পরিচ্ছেদ: দোয়া কবুলের অন্তরায়সমূহ

২৮. হারাম খাদ্য হারাম বস্ত্র ও হারাম পানীয়

মানুষের খাদ্য-পানীয় যেমন শরীর গঠনে ভুমিকা রাখে তেমনি প্রাণ ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা আছে। খারাপ-পঁচা খাবার যেমন শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ ও খাবারও আত্মা ও প্রাণের ক্ষতি সাধন করে। সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ দখল, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাত প্রভৃতি অবৈধ পদ্ধতিতে অর্জিত খাবার খেয়ে বা পোশাক পড়ে দোয়া করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اًللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اًللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: 51] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: 172] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟»“হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলদেরকে। তিনি বলেছেন: হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। এবং তিনি (মুমিনদের উদ্দেশে) বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কীভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে?” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫]এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে হারাম খাদ্য খায়, হারাম পন্থায় উপার্জন করে, হারাম উপার্জনের কাপড় পড়ে তার দোয়া কবুল হতে পারে না। সে যত বড় লম্বা সফর করুক এবং দোয়া কবুলের যত অনুকূল পরিবেশে থাকুক।

২৯. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা

প্রতিটি মুসলিমের ওপর আল্লাহ ও তার রাসূল প্রদত্ত দায়িত্ব হলো সমাজে সে সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। যদি এ দায়িত্ব পালন করা না হয় তবে দোয়া কবুল করা হবে না। হাদীসে এসেছে: হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন:«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ»“যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দোয়া করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২১৬৯]

৩০. দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা

যেমন হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,«لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ، مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اًللَّهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ: يَقُولُ: «قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ، فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي، فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ»“বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল করা হয় যদি সে দোয়াতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দোয়াতে তাড়াহুড়া হলো, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দোয়া করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫]দোয়ায় এ ধরনের ত্বরা করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন, তিনি বলেন,﴿وَيَدۡعُ ٱلۡإِنسَٰنُ بِٱلشَّرِّ دُعَآءَهُۥ بِٱلۡخَيۡرِۖ وَكَانَ ٱلۡإِنسَٰنُ عَجُولٗا ١١﴾ [الاسراء: ١١]“আর মানুষ অকল্যাণের দোয়া করে; যেভাবে সে কল্যাণের দোয়া করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১]তবে দোয়ায় এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দোয়াতে ত্বরা করার অর্থ হলো দোয়া করে কেন এখনো দোয়া কবুল হলো না এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেওয়া।

৩১. অন্তরের উদাসীনতা

মুখে দোয়া করে আর যদি দোয়ার প্রতি অন্তর উদাসীন থাকে তাহলে দোয়া কবুল হয় না। যেমন, হাদীসে এসেছে:«ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ»“প্রার্থনা কবুল হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা প্রার্থনা করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৯; হাকেম, হাদীস নং ১৮১৭]অতএব, দোয়ায় যা কিছু বলা হবে তার প্রতি অন্তরের একনিষ্ঠভাব থাকতে হবে। মুখে যা বলা হলো, মন তার কিছুই বুঝল না। আবার অন্তর বুঝল ঠিকই, কিন্তু তার কথার প্রতি একাগ্রতা ছিল না, মনে ছিল অন্য চিন্তা-ভাবনা। তাহলে এ দোয়াকে বলা হবে উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা। যা আল্লাহ কবুল করেন না।

৩২. ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা

দোয়া কবুলের অন্তরায়যেমন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:ثَلَاثَةٌ يَدْعُونَ اللَّهَ فَلَا يُسْتَجَابُ لَهُمْ: رَجُلٌ كَانَتْ تَحْتَهُ امْرَأَةٌ سَيِّئَةَ الْخُلُقِ فَلَمْ يُطَلِّقْهَا، وَرَجُلٌ كَانَ لَهُ عَلَى رَجُلٍ مَالٌ فَلَمْ يُشْهِدْ عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ آتَى سَفِيهًا مَالَهُ وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمْ} [النساء: 5]“তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দোয়া কবুল করা হয় না। এক. যে ব্যক্তির অধীনে দুশ্চরিত্রা নারী আছে কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না। দুই. যে ব্যক্তি অন্য লোকের কাছে তার পাওনা আছে কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখে নি। তিন. যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয় অথচ আল্লাহ বলেন, তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের সম্পদ দিও না”। [মুস্তাদরাক হাকেম, হাদীস নং ৩১৮১]

সেটিংস

বর্তমান ভাষা