পরিচ্ছেদ: দোয়া করার আদবসমূহ
০৮. দোয়া করার সময় তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করা
যদি আল্লাহ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকে তাঁর কুদরত, মহত্ত্ব, ওয়াদা পালনের প্রতি ঈমান থাকে তাহলে এ বিষয়টা আয়ত্ব করা সহজ হবে। নবী কারীম (ﷺ) বলেন,«لَا يَقُولُ أَحَدُكُمُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ، اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ، لِيَعْزِمُ المَسْأَلَةَ فَإِنَّهُ لَا مُكْرِهَ لَهُ»“তোমাদের কেউ এ রকম বলবে না: হে আল্লাহ আপনি যদি চান তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। যদি আপনি চান তাহলে আমাকে অনুগ্রহ করুন। যদি আপনি চান তাহলে আমাকে জীবিকা দান করুন। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে প্রার্থনা করবে এবং মনে রাখবে তিনি যা চান তা-ই করেন, তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৯৭]অর্থাৎ আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা-ই করে থাকেন। তাই এভাবে প্রার্থনা বা মোনাজাত করার কোনো স্বার্থকতা নেই যে, আপনি চাইলে করেন। ঠিক এমনিভাবে তার কাছে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রার্থনা করলে তাকে বাধ্য করা হয় না। কেননা তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না। এটা প্রার্থনাকারীসহ সকলে জানে।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন, «ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ»“প্রার্থনা কবুল হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা প্রার্থনা করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৯; হাকেম, হাদীস নং ১৮১৭]
০৯. বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে দোয়া করা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ ও তার শাস্তি থেকে বাঁচার প্রবল আগ্রহ নিয়ে দোয়া করা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥﴾ [الاعراف: ٥٥]“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবের কাছে দোয়া করবে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ ﴾ [الانبياء: ٩٠]“তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করে ও তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে আশা ও ভীতির সঙ্গে এবং তারা থাকে আমার নিকট বিনীত”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯০] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দোয়ার সময় বিনয়, ভীতি ও আশা নিয়ে কীভাবে দোয়া করতেন তার একটি ছোট দৃষ্টান্ত এ হাদীসে দেখা যায়। আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَلَا قَوْلَ اًللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي إِبْرَاهِيمَ: {رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي} [إبراهيم: 36] الْآيَةَ، وَقَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ: {إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ} [المائدة: 118]، فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: «اًللَّهُمَّ أُمَّتِي أُمَّتِي»، وَبَكَى، فَقَالَ اًللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: «يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ، وَرَبُّكَ أَعْلَمُ، فَسَلْهُ مَا يُبْكِيكَ؟» فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، فَسَأَلَهُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اًللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا قَالَ، وَهُوَ أَعْلَمُ، فَقَالَ اًللَّهُ: " يَا جِبْرِيلُ، اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ، فَقُلْ: إِنَّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمَّتِكَ، وَلَا نَسُوءُكَ»“নবী (ﷺ) ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোয়া সম্পর্কে কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, হে আমার রব! এ সকল প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত।’ এবং তিনি ঈসা ‘আলাইহিস সালামের দোয়া সম্পর্কিত কুরআনের এ আয়াতটিও তিলাওয়াত করলেন, ‘তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ তিনি দু’হাত উপরে তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’ এবং তিনি কাঁদলেন। আল্লাহ বললেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও, জিজ্ঞেস কর (অবশ্য তোমরা রব ভালো জানেন) তাকে কিসে কাঁদিয়েছে। জিবরীল আসলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, তাঁর কাঁদার কারণ (আল্লাহ তো অবশ্যই জানেন)। আল্লাহ বললেন, হে জিবরীল, তুমি মুহাম্মদের কাছে যাও এবং বল, আমি অবশ্যই তার উম্মতের ব্যাপারে তাকে সন্তুষ্ট করব, তাকে এ ব্যাপারে অসম্মান করব না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০২]
১০. আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে ধর্না দেওয়া এবং নিজের দুর্বলতা, অসহায়ত্ব ও বিপদের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা
দেখুন আইউব ‘আলাইহিস সালাম কীভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ সে সম্পর্কে বলেন, ﴿وَأَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ٨٣﴾ [الانبياء: ٨٣]“এবং স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার রবের কাছে প্রার্থনা করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের প্রার্থনা সম্পর্কে বলেন,﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤ وَإِنِّي خِفۡتُ ٱلۡمَوَٰلِيَ مِن وَرَآءِي وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا فَهَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا ٥﴾ [مريم: ٤، ٥]“সে বলেছিল, হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব! তোমার কাছে প্রার্থনা করে আমি কখনো ব্যর্থকাম হই নি। আমি আশংকা করি আমার পর আমার সগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে দান কর উত্তরাধিকার”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪-৫] ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোয়া সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,﴿رَّبَّنَآ إِنِّيٓ أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفِۡٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧﴾ [ابراهيم: ٣٧]“হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৭] কুরআন কারীমে এ ধরনের বহু আয়াত আছে যাতে তুলে ধরা হয়েছে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম কীভাবে কাতরতা ও বিনয়ের সঙ্গে নিজেদের করুণ অবস্থা আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন। মুমিনদের কর্তব্য ঠিক এমনিভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করা।
১১. দোয়ায় আল্লাহর হামদ ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি দুরূদ পেশ করা
দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি দুরূদ পড়া দোয়া কবুলের সহায়ক বলে হাদীসে এসেছে। ফুযালা ইবন উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,«سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يَدْعُو فِي صَلَاتِهِ لَمْ يُمَجِّدِ اللَّهَ تَعَالَى، وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَجِلَ هَذَا»، ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: - أَوْ لِغَيْرِهِ - «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ، فَلْيَبْدَأْ بِتَمْجِيدِ رَبِّهِ جَلَّ وَعَزَّ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ»“একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখলেন এক ব্যক্তি দোয়া করছে কিন্তু সে দোয়াতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলের প্রতি দুরূদ পাঠ করে নি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, সে তাড়াহুড়ো করেছে। অতঃপর সে আবার প্রার্থনা করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে অথবা অন্যকে বললেন, যখন তোমাদের কেউ দোয়া করে তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তার গুণগান দিয়ে দোয়া শুরু করে। অতঃপর রাসূলের প্রতি দুরূদ পাঠ করে। এরপর যা ইচ্ছা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে”। [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৪৮১; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৭]
১২. আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও তাঁর মহৎ গুণাবলি দ্বারা দোয়া করা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]“আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব, তোমরা তাকে সে সকল নাম দিয়ে প্রার্থনা করবে”। [সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৮০]আল্লাহ তাআলার সুন্দর নাম ও মহান গুণাবলির মাধ্যমে দোয়া করার কথা আল-কুরআনে ও হাদীসে বহু স্থানে এসেছে। যেমন, ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَتَهَجَّدُ، قَالَ: " اللَّهُمَّ لَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ الحَقُّ، وَوَعْدُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ المُقَدِّمُ وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ»“নবী (ﷺ) রাতে যখন তাহাজ্জুদ পড়তে দাঁড়াতেন তখন বলতেন, হে আল্লাহ আপনারই প্রশংসা, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীসমূহে ও তাতে যা কিছু আছে আপনি তার জ্যোতি। আপনারই প্রশংসা, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীসমূহে এবং তাতে যা কিছু আছে আপনি তার ধারক। আপনারই প্রশংসা, আপনি সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার কথা সত্য, আপনার সঙ্গে সাক্ষাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদ সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। আপনার ওপরই নির্ভর করেছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আপনার দিকে ফিরে এসেছি। আপনার জন্য বিবাদ করেছি। আপনাকেই বিচারক মেনেছি। অতএব আপনি আমার পূর্ব ও পরের গোপন ও প্রকাশ্যের পাপগুলো ক্ষমা করে দিন। আপনি শুরু আপনি শেষ। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৯]এ হাদীসে দেখা গেল নবী (ﷺ) দোয়ায় কীভাবে আল্লাহর গুণগান করছেন। আল্লাহর সুন্দর নামগুলো উল্লেখ করেছেন।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন শুনলেন এক ব্যক্তি সালাতে আত্তাহিয়্যাতুর বৈঠকে এ বলে দোয়া করছে:«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا اَللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ، قَالَ: فَقَالَ: «قَدْ غُفِرَ لَهُ، قَدْ غُفِرَ لَهُ»“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি- আপনি তো এক; অদ্বিতীয়, যিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয় নি। কেউ নেই তাঁর সমকক্ষ- আপনি আমার পাপগুলো ক্ষমা করুন। আপনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়াময়। এ প্রার্থনা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে”। [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৯৮৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১২২৫]উল্লিখিত ব্যক্তি আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে দোয়া করার কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দোয়া কবুলের সংবাদ দিলেন।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরেক ব্যক্তিকে দেখলেন সালাতে তাশাহহুদে সে এ বলে দোয়া করছে:«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، إِنِّي أَسْأَلُكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِهِ: «تَدْرُونَ بِمَا دَعَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْعَظِيمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى»“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি -এ কথার অসীলায় যে, সকল প্রশংসা আপনার, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি দানশীল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, হে মহিমময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব ও সর্ব সত্তার ধারক!- আপনার কাছে জান্নাত চাচ্ছি এবং মুক্তি চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে। নবী কারীম (ﷺ) এ প্রার্থনা শুনে তার সাহাবীদের বললেন: তোমরা কি জানো, সে কি দিয়ে দোয়া করেছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন: সে আল্লাহর মহান নাম দিয়ে দোয়া করেছে। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে দোয়া করবে তার দোয়া তিনি কবুল করবেন। (অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে ইসমে আজম দিয়ে দোয়া করেছে)”। [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৪৯৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩০০]রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الحُوتِ: لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ»“ইউনূস ‘আলাইহিস সালামের প্রার্থনা (যখন তিনি মাছের পেটে ছিলেন) তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী। যে কোনো মুসলিম এ কথা দিয়ে প্রার্থনা করবে তার প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করবেন”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫০৩]
১৩. পাপ ও গুনাহ স্বীকার করে প্রার্থনা করা
যেমন, হাদীসে এসেছে: সাদ্দাদ ইবন আউস (রাঃ) নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন,«سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ " قَالَ: «وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ»“সেরা ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনার বাক্য) হলো তুমি এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছে। আর আমি তোমার বান্দা। তোমার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির ওপর আমি আমার সাধ্যমত অটল রয়েছি। আমি যা কিছু করেছি তার অপকারিতা হতে তোমার আশ্রয় নিচ্ছি। আমার প্রতি তোমার যে নি‘আমত তা স্বীকার করছি। আর স্বীকার করছি তোমার কাছে আমার অপরাধ। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।যে সকালে দৃঢ় বিশ্বাসে এটা পাঠ করবে সে যদি ওই দিনে সন্ধ্যার পূর্বে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সন্ধ্যায় পাঠ করে, এবং সকাল হওয়ার পূর্বে সে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৬]এ হাদীসে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য রাসূল (ﷺ) সর্বোত্তম ইস্তেগফার শিক্ষা দিয়েছেন। তাতে প্রার্থনাকারী নিজ পাপ স্বীকার করে প্রার্থনা করছেন। এ প্রার্থনা কবুল হওয়ার সুসংবাদও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দিয়েছেন।
১৪. প্রার্থনাকারী নিজের কল্যাণের দোয়া করবে নিজের বা কোনো মুসলিমের অনিষ্টের দোয়া করবে না
নিজের কল্যাণের জন্য দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার ওয়াদা আছে আর অকল্যাণ বা পাপ নিয়ে আসতে পারে এমন দোয়া করলে তা কবুল হবে না বলে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ، وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا " قَالُوا: إِذًا نُكْثِرُ، قَالَ: «اللَّهُ أَكْثَرُ»“যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দোয়া করে, যে দোয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দোয়া সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার দিকে আগুয়ান কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন”। [আহমদ, হাদীস নং ১১১৩৩]তিনি আরো বলেন,«لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ»“বান্দার দোয়া কবুল হয় যদি তাতে পাপ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা না থাকে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫]রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরেঅ বলেন,«لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ»“তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে দোয়া করবে না, নিজেদের সন্তানদের বিরুদ্ধে দোয়া করবে না এবং নিজেদের সম্পদের বিরুদ্ধে দোয়া করবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০০৯]
১৫. সৎকাজের অসীলা দিয়ে দোয়া করা
যেমন, সহীহ হাদীসে বিপদগ্রস্ত তিন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে পাথর ধসে পড়ার কারণে পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়েছিল। তারা তখন প্রত্যেকে নিজ নেক আমলের অসীলা দিয়ে প্রার্থনা করেছিল। একজন মাতা-পিতার উত্তম সেবার কথা বলেছিল। দ্বিতীয়জন ব্যভিচারের সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও এ কাজ থেকে বিরত থেকে ছিল। তৃতীয়জন এক ব্যক্তির আমানত রক্ষা ও তাকে ফেরত দিয়েছিল। এরা প্রত্যেকে বলেছিল, হে আল্লাহ আমি যদি এ কাজটি আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করে থাকি তাহলে এ কাজের অসীলায় আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আল্লাহ তিনজনের প্রার্থনাই কবুল করে তাদের বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন”। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]এ হাদীসে দেখা যায় যে নেক আমলের অসীলা দিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
১৬. বেশি বেশি করে ও বার বার দোয়া প্রার্থনা করা
যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«إِذَا سَأَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيُكْثِرْ، فَإِنَّهُ يَسْأَلُ رَبَّهُ»“তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে সে যেন বেশি করে দোয়া করে কেননা সে তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা কছে”। [সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস ৮৮৯]রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন,«لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ، مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اًللَّهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ: يَقُولُ: «قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ، فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي، فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ»“বান্দার দোয়া কবুল করা হয় যদি সে দোয়াতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়, তিনি বললেন, দোয়াতে তাড়াহুড়া হলো, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দোয়া করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও দোয়া করা ছেড়ে দেয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫]দোয়া কবুল হতে না দেখলে নিরাশ হওয়া উচিৎ নয়। কারণ, মুমিন ব্যক্তির দোয়া কখনো বৃথা যায় না। হাদীসে এসেছে:«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ، وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا "" قَالُوا: إِذًا نُكْثِرُ، قَالَ: «اللَّهُ أَكْثَرُ»“যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দোয়া করে, যে দোয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দোয়া সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার দিকে আগুয়ান কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৫]এ হাদীসে যেমন দোয়া কখনো বৃথা যায় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি বেশি করে দোয়া করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
১৭. সুখে দুঃখে সর্বাবস্থায় দোয়া করা
মানুষ কখনো সুখের সময় অতিবাহিত করে কখনো দুঃখের সময়। অনেক মানুষ এমন আছে যারা শুধু বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকেন ও প্রার্থনা করেন। আবার অনেকে এমন আছেন যারা বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকতে ভুলে যান। কিন্তু সত্যিকার মুমিন ব্যক্তি সুখে ও দুঃখে সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالكَرْبِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ»“যে চায় আল্লাহ বিপদ-মুসীবতে তার প্রার্থনা কবুল করুন সে যেন সুখের সময় আল্লাহর কাছে বেশি করে প্রার্থনা করে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৮২]
১৮. দোয়ার বাক্য তিনবার করে উচ্চারণ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একটি পথ-নির্দেশ হলো তিনি কোনো কোনো দোয়ার বাক্য তিনবার করে উচ্চারণ করতেন। যখন মুশরিকরা রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর সালাতাবস্থায় উটের নাড়ী-ভুঁড়ি তাঁর পিঠের ওপর রাখল তখন তিনি সালাত শেষ করে দোয়া করলেন এভাবে:«اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ، اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ، اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ»، ثُمَّ سَمَّى: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِعَمْرِو بْنِ هِشَامٍ، وَعُتْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَالوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ، وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ، وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعَيْطٍ وَعُمَارَةَ بْنِ الوَلِيدِ» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ، ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى القَلِيبِ، قَلِيبِ بَدْرٍ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأُتْبِعَ أَصْحَابُ القَلِيبِ لَعْنَةً»“হে আল্লাহ কুরাইশদের তুমি পাকড়াও করো! হে আল্লাহ কুরাইশদের তুমি পাকড়াও করো!! হে আল্লাহ কুরাইশদের তুমি পাকড়াও করো!!! অতঃপর তিনি তাদের নাম উল্লেখ করলেন: হে আল্লাহ তুমি পাকড়াও কর আমর ইবন হিশামকে, উতবা ইবন রাবীয়াকে, শাইবা ইবন রবীয়াকে, অলীদ ইবন উতবাকে, উমাইয়া ইবন খালাফকে, উতবা ইবন আবি মুয়ীত এবং আম্মারা ইবন অলীদকে। আব্দুল্লাহ বলেন, বদর যুদ্ধের দিন এ সকল লোকদের লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। অতঃপর এদের লাশগুলোকে টেনে বদরের কূপে নিক্ষেপ করা হলো। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: কূপবাসীর ওপর অভিশাপ অব্যাহত থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২০]দোয়ার বাক্য তিনবার করে উচ্চারণ করলে প্রার্থনাকারীর মনোযোগ ও একাগ্রতা বেশি হয় যা দোয়া কবুলে সহায়ক হয়।
১৯. দোয়ায় উচ্চস্বর পরিহার করা
অনেক মানুষকে দেখা যায় তারা দোয়া করার সময় আওয়াজ উঁচু করেন বা চিৎকার করে দোয়া করেন। এটা দোয়ার আদবের পরিপন্থী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥﴾ [الاعراف: ٥٥]“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে দোয়া কর। তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫] এ আয়াতে গোপনে দোয়া করতে বলা হয়েছে এবং দোয়ায় সীমালংঘন সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।প্রায় সকল তাফসীরবিদের অভিমত হলো, এ আয়াতে সীমালংঘনকারী বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে যারা উচ্চ আওয়াযে দোয়া করে।আল্লাহ তা‘আলা নবী যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের প্রশংসায় বলেছেন: ﴿إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ نِدَآءً خَفِيّٗا ٣﴾ [مريم: ٣]“যখন সে তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল নিভৃতে”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ০৩] এ আয়াতে গোপনে দোয়া করতে বলা হয়েছে এবং দোয়াতে সীমালংঘন থেকে সতর্ক করা হয়েছে।অপর দিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:«أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، إِنَّكُمْ لَيْسَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا قَرِيبًا، وَهُوَ مَعَكُمْ»“হে মানব সকল! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা কোনো বধির বা অসুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। তোমরাতো ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটে এবং তোমাদেরই সঙ্গে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪]যখন একদল সাহাবী উচ্চ আওয়াজে দোয়া করছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ কথা বলেছিলেন।
২০. দোয়া- প্রার্থনার পূর্বে অযু করা
আবূ মূসা ‘আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: তিনি বলেন,«دَعَا رَسُولُ اًللَّهِ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَاءٍ، فَتَوَضَّأَ مِنْهُ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «اًللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ» حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «اًللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ، أَوْ مِنَ النَّاسِ» فَقُلْتُ: وَلِي، يَا رَسُولَ اًللَّهِ فَاسْتَغْفِرْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اًللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اًللَّهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ، وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلًا كَرِيمًا»“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন দোয়া করতে ইচ্ছা করলেন তখন পানি চাইলেন, অযু করলেন অতঃপর দু’হাত তুলে বললেন: ‘হে আল্লাহ! তুমি কিয়ামতে তাকে অনেক মানুষের উপরে স্থান দিও। আমি বললাম আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আব্দুল্লাহ ইবন কায়েসের পাপ ক্ষমা কর এবং কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করিও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৮]এ হাদীসে দেখা গেল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দোয়া করার পূর্বে অযূ করে নিলেন। ইবন হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ হাদীস দ্বারা আমরা জানলাম যে, দোয়া করার পূর্বে অযূ করে নেওয়া মুস্তাহাব। [ফাতহুল বারী]
২১. দোয়ায় দু’হাত উত্তোলন করা
যেমন, হাদীসে এসেছে, ইবন উমার (রাঃ) বলেন,«رَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ مَرَّتَيْنِ»“নবী (ﷺ) দুহাত তুললেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে আমি সে ব্যাপারে তোমার কাছে দায়িত্বমুক্ত। দু’বার বললেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩৯]আবূ মূসা (রাঃ) বলেন,«ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ» وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ»“অতঃপর, রাসূল (ﷺ) দু হাত তুললেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! তুমি উবাইদ আবি আমেরকে ক্ষমা করে দিও। তিনি এতটা হাত তুললেন যে আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৪০]
২২. কিবলামুখী হওয়া
দোয়ার সময় কিবলামুখী হওয়া মুস্তাহাব। যেমন, হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) বলেন,«اسْتَقْبَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اًللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الكَعْبَةَ، "" فَدَعَا عَلَى نَفَرٍ مِنْ قُرَيْشٍ»“নবী (ﷺ) কাবার দিকে মুখ করলেন এবং কতিপয় কুরাইশ নেতাদের বিরুদ্ধে দোয়া করলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৯৪]