ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করে দোয়া করা। যেমন এ ভাবে বলা যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা কর।২৫. দোয়া কালে কৃত্রিমভাবে উচ্চৈঃস্বরে কাঁদা।২৬. জুমু'আর খুৎবা ভিতর ইসতিসক্বার দোয়া কালে ইমাম কর্তৃক দু'হাত উত্তোলন না করা।২৭. কুনূতের অবস্থায় দীর্ঘ দোয়া করা এবং উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যবিহীন দোয়া করা।