পরিচ্ছেদ: প্রার্থনাকারী যা থেকে দূরে থাকবেন
২৩. আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দোয়া করা
যখন স্পষ্ট হলো দোয়া হলো সর্বোত্তম ইবাদত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আনুগত্য এবং যা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদন করা মানুষের জন্য কর্তব্য। হোক তা প্রার্থনা অথবা আশ্রয় চাওয়া কিংবা বিপদ-মুক্তি, তা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে পেশ করা বৈধ নয়। যে এটা আল্লাহ ব্যতিত অন্যের কাছে পেশ করবে সে কাফির হয়ে যাবে, বের হয়ে যাবে মুসলিম মিল্লাত থেকে। যে সকল বিষয় মানুষ সাহায্য করতে সামর্থ রাখে শুধু সে সকল বিষয় মানুষের কাছে চাওয়া বৈধ। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না হোক নবী বা অলী বা পীর বা গাউছ-কুতুব অথবা ফিরিশতা বা জিন্ন এক কথায় কোনো সৃষ্টিজীবের কাছে দোয়া করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ وَإِن يَمۡسَسۡكَ ٱللَّهُ بِضُرّٖ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَۖ وَإِن يُرِدۡكَ بِخَيۡرٖ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِهِۦۚ يُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٧﴾ [يونس: ١٠٦، ١٠٧]“এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকার করে না, অপকারও করতে পারে না। কারণ, এরূপ করলে তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই এবং আল্লাহ যদি মঙ্গল চান তবে তার অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬-১০৭]আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَا تَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَۘ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ كُلُّ شَيۡءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجۡهَهُۥۚ لَهُ ٱلۡحُكۡمُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٨٨﴾ [القصص: ٨٨]“তুমি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকবে না, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্বা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তারই এবং তারই নিকট তোমরা ফিরে যাবে”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৮] আল্লাহ আরো বলেন,﴿وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ ٥ وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ كَانُواْ لَهُمۡ أَعۡدَآءٗ وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمۡ كَٰفِرِينَ ٦﴾ [الاحقاف: ٥، ٦]“সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তাকে সাড়া দেবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্পর্কেও অবহিত নয়। যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন এগুলো হবে তাদের শত্রু এবং এগুলো তাদের ইবাদত স্বীকার করবে”। [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৫-৬] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨]“এবং এ মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডাকবে না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,«مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ»“যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল যে জাহান্নামে প্রবেশ করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৯৭]আল্লাহর প্রতি মানুষের সবচেয়ে বড় অবিচার ও সীমালংঘন হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা। এটা হলো শিরক। আর আল্লাহ শির্কের অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন,﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [لقمان: ١٣]“নিশ্চয় শির্ক চরম যুলুম”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]আল্লাহ আরো বলেন,﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠]“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে”। [সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ১১০]মৃত ব্যক্তির কাছে দোয়া করা, তার কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করা, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের মাযারে ধর্না দেওয়া, তাদের কাছে তাওয়াজ্জুহ লাভের আশা করা, তাদের কবরে যেয়ে দোয়া করা হলো মারাত্মক শির্কের অন্তর্ভুক্ত।যারা কবরে শায়িত, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সকল আমল বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন নিজেদের কোনো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না, তাহলে প্রার্থনাকারীর প্রয়োজন পূরণ করবে কীভাবে? যারা তাদের কাছে দোয়া করে তাদের কোনো ধরনের উপকার বা ক্ষতি তারা কখনো করতে পারে না। অনেকে মনে করেন, তাদের মাযারে যেয়ে নিজেদের প্রয়োজন সম্পর্কে দোয়া করলে কবরবাসী অলী বা পীর আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের জন্য সুপারিশ করবেন। আমরাতো এ ধারণা করি না যে তারা নিজেরা আমাদের কোনো কিছু দিতে পারবেন।ভালো কথা বটে, কিন্তু এ ধারণা করাই তো শিরক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তারাতো দেব-দেবীগুলোকে সৃষ্টিকর্তা বা মৃত্যু দাতা কিংবা রিযিকদাতা মনে করত না। এ সকল ব্যাপারে তারা আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করত। কিন্তু তারা মনে করত এ সকল দেব-দেবী আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং এগুলোর মাধ্যমে তারা আল্লাহ নৈকট্য ও অনুগ্রহ লাভ করবে। যেমন, তাদের বক্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣]“(তারা বলে) আমরা এদের উপাসনা এজন্য করি যে, তারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ০৩] তাই এ ধারণা পোষণ করা যে নবী বা অলীর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তারা আমাদের দোয়া কবুলের ব্যাপারে সুপারিশ করবেন- মস্তবড় শির্ক। যদি নবী বা কোনো গাউস-কুতুব বা আওলিয়ার কবরে গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা শির্ক হয় তাহলে তাদের কাছে দোয়া করা কত বড় জঘন্য শির্ক! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুগের নিকৃষ্ট মুশরিকরাও এ ধরনের শির্ক করত না। আল্লাহ সকল মুসলিমকে শির্ক থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। তিনি যাকে সঠিক পথ দেখান সে সঠিক পথের দিশা পেয়ে থাকে।
২৪. দোয়ায় সীমালংঘন করা
আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥ ﴾ [الاعراف: ٥٥]“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবের কাছে দোয়া কর। তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। তাই দোয়ার মধ্যে সীমালংঘন করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করবেন না। দোয়ায় সীমালংঘন কী? এ সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে:(ক) উচ্চস্বরে বা চিৎকার করে দোয়া করাএকদল সাহাবী অবলম্বন প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের লক্ষ্য করে বললেন:«أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، إِنَّكُمْ لَيْسَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا قَرِيبًا، وَهُوَ مَعَكُمْ»“হে মানব সকল! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা কোনো বধির বা অসুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। তোমরাতো ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটে এবং তোমাদেরই সঙ্গে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪](খ) দোয়ায় শির্ক করাআল্লাহ ব্যতীত কোনো নবী, অলী বা পীরদের মাজারে দোয়া করা, গাছ, পাথর, পাহাড়, দেব-দেবী, প্রতিকৃতির সামনে দোয়া করা শির্ক। এমনিভাবে দোয়াতে এমন অসীলা দেওয়া, কুরআন বা সহীহ হাদীসে যার প্রমাণ নেই তাও শির্ক।(গ) বিদ‘আতী পন্থায় দোয়া করা এমন পদ্ধতিতে দোয়া করা যে পদ্ধতি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর প্রতিদিন জামাআতের সঙ্গে দোয়া করা এবং এটাকে সুন্নাত মনে করা। এমনিভাবে জানাযার সালাতের সালাম ফিরানোর পরপরই জামা‘আতবদ্ধভাবে দোয়া করা।(ঘ) নিজের মৃত্যু কামনা করে দোয়া করারাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ فَاعِلًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيْرًا لِي»“বিপদ-মুসীবতের কারণে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এ সম্পর্কে কোনো দোয়া করতেই হয় তবে বলবে: হে আল্লাহ! যতক্ষণ আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয় ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখুন। আর যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হবে তখন আমাকে মৃত্যু দান করুন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৭১]হাদীসে আরো এসেছে: কায়েস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,«دَخَلْنَا عَلَى خَبَّابٍ، نَعُودُهُ، وَقَدْ اكْتَوَى سَبْعَ كَيَّاتٍ، فَقَالَ: «لَوْلَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ»“আমরা খাব্বাব ইবনুল আরতের অসুস্থতা দেখার জন্য গিয়েছিলাম। তাকে সাতটি ছেকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বললেন, যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করতে নিষেধ না করতেন তাহলে আমি মৃত্যু কামনা করে প্রার্থনা করতাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮১](ঙ) আখিরাতের শাস্তি দুনিয়াতে কামনা করাএমনভাবে দোয়া করা যাবে না যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার এ অপরাধের শাস্তি আখিরাতে না দিয়ে দুনিয়াতে দিয়ে দাও। হাদীসে এসেছে: «أَنَّ رَسُولَ اًللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَادَ رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ قَدْ خَفَتَ فَصَارَ مِثْلَ الْفَرْخِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اًللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ كُنْتَ تَدْعُو بِشَيْءٍ أَوْ تَسْأَلُهُ إِيَّاهُ؟» قَالَ: نَعَمْ، كُنْتُ أَقُولُ: اًللَّهُمَّ مَا كُنْتَ مُعَاقِبِي بِهِ فِي الْآخِرَةِ، فَعَجِّلْهُ لِي فِي الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اًللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "" سُبْحَانَ اًللَّهِ لَا تُطِيقُهُ - أَوْ لَا تَسْتَطِيعُهُ - أَفَلَا قُلْتَ: اًللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ "" قَالَ: فَدَعَا اًللَّهَ لَهُ، فَشَفَاهُ».আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একজন মুসলমানের অসুস্থতা দেখার জন্য আসলেন। লোকটি খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করেছিলে বা কিছু চেয়েছিলে?’ সে বলল, হা, আমি দোয়া করতাম হে আল্লাহ! আপনি যদি আখেরাতে আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে দুনিয়াতেই আমাকে শাস্তি দিয়ে দেন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সুবহানাল্লাহ! তুমি তা বরদাশ্ত করতে পারবে না বা সহ্য করতে পারবে না, বরং তুমি এ রকম প্রার্থনা কেন করলে না যে, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমাদের কল্যাণ দাও এবং কল্যাণ দাও আখেরাতে। এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের মুক্ত রাখো। এরপর সে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করল। ফলে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮৮]
২৫. আল্লাহর রহমতকে সীমিত করার প্রার্থনা
এমন প্রার্থনা করা, হে আল্লাহ আমার শষ্যক্ষেত্রে আপনি বরকত দিন অন্য কাউকে নয়। আমার সন্তানদের মানুষ করেন অন্যদের নয়। আমাকে রিযিক দেন অন্যকে নয়। এ ধরনের দোয়া করা নিষেধ। যেমন, হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,«قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلَاةٍ وَقُمْنَا مَعَهُ، فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ: اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي وَمُحَمَّدًا، وَلَا تَرْحَمْ مَعَنَا أَحَدًا. فَلَمَّا سَلَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلْأَعْرَابِيِّ: «لَقَدْ حَجَّرْتَ وَاسِعًا»“রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে আমরা সালাতে দাঁড়ালাম। সালাতের মধ্যে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এ বলে দোয়া কর, হে আল্লাহ! আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং মুহাম্মদ এর প্রতিও। আমাদের মধ্যে অন্য কাউকে অনুগ্রহ করবেন না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সালাম ফিরালেন তখন ওই গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, যা ব্যাপক, তাকে তুমি সীমিত করে দিলে”। [সহীহ বুখারী]
২৬. নিজের, পরিবারের বা সম্পদের বিরুদ্ধে দোয়া করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ»“তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে দোয়া করবে না, নিজেদের সন্তানদের বিরুদ্ধে দোয়া করবে না এবং নিজেদের সম্পদের বিরুদ্ধে দোয়া করবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০০৯]
২৭. ছন্দ ও সুর সহযোগে দোয়া করা
ইবন আব্বাস (রাঃ) ইকারামা রহ.-কে নসীহত করতে গিয়ে বলেছেন:«فَانْظُرِ السَّجْعَ مِنَ الدُّعَاءِ فَاجْتَنِبْهُ»، فَإِنِّي عَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ يَعْنِي لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ الِاجْتِنَابَ»“দোয়ায় ছন্দ ও সুর-সঙ্গীত পরিহার করবে। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের যুগ পেয়েছি। তারা সকলে এটা পরিহার করেই চলতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৩৭]