পরিচ্ছেদ: দোয়ার শর্তাবলী, আদাব ও ক্ববূল হওয়ার উপায়সমূহ
১৫৯
১. আল্লাহর উদ্দেশ্যে মনকে খালিস তথা নিখাদ ও খাটি করা।২. আল্লাহর হামদ-সানা বা প্রশংসার দ্বারা শুরু করা; অতঃপর রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠ করা এবং এর মাধ্যমেই সমাপ্ত করা। [আর না তাবিঈন বা তাবি’ তাবিঈনগণ এটা করেছেন। তবে হাদীসে এসেছে “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর এর বিনিময়ে দশটি রাহমাত প্রেরণ করবেন- (মুসলিম) কিন্তু যিকর এর প্রকৃত নিয়ম হচ্ছে নিঃশব্দে তা সম্পাদন করা। আর নবীর ভালবাসা বলতে তার অনুসরণ ও সুন্নাত অনুযায়ী আমল করা বুঝায়।আল্লাহ তা'আলা বলেন : (হে নবী) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভাল বাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। (সূরা আলু ইমরান ৩১)]৩. দোয়ায় দৃঢ়তা প্রদর্শন করা এবং কবুল হওয়ার ব্যাপারে আস্থা রাখা।৪. দোয়ায় কাকুতি মিনতি করা এবং (গৃহীত হওয়ার ব্যাপারে) তাড়াহুড়া না করা।৫. দোয়ায় (হুযুরুল ক্বালব) মন উপস্থিত রাখা বা একাগ্রতা আনা।৬. আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নিকট না চাওয়া।৭. কাঠিন্য ও প্রশস্ততা (সুখ দুঃখ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিকট দোয়া করা।৮. পরিবার, সম্পদ, সন্তান ও নিজের উপর বদদোয়া না করা। [রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা নিজেদের উপর বদদোয়া করো না এমনিভাবে তোমাদের সন্তানদের উপরেও না এবং সম্পদের উপরেও না, যে সময়ে আল্লাহর কাছে দান প্রার্থনা করা হয় সেই সময়ে যেন তোমাদের বদদোয়া সংঘটিত না হয় তাহলে আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করে নিবেন। (মুসলিম)]৯. অতি নীরব ও অতি সরবের মাঝামাঝি অবস্থায় দোয়ার শব্দকে নিম্নগামী রাখবে।১০. গুনাহ স্বীকার করবে ও এর জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করবে। এবং আল্লাহর নিমাত স্বীকার করবে ও এর জন্য শুকরিয়া করবে।১১. দোয়া কবুল হওয়ার সময় বেছে নেয়া এবং দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাময় অবস্থা, পরিস্থিতি ও স্থান অনুযায়ী দ্রুত সুযোগ গ্রহণ করা।১২. দোয়ার ভাষায় ছন্দ মেলানোর কষ্টসাধ্য চেষ্টা না করা।১৩. দোয়ায় বিনয়, একাগ্রতা, আগ্রহ ও ভীতি থাকতে হবে।১৪. বেশী বেশী সৎ আমল করা। কারণ এটি দোয়া কবুল হওয়ার বিরাট একটি উপায়।১৫. তাওবাহ সহ যুলুমের অভিযোগ সমূহ মিটানো।১৬. দোয়াকে তিনবার করে পুনরাবৃত্তি করা। (যেগুলোতে তিন বারের কথা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে)১৭. ক্বিবলামুখী হওয়া।১৮. দোয়ার সময় হাত উত্তোলন করা। [প্রার্থনার ক্ষেত্রে হাত তুলাই আদাব কিন্তু অনেক ক্ষেত্র এমন রয়েছে যেখানে নবী (ﷺ) থেকে হাত উঠানোর কথা সাব্যস্ত হয়নি যেমন আযানোত্তর অসীলার দোয়া, সকাল সন্ধ্যার দোয়া, মসজিদে প্রবেশ ও তা থেকে বাহির হওয়ার দোয়া বাথরুমে প্রবেশ ও সেখান থেকে বাহির হওয়ার দোয়া ইত্যাদি।]১৯. দোয়ার পূর্বে ওযু করা, যদি সহজ হয়।২০. দোয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি না করা। [যেমন উচ্চৈঃস্বরে বা অবৈধ ও অনিয়ম মূলক দোয়া করা। যেমনঃ হে আল্লাহ আমাকে নবী বানিয়ে দাও অথবা আমাকে বেহেশতের অমুক নির্দিষ্ট অট্টালিকা দাও অথবা মুসলমানদেরকে বদ দোয়া দিয়ে বলবে হে আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করে দাও ইত্যাদি।]২১. অন্যের জন্য দোয়া করার সময় প্রথমে নিজের জন্য দোয়া করা।২২. আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম, উন্নত গুণাবলী, নিজের কৃত সৎ আমল, সৎ ব্যক্তির দোয়ার অসীলাহ গ্রহণের মাধ্যমে দোয়া করা।২৩. ফরয ছাড়াও বেশী বেশী নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা দোয়া কবুল হওয়ার একটি বিরাট উপায়। ২৪. খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হালাল হতে হবে। [রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ “হে লোক সমাজ অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র তিনি কেবল পবিত্রই কবুল করেন, তিনি মুমিনদেরকে ঠিক সেই আদেশ দিয়েছেন যা নবীদেরকে দিয়েছিলেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন যে দূর পাল্লার সফর করে বিক্ষিপ্ত কেশে আর ধুলামাখা বেশে আকাশ পানে হাত দুখানা প্রসারিত করে বলতে থাকে হে আমার প্রতিপালক, হে আমার প্রতিপালক অথচ তার খাদ্য, পানীয়, পোষাক, সবই হারাম এবং হারাম দ্বারা সে প্রতিপালিত। কিভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে? (আহমাদ, মুসলিম, তিরমিযী)]২৫. দোয়াতে যেন গুনাহ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা না থাকে। [রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ পৃথিবীর যে কোন মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোন দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে হয় ইহা দান করবেন অথবা সমপরিমাণ অনিষ্ট থেকে রেহাই দিবেন যতক্ষণ না গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার আবেদন না করবে। উপস্থিত জনতার মধ্য হতে এক ব্যক্তি বলে উঠল তবে আমরা বেশী করে দোয়া করব। তিনি বললেন, আল্লাহর দান আরো বেশী (তিরমিযী এটা বর্ণনা করে হাসান সহীহ বলেছেন) হাকিম আরো বৃদ্ধি করেন “অথবা এর সম পরিমাণ সওয়াব তার জন্য সঞ্চিত করে রাখবেন”।]২৬. মু'মিন ভাইদের জন্য দোয়া করবে-বিশেষভাবে পিতা- মাতা, উলামা, সকর্মশীল ও নেককারদের জন্য দোয়া করা ভাল। আরো ভালো বিশেষ করে ওদের জন্য দোয়া করা যাদের পরিশুদ্ধির উপর নির্ভর করে মুসলিমদের পরিশুদ্ধি, যেমন জনগণের দায়িত্বভার প্রাপ্ত নেতা (দেশের শাসক), আরো দোয়া করবে অসহায় নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য) [রসূল (ﷺ) বলেনঃ অসাক্ষাতে এক মুসলিম ভাই এর দোয়া অপর ভাই এর জন্য গৃহীত, তার মাথার নিকটেই। একজন ফেরেশতা নিয়োজিত আছেন যখনই তার ভাই এর জন্য কোন মঙ্গল কামনা করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলেন আমীন। (আল্লাহ তুমি কবুল কর) আর তোমার জন্যও তার সমপরিমাণ হোক। (মুসলিম)]২৭. ছোট বড় সব কিছুই আল্লাহর নিকট চাওয়া।২৮. সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করা। ২৯. সকল প্রকার অবাধ্যতা (পাপ) থেকে বিরত থাকা।